ধর্ষন বনাম আমাদের সমাজ



          ধর্ষণ বনাম আমাদের সমাজ
  আব্দুল হান্নান

ধর্ষণ বনাম আমাদের সমাজ

আব্দুল হান্নান

ধর্ষণ বনাম আমাদের সমাজ আব্দুল হান্নান বিংশ শতাব্দীর পূর্বে আমাদের সমাজের নব্বই শতাংশ লোক ধর্ষন সম্পর্কে জানতনা। অবৈধ সম্পর্ক করে অবৈধ ভাবে মেলামেশার কথা জানত এবং এই ধরনের ঘটনার কারনে এলাকাতে মোড়ল মাতববাররা বিচার শালিশ করতো এর হাজারো নজীর আছে। আমাদের দেশের দশ শতাংশ লোক জানত ধর্ষনের মত কাজটি সংঘটিত হয় পাশ্চাত্য দেশ সমুহে। আমাদের দেশে যদি ঐ সময় কিছু কিছু ধর্ষন ঘটেও থাকে তবে তা ছিল খুব পরিচিতদের মধ্যে যা প্রকাশ পেতনা। ধর্ষণ' এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত ধর্ষণ শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে কখনো কখনো 'যৌন আক্রমণ' শব্দগুচ্ছটিও ব্যবহৃত হয়। যে দিন হতে আমরা পাশ্চাত্যবাদীদের কোল ঘেষা শুরু করছি এবং বাঙ্গালী কৃষ্টি কালচার উপেক্ষা করে তাদের কৃষ্টি কালচার যখন আমরা মনে প্রানে গ্রহন করা শুরু করেছি তখন হতেই মুলতঃধর্ষনের সাথে মানুষ বেশি পরিচিতি লাভ করে। আমরা যদি আরো একধাপ এগিয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবো আশির্বাদটা আমাদের জন্য ব্যবহারের কারনে অভিশাপে পরিনত হয়েছে আর সেটা হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার। ধর্ষন অনেকাংশেই কম ছিল যখন হতে স্মার্ট ফোন জাতির হাতে উঠেছে আর নেট দুনিয়া সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এসেছে সেদিন হতেই ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। ২০১০ সালের পরে বাংলাদেশে ঢালাও ভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহার হতে থাকে এবং বাংলার অবিভাবকরা তাদের সন্তানদের হাতে স্মার্ট ফোনের মত বিষবাষ্পটি উঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ কিশরদের মধ্যে কোন না কোন ভাবে যে যৌন আকাংখার অনুশীলন প্রবেশ করেছে তাদের পিতামাতারা সেটা জানেই না। বর্তমানে সহজ লভ্য ফেসবুক পাঁচ বছরের বাচ্ছাটা চিনে, এমন কোন সুশীল ব্যক্তি বলতে পারবেনা যে আমি ফেসবুক চালানোর সময় মনের অজান্তেই দু চারটা লেংটা, অর্ধ লেংটা ছবি আসেনা, জড়াজড়ি ঢলাঢলি আসেনা এ কথা কেউ বলতে পারবেনা। তাহলে যে বাচ্ছাটার হাতে পিতামাতা এই স্মার্ট ফোনটা তুলে দিচ্ছে আর বাচ্ছাটা সমান তালে এগুলো উপভোগ করছে তার মস্তিস্কের চিন্তাধারা কোন দিকে যাবে? পাগল অথবা নিশাখোর অথবা মানুষরূপি জানোয়াররা বলবে ভালো দিকে যাবে আর বিবেকবানরা বলবে এরা ধর্ষনের দিকে যাবে। সত্যি সত্যিই যাচ্ছেও তাই। গরুর রাখাল কামলা খাটার উপযুক্ত বয়স এখনো হয়নি দাড়ি মোচের আলামত এখনো দেখা যায়নি তার হাতে স্মার্ট ফোন ভিতরে নীল ছবি। আর এটা তারা উপভোগ করছে সহপাঠিদের নিয়ে। স্কুলের, কলেজের ফটকের অদুরেই তাদের আড্ডাবাজীর স্থান, যে পথ দিয়ে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে পথের পাশেই অবস্থান নিয়ে মেয়েদের বিরক্ত করছে। বাংলাদেশ এখন ধর্ষনের অভায়রন্যে পরিনত হয়েছে। আমি শুধু নুতন প্রজন্মের সাথে সাথে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ভার্সিটির শিক্ষকরা বুড়ারা ইমামেরা পর্যন্ত ধর্ষকের ভুমিকায় নেমে পড়েছে। আজ মা জাতীর কোথাও নিরাপত্তা নেই, যাদের ঘরে মেয়ে আছে তারা যে কত চিন্তিত একমাত্র তারাই জানে। পত্রিকা খুললে বা টিভির হেড লাইনে দৃষ্টি রাখতেই ভেসে আসে শিশু ধর্ষণ, বৌ ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ সমাজের এক শ্রেনীর মানুষ আবার এদের সমর্থন ও করছে, যারা সমর্থন করছে ধর্ষক যে তাদের মেয়ে বা বোন কিংবা বৌকে ধর্ষণ করবেনা এর কি কোন নিশ্চয়তা আছে? অথবা পরের মেয়ে বা বৌকে ধর্ষণের জায়গায় যদি আপনার মেয়ে বা বৌকে ধর্ষণ করতো আপনার কেমন লাগতো? ও বাংগালী শুধু নিজেরটা দেখো না পরের টাও নিজের মত করে দেখো শান্তি পাবে নচেৎ আজ যে বিপদ অন্যের ঘাড়ে দেখে তুমি সমর্থন করছো এই বিপদ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ধর্ষনের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে প্রতিরোধ গড়ে তোলো, সত্যিই আমরা আজ চরম বিপদ আর পেরেশানিতে। মেয়েকে শিক্ষার জন্য পাঠানোর পরপরই অবিভাবকদের পেরেশান থাকতে হয় মেয়ে আমার নিরাপদে বাড়ী আসবেতো? বিচার আছে, আদালত আছে কোর্ট আছে বিচারকও আছে, ধরাও পড়ছে বিচারের সম্মুখীনও হচ্ছে কোন আইনের ফাকে তারা বের হয়ে সংশোধনতো হচ্ছেইনা আরো বেশি অপরাধ করছে আইনের ঐ ফাকটা বন্ধ করা প্রয়োজন যা এদেশের প্রকৃত মা জননীর সন্তানদের দ্বারাই সম্ভব। হাজার হাজার মা বোন স্বাধীনতার যুদ্ধে পাক হানাদারদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল কি ধর্ষনের বাংলাদেশের জন্য? না কখনো না, এটা মগের মুল্লুক না, স্বাধীন দেশের একটা মেয়ে ধর্ষিত হওয়ার অর্থ গোটা নারী জাতি কলংকিত হওয়া। যারা দেশ পরিচালনার মত পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন তাদের নিকট জাতি আজ আশায় বুক বেঁধে আছে। কে কোন দলের এটা দেখার দরকার নেই প্রয়োজনে একটা প্রজন্ম বিলীন হয়ে যাক তার পরও এমন ব্যবস্থা নেয়া হোক যাতে জাতি ধর্ষনের চিন্তাও আর মাথায় না নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে রাষ্টীয় ভাবে যদি নিষ্ঠার সাথে ধর্ষণের প্রতিরোধ না করা হয় আর বেহায়াপনাকে নিরুৎসাহিত করা না হয় তাহলে সে দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ এইড্ স আক্রান্ত দেশে পরিনত হবে। এইডসে আক্রান্ত রোগী যে বাংলাদেশে এখন নেই বিষয়টি এমন না, যা আছে তা অনাকাংখিত ভাবে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল গুলিতে ভিনদেশীদের সাথে আমাদের দেশের অর্থলোভী মহিলারা শাররীক সম্পর্কে যে ভাবে জড়িত হচ্ছে তাতে এইডস আমাদের দরজায় যে কড়া নাড়ছে তার আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। বিদেশী দের সাথে অপকর্ম করার পর আবার পরক্ষনেই দেশীয় ছেলেদের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে, দেশীয় এই ছেলেগুলো কারা? তারা আমাদের খুব কাছের মানুষ, হোটেলে যে সমস্ত ছেলে মেয়েরা ধরা পড়ে তাদের সিংহ ভাগ ভালো ভালো বিদ্যাপিঠে লেখাপড়া করে। তারাতো আমাদেরই সন্তান আমাদের পরিবেশেই তাদের বিবাহ শাদী হবে তাহলে আমরা নিরাপদ কোথায়? রাষ্টযন্ত্র যদি এই বিষয় নিয়ন্ত্রন না করে তবে এটা ধারনা করার কোন অবকাশ নেই যে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের ঘরে এইডস যাবনা। বর্তমান উঠতি প্রজন্ম যে ভাবে ধর্ষন আর অপকর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাতে অচিরেই আমরা বিপদের ভিতর পড়তে যাচ্ছি। এই অবস্থা হতে যদি আমাদের উত্তোরন লাভ করতে হয় তাহলে প্রথমতঃ প্রয়োজন রাষ্টীয় সহায়তা, কি ভাবে? ধর্ষনের মত অপ কর্মের জন্য মোটেও কালক্ষেপন না করে প্রতিটা জেলায় দুজন মেজিষ্ট্রেটের সহায়তায় তদন্তে সত্যতা প্রমানিত হলেই জন সম্মুখে মৃত্যুদন্ড কার্যকর এতে কোন দেশ কি সমালোচনা করলো এটা দেখা যাবেনা, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের অনেক বিদেশী সমালোচনা হয়েছে তাতে আমাদের কি হয়েছে? আইন পাশ করেই এটা করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সন্তানদের ধর্মমুখী করতে হবে তা সে যে ধর্মেরই হোক, ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে পাঁপ হতে রক্ষা করে। সন্তানদেরকে স্মার্ট ফোন দেয়া যাবেনা, তার হাত খরচে পিতামাতার নজরদারী অবশ্যই রাখতে হবে, বিশ টাকা দিলাম কোন কাজে ব্যায় করলো যাচাই করতে হবে। এমবি কিনে মোবাইলে অসামাজিক কিছু দেখছে কিনা? অবসর পেলেই সন্তানের সাথে সাথে থাকতে হবে। তাঁকে আদর্শিক বিষয় গুলো বুঝাতে হবে নচেৎ দুদিন পরেই বাংলাদেশের উপর দিয়ে এইডস এর যে ঝড় বইবে এ থেকে আমরা কেউ রেহায় পাবোনা। একটি জাতী ধ্বংসের প্রধান আলামত হচ্ছে ঐ জাতির ভিতর খুন আর ধর্ষন বৃদ্ধি পাওয়া, আমাদের দেশে এটা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা এভার আমি পাঠকদের দিলাম, খুন আর ধর্ষন থেকেই সূত্রপাত হয় গৃহ যুদ্ধের এর বাস্তব উদারহন আফ্রিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ সমুহ যা আমি নিজের চোখে দেখে এসছি। আমি রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারকদের নিকট বিনীত আবেদন করছি জাতীকে এই অবস্থা হতে একমাত্র উত্তোরক হিসাবে এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংসের হাত হতে সোনার বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য ব্রতী হতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন