বাংলাদেশে জেনারেল শিক্ষিতদের ইসলামে অবদান

১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের নিকট মুসলমানদের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির প্রতিরোধে রাজশক্তির বাইরে গণমানুষের মধ্য থেকে যারা প্রথম তলোয়ার হাতে তুলে নেন, তারা হলেন আলেম উলামা মাশায়েখ এবং জেনারেল শিক্ষিত মুসলিম নওজোয়ানেরা,ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য ফকির পন্থি লেখকরা নেড়ার ফকিরদের নাম লিখেছে যে তারা যুদ্ধ করেছে। ১৭৬০ সাল থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত তারা গেরিলা কায়দায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালান। উপমহাদেশে মুসলমানদের উপর অনেক ধোকল গিয়েছে এ কথা অস্বীকারের কোন কারণ নেই।১৮৩১ সালে ঐতিহাসিক বালাকোট যুদ্ধে ইংরেজদের সহায়তায় হিন্দু শিখদের হাতে সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী রহঃএবং শাহ ইসমাঈল দেহলভী রহঃ সহ ৩০০ জন বীর মুজাহীদ শাহাদত করেন।এর পর হতেই মুসলমান নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে ভারত বর্ষে ইংরেজ এবং হিন্দু কারো হাতেই মুসরমানরা নিরাপদ না তারপরেও ইংরেজদের যদি তাড়ানো যায় হিন্দুদের সাথে বোঝাপাড়াটা পরে দেখা যাবে। ইংরেজ বিতাড়িত বিপ্লবে অসংখ্য বীর মুসলিম মুজাহীদ হামলা মামলা গ্রেফতার এবং শাহাদত বরন করেন।এ সময় এক শ্রেনীর মুসলমান আলেম উলামা ছিলো যারা ধরি মাছ না ছুই পানির মত।বিপ্লবের কথা বললেও ভয়তে মাঠে নামত না,স্বাধীনতা পরবর্তীতে বড় বড় মুসলিম নেতাদের মৃত্যু ও বার্ধক্যের সময় সুবিধাবাদিরা মুসলমানদের ভালো পদে অধিষ্ঠিত হয় এবং উলামায়ে হিন্দ নামে একটি অরাজনৈতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, এর মাধ্যমে তাদের নুতন পথচলা শুরু হয়।অতিতে মুসলমানদের আত্মত্যাগের স্মৃতি দেখে বর্তমানে তারা ইসলামী রাজনীতিকে ও ফেৎনা হিসাবে ফতোয়া দিয়ে দিলো,কারণ তারা আর হামলা মামলার স্বীকার হতে চাইনা । হিন্দু মুসলিম আলাদা সার্বোভৌমত্বের দাবী যখন মুসলমানদের ভিতর দেখা দিল তখন উলামায়ে হিন্দ এর নেতা হুসাইন আহাম্মদ মাদানী হিন্দু কংগ্রেসের সাথে একই সুরে সুর তুলে বললেন হিন্দু মুসলিম এক জাতী মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই।দেওবন্দের মত এত বড় একটা মাদ্রাসার মুহতামীম যদি বলে যে হিন্দু মুসলিম এক জাতি তবে সেটা অত্যান্ত দুঃখ জনক।সকল আলেম উলামা এবং বড় ছাত্ররা এর মর্মার্থ অনুদাবন করতে পারলেও অসহায়রা বাদে বৃহৎ একটা অংশ হুসাইন আহম্মদের এই কথার প্রতিবাদ করে উলামায়ে হিন্দ হতে পদত্যাগ করে এবং ভারত বিভক্তি আলাদা মুসলিম সার্বভৌমত্বের দাবীতে আন্দোলনে যোগদান করে।মুসলমানদের তাহজীব তমদ্দুন ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ সন্তষ্টির নিমিত্তে জেনারেল শিক্ষিত মুসলমানদের ইসলামের ছায়াতলে আনার নিমিত্তে এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।সকল মুসলিম দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শুরু হলো সংগ্রাম আবার ঝরলো মুসলমানদের রক্ত,একদিকে মুসলমানদের একটি দল নিজেদের তাহজীব তমদ্দুন রক্ষার্থে যুদ্ধ করছে। অন্য দিকে দেওবন্দীর হুসাইন আহম্মদের গ্রুপ কংগ্রেসের নিকট হাদিয়া তোহফা নিয়ে এটাকে ফেৎনা বলে অন্য মুসলমানদের আন্দোলন হতে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।কাজে লাগলোনা মাদানীর তন্ত্রমন্ত্র, ভারত বিভাজন বা দেশভাগ হল ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক বিভাজন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত ভেঙে পাকিস্তান ভারত অধিরাজ্য নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হয়।ভারতীয় কংগ্রেস হুসাইন আহম্মদকে নিরাশ করেনি,পাকিস্থান স্বাধিনের পর তাকে ডেকে নিযে পদ্মভূষন পুরুস্কারে ভূষিত করেন।সাথে সাথে আরো একটা মৌখিক ফতোয়া প্রকাশের জন্য মাদানীকে বলা হয় যে মুসলমানদের জন্য রাজনীতি হচ্ছে ফেৎনা,এটা করার দরকার নেই, এমন কি রাজনীতিকে হারাম সাব্যস্থ করতেও তারা দ্বিধা সংকোচ করেনি।মুসলমানেরা যখন কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লব করলো দেওবন্দীর মাদানী অনুসারিরা তখন বলল এটা রাজনৈতিক ফেৎনা।ইসলামী বিপ্লবের দুরদর্শিতা সম্পন্ন পন্ডিত সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী রহঃ পূর্বেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে,দেওবন্দের আলেম উলামা এবং ছাত্ররা যদি হিন্দু মুসলিম একজাতি নাম দিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসের সাথে মিলে যায় তাহলে জেনারেল শিক্ষিত স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া মুসলিম ছাত্র যারা আছে তারা তাগুতের সাথে মিলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।সামনে আসছে প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব তখন মুসলিম যুব সম্প্রদায়রা পাঁপের অতল গহব্বরে ডুবে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।শুরু করেন ধারাবাহিক ভাবে তর্জমানুল কোরআন সহ ইসলামী সাহিত্য লেখা ও প্রকাশ করা।পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা দার্শনিক ইকবাল মাওলানা মওদূদীর প্রকাশিত তর্জুমানুল কোরআন নিয়মিত পাঠ করতেন। তিনি মাওলানার বিপ্লবী চিন্তাধারা ও প্রবন্ধাবলীর দ্বারা এতখানি প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তাকেঁ মাঝে মাঝে এরূপ মন্তব্য করতে শোনা যেতো “একমাত্র এ মওদূদীই বিভ্রান্ত ভারতীয় মুসলমানদেরকে একটা সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে।” কারণ দার্শনিক ইকবাল মাওলানার মধ্যে লক্ষ্য করেছিলেন ভবিষ্যতের এক মহান মানুষের সুস্পষ্ট নিদর্শন। মাওলানার বিভিন্নমুখী প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও নিষ্কলুষ চরিত্রের পরিচয় পেয়ে কবি ইকবাল তাকেঁ লাহোর ডেকে পাঠান। এটাই ছিল কবি ইকবালের সাথে মাওলানার প্রথম সাক্ষাত পরিচয়।আল্লামা ইকবাল মরহুমের পরামর্শে পাঠানকোট শহর থেকে প্রায় চার মাইল দূরে ‘দারুল ইসলাম’ নামে একটি ইসলামী গবেষণাগার স্থাপিত হয়। ভারত বিভাগের সময় পর্যন্ত দারুল ইসলাম শুধুমাত্র ইসলামী গবেষণাকেন্দ্রই ছিল না, বরঞ্চ এখান থেকে বেশ কিছু সংখ্যক ইসলামের সাচ্চা সৈনিক ও মর্দে মুজাহিদও তৈরি হয়েছিলেন।উপ মহাদেশের স্কুল ,কলেজ পড়ুয়া জেনারেল শিক্ষিত মুসলিম যুবকদের ইসলামের প্রতি প্রেরনা যোগানোর মত মওদুদী রহঃ এর লেখনী আর সংগঠন ছাড়া কোন সংগঠন ছিলোনা।দেওবন্দীরা স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র শিক্ষকদেরকে ফাঁসেক বলেই জানত এবং স্কুল কলেজে পড়াকে নাজায়েজ বলে জানত।তাবলীগের প্রতিও তখন যুব সম্প্রদায়ের তেমন একটা ঝোক ছিলনা।এহেন মুহুর্তে যে সমস্ত স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের থাকার কথা আড্ডা খানায়,পাঁপের কাজে তাগুতের সাথে তাদের বৃহৎ একটা অংশ মওলানার তর্জমানুল কোরআন এবং সাহিত্য পড়ে ইসলামের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য পেয়েছে এবং পরবরর্তীতে তারা নিজেদেরকে সংশোধন করে ইসলামের ভালো দায়ীতে পরিনত হয়েছে এমন নজীর হাজারো বিদ্যমান।মওদুদী বহঃ স্বাধীনতার পূর্ব হতেই মুসলিম জেনারেল শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা এবং রাষ্ট্র যন্ত্রের ভিতর আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন বাস্তবায়নের কথা বলে আসছেন এবং এ জন্য বিরুদ্ধ বাদীদের দ্বারা তারা অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার ও শাহাদত পর্যন্ত বরন করেছে। স্বাধীনের পর যারা ইসলামী রাজনীতিকে হারাম জানত এবং মওদুদী রহঃ এই বিপ্লবকে বিরোধিতা করতো বহুদিন পর তারাই আবার বুঝতে পারল যে, ইসলামী রাজনীতি জায়েজ এবং ১৯৯০/ ১৯৯১ সালের দিকে মওদুদী রহঃ দেখাদেখি যুবকদের নিয়ে কিছু কিছু সংগঠন তাদের দ্বারা তৈরী হয়।সবচাইতে মজার বিষয় যারা বিরোধিতা করতো আজকে তারা উপর উপর এই সংগঠনের বিরোধীতা করলেও তাদের বক্তব্যের ষ্টাইল,লেখনী সবই মওদুদী রহঃ মত।ইসলামে রাজনীতি জায়েজ এবং যুব সম্প্রদায়ের মুক্তির কথা যদি নব্য্ এই সম্প্রদায়রা আগে থেকে বুঝত তাহলেমওদুদী রহঃ এই বিপ্লবের কোন প্রয়োজন ছিলোনা।সর্বশেষ আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে কেউ কারো বিরোধিতা না করে সবাই এক সাথে মিলে দ্বীনের কাজ করা প্রয়োজন এবং জেনারেল শিক্ষিতদের প্রতি রূঢ়তা ও ঘৃনা প্রদর্শন না করে তাদেরকে ভালোবেসে কাছে টানুন,প্যান্ট সার্ট পরা দাড়ি নেই বা ছোট বলে দূরে ঠেলে দিবেননা। কাছে টানুন ইনশাআল্লাহ একদিন তারাও দাড়ি রাখবে,তারাও পান্জাবী পরবে তারাও একনিষ্ঠ আল্লাহর বান্দা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন