লাকী টাইগার্স ৭ইষ্ট বেংগলের ইতিহাস HISTORY OF LUCKY TIGERS 7 EAST BENGAL REGEMENT.written by wo rtd Hannan

লাকী টাইগার্স ( ৭ ই বেংগলের)আসল ইতিহাস
রচনায়ঃওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল হান্নান ভূমিকাঃ জীবনের সবটুকু প্রশংসা আল্লাহর জন্য,দরূদ ও সালাম বিশ্বনবীর প্রতি।১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে আমি লাকী টাইগার্সের সদস্য হিসেবে যোগদান করি।যোগদানের পরে পরেই আমি অত্র ইউনিটের ইতিহাস খুজতে থাকি,ইউনিটের ইতিহাসের অনেককিছু আমার কাছে অপুর্নতা লাগছিল।সঠিক ইতিহাস কোথায় পাই এরকম একটা তৃষ্ণা আমার ভিতর কাজ করছিল। ইউনিট তখন সবেমাত্র কুয়েত থেকে এসছে,নানা প্রকৃতির মানুষের অবস্থান তখন এই ইউনিটে এদের নিকট ইতিহাস জেনে তেমন কোন তথ্য পেলামনা।বিভিন্ন জায়গায় পুরাতন সৈনিকদের নিকট আর বিশেষ করে সিলেটের একজন সৈনিক যে জেনারেল এরশাদের রানার ছিল তার নিকট হতে অনেক তথ্য সংগ্রহ করি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংগালী একটি ইউনিট ৭ ই,বেঙ্গল বা বর্তমানে লাকী টাইগার্স। ১৯৬৫ সালে তদানিন্তন বাংগালী সিনিয়র অফিসার কর্নেল ওসমানীর নিকট বাঙ্গালী সেনা সদস্যরা বাঙ্গালী নুতন একটি পল্টন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করলে ওসমানী এটা তদানিন্তন আর্মি হেড কোয়ার্টারের এক কন্ফারেন্সে উপস্থাপন করেন।পাকিস্তানের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও বাঙ্গালী সেনা সদস্যদের জোর দাবী ও যুক্তির কাছে অনুমোদন দিতে বাধ্য হলেও পূর্ব বাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের কারনে প্রতিষ্ঠা করতে কালক্ষে পন করছিল।নানা অজুহাতে তারা চাচ্ছিলনা বাঙ্গালী আর একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা হোক।পাকিস্তানের তদানিন্তন সামরিক জান্তারা সামনে যুদ্ধ আসন্ন বুঝতে পেরেছিল।শত প্রতিকুল অবস্থার মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বেদীয়ান লাইনে ০৬ জন অফিসার ০৮ জন জুনিয়র কমিশন অফিসার এবং ৩০৯ জন বিভিন্ন পদবীর সদস্য লাকী টাইগার্স নামের বাংগালী ইউনিটটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।প্রতিষ্ঠাকালীন অধিনায়ক ছিলেন পি এ ৩৪৭৩ লেঃকর্নেল মাশহুরুল হক এবং উপ অধিনায়ক ছিলেন বি এ ৫০ মেজর এইচ এম এরশাদ পি এসসি। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর ছিলেন সুবেদার আবুল কাসেম পরবর্তীতে সুবেদার মেজর হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পরপরই চট্টগ্রাম সেনানিবাসে পাকিস্তানী বেলুচি ইউনিটের সাথে নুতন ইউনিট লাকী টাইগার্স এর একটি ফুটবল খেলা হয়,সেখানে বে লুচি ইউনিট কে ৩/০ গোলে পরাজিত করে সমগ্র গ্যারিশন ব্যাপি আলোড়ন সৃষ্ট করে।বাহিরে চলছিল গণ অভ্যুথ্যান,বাঙ্গালী সৈন্যদের ভিতরে ভিতরে জাগরণ শুরু হলেও এর বহিঃপ্রকাশ তখনো ঘটেনি,পাকিস্তানি ও বাঙ্গালী অফিসাররা তখনও সৈনিকদের দফায় দফায় মটিভিশন করে চলছিল।যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে লাকী টাইগার্সকে পাকিস্তানের করা চীর মালির সেনানিবাসে পাঠানো হয়। ভারতের উগ্রবাদীদের প্রতিহত করার জন্য নব্য আসা ইউনিটকে পাক ভারত সীমান্তের ধাক্কার শহর থেকে তিন মাইল দূরে প্রতিরক্ষা অবস্থানে গ্রহনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।ইউনিটকে আচমকা পাকিস্তান পাঠানোর কারনে অনেক সদস্যের ছুটির সময় হলেও তারা তখন ছুটি যেতে পারেনি।পাকিস্তান যাবার পর তাদের ছুটি দেয়া হবে বলে জানানো হয়।পাকিস্তানে যাবার পর অত্র লাকী টাইগার্সের ১০০ জনের উপরে সদস্যকে বাৎসরিক ও সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়।তখন কুর্মিটোলা বিমান বন্দর থেকে পাকিস্তান সামরিক বিমানে করে যাতায়াত করা হত আর নদী পথে যাতায়াত ছিলো।১৪ই মার্চ ১৯৭১ সালে জয়েন্ট ছিলো বেশ কিছু বাঙ্গালী সদস্যদের তখনো যুদ্ধ শুরু হয়নি পূর্ব বাংলার চতুর্দিকে বাঙ্গালিদের উপর পাক সেনাদের খড়গহস্ত ভাব চলছিলো। পাকিস্তান সেনা সদরে পাক অফিসারদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছিল। কোন বাঙালী অফিসারকে কনফ্রান্সে যেতে দেয়া হয়নি, কনফ্রান্স শেষেই বাঙালী ইউনিট গুলির অস্ত্রাগারের দায়িত্ব এক প্রকার জোর করেই পাক অফিসারদের মাধ্যমে পাক সেনারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেই। ১৩ই মার্চ ১৯৭১ ছুটিতে থাকা বাঙ্গালী সৈন্যরা কুর্মিটোলা আসতে থাকে।কুর্মিটোলা বিমান বন্দর তখন পাক সেনাদের কব্জায় ছিল।বাঙালী এই সৈন্যদের নিয়ে গিয়ে বন্দী করা হবে এবং পাকিস্তানে বাঙ্গালী সৈন্যদের নিরস্ত্র করা হয়েছে এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে এটা তারা জানতে পারে ততক্ষণে বাঙ্গালী সৈন্যরা একে একে কুর্মিটোলা হতে পালানো শুরু করে।৪র্থ ইষ্ট বেঙ্গলের হাবিলদার রফিক বলেন,আমি এই ছুটি হতে জয়েন্ট করার একজন ছিলাম,বিকালে ফলিন করালো,আমি ছিলাম সিনিয়র হাবিলদার, পাকিস্তানি একজন মেজর আমাকে সি এইচ এম বানিয়ে বললো পেরি মিটার ডিউটিতে লোক পাঠাও এবং নির্দেশনা দিলো যে, কোন সৈন্য যেন বাহিরে না যায়।আমাদেরকে বন্দী করা হবে এ খবর আমিও জানতে পেরেছিলাম, সবাই যাতে নিরাপদে পালাতে পারে আমি সেই চেষ্টাই করছিলাম ডিউটিতে যারা ছিলো তাদেরকে বললাম পেরি মিটার ডিউটি যাবার নাম করে সবাই আস্তে আস্তে পালাও। ডিউটি চেকের নাম করে উলু বনের ভিতর দিয়ে লুকিয়ে আমিও চলে আসলাম।ক্যান্টমেন্ট রেল স্টেশনে আসতেই কিছুক্ষন পরেই চট্টগ্রাম গামী ট্রেন আসলো, মনে ভয় আতংক নিয়ে ট্রেনে উঠলাম ঐ ট্রেনে আমাদের আরো অনেক সহযোগী ছিলো অনেকেই নিজ নিজ গন্তব্যে নেমে গেলো, আমি ও নোয়াখালী আমার বাড়িতে গেলাম দুদিন বাড়িতে থেকে চট্টগ্রাম এসে বর্তমানে ইবি আরসিতে এসএম সাহেবের সাথে কথা বলে জায়েন্ট করলাম।খবর আসলো পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙ্গালী ইউনিট সমূহকে নিরস্ত্র করা হয়েছে,৭ইষ্ট বেংগলের তৎকালীন ইউনিট অধিনায়ক এইচ এম এরশাদ পিএসসি সহ সকল বাঙালী সেনাসদস্যকে বন্দী করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হয়। এবং অনেক বাঙ্গালী সৈন্য অস্ত্র নিয়ে ভারত সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।পুরাতন সদস্যদের মুখে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লাকী টাইগার্সের কিছু সদস্য কৌশলে পালিয়ে পাকিস্তান বর্ডার পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং দেশে ফিরে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। অপর দিকে বন্দী ব্যাটালিয়ন থেকে কিছু লোক পালিয়ে যাবার কারণে তদানিন্তন লাকী টাইগার্সের কমান্ড চ্যানেলকে পাকিস্তানি কমান্ডারদের রোষানলে পড়তে হয়।স্বাধীনতার জন্য এদিকে বাঙালীদের মুক্তিযুদ্ধ যত তুঙ্গে উঠতে থাকে পাকিস্তানের বন্দী সৈন্যদের উপর নির্মমতা তত বাড়তে থাকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যখন বিজয়ের মাধ্যমে পরি সমাপ্তি ঘটলো এবং পাকিস্তানী সেনারা যখন আত্ম সমর্পণ করলো তখন আমাদের পাকিস্তানী বন্দী সৈন্যদের মনে জাগ্রত হয়েছিল যে এবার হইত বন্দী বিনিময় হবে।হলেও তাই ১৯৭৩ সালের ২৮ আগষ্ট স্বাক্ষরিত দিল্লি চুক্তির আওতায় বন্দী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর হলো, অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো।দীর্ঘ তিন বছর পর১৯৭৩ সালের ২৬ নভেম্বর লাকী টাইগার্স ৭ইষ্ট বেংগল দেশে প্রত্যাবর্তন করে এবং উক্ত আগত ইউনিটকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর শওকত আলী অভ্যর্থনা জানান এবং প্রত্যেককে ২মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়। যশোর সেনানিবাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লাকী টাইগার্সের পুনর্গঠন করা হয়।স্বস্তি ফিরে আসে সবার মধ্যে। দেশ পুনর্গঠন সহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ গ্রহন করে লাকী টাইগার্স যশোহর সেনানিবাসে ও গৌরবময় ইউনিট হিসাবে ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করে। ১৫ ই ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে ঢাকা সেনানিবাসে রেজিমেন্টাল কালার এবং ১৬ই এপ্রিল ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার হতে জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্ত হয়।১৯৭৮ সাল হতে ৭ইষ্ট বেঙ্গল পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন অভিযান পরিচালনা করে কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি,লক্ষীছড়ি,বান্দরবান, পানছড়ি পুনরায় রাঙ্গামাটির নানীয়ারচরে।আমি তখন কর্পোরাল,পানছড়ির যে অভিযানে একজন ইউপিডিএফকে অস্ত্র সরঞ্জাম সহ আটক করা হয় আমিও ঐ অভিযানে ছিলাম।সন্ত্রাসীরা লাকী টাইগার্সের টহলের উপর আচমকা গুলি করে লুকিয়ে পড়ে যদিও লাকী টাইগার্সের প্রশিক্ষিত সৈনিকদের কৌশলে দ্রুত অবস্থান গ্রহনের কারণে কারো গায়ে গুলি লাগেনি,তবে সন্ত্রাসী সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও একজন পালাতে পারেনি সে কাটা জঙ্গলে ঘেরা একটি পুকুরের বা গর্তের জঙ্গলে লুকিয়ে যায়।আমরা চতুর দিক হতে সারারাত ঘিরে রাখি একটু ফর্সা হলে সার্চ অবিযান শুরু হয়।আমি তদানিন্তন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃআব্দুর রহিম সহ ভিতরে ঢুকে পড়ি সাথে আরো কয়েকজন ছিল সবার প্রচেষ্টায় আমরা তাঁকে আটক করি।আমরা কিছু আলোকচিত্রের সাথে পরিচিত হবো,প্রথম হতে ২০২০পর্যন্ত অধিনায়ক বৃন্দ।

২টি মন্তব্য: