নবান্নের লাঠিখেলা

নবান্নের লাঠিখেলা

আব্দুল হান্নান

উঠো পালারে পরপরই কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় যুদ্ধ,খুব কষ্টের ভিতর সংগামের জন্ম হবার জন্য পিতামাতা নাম রাখে সংগ্রাম। এপার বাংলাতে আসার পর তখন ও তেমন একটা দেশপ্রেম মনের ভিতর জাগ্রত হয়নি।সবাই জমি জিরাত বিনিময় করে আসলেও সংগ্রামের পিতা বৃদ্ধ বাবাকে আর পরিবার পরিজন নিয়ে খালি হাতেই এপারে চলে এসেছিল। সংগ্রামের দাদা ছিল জাহাজের সারেং প্যারালাইসিস হওয়ার জন্য আর জাহাজে যেতে পারেনি।পাহলোয়ান বংশের খুব ভালো লাঠি খেলা করতে পারতো আবার খুব ধার্মিক ছিলো বাচ্চাদের চোখ লাগলে শরীর খারাপ করলে উনার হাতের পানি পড়া খেলেই ভালো হয়ে যেত এই সুবাদে গ্রামের সবাই খুব ভালো বাসতো।তাই গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে সংগ্রামদের পরিবারকে থাকার জন্য একটা জায়গা করে দিল।নদীয়া শান্তিপুরে তখন নবান্ন আসলেই দলে দলে লাঠি খেলার ধুম পড়ে যেত।নবান্ন আসার আগেই বাড়ীর গিন্নীরা আম গাছের দিকে প্রতিদিন তাঁকাতো আমের কুশি বড় হচ্ছে কিনা দেখার জন্য। নবান্নের দিনে জামাই আসবে কাঁচা আমের চীর দিয়ে দুধ মিশিয়ে বিন্নি ধানের খির রান্না করে জামাই পড়শীদের দিতে হবে,লাঠি খেলোয়াড়দের দিতে হবে সবাই খির খেয়ে নবান্নে আনন্দ করবে।ফিসফিসে বৃষ্টিতে নবান্নের দিনের খির খাওয়া আর লাঠি খেলার দৃশ্যগুলো এখন রূপ কথার গল্পের মতো।প্যারালাইসিস হলে কি হবে শরাফত আলী পাহলোয়ান বংশের পুরাতন লাঠিয়াল,ওপার বাংলাতে প্যারালাইসিস নিয়েই কাপ জিতে নিত সেই থেকে শরাফত আলীর কাছেই সবাই ট্রেনিং নিত।এপার বাংলাতে আসার পরও শরাফত আলীর জুড়ি নেই,শরাফত আলীর দলের নাম শুনলেই সবাই রানার আপদটা ধরে রাখতো। অসুখটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে,সামনে নবান্ন খেলার কায়দা কানুনও অনুশীলন চলছে।বকড়ীর সবাই বলছে এবার আর খেলার দরকার নেই,ভাঙ্গা শরীর নিয়ে পারবানা।নাছোড়বান্দা খেলবেই।সংগ্রাম ও বেশ বড় হয়ে গেছে,বাবা এ সবের মধ্যে না থাকলেও দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য দাদা ছোট থেকেই ওকে লাঠি খেলা শেখায়।শরাফত আলী ভাঙ্গা শরীর নিয়েই এবারের নবান্নের লাঠি খেলার জন্য প্রস্তুত।অনেগুলো দল অংশ নিয়েছে,সবদল পরাজিত হয়ে আর একটি দল আছে,সবার খেলা শেষ দুই দলের দুই দলনেতা বাকী,শরাফত আলী নেমে পড়লো,তুমুল খেলা চলছে শরাফত আলীর বিপরীতে শনু মিয়া প্রায় ধরাশায়ী,শরাফত আলী পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে খেলা একেবারে শেষের দিকে লাঠির একটা গুতা শরাফত আলীর কোক বরাবর লাগলো দম বন্ধ হয়ে আসছে তার পরও বুঝতে দিলনা,রেফারীর বাঁশী খেলা শেষ।শরাফত আলী বিজয়ী হাত উচু করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো,চির বিদায়,শোকের মাতম পড়ে গেল গোটাগ্রামে।সংগাম দাদুকে বটগাছ বলতো,দাদুর ছায়াতেই মানুষ,সংগ্রামের কাঁন্না যেন থামছেইনা।নিয়তিকে না মানার অবকাশ নেই,দুদিন পরে সবাই স্বাভাবিক।সংগ্রাম অনেক জিদী প্রকৃতির,দাদুর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পড়াশুনার পাশাপাশি লাঠিখেলার অভ্যেসটাও চালিয়ে যাচ্ছে।গরীব মানুষের ছেলে সবক্ষেত্রে কি জিদ চলে সবার সাথে মিলেমিশেতো থাকতেই হবে,তারপরেও কেমন যেন ডাইনপিটে স্বভাবের।সামনে আসছে নবান্ন,সংগ্রাম কি এবার খেলবে? গ্রামের লাঠিয়ালরা ওর দাদার জায়গায় ওকেই দলনেতা বানালো,দলের মুরুব্বী সংগ্রামকে বললো এ বছর তোমার খেলার দরকার নেই তুমি সামনের বছর থেকে খেলো।সংগ্রাম রাজী হয়ে গেলো।নবান্নের দিনে খেলা হবে,চারিদিকে নবান্নের সাজসাজ রব,দলে দলে লাঠিয়াল দর্শক সমারোহে মাঠ ভরপুর যথা সময়ে খেলা শুরু হলো।সংগ্রামের দলের বিপরীতে এবার অন্য দল এসছে,ফাইনালে দুদল মুখামুখি,খেলা চলছে সমানে সমান।খেলার মাঠে নারী পুরুষের সমারোহ,পাশের বাড়ীর শীলামনিও এসছে খেলা দেখতে,শীলামনি সংগ্রামকে খুব পছন্দ করে।ওর ধারনা ছিল সংগ্রাম এবার খেলবে তাই ও খেলা দেখতে এসছে।মাঠে টানটান উত্তেজনা উভয় পক্ষের লাঠি সমানে চলছে,পয়েন্ট উভয় দলের সমান।সংগ্রামের দলের শেষ ব্যক্তির খেলা তেমন ভালো না,সংগ্রামের দলের বয়স্ক লোকটার খেলাও শেষ সেও ভিষন চিন্তিত কি করা যায়? সংগ্রাম বললো ওস্তাদ আমি খেলবো,নাহু নাহুর পর শেষমেষ সংগ্রামকেই নামিয়ে দিল।চারিদিকে হৈ হুল্লুড় সংগ্রামকে সবাই তালি দেয়া শুরু করলো সবচাইতে শীলামনির তালির জোরটাই মনে হয় বেশি ছিলো।খেলা ভালই জমেছে অনেক পয়েন্ট এগিয়ে আছে সংগ্রাম অবশেষে সংগ্রাম বিজয়ী।পুরা গ্রামবাসীর আনন্দের সাথে সংগ্রামকে কাঁধে নিয়ে নাচতে শুরু,শীলামনিরাও আনন্দ করছে এবারের পর্বের এখানেই সমাপ্তি,সংগ্রাম ছাত্র মানুষ,আবার নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে টিওশনীও করতে হয়।লাঠি খেলায় জেতার পর ছাত্র শিক্ষক সহ সবার ভিতর সংগ্রামের একটা পরিচিতি লাভ করলো।বাড়িতে অভাব,লেখাপড়া টিওশনীর পাশাপাশি আরো উপার্জনের পথ বের করে।হঠাৎ একদিন সেনাবাহিনীতে লোক নিচ্ছে সংগ্রাম ওখানে ভর্তি হয়ে গেল।প্রশিক্ষন চলছে,শীলামনির সাথে চিঠিপত্র আদান প্রদান করে। ছয়মাসের ট্রেনিং বাড়ী আসতে পারবেনা,প্রশিক্ষনের সময় সংগ্রামের লাঠিখেলা দেখে প্রশিক্ষকরা বেশ সন্তুষ্ট,সবার নজরে চলে আসলো সংগ্রাম।শীলাকে চিঠি লিখেছে কোন এক নবান্নে ছুটিতে এসে খেলা শেষে বিয়ে করবে,চার বছর চাকরী না হলে বিয়ে করা যাবেনা।সেনাবাহিনীর চাকুরী ইচ্ছা করলেই ছুটি পাওয়া যাবেনা,বেশ কয়েকটি খেলা মিস হয়ে গেল।খেলার রজাল্টও তেমন সন্তোষজনক না,নেতৃত্বশূন্য হলে যা হয় আর কি।সামনের নবান্নে সংগ্রামের বিবাহ হবে বিষয়টি সবাই জানে,সেনাবাহিনীতেও বলে রেখেছে ঐ সময় তার ছুটির প্রয়োজন,এ জন্য অনেকদিন ছুটিও যায়না,যাক কাংখিত দিনটি সামনে প্রায় সমাগত।সংগ্রামের ছুটিও হয়েছে,বিবাহের দিন তারিখ ও নির্ধারিত,দিনে খেলা শেষে সন্ধায় হবে বিবাহ।গায়ে হলুদ সহ বিবাহের সব আনুষ্ঠানিকতার কাজ চলছে,দুদিন পরেই খেলা এবং বিবাহ।শীলামনির কি তাহলে হলুদ পড়া অবস্থায় এবার আর খেলা দেখা হবেনা? দেখলেও কোন সমস্যা নেই প্রতিবার মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা করা হয়।শীলামনিকে কি থামানো যায়? খেলা দেখতে গেলো,সংগ্রামকে পেয়ে খেলোয়াড়দের মন সবার চাঙ্গা,বিজয় ঠেকায় কে? চা বছর পর এবারের নবান্নে আবার পুরাতন বিজয় ফিরে পেলো,নবান্নের লাঠি খেলাকে সাক্ষী রেখে সংগ্রাম শীলামনির বহুল প্রতিক্ষিত বিবাহ সম্পন্ন হলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

২০০কোটি টাকায় জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে হেফাজত নেতা মুহিবাবুল্লাহ বাবু নগরীকে

গত কয়েকদিন হলো হেফাজত নেতা মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী হঠাৎ জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন ইস্যু ছাড়াই বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ...