ইসলামিক গণতন্ত্র, ইমাম আব্দুল হান্নান

ইসলামিক গণতন্ত্র কি?

গণতন্ত্র আর ইসলামিক গণতন্ত্র এক জিনিস না।"গণতন্ত্র" হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে নীতিনির্ধারণে বা প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সকল সদস্য বা নাগরিকের সমান অধিকার থাকে।এখানে নেতা নির্বাচনে ভালো মানুষ ও ক্ষমতায় যেতে পারে আবার একজন খারাপ মানুষ ও জনগণের নেতা হয়ে কাঁধে বসতে পারে।ইসলামিক গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে নীতিনির্ধারণে বা প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোরআন সুন্নাহর উপর পাণ্ডিত্যধারী ব্যক্তিদেরই অধিকার থাকে।ইসলামিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দেশের নাগরিকদের সুবিধা অসুবিধা অনুধাবন করা এবং তা হতে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক উত্তরণের ব্যবস্থা করতে পারে এবং যাদের বিরুদ্ধে আমানতের খিয়ানত অসদাচরণের কোন অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের সমর্থনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকে,যেমনটি হয়েছিলো খেলাফতে নবুওয়াতের খলিফা নির্বাচনের সময় এখানে অসৎ ব্যক্তিদের জনগণের নেতা হয়ে কাঁধে চেপে বসার কোন সুযোগ নেই।প্রশ্ন হতে পারে বাংলাদেশে অসংখ্য আলেম উলামা আছে তাদের ভিতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তিদের কিভাবে নির্বাচন সম্ভব?হ্যাঁ এটা সম্ভব, যতগুলো ইসলামী দল আছে তাদের ভিতর বৃহত্তর দলগুলো হতে বেশি এবং ক্ষুদ্রতম দলগুলো হতে সংখ্যায় কম আলেমদের দ্বারা স্বার্থের বাহিরে গিয়ে খলিফাকে নির্ধারণ করবে।

ইসলামি গণতন্ত্রের উৎস

ইসলামিক গণতন্ত্রের উৎস হচ্ছে কোরআন, হাদিস, এজমা,কিয়াস। এখানে গণতন্ত্রের ন্যায় মানব রচিত কোন সংবিধান, নিজের ইচ্ছা বা অন্য কারো ইচ্ছা দ্বারা রাষ্ট্রের কোন সেক্টর পরিচালিত হয়না।< p/>

ইসলামী গণতন্ত্রের স্থম্ভ

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা যেমন তিনটি স্তম্ভ বা ভিত্তির উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়,অপর দিকে ইসলামী গণতন্ত্রের স্থম্ভের ভিত্তি হচ্ছে কোরআন, সুন্নাহ, এজমা,কিয়াস যার অধিনে আছে অনেক শাখা প্রশাখা ।গণতন্ত্রের সবগুলো স্থম্ভ একত্রিত করলে ইসলামের একটি শাখা হয় সেটা হলো ইসলামী হুকমত তবে গণতন্ত্রে স্থম্ভগুলো পরিচালিত মানব রচিত আইন দ্বারা আর ইসলামী গণতন্ত্রের একটি শাখা ইসলামী হুকমত সেটি পরিচালিত হয় কোরআন সুন্নাহ এজমা কিয়াস দ্বারা।ইসলামী গণতন্ত্রের শাখা প্রশাখা সমুহ মূল ভিত্তিকে কেন্দ্র করে ইসলামী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়, ক্ষমতার সুষম বন্টন নিশ্চিত করার মাধ্যমে শাসনকার্যকে পরিচালনা করতে সার্বিক সহায়তা সহ মানব জীবনের প্রতিটা সমস্যার সমাধান করে।

খেলাফতে নবুয়াত কায়েম সমাপ্ত

সাফীনাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (خِلاَفَةُ النُّبُوَّةِ ثَلاَثُونَ سَنَةً ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ مَنْ يَشَاءُ) ‘‘ত্রিশ বছর পর্যন্ত খেলাফতে নবুওয়াত চলতে থাকবে। এরপর আল্লাহ যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করবেন।(আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ) এই ত্রিশ বছর আবু বকর, উমার, উছমান ও আলী (রাঃ)এর খেলাফতের মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে। আবু বকরের খেলাফতকাল দুই বছর তিন মাস, উমার (রাঃ)এর খেলাফত দশ বছর ছয়মাস, উছমান (রাঃ)এর খেলাফত বার বছর এবং আলী (রাঃ)এর খেলাফত চার বছর নয়মাস। এবং হাসান (রাঃ)এর বায়আতের কাল ছিল ছয়মাস। এভাবেই খেলাফতে নবুওয়াতের ত্রিশ বছর পরিপূর্ণ হয়েছে।

খেলাফত,গণতন্ত্র,ইসলামী গণতন্ত্র

খেলাফতঃ আদম আঃ হতে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পরবর্তী ত্রিশ বছর আলী রাঃ এর খেলাফত পর্যন্ত সময়কে হাদিসের ভাষায় খেলাফতে নবুয়াত বা খেলাফতে খাস বলা হয়।তার পরবর্তী অদ্যকার সময় পর্যন্তকে হাদিসের পরিভাষায় মুলকিয়াত বলা হয়।এখানে বর্তমান সময়ের আলেমরা যে খেলাফতের কথা বলছেন সেটা হচ্ছে খেলাফতে আম, মুলকিয়াত বা ইসলামী গণতন্ত্র।

গণতন্ত্রের অধিনে মুসলমানদের ভূমিকা

যেখানে খেলাফতে আম বা ইসলামী গণতন্ত্র নেই,আছে শুধু গণতন্ত্র সেখানে প্রকৃত মুসলমানরা নিরুপায়,প্রশ্ন হতেই পারে যে দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম পরিচয় বহন করে সেখানে মুসলমান নিরুপায় হয় কিভাবে?মুসলমান পরিচয় বহন করা সহজ কিন্ত মুসলমান হওয়া বড়ই কঠিন।নিরুপায় মজলুম মুসলিম হিসাবে গণতন্ত্রের অধিনে থেকেই তাঁকে ইসলামী গণতন্ত্র বা খেলাফতে আ'ম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করতে হবে।খেলাফতে নবুয়াতের সময় যেহেতু সবাই মিলে ভোট দিয়ে খলিফা নির্বাচনের কোন পদ্ধতি ছিলনা আর সেটার ইসলামে গ্রহন যোগ্যতাও ছিলনা এখনো নেই কিন্ত এখন ইসলামের দুশমনেরা সাংবিধানিক ভাবে জনগণের ঘাড়ে যে গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে তা থেকে বের হতে হলে ইসলামী গণতন্ত্র কে মূল লক্ষ্য হিসাবে নিয়ে দুটি পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়া যায় ১।সম্মুখ সমর,যা বাংলাদেশের জন্য এখন প্রযোজ্য নয়।২।দাওয়াতের মাধ্যমে জনমত তৈরী করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে।গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে মুসলমানদের যখন বিজয় হবে তখন গনতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে ইসলামী গনতন্ত্র সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন