সংস্কারের পথে ইসলামী বিপ্লব মাওলানা আব্দুল হান্নান

ভূমিকাঃ জীবনের সসবটুকু প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন এবং উম্মাহাতুল মোমেনীনদের জন্য।আল্লাহ রহম করুন ঐ সমস্ত মর্দে মুজাহীদদের প্রতি যাদের ধারাবাহিক অবদানে ইসলাম আজ আমাদের পযর্ন্ত পৌছিয়েছে।উপমহাদেশে ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল হক্বের পক্ষে,মানবতার পক্ষে,মজলুমের পক্ষে কোরআন সুন্নাহর আলোকে সৎ চরিত্রের জনবলের সোচ্ছারের মাধ্যম দিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন বাস্তবায়ন করার জন্য।সুরা নূরের ৫৫ নং আয়াতের আলোকেই আমার লেখাوَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। উপমহাদেশে ইসলামী বিপ্লবের দীর্ঘ সময় বা বছরেও আমরা এই আয়াতের দাবী এখনো পুরন করতে সক্ষম হয়নি।একটা কথায় আছে সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। ইসলামী বিপ্লবের সংগঠনের ভিতর কিছু সুবিধাবাদী লোক বুদ্ধিজিবী,পুরাতন,বড়লোক শিক্ষিত ইত্যাদী লকব নিয়ে কিছু কুপরামর্শের দ্বারা এখলাসহীন এবং ইমান ও আমলে সালেহ এর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে আল্লাহ তায়ালা জমিনে এই জাতীয় মানুষদের দ্বারা তৈরী দলকে খেলাফত দিচ্ছেননা।আমরা সাংগঠনিক ভাবে সেই লোক গুলোকে সংশোধন করে সামনে এগুতে চাই।আল্লাহ তৌফিক দান করুন আমিন। ইসলামী বিপ্লবের পথে যে সমস্ত অন্তরায় বা ত্রুটি বিচ্যুতি সমুহ আমাদের মাঝে আছে আমরা পযার্য়ক্রমে প্রথমে সেগুলোর আলোচনা করবো এবং পাশাপাশি তা থেকে উত্তোরণের উপাই সম্পর্কে জানবো এবং আমল করবো।আমাদের এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ঈমানী ও আমলে সালেহের গলদ রয়েছে যার কারণে আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াতে এখনো রাষ্ট্র ক্ষমতা দিচ্ছেন না। খেলাফত,ইমান ও আমলে সালেহের পথে অন্তরায় সমুহঃ ১। দুনিয়াবী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ন্যায় মনোভাব ২। প্রদর্শনেচ্ছা। ৩। অধিক প্রেষনা। ৪। উদারতার নামে আয়েশী জীবন যাপন। ৫। বায়তুল মালের অসচ্ছতা। ৬। প্রশ্নবিদ্ধ সুরত ও নৈতিকতা। ৭। অসচ্ছ সদস্য(রোকন) তৈরী। ৮। মহিলাদের অর্থনৈতিক অসচ্ছতা ও পুরুষ নেতা নির্বাচনে ভোটদান। ৯। বাহিরের ইমাম মসজীদের ইমামের ন্যায় না হওয়া। ১০। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। ১১। বয়স্ক আলেমদের অবমূল্যায়ন। ১। দুনিয়াবী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ন্যায় মনোভাবঃ বিনা পুঁজির ব্যবসা হচ্ছে দুনিয়া প্রাপ্তির রাজনীতি,কিভাবে ক্ষমতাধর হবো,কিভাবে গাড়িবাড়ী করবো? কিভাবে আর একজনকে দমিয়ে নিজে সেই জায়গা দখল করবো ইত্যাদীর মত ইসলামী বিপ্লবের কোন জনশক্তি যদি মনে করে কিভাবে দুনিয়া প্রাপ্তির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠন করতে হবে? এই দলের রাজনীতি করে আমাকে কিভাবে ক্ষমতাধর হতে হবে,কিভাবে কিছু অর্জন করতে হবে,কিভাবে বাজারঘাট দখল করা যাবে, কিভাবে নেতৃত্ব পাওয়া যাবে, আমির সাহেবকে ধরে কোন সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা?ক্ষমতা পেলে কিভাবে বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া যাবে টপ টু বটম যে কোন নেতার বা কর্মী সহযোগীর ভিতর এরকম সামান্যতম কোন আকাংখা অন্তরে ধারন করে ময়দানে কাজ করলে সেখানে আল্লাহর প্রাপ্তি আসবেনা। ইসলামী বিপ্লবের পথে পা দেয়ার সাথে সাথে এ কথা মনের ভিতর বদ্ধমুল করে নিতে হবে যে, দুনিয়াবী স্বার্থ ত্যাগ করে ইসলামী বিপ্লব আল্লাহকে দেবার জন্য, আল্লহর সন্তুষ্টি ও আল্লাহর জান্নাত ব্যতিত দুনিয়াতে কোন কিছু পাবার জন্য নয়। মক্কার জীবনে এটার বাস্তব প্রমান সাহাবায়ে কেরাম রাঃ দুনিয়াবী স্বার্থ আত্মীয়তার বন্ধন সব কিছুকে পিছে রেখে আপল্লাহ ও তার রাসূলের মহব্বতে হিজরত করেছেন,সম্পদ দিয়েছেন,জীবন দিয়েছেন তারপরে একটা ইসলামী রাষ্ট্র পেয়েছেন।এ জন্য প্রতিটা স্তরের নেতাকে তার অধিনস্থদের প্রেষনা দিতে হবে এবং অধিনস্থদের অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি মুখি করতে হবে। بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَالدُّنْيَا- وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাত উত্তম ও চিরস্থায়ী। (আ‘লা ১৬-১৭)। عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله يَقُوْلُ وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِى الْاَخِرَةِ اِلَّا مِثْلَ مَايَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হল যেমন তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙ্গুল ডুবানোর পর লক্ষ্য করে দেখুক আঙ্গুল কি পরিমাণ পানি নিয়ে আসল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৬)। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে আঙ্গুলের পানি এবং সাগরের পানি কম-বেশ হওয়ার ব্যাপারে তুলনা যেমন ইহকাল ও জান্নাতের তুলনা তেমন। عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ فَقَالُوْا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ قَالَ فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)একটি কান কাটা মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এটাকে এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা তো এটাকে কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করব না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর চাইতেও অধিক নিকৃষ্ট’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৭)। عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৮)। عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهْوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘জাহান্নামকে কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে বিপদ-মুছীবত দ্বারা’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬০)। عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ» আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তিই সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাকে প্রয়োজনমাফিক রিযক প্রদান করা হল এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থেকেছে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৫)। عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: ارْتَحَلَتِ الدُّنْيَا مُدْبِرَةً وَارْتَحَلَتِ الْآخِرَةُ مُقْبِلَةً وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ. আলী (রাঃ) বলেন, দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত সম্মুক্ষে আসছে। আর তাদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা, আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন আমল নেই (বুখারী, মিশকাত হা/৫২১৫)। সূরা আ‘লার শেষ অংশে আল্লাহ বলেন, قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰی وَ ذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰی بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَاۖ وَ الْاٰخِرَةُ خَیْرٌ وَّ اَبْقٰی اِنَّ هٰذَا لَفِی الصُّحُفِ الْاُوْلٰی صُحُفِ اِبْرٰهِیْمَ وَ مُوْسٰی. সফলতা অর্জন করেছে সে-ই, যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে। এবং নিজ প্রতিপালকের নাম নিয়েছে ও নামায পড়েছে। কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও অথচ আখেরাত কত বেশি উৎকৃষ্ট ও কত বেশি স্থায়ী। নিশ্চয়ই এ কথা পূর্ববর্তী (আসমানী) গ্রন্থসমূহেও লিপিবদ্ধ আছে; ইবরাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।” এর পরেও কি ইসলামী বিপ্লবের পথে শহিদী কাফেলার সিপাহশালারা দুনিয়া চাওয়া পাওয়া নেতাদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারে? কখনো না। ২। প্রদর্শনেচ্ছাঃ সাফল্যের শর্তাবলী বইটা কর্মীদের এত পড়ানোর পরেও এই রোগটি ইসলামী আন্দোলনের টপ টু বটম সকল স্তরের ৯০ শতাংশ জনশক্তির ভিতর ভয়াবহ মরনবব্যধী ক্যান্সারের আকার ধারন করেছে।কোন মতেই থামানো যাচ্ছেনা প্রদর্শনেচ্ছা।নেতার সাথে ছবি তুলতেই হবে,নেতার সাথে সেলফী উঠাতেই হবে,নেতাকে দেখিয়ে সামনে সামনে ঘুরতেই হবে,চেয়ারে বসে আমার ছবিটা উঠছে কিনা? পোস্টারে আমার ছবিটা সুন্দর দেখাচ্ছে কিনা? ইত্যাদী মরন ব্যাধিতে ধরেছে উম্মতকে। ল.........লেখা চলমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

<marquee>সংস্কারের পথে ইসলামী বিপ্লব</marquee> মাওলানা আব্দুল হান্নান

ভূমিকাঃ জীবনের সসবটুকু প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন ...