সহীহ সালাত হানাফী মাযহাব
ভূমিকাঃ
জীবনের সমস্ত প্রসংসা মহান আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিমিত্তে,দরূদ ও সালাম বিশ্ব মানবতার সর্বশেষ পয়গাম্বর মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং সাহাবায়ে কেরাম আজমাইন রাঃ এবং আহলে বাইতের উপর।মুসলিম উম্মাহর ভিতর সালাত বা নামাজরে ফরজ ওয়াজীব নিয়ে মতাদ্বন্দ না থাকলেও সালাত আদায়ের কিছু সুন্নাহ নিয়ে তাবেঈন রঃ হতে যুগ যুগ পযর্ন্ত মতভেদ চলে আসছে এবং প্রত্যেকটা মতভেদের পক্ষে হাদিসের দলিল আছে।এই মতভেদ সমুহের সাথে সম্পৃক্ত হাদিস সমুহের মধ্যে যে সমস্ত হাদিসের রাবীদের ফেকাহের জ্ঞান বেশি এবং যে সমস্ত হাদিসের উপর ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ এবং বিখ্যাত ফোকাহা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর আমল পাওয়া যায় হানাফী মাযহাব মূলত সেগুলোর উপরেই আমলের জোর দিয়েছেন পাশাপাশি অন্যান্য সাহাবীদের সহিহ হাদিসের আমল ও গ্রহন করে। রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাতের ক্ষেত্রে হাদিসের উপর উম্মতের কয়েকজন পন্ডিতকে আল্লাহ এমন তৌফিক দান করেছেন যে, সালাত সংক্রান্ত সব সহিহ হাদিসগুলো নিয়ে এমন ভাবে তিনারা গবেষনা করেছেন যে তা চারটি পদ্ধতির মধ্যে চলে এসছে।সহিহ হাদিস মোতাবেক যে যেভাবেই সালাত আদায় করুক তার সালাত ঐ চার নিয়মের যেকোন এক নিয়মের মধ্যে পড়ে যাবে।যদিও কিছু মানুষ মিথ্যা দাবী করে যে, আমরা মাযহাব মানিনা।সম্প্রতি সময়ে উম্মতের ভিতর ফেৎনা সৃষ্টি এবং উম্মতকে আমল শূন্য ও আল্লাহর নিকট মানুষ যাতে তার আকুতি পেশ হতে বিরত থাকে সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য আর্ন্তজাতিক ভাবে ষড়যন্ত্র নেক সুরতে উম্মতের ভিতর প্রবেশ করেছে।তারা একমাত্র বোখারী শরীফকেই সহীহ হাদিস মনে করে।বোখারীর হাদিস সংখ্যা ৭১৭৫ এবং বোখারী আবিস্কার হয়েছে রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের খেলাফতে রাশেদার ৪০ হিজরী পযন্র্ত হাদিসের কোন গ্রন্থের প্রয়োজন হয়নি সর্বশেষ সাহাবী তোফায়েল রাঃ এর ইহধাম ত্যাগের(১০২)হিজরী পযন্র্ত ও কোন হাদিস গ্রন্থ ছিলনা।বোখারী শরীফ লেখা শেষ হয়েছে ২৩৩ হিজরীত আরো ৫বছর লেগেছে সংকলন করতে,আরো কয়েক বছর লেগেছে মানুষের হাতে পৌছাতেেএই যে দীর্ঘ্য একটা সময় তাবেঈ তাবে তাবেঈনদের মাঝে তো বোখারী ছিলনা তাহলে তিনারা কি সহীহ হাদিসের উপর আমল করেননি?অবশ্যই করেছেন।রাসুলের সাঃ জীবনের লক্ষ লক্ষ সহীহ হাদিসের মধ্যে ইমাম বোখারী রহঃ তিনার নিকট ও মুখস্ত ছিলো ৬ লক্ষ হাদিস তার ভিতর হতে মাত্র ৭১৭৫টি হাদিস এনেছেন তাহলে বাকী সহীহ হাদিস গুলো কোথায়?ইমাম বোখারীর বাকী সব হাদিস গুলো জাল বা সহীহ নয় এমন নয়,ইমাম বোখারী ছিলেন শাফেয়ী এবং মালেকী মাযহাব মতালম্ ইমাম তাইমিয়া রহঃ বলেন তিনি হাম্বলী মাযহাবের ও অনুস্বরন করতেন, এই জন্য বোখারীর ভিতর তিনি শাফেয়ী হাম্বলী এবং মালেকী মাযহাবের দলিলগুলো তিনি বেশি এনেছেন।এটা প্রতিটা মানুষের স্বভাবজাত একটা নিয়ম যে,মানুষ যেটার উপর চর্চা বেশি করবে সেইটা লিখতে তার কলম আগে প্রস্তত থাকবে,বোখারী শরীফের বেলায় ঠিক তাই ই করেছেন ইমাম বোখারী রহঃ।যদি ও ইমাম বোখারী রহঃ ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর ছাত্রের ছাত্।যাদের বোঝানোর জন্য কলেবরকে এত বড় করছি তারা হানাফি মাযহাবের যুব সম্প্রদায়। হানাফী মাযহাবের মত শক্তিশালী সহিহ হাদিসের আমল হতে দূরে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছে।বর্তমান সময়ে এসে আমাদেরকে একটা জিনিস মোথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে পাশ্চাত্যবাদীদের ঈমান বিধ্বংসী ক্রুসেড পরিকল্পনা।সামনা সামনি মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা মুসলমানদের আসল হাতিয়ার আবিস্কারের পথ খুজে পাই,এবং মুসলমানদের নিকট হতে এই হাতিয়ার ছিনিয়ে নিতে পারলেই মুসলমানেরা আর মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবেনা। সে হাতিয়ারের নাম হচ্ছে ঈমান।মুসলমানদের ঈমান নষ্টের যত ্পকরণ ছিলো সবগুলো অতি কৌশলে তারা মুসলমানদের হাতে তুলে দিয়ে ঈমান নষ্ট করতে সক্ষম সহয়েছে।মুসলমানদের এবাদতের ভিতর ইমান রক্ষার যে চাবীকাঠি ছিলো সেই এবাদতের ভিতরেও নেক সুরতে ভেজাল ঢুকানোর জন্য পাশ্চাত্যবাদীরা মুসলমানদের বিশ্বস্থ সুন্নাহ সমুহের কিতাব যেমন,বোখারী ,মুসলিম,আবু দাউদ,তীরমিযি,নাসাঈ ইবনেমাজা এই সমস্ত কিতাবগুলো আজ তাদের ছাপা খানায় ছাপাচ্ছে এবং সুকৌশলে ভিতরে শাব্দিক পরিবর্তন করছে।কোনটা আসল আর কোনটা নকল আলেম ছা্ড়া নির্ণয় করনা জাতির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।যুবকেরা নিজ ভাষায় এর অনুবাদ পড়ে দিন দিন আলেম উলামাদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।আসলে ঐ যুবক কি জানে সে কাদের ছাপানো কিতাবের অনুবাদ পড়ছেেএটা কি আসল বোখারী না পাশ্চাত্যবাদীদের লেখা বোখারী বুঝতে হলে আলেমদের সাথে পরামর্শ করে পড়তে হবে।আমরা কিয়ামতের খুব নিকটবর্তী যেকোন বিষয় সামনে আসলে অবশ্যই যোগ্যতার নিরিখে তা যাচাই করে গ্রহন করতে হবে।যাচাই বাছাইতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি,আর এর পিছনে সব চাইতে বড় কারণ হচ্ছে হানাফী মাযহাবের দলিল সমুহ উম্মতের নিকট উপস্থাপনে আমরা উলামা সমাজ ব্যর্থ হয়েছি।বিশেষ করে এদেশের তৌহিদী জনতার প্রানের স্পন্দন যুব সমাজকে টার্গেট করে এক শ্রেনী হানাফী মাজহাবের দলিলকে লুকিয়ে রেখে তাদের মতবাদের বই তাদের ঘাড়ে চাঁপানোর কাজ করে যাচ্ছে এবং কিছুটা সফল ও হচ্ছে শুধুমাত্র হানাফী মাযহাবের দলিল না জানার কারণে। এই গ্রন্থে শুধুমাত্র হানাফী মতালম্বীদের সালাতের জন্য যে সমস্ত শক্তিশালী দলিল সমুহ আছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।আমরা কেউ মানবীয় ভূলের উর্ধে না,আমার আলোচিত দলিল ছাড়াও যদি কোন শক্তিশালী দলিল হানাফী মাজহাবের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থেকে থাকে এবং আমার লেখায় কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হয় তবে তা উল্লেখের অধিকার যে কোন উলামা হযরত রাখেন।আমাকে জানালে আমি তা উল্লেখ পূর্বক পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করবো ইনশাআল্লাহ।এই গ্রন্থটি উম্মতের হাতে পৌছালে উম্মত অবশ্যই জানতে পারবে যে হানাফি মাজহাবের দলিল কত শক্তিশালী,তাহলে তারা আর বিভ্রান্ত হবেনা বলে আমি আশাবাদী।আরজ গুজার
এম এম আব্দুল হান্নান
সূচীপত্র
:সালাত বা নামাজ সম্পর্কে কিছু অগ্র কথা:
সালাত বা নামাজের ইতিহাস
মেরাজের পূর্বে এই উম্মতের উপর নামাজ নির্ধারিত ছিলো কিনা?
সালাত বা নামাজের জন্য পোশাক:
পবিত্রতা
বাহ্যিক অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা
যে যে অবস্থায় অযু ফরয হয়:
যেসব অবস্থায় ওযু ওয়াজিব:
যেসব কারণে অজু সুন্নত:
অজুর সুন্নাত সমুহ
ওযু নষ্ট হওয়ার কারণ সমুহ
অযুর ১৬টি মাকরূহ, অজু করার সময় এ কাজ সমুহ পরিহারের আপ্রান চেষ্টা করতে হবে
ওজু শুরু এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় দোয়া:
গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতার মাসআলা
গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
ফরজ গোসলের গুরুত্বপুর্ন কারণ
ফরজ গোসল করার নিয়ম
ফরয গোসলের পদ্ধতি
তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা
তায়াম্মুমের ইতিহাস
তায়াম্মুম ছহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত সমূহ :
পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ সমূহ
তায়াম্মুম করার নিয়ম
আভ্যন্তরীন অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা
নফসে মুতমাইন্নাহ
নফসে লাউয়ামা
নফসে আম্মারা
এবাদতের জন্য হালাল খাবার
কাঁপড় ও নামাজ বা সালাতের জায়গা পাক
সতর ঢাকা
আজান ও একামতের বর্ননা:
আযানের ইতিহাস:
সালাতের নিয়্যত
নামাজের জন্য কিবলামুখী হওয়া জরুরী:
সালাত বা নামাজ কিভাবে শুরু করবো
সুতরার বিধান
সালাত বা নামাজ শুরুর ১ম করনীয়
সালাত বা নামাজ শুরুর ২য় করনীয় এবংতাকবীরে তাহরীমাতে হাত কতদূর উঠবে
মহিলারা তাকবীরে তাহরিমার সময় কাঁধ বরাবর উঠাবে
সালাত বা নামাজে ৩য় করনীয় হাত কিভাবে কোথায় বাঁধতে হবে
হাত কোথায় বাঁধা হবে
নাভীর নিচে হাত বাঁধা
নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত
বুকের উপর হাত বাঁধার দুর্বল দলিল
আল্লাহু আকবর বলে হাত বাঁধার পর কোন দোয়া পড়তে হবে
নামাজে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ না পড়া:
ইমামের ক্বেরাতের সাথে মোক্তাদীদের করনীয়
সুরা ফাতিহার পরে আমিন আস্তে বা জোরে বলা সম্পর্কে
আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে কিছু আছার
রুকু ও সিজদার বর্ণনা
সিজদার অংগ সমুহ
দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া
হানাফী মাযহাব বারবার রফাইয়াদাইন কেন করেনা
২য় বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ
তাশাহহুদ পড়ার বিশেষ ফজিলত
২য় বৈঠকে তাশাহুদের পর ভূলে কতটুকু পরিমান দরূদ পড়ল সহু সিজদাহ দিতে হবে
সালাতের বৈঠকে আঙুল নাড়ানো সম্পর্কেঃ
আঙুল বারবার নাড়ানোর বিষয় খন্ডনঃ
আঙ্গুল কখন ইশারা করতে হয়
নফল বা একাকী সালাতের জন্য কিছু কবুলিয়াত দোয়া
সালাত বা নামাজে খুশু খুজুর গুরুত্ব
সালাম ফিরিয়ে নামাজ বা সালাত শেষ করা এবং কিছু মসনুন দোয়ার আমল করা
ফরজ নামাজ শেষে হাত তুলে দোয়া করা প্রসঙ্গ
মানুষের এবংগবাদী পশুপাখির সমস্যার জন্য হাত তুলে দোয়া করা
ফরজ নামাজের সময় সমুহ
ফজরের নামাজের সময়:
ফজরের নামাজের সময়ের হাদিস:
যোহরের নামাজের সময়:
যোহরের নামাজের সময়ের হাদিস:
আসরের নামাজের সময়:
আসরের নামাজের সময়ের হাদিস:
মাগরিবের নামাজের সময়:
মাগরিবের নামাজের সময়ের হাদিস
এশার নামাজের সময়:
এশার নামাজের সময় হাদিস:
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
এশরাকের নামাজের সময়
সালাতুল ইশরাকের সময়
চাশতের নামাজের সময়
আওয়াবীন নামাজের সময়
জানাজা নামাজের বিধান
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ানো
মাইয়্যেতের গোসল সংক্রান্ত বিবিধ মাসাইল:
জানাযা নামাযের নিয়মঃ
জানাজা নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে
কবরস্থানে দোয়া করা সম্পর্কে
মৃত্যু ব্যক্তির উদ্দেশ্যে করনীয়
তাদের স্মরণে মৃত্যুর পর চল্লিশা
লাখ কলমার নামে আমরা যা করি তা কিভাবে বৈধ হবে?
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি
মুসাফির ও মুসাফিরের নামাজ
সফরের সময় জামাআতে নামায:
মুসাফিরের জন্য আরো কতিপয় মাসআলা
সালাত বা নামাজ সম্পর্কে কিছু অগ্র কথা:
সালাত উইকিপিডিয়াতে সালাত সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে যে, নামায ফার্সি: نَمازশব্দ, সালাত বা সালাহ আরবি الصلوة আস-সালাহ, আরবি শব্দ ٱلصَّلَوَات আস-সালাওয়াত, অর্থ "প্রার্থনা", "দোয়া", বা "প্রশংসা, নামাজ ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময় নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত ফার্সি: نماز এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের আরবি: صلاة, কুরআনিক আরবি:صلاة, প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় 'সালাত'-এর পরিবর্তে সচরাচর 'নামাজ' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত একবচন বা সালাওয়াত বহুবচন। "সালাত" -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি।পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবিরে তাহরিমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম ফিরানো দ্বারা শেষ হয়’।সালাত বা নামাজের ইতিহাস
সালাত বা নামাজশুধু মাত্র এই উম্মতের সময় হতে শুরু হয়েছে বিষয়টি এমন না,এই উম্মতের পূর্ববর্তী নবী আঃএবং উম্মতদের প্রতিও নামাজ নির্ধারিত ছিলো।বর্ণিত আছে, হজরত আদম (আ.) যখন দুনিয়ায় পতিত হলেন তখন আসরের ওয়াক্ত ছিল। দেখতে দেখতে সূর্য লাল বর্ণ ধারণ করল এবং ধীরে ধীরে ডুবে গেল। সমগ্র পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। হজরত আদম (আ.) ছিলেন জান্নাতে। সেখানে অন্ধকারের নামগন্ধও ছিল না। সুতরাং তিনি জীবনেও কোনো দিন অন্ধকার দেখেননি। এবার তিনি অন্ধকারে ভয়ঙ্কর রকমের ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। আর এ অন্ধকারের মধ্যে ভয়ানক জীবজন্তুর ভীষণ তর্জনগর্জন শুনতে পেলেন। ভয়াবহ অন্ধকারে সারা রাত কাটালেন। ভোরে সূর্যোদয় হলো। তা দেখে আদম (আ.)-এর মনে আশার সঞ্চার হলো। হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আদম (আ.)-কে জাগ্রত করে সুবহে সাদিকের সুসংবাদ দিলেন। বললেন হে আদম! উঠুন, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। দেখুন অন্ধকার গত হয়ে সূর্য উদয় হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হজরত আদম (আ.) দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। এক রাকাত সেই ভীষণ অন্ধকার দূরীভূত হওয়ার কারণে আর এক রাকাত দিনের আলো প্রকাশ হওয়ার কারণে। এটি মানবজাতির প্রথম নামাজ ছিল; যা আদম (আ.) একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। জনৈক আনসারি সাহাবি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! ফজরের নামাজ সর্বপ্রথম কোন নবী পড়েছিলেন? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, ফজরের নামাজ সর্বপ্রথম হজরত আদম (আ.) পড়েছিলেন। জোহরের নামাজ সর্বপ্রথম হজরত ইবরাহিম (আ.) পড়েছিলেন। যখন আল্লাহ তাঁকে নমরুদের অগ্নিকু- থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। আসরের নামাজ সর্বপ্রথম হজরত ইয়াকুব (আ.) পড়েছিলেন। যখন জিবরাইল (আ.) তাঁকে স্বীয়পুত্র ইউসুফ (আ.)-এর সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন। মাগরিবের নামাজ সর্বপ্রথম হজরত দাউদ (আ.) পড়েছিলেন। যখন আল্লাহর দরবারে তাঁর তওবা কবুল হয়েছিল। ইশার নামাজ সর্বপ্রথম হজরত ইউনুস (আ.) পড়েছিলেন যখন তিনি মাছের পেট থেকে মুক্তিলাভ করেন। গুনিয়াতুত তালেবিন। ইমাম তাহাবী শরহে মানিউল আসার কিতাবে নামাজের ইতিহাসটি আর একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করেন[১] ফজরের নামায: পয়গম্বর আদম (আ:)-এর স্মরণে ভোরে (ফজরের ওয়াক্তে) পয়গম্বর আদম আলাইহিস্ সালামের তওবা যখন কবূল করা হয়, তখন তিনি দুই রাক’আত নামায (কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে) আদায় করেন; ফলে এটা ফজর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।
[২] যোহরের নামায: পয়গম্বর ইবরাহীম (আ:)-এর স্মরণে পয়গম্বর ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম দুপুরে তাঁর পুত্র পয়গম্বর এসহাক্ব আলাইহিস্ সালামের জন্ম দ্বারা আশীর্বাদধন্য হলে চার রাক’আত নামায আদায় করেন; ফলে এটা যোহর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।
[৩] আসরের নামায: পয়গম্বর উযায়র (আ:)-এর স্মরণে পয়গম্বর উযায়র আলাইহিস্ সালামকে এক ’শ বছর পরে পুনরুত্থিত করে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কতোকাল তুমি এই অবস্থায় ছিলে?’ তিনি আরয করেন, ‘একদিন বা তার কিয়দংশ।’ অতঃপর তিনি চার রাক’আত নামায (শোকরানা) নামায আদায় করেন। এটাই ’আসর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।
[৪] মাগরেবের নামায: পয়গম্বর দাউদ (আ:)-এর স্মরণে বর্ণিত আছে যে সর্ব-পয়গম্বর উযায়র (আলাইহিস্ সালাম) ও দাউদ (আলাইহিস্ সালাম)-কে সূর্যাস্তের সময় ঐশী ক্ষমা মঞ্জুর করা হয়। তাঁরা চার রাক’আত নামায আদায় করার নিয়্যত করেছিলেন, কিন্তু (শারীরিক) দুর্বলতা বা ক্লান্তির কারণে তৃতীয় রাক’আত-শেষে বসে থাকেন (নামায পুরোপুরি সম্পন্ন করতে অক্ষম হয়ে)। ফলে এটা মাগরেব ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়, যা তিন রাক’আতবিশিষ্ট।
[৫] ’এশার নামায: মহানবী (দ:)-এর স্মরণে ’এশা’র নামায, যেটা দিনের সর্বশেষ প্রার্থনা, সেটা যিনি সর্বপ্রথম আদায় করেন তিনি হলেন আমাদের মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ফরজ সলাত তরককারীর বা পরিত্যাগকারীর বিধান যা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রকার ওযর ব্যতীত অলসতা অবহেলা করে করা হয়: সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ তা'য়ালা কোরআন মাজীদে তার বান্দাদের সর্বাধিকবার সালাত কায়িম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত বলেছেন। যেখানে সলাতের স্থান দ্বিতীয় স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে ;সহীহুল বুখারীর ৮ নাম্বার হাদীস। আর আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকাইলী রাহি. বলেছেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন সাহাবী সালাত ব্যতিত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী কাজ বলে মনে করতেন না, জামে'ঊত তিরমিযীর ২৬২২নাম্বার সহীহ হাদীস।
অতঃপর মুসলিম উম্মাহর মাঝে সালাত অস্বীকারকারী কাফির হওয়ার উপর ইজমা সাব্যস্ত হয়েছে । পাশাপাশি এ সম্পর্কে আরেকটি মুসলিম উম্মাহর ইজমা হয়েছে যে, সালাত ত্যাগ করা মানে সালাত অস্বীকার করা ;ফিক্বহুস সুন্নাহ।একজন মুসলমান যখন নামাজের জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহন করবে তখন প্রথমেই তাকে পোশাকের স্বরনাপন্ন হতে হবে,তারপর পবিত্রতা এমনি ভাবে ধারাবাহিক কিছু কার্য্যক্রম সম্পন্ন করে সালাত বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেরাজের পূর্বে এই উম্মতের উপর নামাজ নির্ধারিত ছিলো কিনা?
ঐতিহাসিক বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এবং দীর্ঘ সময় পরে সূরা মু’মিন এর ৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ অর্থঃ অতএব, আপনি সবর করুন নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রর্থনা করুন এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন। মোকাতেল ইবনে সোলায়মান (রহ.) বলেন, ইসলামের শুরুর দিকে মহান আল্লাহ দুই রাকাত নামাজ সকালে ও দুই রাকাত নামাজ সন্ধ্যার জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। সকাল-সন্ধ্যার ইবাদত সূচনা থেকেই ছিল। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম মেরাজের ঘটনার আগেই নামাজ আদায় করতেন। তবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে অন্য কোনো নামাজ ফরজ ছিল কি না। কেউ কেউ বলেন, সূর্য উদয় হওয়ার আগে ও অস্ত যাওয়ার আগে এক একটি নামাজ ফরজ ছিল। বারা ইবনে আজেব (রা.) ও ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও এ ধরনের হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, এই নামাজ ছিল প্রথম দিকে ফরজের অন্তর্ভুক্ত। (মুখতাসারুস সিরাহ, শেখ আবদুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৮৮) ইবনে হিশাম (রহ.) বর্ণনা করেছেন, (ইসলামের সূচনাকালে) রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নামাজের সময় পাহাড়ে চলে যেতেন এবং গোপনে নামাজ আদায় করতেন। একবার আবু তালেব রাসুল (সা.) ও আলী (রা.)-কে নামাজ পড়তে দেখে ফেলেন। তিনি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁকে জানানোর পর তিনি বলেন, এই অভ্যাস অব্যাহত রেখো। (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭)সালাত বা নামাজের জন্য পোশাক:
আল্লাহর ইসলাম সহজ মোল্লার ইসলাম অনেক কঠিন,আমাদের ইসলাম এখন কাঁপড়ের মোড়কের মধ্যে চলে এসছে।জুব্বা,পাগড়ী,টুপিই একমাত্র ইসলামের পোশাক এমন ধারনা লালন করে কিছু মানুষ বাকীদেরকে যুগযুগ ধরে প্রতিপক্ষ হিসাবে নেতিবাচক ফতোয়া প্রদান করে মুসলমানদের নানা গোত্রে বিভক্ত করে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তাআলা বলেনيَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا
‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সূরা আ’রাফ ২৬)
আলোচ্য আয়াত থেকে বোঝা যায়, যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম; সুতরাং নামাজে এধরণের পোশাক পরিধান করা যাবে না।আবার বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়েরা এমন পোশাক পরে যা অত্যান্ত আটসাট এগুলোও পরিত্যাজ্য।
পক্ষান্তরে যে পোশাক পরিধানের পর সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে না, তা নামাজে পরিধান করা যাবে। তবে নামাজে কেবল সতর আবৃত করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়নি, বরং সাজসজ্জার পোশাকও পরিধান করতে বলা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন
,يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ
‘হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও।'(সূরা আ’রাফ ৩১)
প্রত্যেকটা মুসলমান নর নারী নামাজির জন্য এই আয়াতের তাৎপর্য্য অনুধাবন অত্যান্ত জরুরী।“প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা করে নাও”এটা তো আল্লাহ তায়ালার আদেশ।আল্লাহ এই আদেশ দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন?আমরা যখন সাধারণ কোন আত্মীয় স্বজনের বাসায় যায় তখন কিন্ত আমরা সাজগোজ ছাড়া যায়না,শুধু গেন্জিগায়ে লুঙ্গী পরে মাথায় গামছা দিয়ে কিন্ত আমরা সাধারণ আত্মীয়দের বাড়ীও যায়না।আবার যদি গুরুত্বপূর্ন কোন বড়লোক আত্মীর বাসায় দাওয়াত পাওয়া যায় তাহলেতো সাজসজ্জা করার জন্য যা প্রয়োজন আমরা তা্ ই করি,প্রয়োজনে বাজার থেকে নুতন কাপড় কিনে আনি।আবার কোন কারণ বশতঃ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট আপনাকে দাওয়াত করলো সেখানে সর্বোচ্চ সাজসজ্জা করে আপনি যাবেন। এই সমস্ত ছোট বড় আত্মীয় স্বজন,প্রধানমন্ত্রী,প্রেসিডেন্ট কেউ কিন্ত আপনাকে সাজু গুজু করে তাদের বাড়ি যেতে বলেনি।দুনিয়ার আত্মীয় স্বজন,নামী দামী মানুষের বাড়ী যেতে যদি আপনার অনেক সাজসজ্জা করার প্রয়োজন হয়। তাহলে কুলকায়েনাতের মালিকের সাথে নামাজে সাক্ষাত করতে যাবেন আর তিনি আপনাকে বলেও দিচ্ছেন যে সাজসজ্জা করে আমার সামনে আসো আর আপনি যদি ঘাড়ে একটা গামছা ফেলে,ময়লা একটা কাপড় পরে হাফ গেন্জি বা শার্ট গায়ে দিয়ে দায়সারা নামাজে দাঁড়ান সেটা কতটুকু যৌক্তিক হবে?যার পোশাক নেই তার জন্য ঠিক আছে কিন্ত যার কাপড় আছে তার জন্য নামাজে ঐ সমস্ত দায়সারা পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানো মাকরুহ।
এখন আমরা পোশাকের কিছু শ্রেনী বিন্যাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি
১) ফরজ পোশাক :
এমন পোশাক, যা দ্বারা সতর ঢেকে যায়।(২) মুস্তাহাব পোশাক :
এমন পোশাক, যা রাসুল (সা.)-এর পোশাকের মতো বা তাঁর পোশাকের খুব কাছাকাছি অথবা সমকালীন নেককার লোকদের পোশাকের মতো হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলি।একেক সিলসিলা একেক রকম পোশাক তৈরী করে সেটাকে ইসলামের পোশক নাম করন করে বাজার জাত করছে এবং নিজেদের মতের লোকদের আকৃষ্ট করে ইসলামের নাম করে তাদের বানানো মতকে উম্মতের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।আমরা এমন কোন হাদিস বিশ্বনবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন কোন নির্দেশনা পাইনা যেখানে নবীজি সাহাবীদের উপর কোন বিশেষ ধরনের টুপি,পোশাক পাগড়ী চাপিয়ে দিয়েছেন যেটা পরতেই হবে।তাহলে আমাদের দেশের ইসলামের নেতারা তাদের অনুসারীদের উপর বিশেষ ধরনেরর টুপ,পিান্জাবী,পাগড়ী চাপিয়ে দেবার দলিল কৈ পাইল?(৩) মুবাহ ও জায়েজ পোশাক :
এমন পোশাক, যার মধ্যে শরিয়তের সীমানার ভেতর থেকে সৌন্দর্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়।(৪) মাকরুহ পোশাক :
এমন পোশাক, যা পরিধান করার দ্বারা পরিধানকারীর অহংকার, প্রসিদ্ধি বা অন্যকে ছোট করা উদ্দেশ্য হয়।(৫) হারাম পোশাক
: পুরুষ মহিলার মতো এবং মহিলা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। নাবালেগ ছেলে-মেয়ের বেলায়ও এ মাসআলা প্রযোজ্য। তবে যে এলাকায় নারী ও পুরুষের পোশাকের খুব বেশি পার্থক্য থাকে না, সেখানে পোশাক এক হওয়া হারামের মধ্যে গণ্য হবে না। তাদের পোশাকের মধ্যে পার্থক্য হবে হিজাব বা টুপি ইত্যাদি দ্বারা। (ফাতাওয়া শামি : ৫/২২৩, ফাতহুল বারি : ১০/৩৪৫, বুখারি : ২/৮৭৪, ইবনে মাজাহ : ১/৩৪৮, ২/২৯৯, নাইলুল আউতার : ৬/১২৬) পুরুষ ও নারীর কাপড় পরিধানের উদ্দেশ্য সতর ঢাকা। যে কাপড় দ্বারা এ উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না, তা পরাও জায়েজ নয়। এমনিভাবে মুসলমানের জন্য অমুসলমানের ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। যেমন—হিন্দুদের মতো ধুতি ও গলায় পৈতা পরা, কপালে সিঁদুর বা চন্দন লাগানো, বৌদ্ধদের মতো গেরুয়া পোশাক পরিধান করা, খ্রিস্টানদের মতো ক্রুশ বা ক্রুশের বিকল্প কিছু পরিধান করা ইত্যাদি। প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। পুরুষের জন্য অহংকারবশত টাখনুর নিচে জামা-পায়জামা পরিধান করা মাকরুহে তাহরিমি। অহংকারের নিয়ত না থাকলে মাকরুহে তানজিহি। জখম ইত্যাদি ওজরের কারণে টাখনুর নিচে কাপড় পরা জায়েজ। মহিলাদের জন্য পূর্ণ পা ঢেকে মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে পরা উত্তম। টুপি পরিধান করা সুন্নত। রাসুল (সা.) সাদা টুপি বেশি পরিধান করতেন। টুপি গোল, লম্বা যেকোনোটাই হতে পারে। নামাজ বা নামাজের বাইরে পাগড়ি পরিধান করা সুন্নত। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩৩৩, আবু দাউদ : ২/২০৩, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/১২১) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হল, এক কাপড়ে নামাজ হবে কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’খানা করে কাপড় রয়েছে। অতঃপর হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর নিকট একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহপাক যখন তোমাদের সুযোগ বাড়িয়ে দেবেন তখন তোমরা বাড়ানো পোশাক ব্যবহার করো। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এক ব্যক্তি একাধিক কাপড় পরিধান করেও নামাজ আদায় করতে পারবে।এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত রাসূল (সা.) কে পোশাকের প্রথম সীমা অর্থাৎ ওয়াজিব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আর হযরত ওমর ফারুক রা. কে পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আবার এও হতে পারে যে রাসূল (সা.) এর নিকট পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা বলেননি, যা হযরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন। অর্থাৎ, একাধিক কাপড় পরিধানের বিষয়।যদি তিনি তা বলতেন, তাহলে তা শরীয়তের বিধান হয়ে যেত। এ অবস্থায় যার নিকট কাপড় নেই সে অন্তরে কষ্ট পেত। আর ১ কাপড়ে তার নামাজ পরিপূর্ণ হতো না। কারণ সে তার ধারণা অনুযায়ী পরিপূর্ণ পোশাকে নামাজ আদায় করছে না। আর হযরত ওমর ফারুক (রা.) অবগত ছিলেন যে, শরীয়ত অবতীর্ণ হওয়ার সময় শেষ ও সমাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এও অবগত ছিলেন যে, নামাজের মধ্যে পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। এজন্য তিনি নামাযের মুস্তাহাব পোশাকের প্রদান করেছেন। যত ধরনের পোশাক পরেই নামাজ বা সালাত পড়া হোক সব পোশাক পাক পবিত্র হতে হবে।পবিত্রতা
সালাত বা নামাজের জন্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে পবিত্রতা।সালাত কায়েমের জন্য যতটুকু পবিত্রতার প্রয়োজন,এখানে ততটুকুই আলোচনা করা হবে।শরীরপাক
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى (إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ ۚإِلَى الْكَعْبَيْنِ)وَإِن كُنتُم جُنُبًا فَاطَّهَّروا
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ (ওহে যারা ঈমান এনেছ!) তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন ধৌত করে নিবে নিজেদের মুখমন্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত আর মাসেহ করে নিবে নিজেদের মস্তক এবং ধৌত করে নিবে, নিজেদের পা গ্রন্থি পর্যন্ত।যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৬)এখানে শুধু ওজুর আলোচনাঃ কোরআনের শব্দচয়ন সংক্ষিপ্ত কিন্ত এর ভাব ব্যাক্ষা গাভীরতা অনেক ব্যপক।” جُنُبًا” কোরআনের এই শব্দটার ভিতর অপবিত্রতার ব্যাপারে দুটি ব্যাক্ষা নিহিত আছে,১। বাহ্যিক অপবিত্রতা ২। অভ্যন্তরীন অপবিত্রতা।এবাদত কবুলের এবং আল্লাহর নিকট এবাদতের গ্রহন যোগ্যতা ও পরকালে এর দ্বারা মুক্তির জন্য দুই ধরনের অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন একান্ত অপরিহার্য়্য কর্তব্য।
১। বাহ্যিক অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা
অজু না থাকলে, গোসল ফরজ বা ওয়াজিব হলে,অজু ,গোসল,এবং তায়াম্মুমের মাধ্যমে যে অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করা হয় সেটা হচ্ছে বাহ্যিক পবিত্রতা।যেগুলো আমরা সাধারনতঃ করে থাকি।এই বাহ্যিক অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জনের ভিতরেও আমাদের অনেক গলদ রয়ে গেছে।অজু,গোসল এবং তায়াম্মুমের মাধ্যমে আমরা যখন অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করতে যায় তখন পবিত্রতা অর্জন করনে ওয়ালা বান্দার সাথে আল্লাহর একটা যোগাযোগ স্থাপন হয় যেমনঃ প্রতেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ধোয়া বা মাসেহ করার সাথে সাথে বান্দা আল্লাহর প্রতি রুজু হয়ে দোয়া পড়ে আর বলে ও আল্লাহ এর মাধ্যমে আমার শরীর হতে গোনাহগুলো ঝরিয়ে আমাকে অপবিত্রতা হতে পবিত্র করে দাও।আমরা কি করি? এগুলো করার সময় আমাদের কয়জনের এ রকম কানেকশন হয়েছে?খুব কম,হাজারে ২/১ জন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।আমরা যেটা করি, অজু গোসল বা তায়াম্মুমের সময় পাশে যদি কোন লোক থাকে তবে জীবনের যত গল্প আছে সেগুলো আমরা করতে থাকি। বুজুর্গানে দ্বীন অজুতে বিভিন্ন অঙ্গ ধোয়ার সময় সেই দোয়াসমূহ পড়ার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে অজুর সময় ধ্যান খেয়াল ও মনোযোগ আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট থাকে।নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি
উপরে বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ওযুর ফরজ ৪টি নির্ধারিত সহয়েছে১। সমস্ত মোখ ভাল ভাবে ধৌত করা।
২। হাতের কনুই সহ ভাল ভাবে ধৌত করা।
৩। মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা।
৪। দুই পায়ের টাকনু সহ ধৌত করা।
এগুলো হচ্ছে ওযুর ফরজ। এগুলো থেকে যেকোনো একটি ছুটে গেলে অথবা এই স্থান গুলোর পশম পরিমাণ জায়গা শুকনা থাকলে ওযু হবে না।
যে যে অবস্থায় অযু ফরয হয়:
১. প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রে অযু ফরয, সে নামায ফরয হউক বা ওয়াজিবই হউক, সুন্নাত বা নফল যা ই হউক।২. যানাযার নামাযে অযু করা ফরয
৩. সিজদায়ে তিলাওয়াতের অযু করা ফরজ।
যেসব অবস্থায় ওযু ওয়াজিব:
১. কাবা শরীফ তাওয়াফের ক্ষেত্রে।২. কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে।
যেসব কারণে অজু সুন্নত:
১. ঘুমানোর পূর্বে অযু করা সুন্নাত।২. গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নাত।
ওযুর বেশ কিছু সুন্নত রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে শরীয়তে তাগিদ এসেছে ও করলে সওয়াব হবে। এবং অধিকাংশ ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে। এমন বিষয়গুলোকে সুন্নাত বলা হয়।
অজুর সুন্নাত সমুহ
১। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অজু শুরু করা।
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، وَبِشْرُ بْنُ مُعَاذٍ الْعَقَدِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حَرْمَلَةَ، عَنْ أَبِي ثِفَالٍ الْمُرِّيِّ، عَنْ رَبَاحِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ بْنِ حُوَيْطِبٍ، عَنْ جَدَّتِهِ، عَنْ أَبِيهَا، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ
রাবাহ ইবনু আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তার দাদীর সূত্রে, তিনি তার পিতার (সাঈদ ইবনুযায়িদ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাঈদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি তার ওযু হয়নি। -হাসান। ইবনু মাজাহ– (৩৯৯)
أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَسَنِ الْمِقْسَمِيُّ، قَالَ أَنْبَأَنَا حَجَّاجٌ، قَالَ قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ حَدَّثَنِي شَيْبَةُ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ عَلِيٍّ، أَخْبَرَهُ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَلِيٌّ، أَنَّ الْحُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ، قَالَ دَعَانِي أَبِي عَلِيٌّ بِوَضُوءٍ فَقَرَّبْتُهُ لَهُ فَبَدَأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهُمَا فِي وَضُوئِهِ ثُمَّ مَضْمَضَ ثَلاَثًا وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثًا ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلاَثًا ثُمَّ الْيُسْرَى كَذَلِكَ ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ مَسْحَةً وَاحِدَةً ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثَلاَثًا ثُمَّ الْيُسْرَى كَذَلِكَ ثُمَّ قَامَ قَائِمًا فَقَالَ نَاوِلْنِي فَنَاوَلْتُهُ الإِنَاءَ الَّذِي فِيهِ فَضْلُ وَضُوئِهِ فَشَرِبَ مِنْ فَضْلِ وَضُوئِهِ قَائِمًا فَعَجِبْتُ فَلَمَّا رَآنِي قَالَ لاَ تَعْجَبْ فَإِنِّي رَأَيْتُ أَبَاكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ مِثْلَ مَا رَأَيْتَنِي صَنَعْتُ يَقُولُ لِوُضُوئِهِ هَذَا وَشُرْبِ فَضْلِ وَضُوئِهِ قَائِمًا
ইবরাহীম ইবনু হাসান মিকসামী (রহঃ) হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার পিতা আলী (রাঃ) আমাকে উযূর পানি আনতে বলেন। আমি তাঁর নিকট পানি এনে দিলাম। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে আরম্ভ করলেন। (প্রথমে) উযূর পানিতে হাত ঢুকাবার পূর্বে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। এরপর তিন বার কুলি করেন ও তিন বার নাক ঝাড়েন। তারপর তিন বার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং ডান হাত তিনবার কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। অনুরূপভাবে বাম হাতে ধৌত করলেন এবং একবার মাথা মাসাহ করেন। তারপর টাখনু পর্যন্ত ডান পা তিনবার এবং অনুরূপভাবে বাম পা ধৌত করেন। পরে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন, পানির পাত্রটা (আমার হাতে) দাও। আমি (তাঁর উযূর পর যে পানিটুকু পাত্রে ছিল তা সহ) পাত্রটি তাঁকে দিলাম। তিনি উযূর অবশিষ্ট পানিটুকু দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন। আমি তাঁকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে অবাক হলাম। তিনি আমার অবস্থা দেখে বললেনঃ অবাক হয়ো না। তুমি আমাকে যেমন করতে দেখলে, আমিও তোমার নানা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে দেখেছি। আলী (রাঃ) তাঁর এ উযূ (ওজু/অজু/অযু) এবং অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে বলছিলেন। সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ হাঃ ১০৭।
২. কবজি সহ উভয় হাত তিন বার ধোয়া।
৩. কুলি করা।
৪. নাকে পানি দেওয়া।
৫. মেসওয়াক করা, অজু শুরুতে ।
৬. সমস্ত- মাথা একবার মসেহ করা।
৭. প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার করে ধোয়া।
৮. কান মসেহ করা।
৯. হাতের আঙ্গুল সমুহ খেলাল করা।
১০. পায়ের আঙ্গূল সমুহ খেলাল করা।
১১. ডান দিক থেকে অজু শুরু করা।
১২. ক্বোরানে বর্নিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
১৩. গর্দান মসেহ করা।
১৪. দুই কান মসেহ করা।
১৫. এক অঙ্গের পানি শুকানোর পুর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
বি:দ্র: পুরুষের ঘন দাড়ি থাকলে মুখমন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতে তিন বার দাড়ি খিলাল করতে হবে। এছাড়া বাকি যা আছে সেগুলো মুস্তাহাব, যা করলে সওয়াব হবে এবং না করলে কোন গুনাহ হবে না।
ওযু নষ্ট হওয়ার কারণ সমুহ
১. প্রসাব বা পায়খানা করলে।২. পায়খানার রাস-া দিয়ে বায়ু বা অন্য কিছূ নির্গত হলে।
৩. শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
৪. নিদ্রাভিভুত হলে অর্থাৎ কাত হয়ে বা হেলান দিয়ে কিংবা এমন কিছুতে ঠেস দিয়ে যে,তা সরিয়ে নিলে সে পড়ে যাবে।
৫. মুখ ভরে বমি করলে।
৬. নামাযের মধ্যে শব্দ করে হাসলে।
৭. পাগল বা মাতাল হলে।
৮. কারো নাক দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হলে।
৯. যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত বের হয় এবং থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমান বেশী বা সমান হয় তাহলে ওযু ভেঙ্গে যাবে।
১০. স্ত্রীকে কাম ভাব সহকারে স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১১. লজ্জা স্থানে বিনা আবরনে হাত পড়লে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
অযুর ১৬টি মাকরূহ, অজু করার সময় এ কাজ সমুহ পরিহারের আপ্রান চেষ্টা করতে হবে
১।অযুর জন্য নাপাক জায়গায় বসা,২।নাপাক জায়গায় অযুর পানি ফেলা
, ৩।অযুর অঙ্গ সমূহ থেকে লোটা (বদনা) ইত্যাদিতে ফোঁটা ফোঁটা পানি ফেলা, (মুখ ধোয়ার সময় পানিপূর্ণ অঞ্জলীতে সাধারণত মুখমন্ডল হতে পানির ফোটা পড়ে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন)
৪।কিবলার দিকে থুথু, কফ, কুলির পানি ইত্যাদি নিক্ষেপ করা,
৫।প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা,
৬। অতিরিক্ত পানি খরচ করা (আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমী “বাহারে শরীয়াত (সংগৃহীত) ”১ম খন্ডের ৩০২-৩০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: নাকে পানি দেয়ার সময় আধা অঞ্জলী থেকে বেশি পানি ব্যবহার করা অপচয়)
৭।এত কম পানি ব্যবহার করা যাতে সুন্নাত আদায় হয় না। অতএব পানির নল এত বেশি খোলাও উচিত নয় যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পড়ে, আবার এত সামান্য পরিমাণ খোলাও উচিত নয় যাতে সুন্নাত আদায় না হয় বরং মধ্যম ভাবেই পানির নল খোলা উচিত।
৮।মুখে পানি মারা,
৯। মুখে পানি দেয়ার সময় ফুঁক দেয়া,
১০।এক হাতে মুখ ধোঁয়া কারণ এটা রাফেজী ও হিন্দুদের রীতি,
১১।গলা মাসেহ্ করা। ১২। বাম হাতে কুলী অথবা নাকে পানি দেয়া।
১৩।ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা,
১৪।তিনবার নতুন পানি দিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ্ করা,
১৫। রোদের তাপে গরম করা পানি দিয়ে অযু করা,
১৬ মুখ ধোয়ার সময় উভয় ঠোঁট ও উভয় চক্ষু দৃঢ়ভাবে বন্ধ রাখা। যদি ঠোঁট ও চোখের কিছু অংশও শুষ্ক থেকে যায় তাহলে অযুই হবে না। অযুর প্রতিটি সুন্নাত বর্জন করা মাকরূহ আর প্রতিটি মাকরূহ বর্জন করা সুন্নাত। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩০০-৩০১ পৃষ্ঠা)
ওজু শুরু করার দোয়া:
তাই বুজুর্গানে দ্বীন বলেছেন, ওজু শুরু করার সময় এই দোয়া পড়বে,بسم الله العلى العظيم والحمدلله على ملت الا سلام
আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি, এবং সকল প্রশাংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি ইসলামের দৌলত প্রদান করেছেন।
কবজি ধোয়ার দোয়া:
এরপর হাতের কবজি ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم انى اسئلك اليه من والبركة واعوذبك من الشؤم والهلاكة
আয় আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণ ও প্রাচুর্যের প্রার্থনা করছি, এবং ধ্বংস ও অমঙ্গল থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।
কুলি করার দোয়া:
এরপর কুলি করার সময় এই দোয়া পড়াবে,اللهم اعنى على تلا وة القران وذكرك وشكر وحسن عبادتك
আয় আল্লাহ, আমাকে কোরআন তেলাওয়াত আপনার জিকির ও শোকর এবং সুন্দর মতো আপনার ইবাদত করার তাওফিক দিন।
নাকে পানি দেওয়ার দোয়া:
নাকে পানি দেয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم ارحنى دائحة الجنة والا ترحنى دائحةالنار
আয় আল্লাহ আমাকে জান্নাতের সুগন্ধি শোকান এবং জাহান্নামের দুর্গন্ধ শোকাবেন না।
চেহারা ধোয়ার দোয়া
: চেহারা ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم بيّض وجهى يوم تبيّضُ وجوه وسودّ وجوه
আয় আল্লাহ যে দিন কতক চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কতক চেহারা মলিন হবে সেই দিন আপনি আমার চেহারা উজ্জ্বল রাখুন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
يوم تبيض وجوه وسودّوجوهٌ
‘সেদিন হাশরের ময়দানে কতক চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কতক চেহারা হবে মলিন।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১০৬) আমালে সালেহ করেছে এমন সকল মুমিনের চেহারা আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রগে ঝলমলে উজ্জ্বল হবে, অন্যদিকে কাফের মুশরিকদের চেহারা হবে মলিন, কালিমাখা যুক্ত, অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وجوه يومئذناضبرةه الى ربها نا ظرةه وجوه يومئذباسرة تظن ان يفعل بها فاقرة-
কেয়ামতের দিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল, তারা তাদের প্রতি পালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে, আর সে দিন কিছু চেহারা থাকবে উদাস, তারা ধারনা করবে, তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করা হবে, (সূরা: কিয়ামা, আয়াত: ২২/২৫)। আর এক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
وجوه يو مئذ مسفرة ضاحكة مستبشرة- وجوه يو مئذ عليها غبرة- ترهقها قترة- اولئك هم الكفرة الفجرة
‘এবং বহু মুখমণ্ডল সে দিন হবে উজ্জ্বল সহাসা, প্রফল, এবং বহু মুখমণ্ডল সে দিন হবে ধুলো মলিন, তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে, তারাই হবে কাফের পাপিষ্টের দল, (সূরা: আবাসা, আয়াত: ৩৮-৪২)। কেয়ামতের দিন অঙ্গসমুহ উজ্জ্বল হবে: হাশরের ময়দানে মানুষের চেহারার উজ্জ্বলতা কিংবা মলিনতা দেখেই বোঝা যাবে তার ঠিকানা কোথায় এবং কোথায় যেতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় নিয়মিত অজু করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তার চেহারা কপাল হাত পাসহ সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঝলমলে উজ্জ্বল করে তুলবেন, দূর থেকে তার অঙ্গ প্রতঙ্গের উজ্জ্বলতা দেখে লোকজন বুঝতে পারবে, লোকটি নামাজের উদ্দেশ্যে নিয়মিত অজু করত। (বুখারি, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকজনের চেহারা উজ্জ্বল সাদা থাকবে। তাদের হাত পাও সাদা, চমকাতে থাকবে, কেয়ামত অবশ্যই সঙ্গটিত হবে, সেদিন চেহারা উজ্জ্বলতা হবে, আল্লাহ তায়ালার দরবারে মর্যাদাশীল হওয়ার আলামত, আর চেহারায় মলিনতা আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রখ্যাত হওয়ার আলামত, এই কারণেই বুজুর্গানে দ্বীন অজুর মধ্যে চেহারা ধোয়ার সময় এই দোয়া করতে বলেছেন, আয় আল্লাহ যে দিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কিছু চেহারা মলিন হবে সেদিন আপনি আমার চেহারা উজ্জ্বল করে দিয়েন।
ডান হাত ধোয়ার দোয়া:
এরপর কনুইসহ ডান হাত ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم اعطنى كتابى بيمينى وحاسبنى حسابايسيرا
আয় আল্লাহ আমার আমলনামা আমার ডান হাতে দিন, এবং আমার হিসেব সহজ করে দিন, এই দোয়াটি কোরআন শরিফের সেই আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
فأماّمن اوتى كتابه بيمينه- فسوف يحاسب حسابايسيرا- وينقلب الى اهله مسرورا
যার আমল নামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার থেকে সহজ হিসেব নেয়া হবে, তারপর সে তার পরিজনের মাঝে সানন্দে ফিরে যাবে, (সূরা: ইনশিকাক, আয়াত: ৭-৯)। অর্থাৎ তার থেকে মামুলি হিসেব নিয়ে বলা হবে, যাও সোজা জান্নাতে চলে যাও, অন্যদিকে যার থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খু হিসেব নেয়া হবে, তাকে বলা হবে, তোমার সকল কর্মকাণ্ড অনুপুঙ্খ হিসেব দাও, এই প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,
من نو قش الحساب عذب
যার থেকে অনুপুঙ্খ হিসেব নেয়া হবে, সে আজাবে নিপতিত হবে। (বুখারি মুসলিম, আবু দাউদ, আহমদ)। যে ব্যক্তির পুরোপুরি হিসেব নিকেশ নেয়া হবে, তাকে এক এক করে প্রত্যেক কাজের হিসেব দিতে হবে। এমন ব্যক্তির সর্বশেষ পরিনাম হলো জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমদের সকলকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। ঈমানের দৌলত এমন মূল্যবান যে, যখন আল্লাহ তায়ালা এই দৌলত কাউকে দান করেন, তখন তিনি তার সঙ্গে সদয় আচরণ করেন। যদি তার সামগ্রিক জীবন আল্লাহ তায়ালা আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়, যদি তার থেকে একটু আধটু সগিরা হয়েও যায় তবু আল্লাহ তায়ালা তার হিসেব কিতাবের ক্ষেত্রে পুঙ্খানু পুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। তার সঙ্গে বরং সহজ মামুলি আচরন করা হবে, তাকে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজির করা হবে। এরপর তার আমলনামা অত্যন্ত হালকা ও সহজভাবে নিবিক্ষন করা হবে। তারপর আল্লাহ তায়ালা তার দয়া ও অনুগ্রহের বহি:প্রকাশ ঘটাবেন। তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেবেন। আর যেই ব্যক্তির সামগ্রিক জীবন গুনাহ খাতার মধ্যে অতিবাহিত হয় এবং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে বেখবর, একদম ভুলে বসে আছে আল্লাহ তায়ালাকে, রোজ হাশরে আল্লাহ পাকের দরবারে হাজির হওয়ার অনুভূতই যার মাঝে নেই এমন ব্যক্তির কাছ থেকে অক্ষরে অক্ষরে হিসেব নেয়া হবে। আর যার থেকে এভাবে অনুপুঙ্খ হিসেব নেয়া হবে, অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাই বুজুর্গানে দ্বিন বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সমীপে এই প্রার্থনা কর, আয় আল্লাহ ডান হাতে আমার আমলনামা দিন এবং আমার থেকে সহজ হিসেব নিন। আরবি দোয়া মুখস্থ না থাকলে, মাতৃভাষায় দোয়া করলেও চলবে।
বাম হাত ধোয়ার দোয়া
: বাম হাত ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم لا تعطنى كتابى بشما لى ولا من وراء ظهرى
আয় আল্লাহ আমার আমলনামা আমার বাম হাতে এবং পেছন দিকে দিয়েন না। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ঈমানদার ও নেক বান্দাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে, আর কাফের ও বদকারদের আমলনামা পেছন দিক থেকে বাম হাতে দেয়া হবে। এই কারণেই এই দোয়া করা উচিৎ যে আয় আল্লাহ, আমার আমলনামা আমার পেছন দিক দিয়ে বাম হাতে দিয়েন না, আমি যেন কাফের ও বদকারদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।
মাথা মাসেহ করার দোয়া:
বুজুর্গানে দ্বীন মাথা মাসেহ করার সময় এই দোয়া পড়তে বলেছেন,اللهم اظللنى تحت ظل عرشك يوم لاظل الا ظل عرشك
আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে ওই দিন আপনার আরশের ছায়া দিন, যে দিন আপনার আরশের ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না। মুসলমানই জানে, হাশরের ময়দানে যখন লোকজন একত্র হবে, তখন সেখানে ভীষন উত্তাপ থাকবে, সূর্য একদম কাছে চলে আসবে। হাদিস শরিফে এসেছে, মানুষ সে দিন নিজের নিজ ঘামের হাবুডুবু খাতে থাকবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত ঘাম থাকবে, কারো থাকবে কোমর পর্যন্ত আবার কারো থাকবে বুক পর্যন্ত। কেউ আবার ঠোঁট পর্যন্ত ঘামে হাবুডুবু খেতে থাকবে, এভাবে মানুষ নিজ নিজ ঘামে ডুবে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই হাশর দিবসের উত্তাপ্ততা থেকে হেফাজত করুন। এই কারণেই বুজুর্গানে দ্বীন এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, আয় আল্লাহ! যে দিন আপনার আরশের ছায়া ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আপনি আপনার আরশের ছায়ায় আমাকে আশ্রয় দেবেন।
গর্দান মাসেহ করার দোয়া:
গর্দান মাসেহ করার সময় এই দোয়া করা উচিত,اللهم اعتق رقبتى من النار
আয় আল্লাহ আমার গর্দান জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ করে দিন।
ডান পা ধোয়ার দোয়া:
ডান পা ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم ثبت قدمى على الصراط يوم تضل فيه الا قدام
আয় আল্লাহ! সেদিন পা পুলসিরাতের ওপর দৃঢ়পদ রাখুন, যেদিন লোকজনের পা পিছলে যাবে। পুলসিরাত হলো জাহান্নামের উপর স্থাপিত একটি সরু পাতলা পুল, এই পুল পেরিয়ে মানুষ জান্নাতে যাবে, যে ব্যক্তি জাহান্নামী হবে, তার পা সেই পুলের ওপর পদস্খলিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
বাম পা ধোয়ার দোয়া:
এর পর বাম পা ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে,اللهم اجعل ذنبى مغفوراً وسعيى مشكورا وتجارتى لن تبورا
আয় আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করে দিন। আমি যা কিছু করেছি, আপনি আপনার অনুগ্রহে তার প্রতিদান দিন এবং আমি যে ব্যবসায় করেছি, অর্থাৎ যেই জীবন আমি অতিবাহিত করে এসেছি, আসলেই যা ছিল ব্যবসায়, এর ফলাফল আখেরাতে প্রকাশ পাবেই। সুতরাং আয় আল্লাহ, আমার জীবনের বেচাবিক্রিকে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। বরং এই ব্যবসায় আমাকে লাভবান করে আখেরাতে এদদ্বারা উপকৃত করুন। মোটকথা হলো, বুজুর্গানে দ্বীনের কথামত ওজুর মধ্যে উল্লিখিত দোয়াসমূহ নিয়মিত করা উচিত। এ দোয়াগুলো অত্যন্ত উপকারী ও কার্যকর। রাসূল সালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ওজুর সময় ওইসব দোয়া পড়েছেন। বিভিন্ন সময় ওইসব দোয়ার আমল করেছেন। এসবের একটি দোয়াও যদি আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন, তা হলেই ইনশাআলাহ্! সকল বিপদের অবসান ঘটবে। উল্লিখিত দোয়াসমূহ আরবিতে মুখস্থ করে নেয়াই উত্তম। তবে ততক্ষন পর্যন্ত দোয়াগুলো মাতৃ ভাষায় করবে, এর ফলে আল্লাহ তায়ালা বাহ্যিক পবিত্রতার পাশাপাশি অন্তর্জগত ও পবিত্র করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এসব দোয়ার বরকত দান করুন, এবং আমাদের সবাইকে দোয়াসমূহের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন।এ ছাড়াও অজু করার শুরুতে, অজু করার সময় এবং শেষে ৪টি দোয়া পড়ার জন্য হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে। এতে অনেক ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে। ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলো হলো- অজুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم
অর্থ : পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। অজু করার সময় এ দোয়াটি পড়তে থাকাঃ
اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ
(নাসাঈ) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিযিক্বে বরকত দিয়ে দাও।’ অজুর শেষে কালেমার সাক্ষ্য ও উপকারিতা
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ (মুসলিম, মিশকাত) উপকারিতা : হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে; ওই ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, মিশকাত) অতপর এ দোয়াটি পড়া-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন।’ (তিরমিজি, মিশকাত) অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উল্লেখিত দোয়াগুলো অনেক ফজিলত পূর্ণ। যা অজুকারীকে পবিত্র ও নেককার বান্দায় পরিণত করে দেয়। যার জন্য জান্নাতের সব দরজা উন্মুক্ত থাকে। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, একান্ত মনোযোগের সঙ্গে সুন্নাতের অনুসরণে সব সময় অজু অবস্থায় থাকা। অজুর ফজিলত লাভে যথাযথভাবে অজু করা। হাদিসে ঘোষিত অজুর ফজিলত ও উপকারিতাগুলো অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় অজু অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন। পবিত্রতা অবলম্বনকারী ও তাওবাহকারী হিসেবে কবুল করুন। দুনিয়াতে উত্তম রিজিক, মৃত্যুর আগে গোনাহ মাফ এবং পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করুন।
গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতার মাসআলা
পবিত্রতা অর্জনের জন্য মুসলিম মিল্লাতের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে গোসল,পবিত্রতা অর্জনের জন্য কখন কিভাবে গোসল করতে হবে যার উপর শরীয়তের দলিল বসর্তায় তা জানা প্রত্যেকটা বালেগ মুসলমানের প্রয়োজন।গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
১ বীর্যপাত বীর্য হলো: গাড়-সাদা পানি যা যৌন-উত্তেজনাসহ ঠিকরে বের হয়, যারপর শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ইরশাদ হয়েছে : ( وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ ) (আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও) [ সূরা আল মায়েদা:৬] আলী রাযি. বলেছেন, ‘তুমি যদি সজোরে পানি নির্গত করো, তবে গোসল করো।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ) ক। যদি কারো স্বপ্নদোষ হয় আর বীর্যপাত না ঘটে, তবে গোসল ফরজ হবে না। যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর বীর্যপাত ঘটে তবে গোসল ফরজ হবে। খ। কেউ যদি বীর্য দেখতে পায় আর স্বপ্নদোষের কথা মনে না থাকে, তবে গোসল ফরজ হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পানি তো পানির জন্য’(বর্ণনায় মুসলিম) অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হবে’। গ। যদি পুরষাঙ্গে বীর্যের স্থানান্তর অনুভূত হয়, আর বীর্য বের না হয় তবে গোসল ফরজ হবে না। ঘ। যদি কারো অসুস্থতার কারণে উত্তেজনা ব্যতীত বীর্যপাত ঘটে তবে গোসল ফরজ হবে না। ঙ। যদি গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল করে নেয় এবং গোসলের পর বীর্য বের হয়, তাহলে পুনরায় গোসল করতে হবে না। কেননা এ সময় সাধারণত উত্তেজনা ব্যতীত বীর্য নির্গত হয়। এ অবস্থায় সতর্কতার জন্য অজু করে নেয়াই যথেষ্ট হবে। চ। যদি ঘুম থেকে জাগার পর আদ্রতা দেখা যায়, এবং কারণ মনে না থাকে, তবে এর তিন অবস্থা হতে পারে: (১) আদ্রতা যে বীর্য থেকে নয় এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হলে গোসল ফরজ হবে না। বরং এ আদ্রতার হুকুম হবে পেশাবের ন্যায়। (২) বীর্য কি না এ ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হলে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি এমন বিষয় মনে করা সম্ভব হয় যা উক্ত আদ্রতা বীর্য থেকে হওয়ার সম্ভাবনাকে পোক্ত করে দেয়, তবে তা বীর্য বলেই গণ্য হবে। আর যদি এমন বিষয় মনে করা সম্ভব হয় যা উক্ত আদ্রতা যে মযী তার সম্ভাবনাকে পোক্ত করে দেয়, তবে তা মযী বলেই গণ্য হবে। (৩) আর যদি কোনো কিছুই মনে করতে না পারা যায়, তাহলে সতর্কতার জন্য গোসল করা জরুরি। ৭- যদি বীর্য দেখা যায় কিন্তু কখন স্বপ্নদোষ হয়েছে তা মনে না থাকে, তাহলে গোসল করতে হবে এবং সর্বশেষ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যত নামাজ আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় পড়তে হবে।ফরজ গোসলের গুরুত্বপুর্ন কারণ
১। সহবাস সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন আগাটুকু প্রবেশ করালেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। কেননা প্রথমটির ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পানি নির্গত হলেই পানি ঢালতে হবে।” অর্থাৎ বীর্যের পানি নির্গত হলেই গোসল করতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণের ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ]إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ[ “স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত দু’পায়ের) মাঝে বসে, তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।” যদিও বীর্যপাত না হয়। এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে অজ্ঞতা বশতঃ সপ্তাহ মাস কাটিয়ে দেয় গোসল করে না। এটি মারাত্মক ধরণের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। অতএব উল্লেখিত হাদীছের ভিত্তিতে, সহবাস করে বীর্যপাত না হলেও গোসল করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর ফরয। ২জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না। ৩ নারীদের ঋতু বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরয গোসলের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহ্ বলেন, ]يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ، فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ، إنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَ يُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ[ “তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয সমপর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমণ কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।” (সূরা বাক্বারা- ২২২) ৪ কাফির ব্যক্তি মুসলমান হলে এর প্রমাণ কায়েস ইবনে আসেম যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন।(বর্ণনায় আবু দাউদ) ৫ মৃত্যু ঘটলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা যায়নাব রাযি. এর মৃত্যুর পর তিনি বলেছেন, ‘তাকে তিনবার গোসল দাও, অথবা পাঁচবার অথবা তারও বেশি যদি তোমরা ভালো মনে করো।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)ফরজ গোসল করার নিয়ম
নাপাকীর গোসল করতে হলে গোসলের নিয়ত করে মুসলিম প্রথমে ৩ বার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলবে। তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নামাযের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করবে। অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে পা দুটি গোসল শেষে ধুয়ে নেবে। ওযুর পর ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধোবে, যাতে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে ধুয়ে নেবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬ নং) মহিলাদের গোসলও পুরুষদের অনুরুপ। অবশ্য মহিলার মাথার চুলে বেণী বাঁধা (চুটি গাঁথা) থাকলে তা খোলা জরুরী নয়। তবে ৩ বার পানি নিয়ে চুলের গোড়া অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, মিশকাত ৪৩৮নং) নখে নখপালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট্ থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় গোসল হয়ে যাবে। কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ গোসল হবে না। বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও মাসিকের গোসল, অথবা মাসিক ও ঈদ, অথবা বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও জুমআ বা ঈদের গোসল নিয়ত হলে একবারই যথেষ্ট। পৃথক পৃথক গোসলের দরকার নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ৬০পৃ: দ্র:) গোসলের পর নামাযের জন্য আর পৃথক ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের পর ওযু ভাঙ্গার কোন কাজ না করলে গোসলের ওযুতেই নামায হয়ে যাবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪৪৫নং) রোগ-জনিত কারণে যদি কারো লাগাতার বীর্য, মযী, স্রাব বা ইস্তিহাযার খুন ঝরে তবে তার জন্য গোসল ফরয নয়; প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট। এই সকল অবস্থায় নামায মাফ নয়। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৫৬০-৫৬১ নং) প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময় নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। সতর্কতার বিষয় যে, নাপাকী দূর করার জন্য কেবল গা-ধোয়া বা গা ডুবিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। পূর্বে ওযু করে যথানিয়মে গোসল করলে তবেই পূর্ণ গোসল হয়। নচেৎ অনেকের মতে কুল্লি না করলে এবং নাকে পানি না নিলে গোসলই শুদ্ধ হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ১/৩০৪) শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযীফরয গোসলের পদ্ধতি
১) প্রথমে নিয়ত করবে এবং প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পানি প্রবাহিত করার সময় আল্লাহর প্রতি খেয়াল রেখে পানি ঢালতে বা ধৌত করতে থাকবে আর মনে মনে বলতে থাকবে হে আল্লাহ আমার শরীর হতে যাবতীয় গোনাহ এই গোসলের মাধ্যমে ঝরিয়ে দাও এবং আমাকে তোমার এবাদতের জন্য উপযুক্ত করে দাও। ২) অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। ৩) লজ্জাস্থানে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করবে। ৪) অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে। ৫) মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল খিলাল করবে। ৬) যখন বুঝবে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি ঢালবে ৭) এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। - এ ক্ষেত্রে ডান সাইড থেকে কাজ আরম্ভ করবে। মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর গোসলের বর্ণনা এরূপই এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)গোসলের ফরয তিনটি। যথা:
(ক) নিয়ত করা। (খ) নাক ও মুখে পানি দেয়া (গ) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। উপরোক্ত পদ্ধতি হল পরিপূর্ণ ও সুন্নতী পদ্ধতি। তবে কেউ যদি সুন্নতী পদ্ধতি ফলো না করে কেবল ফরজগুলো আদায় করে তাহলে তা পবিত্র হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে সুন্নত অনুসরণ করে গোসল করা উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নাই। মহিলাদের মাথার চুলে যদি ঝুঁটি বাধা থাকে তাহলে তা খোলা জরুরি নয়। বরং চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছলেই যথেষ্ট ইনশাআল্লাতায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা
আল্লাহ বলেন, فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ বাংলায় অনুবাদ- অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।তায়াম্মুমের ইতিহাস
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَتْ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْبَيْدَاءِ ـ أَوْ بِذَاتِ الْجَيْشِ ـ انْقَطَعَ عِقْدٌ لِي، فَأَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْتِمَاسِهِ، وَأَقَامَ النَّاسُ مَعَهُ، وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ، فَأَتَى النَّاسُ إِلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ فَقَالُوا أَلاَ تَرَى مَا صَنَعَتْ عَائِشَةُ أَقَامَتْ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسِ، وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ، وَلَيْسَ مَعَهُمْ مَاءٌ فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَاضِعٌ رَأْسَهُ عَلَى فَخِذِي قَدْ نَامَ فَقَالَ حَبَسْتِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسَ، وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ، وَلَيْسَ مَعَهُمْ مَاءٌفَقَالَتْ عَائِشَةُ فَعَاتَبَنِي أَبُو بَكْرٍ، وَقَالَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ، وَجَعَلَ يَطْعُنُنِي بِيَدِهِ فِي خَاصِرَتِي، فَلاَ يَمْنَعُنِي مِنَ التَّحَرُّكِ إِلاَّ مَكَانُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى فَخِذِي، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ أَصْبَحَ عَلَى غَيْرِ مَاءٍ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ آيَةَ التَّيَمُّمِ فَتَيَمَّمُوا فَقَالَ أُسَيْدُ بْنُ الْحُضَيْرِ مَا هِيَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِي بَكْرٍقَالَتْ فَبَعَثْنَا الْبَعِيرَ الَّذِي كُنْتُ عَلَيْهِ، فَأَصَبْنَا الْعِقْدَ تَحْتَهُ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেনঃ ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তারপর আমি যে উটে ছিলাম তাকে দাঁড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পড়ে আছে। التيمم-এর শাব্দিক অর্থ- القصد অর্থাৎ ইচ্ছা করা। التيمم -এর পারিভাষিক অর্থ- আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে পবিত্র মাটি দ্বারা মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাসাহ করার নাম তায়াম্মুম।ফিকহুল মুয়াস্সার, পৃঃ ৩২ التيمم -এর হুকুম : তায়াম্মুম ইসলামী শরী‘আতে জায়েয, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ- ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নে‘মত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’ (মায়েদাহ ৬) التيمم-এর শাব্দিক অর্থ- القصد অর্থাৎ ইচ্ছা করা। التيمم -এর পারিভাষিক অর্থ- আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে পবিত্র মাটি দ্বারা মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাসাহ করার নাম তায়াম্মুম -এর হুকুম : তায়াম্মুম ইসলামী শরী‘আতে জায়েয, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ- ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নে‘মত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’ (মায়েদাহ ৬)। হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ. আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়’। নাসাঈ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৩২৪, তিনি হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلاَثٍ جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلاَئِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ. হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র মানব জাতির উপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি বিষয়ে। আমাদের সারিকে করা হয়েছে ফেরেশতাদের সারির ন্যায়। সমস্ত ভূমন্ডলকে আমাদের জন্য সিজদার স্থান করা হয়েছে এবং মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি না পাই’। মুসলিম, মিশকাত, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ, হা/৪৯১তায়াম্মুম ছহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত সমূহ :
(১) النية অর্থাৎ পানি না পেলে অযূর পরিবর্তে ছালাতের জন্য তায়াম্মুম-এর নিয়ত করা। কেননা তায়াম্মুম একটি ইবাদত, যা নিয়ত ছহীহ হওয়ার উপর নির্ভরশীল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পায়’।বুখারী, হা/১। তবে ফরয ছালাতের নিয়তে তায়াম্মুম করতে হবে, তাহলে তাতে নফল এবং কাযা ছালাত আদায় করা বৈধ হবে। পক্ষান্তরে যদি নফল ছালাতের নিয়তে তায়াম্মুম করা হয় তাহ’লে তাতে ফরয ছালাত ছহীহ হবে না।শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি, ১/৪০১। যেমন কেউ যদ শুধু তাহাজ্জুদ ছালাতের জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে ঐ তায়াম্মুম দ্বারা ফজরের ফরয ছালাত আদায় করা ছহীহ হবে না,তবে সাথে সাথে যদি ফরজ নামাজের ও নিয়ত করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। (২) الإسلام অর্থাৎ ব্যক্তিকে মুসলিম হতে হবে। কেননা তায়াম্মুম হল ইবাদত, যা কোন কাফিরের নিকট হতে আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করবেন না।কথাটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অন্য রকম মনে হচ্ছে যে অমুসলিম আবার তায়াম্মুম করবে কেনো?মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই আসলে মুসলি হওয়া বা মুসলিম দাবী করা যায়না যতক্ষন পযর্ন্ত আল্লাহর নিকট সম্পূর্ন আত্ম সমর্পন কারী হিসাবে প্রকাশ ও নিবেদিত প্রান না হবে। এই জন্য তায়াম্মুম করার পূর্বে নিজেকে আত্ম সমর্পনকারী হিসাবে প্রস্তুত করতঃ তায়াম্মুমের কাজ শুরু করতে হবে। وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ، فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أُخْبِرَ بِذَلِكَ، فَقَالَ قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ أَلاَّ سَأَلُوْا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوْا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ. জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা এক সফরে বের হ’লাম। হঠাৎ আমাদের একজনের মাথায় একটা পাথরের চোট লাগল এবং তার মাথা জখম করে দিল। অতঃপর তার স্বপ্নদোষ হ’ল এবং সে তার সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি এ অবস্থায় আমার জন্য তায়াম্মুমের অনুমতি আছে বলে মনে কর? তারা বলল, আমরা তোমার জন্য অনুমতি আছে বলে মনে করি না। কেননা তুমি পানি পাচ্ছ। সুতরাং সে গোসল করল আর এতে সে মারা গেল। অতঃপর আমরা যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে আসলাম, তখন তাঁকে এই সংবাদ দেওয়া হ’ল। তিনি বললেন, ‘তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদেরকে হত্যা করুন। তারা যখন জানে না তখন অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করল না কেন? কেননা অজানা রোগের চিকিৎসাই হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। অথচ তার জন্য যথেষ্ট ছিল, তায়াম্মুম করা এবং তার জখমের উপর একটি পট্টি বাঁধা’।আবু দাউদ, মিশকাত, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ, হা/৪৯৬পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা
অর্থাৎ যে মাটির সাথে পেশাব-পায়খানা মিশ্রিত হয়েছে, সেই মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ ‘পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর’ (মায়েদাহ ৬)। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, صَعِيْدًا বলতে সেই মাটিকে বুঝানো হয়েছে যেই মাটিতে শষ্য উৎপাদন করা হয়। আর طَيِّبًا বলতে পবিত্র মাটিকে বুঝানো হয়েছে।ফিকহুল মুয়াস্সার, অতএব পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে। কিন্তু যদি মাটি পাওয়া না যায়। তাহ’লে বালি অথবা পাথর দ্বারাও তায়াম্মুম করা বৈধ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاتَّقُوْا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)। আওযাঈ (রহঃ) বলেন, বালি মাটির অন্তর্ভুক্ত।ফিকহুল মুয়াস্সার, পৃঃ৩৩।তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ সমূহ
: (ক) ওযূ ভঙ্গের কারণ সংঘটিত হওয়া। অর্থাৎ তায়াম্মুম করার পরে পেশাব, পায়খানা ও বায়ু নিঃসরণ হ’লে, স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হ’লে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। (খ) পানি উপস্থিত হওয়া। অর্থাৎ তায়াম্মুম করার পরে পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তার উপর উক্ত পানি দ্বারা ওযূ করা ওয়াজিব হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَلَوْ إِلَى عَشْرِ سِنِيْنَ فَإِذَا وَجَدْتَ الْمَاءَ فَأَمِسَّهُ جِلْدَكَ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ. ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়। আর যখন পানি তুমি পাবে তখন যেন তোমার চর্মে পানি লাগাবে, কেননা এটাই উত্তম’।আবু দাঊদ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৩৩২, তিনি হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।ছালাত আরম্ভ হওয়ার পরে পানি পাওয়া গেলে করণীয় :
পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে ছালাত আরম্ভ করলে এবং ছালাত রত অবস্থায় পানি উপস্থিত হ’লে উক্ত ছালাত ছেড়ে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে এক্ষেত্রে ছহীহ মত হ’ল, তাকে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا ‘অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর (মায়েদাহ ৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন পানি পাবে তখন তোমার চর্মে পানি লাগাবে, এটাই উত্তম’। অতএব পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। পানি দ্বারা ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে।তায়াম্মুম করে ছালাত আদায়ের পরে পানি পেলে করণীয় :
পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করার পরে পানি পাওয়া গেলে ছালাত বাতিল হবে না। অর্থাৎ পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে না। কেননা পানি না পাওয়ার কারণে ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে ছালাত আদায় করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلاَنِ فِيْ سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِى الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلاَةَ وَالْوُضُوْءَ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ، ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ. وَقَالَ لِلَّذِيْ تَوَضَّأَ وَأَعَادَ لَكَ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ. হযরত আবু সাইদ খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, একদা দুই ব্যক্তি সফরে বের হয়,পথিমধ্যে সালাতের সময় উপনিত হলে তারা পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করলো।অতপর উক্ত সালাতের সময় পানি প্রাপ্ত হওয়ায় তাদের একজন ওজু করে পুনরাই সালাত আদায় করলো আর অপরজন বিরত থাকলো।অতপর উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলো।রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন তোমাদের যে ব্যক্তি পুনরাই ওজু করে নামাজ পড়নি সে সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করেছো।আর যে পুনরাই অজু করে নামাজ পড়েছে তার সম্পর্কে বলেন তুমি দ্বীগুন সওয়াবের অধিকারী হয়েছ। আবু দাউদ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, ‘তায়াম্মুম করে ছালাত আদায়ের পরে ওয়াক্তের মধ্যেই পানি পাওয়া’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৩৮। হাদীছ ছহীহ।তায়াম্মুম করার নিয়ম
তায়াম্মুমের নিয়ত করে, বিসমিল্লাহ বলে উভয় হাত মাটিতে মারবে। অতঃপর তাতে ফুঁ দিয়ে মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত উপরিভাগ মাসাহ করবে। হাদীছে এসেছে, عَنْ سَعِيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ إِنِّيْ أَجْنَبْتُ فَلَمْ أُصِبِ الْمَاءَ فَقَالَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَمَا تَذْكُرُ أَنَّا كُنَّا فِيْ سَفَرٍ أَنَا وَأَنْتَ فَأَمَّا أَنْتَ فَلَمْ تُصَلِّ، وَأَمَّا أَنَا فَتَمَعَّكْتُ فَصَلَّيْتُ فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ هَكَذَا فَضَرَبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَفَّيْهِ الأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ- সাঈদ ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি নাপাক হয়েছি, কিন্তু পানি পেলাম না। এসময় আম্মার ইবনু ইয়াসার ওমর (রাঃ)-কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার কি স্মরণ নেই যে, এক সফরে আমি ও আপনি উভয়ে ছিলাম। উভয়ে নাপাক হয়েছিলাম, কিন্তু আপনি পানির অভাবে ছালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং ছালাত আদায় করলাম। অতঃপর এক সময় আমি এটা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বিবৃত করলাম। তিনি বললেন, তোমার জন্য এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি স্বীয় হাতের করদ্বয় যমীনের উপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। অতঃপর উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন।বুখারী অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ أَنْ تَقُوْلَ بِيَدَيْكَ هَكَذَا، ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ الأَرْضَ ضَرْبَةً وَاحِدَةً ثُمَّ مَسَحَ الشِّمَالَ عَلَى الْيَمِيْنِ وَظَاهِرَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ. ‘তোমার পক্ষে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর উভয় হাত একবার মাটিতে মারলেন এবং বাম হাত দ্বারা ডান হাত মাসাহ করলেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তার উপরিভাগ মাসাহ করলেন’।মুসলিম, ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়, হা/৮৪৪২।আভ্যন্তরীন অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা
﴿قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ﴾সে সফলকাম হয়েছে , যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে(সুরা আলা ১৪)
সে-ই সফলকাম হয়েছে যে নিজ আত্মাকে পবিত্র করেছে। সে-ই ব্যর্থ হয়েছে যে নিজ আত্মাকে কলুষিত করেছে। বস্তবাদী জগতে চলতে গেলে বস্তুর প্রতি লালসা থাকায় খারাপ নফসের চাহিদা,আমাদের ভিতর যে রুহু আছে এটার বাহন হচ্ছে আমাদের শরীর,রুহুটাকে আল্লাহ যতদিন দেহের ভিতর রাখবেন ততদিন দেহটা জিন্দা থাকবে।দেহের ভিতর রুহের পাশাপাশি আল্লাহ মানুষকে তিন ধরনের নফস দিয়েছেন,
(ক) নফসে মুতমাইন্নাহ
ঃ এটা আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী আর বান্দার আত্মত্যাগের ফসল,যাদের ব্যাপারে আল্লাহ সরাসরি জান্নাতে প্রবেশের ঘোষনা দিয়েছেন।এই নফসধারীর বিবেক কখনো দেহ ও মনকে পাঁপের দিকে যেতে দেইনা,মনের অজান্তে ছোটখাটো পাঁপ যদি হয়েও যায় তবে এমন ভাবে তৌবা আর কান্নাকাটি করে ফিরে আসে যে, আর কখনো ঐ পাঁপের ধারপাশ দিয়েও হাটেনা।(খ) নফসে লাউয়ামা
এই নফসধারীরা পাঁপের পাশাপাশি যখন অনুশোচনা জাগে তখন ইমানের সাথে লোক না দেখানোর উদ্দেশ্যে নেকের কাজও করে, এদরেকে আল্লাহর আজাবে গ্রেফতার করা হবে এবং জাহান্নামের শাস্তির মেয়াদ শেষে আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত করলে কোন এক সময় হইত আল্লাহ তাদের নেক আমল সমুহের কারনে জান্নাতে দিতে পারেনে।এখানে কিন্ত কাফের মুশরেকদের ভালো কাজের কথা বলা হয়নি,তাদের ভালো কাজের ফল আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে দিবেন।(গ) নফসে আম্মারা
এরা সর্বদা পাপের ভিতর নিমজ্জিত থাকে, কখনো কোন ভালো কাজ করলে সেটা লোক দেখানোর জন্য করে অথবা সামনের পাপ কর্ম সমুহকে আড়াল করার জন্য কিছু কিছু সময় নেক সুরত নিয়ে দুনিয়াবী জিন্দেগী পরিচালনা করে।এরা যেকোন ধর্ম,বর্ণ,গোষ্ঠীর হতে পারে।এরা সরাসরি জাহান্নামী । যারা নিজেদের শরীরকে হারাম খেয়ে রক্ত মাংস তৈরী করে শরীরকে অপবিত্র করেছে,তাদের পবিত্রতার ব্যাপারে দুটি নীতিমালাঃ প্রথমতঃ সে যদি কোন বান্দার হক্ব মেরে খায় ,তবে ঐ বান্দাকে তা ফেরত দিতে হবে অথবা তার কাছে অপরাধের কথা উল্লেখ করে ক্ষমা চাইতে হবে,ব্যক্তি যদি জীবিত না থাকে তবে তার ওয়ারিশদের নিকট হস্তান্ত করতে হবে তাও যদি না পাওয়া যায় তবে মৃত্যু ব্যক্তির নামে আত্মসাৎকৃত টাকা দান করতে হবে।হাজার অপরাধ আর মানুষের হক্ব মেরে কেটে খাওয়ার পর জীবনের প্রান্ত সময় এসে দ্বীনের পথে সময় লাগানোর সুরত ধরে,জুব্বা একটা গায়ে দিয়ে যে কোন একটা পীর সাহেবের দরবারে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মুরিদ হয়ে ভাবে জীবনের সব অপকর্ম মনে হয় মাপ হয়ে গেলো।এই নেক আমল কিয়ামতের ময়দানে সব মানুষকে দিয়ে দিতে হবে।قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ وَبَيَّنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ فَرْضَ الْوُضُوءِ مَرَّ ةً مَرَّةً وَتَوَضَّأَ أَيْضًا مَرَّتَيْنِ وَثَلاَثًا وَلَمْ يَزِدْ عَلَى ثَلاَثٍ وَكَرِهَ أَهْلُ الْعِلْمِ الْإِسْرَافَ فِيهِ وَأَنْ يُجَاوِزُوا فِعْلَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.
আবূ ‘আবদুল্লাহ্ বুখারী (রহ.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উযূর ফরজ হ’ল এক-একবার করে ধোয়া। তিনি দু’-দু’বার করে এবং তিন-তিনবার করেও উযূ করেছেন, কিন্তু তিনবারের অধিক ধৌত করেন নি। পানির অপচয় করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ‘আমলের সীমা অতিক্রম করাকে ‘উলামায়ে কিরাম মাকরূহ বলেছেন।
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ - وَاللَّفْظُ لِسَعِيدٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ دَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى ابْنِ عَامِرٍ يَعُودُهُ وَهُوَ مَرِيضٌ فَقَالَ أَلاَ تَدْعُو اللَّهَ لِي يَا ابْنَ عُمَرَ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُ لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ وَكُنْتَ عَلَى الْبَصْرَةِ
সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে তিনি বর্ণিত। বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) অসুস্থ ইবনু আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনু আমির তাকে বললেন, হে ইবনু উমর! আপনি কি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন না? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ থেকে সাদাকা কবুল হয় না। আর তুমিতো ছিলে বসরার শাসনকর্তা।
এবাদতের জন্য হালাল খাবার
আমরা খাবার খাওয়ার সময় হালাল হারামের খোঁজ করি- শুকর না গরু, তা যাচাই করি। শুকর হলে খাই না, গরু হলে, মুরগি হলে খাই। কিন্তু এ গরু আর মুরগি কীভাবে অর্জিত হয়েছে- বৈধ পন্থায় না অবৈধ পন্থায়- ওই পর্যন্ত আমরা হালাল-হারাম খোঁজ করতে যাই না। হালাল-হারামের শেষ স্তরটা দেখি। মুরগি কিনতে পারছি, এটা ঠিক আছে। মুরগিটার জবাই ঠিক মত হয়েছে কি না- এটা কেউ কেউ খোঁজ করি, কিন্তু মুরগি যে পয়সা দিয়ে কিনল সে পয়সাটা হালাল, না হারাম ওটা আমরা দেখি না। হালাল এবং হারাম একেবারে উৎস থেকে শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলে। হালাল-হারামের বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা রাসূলদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরকেও সে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলদেরকে কী নিদের্শ দিয়েছেন- یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعْمَلُوْا صَالِحًا.
রাসূলদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন كُلُوْا مِنَ الطَّیِّبٰتِ অর্থাৎ পূতপবিত্র খাও! এবং এটা আগে বলেছেন। পরে বলেছেন- وَاعْمَلُوْا صَالِحًا। ইসলামে কামাই করে খেতে মানুষকে বার বার উৎসাহিত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসায় এসেছে, কোন্ খাবারটা ভালো, কোন্ কামাইটা ভালো। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ভাষায় বলেছেন- عمل الرجل بيده، كسب الرجل بيده. অর্থাৎ নিজের উপার্জিত আয় ‘আতয়াব’, মানে অতি উত্তম, বেশি ভালো। অর্থাৎ ইসলাম মানুষকে অলস বসে থাকার, অন্যের ধন-সম্পদে নজর দেওয়ার, বেকার-ভাতা গ্রহণ করার জন্য বসে থাকার এবং দান-সদকা নির্ভর থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেনি। এর বিপরীতটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মানুষ কামাই করবে, খরচ করবে। এটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওতপ্রাপ্তির পূর্বেই মৌলিক দুটো কাজ, মানুষের কামাইয়ের মৌলিক দু’টো মাধ্যম অতিক্রম করে এসেছেন। মৌলিক দু’টো মাধ্যমের একটা হল, শ্রমের মাধ্যমে অর্থ যোগাড় করা। আরেকটা ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। এ দু’টো স্তরই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে অতিক্রম করে এসেছেন। এবং বিশ্বস্ততার সাথে, সুনাম-সুখ্যাতির সাথে অতিক্রম করে এসেছেন। হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যত নবীগণ আগে গেছেন, সবাই বকরি চরিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেছেন, আপনিও? বললেন, হাঁ! আমিও এক কবিলার ছাগল চরিয়েছি। হজরত মিকদাদ বিন মা‘দিকারাব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তি নিজের হাতে উপার্জিত খাদ্য হতে উত্তম কোনো খাদ্য খায়নি। নিশ্চয় আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। বোখারি। অপর হাদিসে এসেছে, হজরত রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসুল (সা.), কোন উপার্জন সবচেয়ে উত্তম? রসুল (সা.) বললেন, মানুষের নিজ হাতের উপার্জন প্রত্যেক হালাল ব্যবসা। মুসনাদে আহমদ। অর্থাৎ নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে যে ব্যবসা করা হয় সেটা সবচেয়ে উত্তম। প্রিয় পাঠক! নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো হালাল উপার্জন একটা পৃথক ফরজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সব ফরজের পর হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ। বায়হাকি। হালাল উপার্জন ছাড়া কোনোভাবেই ইবাদত কবুল হবে না। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওই জিনিসের হুকুম করেছেন, যেই হুকুম তিনি তার রসুলদের করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে রসুলগণ, তোমরা হালাল জিনিস খাও এবং নেক আমল কর। তিনি আরও বলেন, হে ইমানদাররা তোমরা আমার দেওয়া হালাল খাদ্য খাও। তারপর নবী করিম (সা.) এমন এক ব্যক্তির আলোচনা করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে ফলে তার চুল এলোমেলো ও ধূলিমলিন হয়ে আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে বলছে, হে আমার রব, হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম এবং হারামের মধ্যে সে প্রতিপালিত হয়েছে। এরপরও কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে? মুসলিম শরিফ। এই ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে রসুল (সা.) বোঝাতে চেয়েছেন যে, ইবাদত-বন্দেগি যতই করুক না কেন উপার্জন হালাল না হলে নিশ্চিত জাহান্নাম। হারাম খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে যে রক্ত তৈরি হয় এবং তা সারা দেহে সঞ্চালিত হয় তা সবই হারাম। হজরত জাবের (রা.) বলেন. রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ওই গোশত জান্নাতে যাবে না যা হারাম দ্বারা বর্ধিত হয়েছে। আর যে গোশত হারাম দ্বারা গঠিত হয়েছে জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। মুসনাদে আহমদ, দারেমি, বায়হাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الحَلاَلُ بَيِّنٌ، وَالحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى المُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ: كَرَاعٍ يَرْعَى حَوْلَ الحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ ‘‘
হালাল বা বৈধ সুস্পষ্ট এবং হারাম বা অবৈধও স্পষ্ট আর এ দু’এর মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর বেশীরভাগ লোকই সেগুলো (সম্পর্কে সঠিক পরিচয়) জানে না। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সন্দেহজনক জিনিসিগুলোকে পরিহার করলো সে তার দ্বীন ও মান-সম্মানকে পবিত্র রাখলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহের মাঝে পতিত হলো তার উদাহরণ ঐ রাখালের মত যে পশু চরায় সংরক্ষিত ভূমির সীমানায় এমনভাবে যে, যে কোনো সময় সে তাতে প্রবেশ করবে।’’ [ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, খ- ৪, হাদীস নং ৫২।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস প্রনিধানযোগ্য। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«كسب الحلال فريضة بعد الفريضة »
‘‘ফরয আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরয। উপর্যুক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রতিভাত হয় যে, ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব কতখানি এবং কোন ব্যক্তি যেন হারাম কোন পেশা অবলম্বন না করে উপরোক্ত হাদীসে সে মর্মেও অর্ন্তনিহীত নির্দেশ রয়েছে। পরকালীন জীবনে এ ফরয ইবাদতটি সম্পর্কে যে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা যাবতীয় ফরয সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব এটি ফরয কাজ সমূহের অন্তর্গত এক মৌলিক অত্যাশ্যকীয় ইবাদতে গণ্য হয়েছে।বান্দা যখন হালাল রিযিকের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে তখন তার দেহ মন পুতপবিত্র হবে সে এবাদতে প্রশান্তি পাবে।
কাঁপড় ও নামাজ বা সালাতের জায়গা পাক
পবিত্র পরিচ্ছদ গ্রহণ বা পোশাক পবিত্রকরণ মুক্ত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার আদেশঃيَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ
قُمْ فَأَنذِرْ﴾ ﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ﴾ ﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ﴾
﴿وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ﴾
‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন। (সূরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১-৪)। ইবাদতের জন্য পবিত্রতা এবং ইবাদতকারীদের জন্য ইবাদতের স্থান আল্লাহর ঘর পবিত্র করার ও পবিত্র রাখার নির্দেশনা,
وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ﴾
‘
এবং ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)কে আমার গৃহ পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম, তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন এবং পবিত্রগণকে ভালোবাসেন। আত্মিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হলো তওবা তথা পাপ বর্জন করে পুণ্যের পথে ফিরে আসা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ﴾
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীগণকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালোবাসেন।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২
সতর ঢাকা
পুরুষের সতর হল নাভি থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে ঢেকে রাখা ফরজ। বাকি মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ক্ষেত্র ও সমাজ হিসেবে যা শালীন, ও তাকওয়া প্রকাশক করে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম। আর মাহরামদের সামনে মহিলাদের সতর হল, মাথা, চুল, গর্দান, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা, গর্দান সংশ্লিষ্ট সিনার উপরের অংশ ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর সতর। {ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩২} আর মহিলাদের নামাযের সময় হাত, পা, মুখ ছাড়া পূর্ণ শরীরই সতর।فى تنوير الأبصار- وَسَتْرُ عَوْرَتِهِ وَهِيَ لِلرَّجُلِ مَا تَحْتَ سُرَّتِهِ إلَى مَا تَحْتَ رُكْبَتِهِ وَلِلْحُرَّةِ جَمِيعُ بَدَنِهَا خَلَا الْوَجْهِ وَالْكَفَّيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة، مطلب فى ستر العورة-
মহিলাদের জন্য অন্য সময় গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা, হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন রাস্তায় প্রচন্ড ভীর হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “ إسناده قوي. ابن خثيم -وهو عبد الله بن عثمان- لا بأس به. ابن ثور: هو محمد بن ثور الصنعاني، ومحمد بن عُبيد: هو ابن حِساب الغُبَري. وأخرجه ابن أبي حاتم في “تفسيره” كما في “تفسير ابن كثير” 6/ 48 – 49 من طريق الزنجي مسلم بن خالد، عن عبد الله بن عثمان بن خثيم، به مطولاً.
হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১} হযরত মুফতী শফী রহঃ “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে লিখেন যে,
فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين
এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। {আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮}
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮} অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ: «أَنَّهَا كَانَتْ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتَقِبَةً»
হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়। {মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৮৮৫৯} পর্দা পরপুরুষের সাথে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তুও লুকানোও ফরজ। কুরআনে কারীমে নির্দেশ এসেছে-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ [٢٤:٣١
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে {সূরা নূর-৩১} এ আয়াতে স্পষ্টভাষায় সৌন্দর্যকে লুকাতে আদেশ দেয়া হয়েছে। যেটা হল পর্দা করার মূল হাকীকত। কিন্তু যা “সাধারণতঃ প্রকাশমান” বলে চেহারা ও হাত উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। যা তীব্র প্রয়োজনের সময় যেমন প্রচন্ড ভীর, আদালতে সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি প্রয়োজনে খোলা জায়েজ আছে। এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা হয়েছে সতর থেকে। পর্দা থেকে নয়। অর্থাৎ এ দুটি অংশ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু পর্দার অন্তর্ভূক্ত। এ কারণেই নামাযরত অবস্থায় হাত ও মুখ এবং পা ঢাকতে হয় না। এসব খোলা রেখেই নামায হয়ে যায়। কারণ এসব সতর নয়। আর নামাযে সতর ঢাকা ফরজ। কিন্তু বাহিরে বের হওয়ার সময় যেহেতু সতরের সাথে সাথে পর্দা রক্ষা করাও ফরজ, এসব ঢেকে রাখা ফরজ।
আজান ও একামতের বর্ননা:
‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে সালাতের আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়।ʾআযান শব্দের মূল অর্থ দাঁড়ায় أَذِنَ ডাকা,আহবান করা। যার মূল উদ্দেশ্য হল অবগত করানো। এই শব্দের আরেকটি বুৎপত্তিগত অর্থ হল ʾআজুন। (أُذُن), যার অর্থ হল "শোনা"। কুরআনে মোট পাঁচ স্থানে আজুন শব্দটি এসেছে। وَقَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَ يَعْقِلُونَ) وَقَوْلُهُ: (إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ) আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ যখন তোমরা সালাতের দিকে আহবান করো, তখন তারা (মুশরিকরা) এ নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ ও কৌতুক করে। তা এ জন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা উপলব্ধি করে না" (সুরা মায়েদাঃ ৫৮)আযানের ইতিহাস:
حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدٍ، مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدِ بْنِ مَيْمُونٍ الْمَدَنِيُّ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَدْ هَمَّ بِالْبُوقِ وَأَمَرَ بِالنَّاقُوسِ فَنُحِتَ فَأُرِيَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ فِي الْمَنَامِ قَالَ رَأَيْتُ رَجُلاً عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فَقُلْتُ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ تَبِيعُ النَّاقُوسَ قَالَ وَمَا تَصْنَعُ بِهِ قُلْتُ أُنَادِي بِهِ إِلَى الصَّلاَةِ . قَالَ أَفَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى خَيْرٍ مِنْ ذَلِكَ قُلْتُ وَمَا هُوَ قَالَ تَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ . اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . قَالَ فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ حَتَّى أَتَى رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَأَخْبَرَهُ بِمَا رَأَى . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ رَجُلاً عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ يَحْمِلُ نَاقُوسًا . فَقَصَّ عَلَيْهِ الْخَبَرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِنَّ صَاحِبَكُمْ قَدْ رَأَى رُؤْيَا فَاخْرُجْ مَعَ بِلاَلٍ إِلَى الْمَسْجِدِ فَأَلْقِهَا عَلَيْهِ وَلْيُنَادِ بِلاَلٌ فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ " . قَالَ فَخَرَجْتُ مَعَ بِلاَلٍ إِلَى الْمَسْجِدِ فَجَعَلْتُ أُلْقِيهَا عَلَيْهِ وَهُوَ يُنَادِي بِهَا . قَالَ فَسَمِعَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ بِالصَّوْتِ فَخَرَجَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ الَّذِي رَأَى . قَالَ أَبُو عُبَيْدٍ فَأَخْبَرَنِي أَبُو بَكْرٍ الْحَكَمِيُّ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ زَيْدٍ الأَنْصَارِيَّ قَالَ فِي ذَلِكَ أَحْمَدُ اللَّهَ ذَا الْجَلاَلِ وَذَا الإِكْرَامِ حَمْدًا عَلَى الأَذَانِ كَثِيرًا إِذْ أَتَانِي بِهِ الْبَشِيرُ مِنَ اللَّهِ فَأَكْرِمْ بِهِ لَدَىَّ بَشِيرًا فِي لَيَالٍ وَالَى بِهِنَّ ثَلاَثٍ كُلَّمَا جَاءَ زَادَنِي تَوْقِيرًا আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গাধ্বনি করার মনস্থ করেন এবং ঢোল বাজিয়ে লোকেদের (সালাতের জন্য) ডাকার নির্দেশ দেন। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) কে স্বপ্নে দেখানো হল। তিনি বলেন, আমি সবুজ বর্ণের একজোড়া কাপড় পরিহিত এক ব্যাক্তিকে একটি নাকূস বহন করতে দেখলাম। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহ্র বান্দা! তুমি কি নাকূস বিক্রয় করবে? সে বললো, তা দিয়ে তুমি কী করবে? আমি বললাম, আমি তা দিয়ে সালাতের জন্য ডাকবো। সে বললো, আমি কি তোমাকে এর চাইতে উৎকৃষ্ট কোন জিনিস সম্পর্কে অবহিত করবো না? আমি বললাম, তা কী? সে বললো, তুমি বলোঃللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল, আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। সালাতের দিকে এসো, সালাতের দিকে এসো। কল্যাণের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ(রাঃ) বের হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসেন এবং যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি স্বপ্নযোগে একজোড়া সবুজ কাপড় পরিহিত এক ব্যাক্তিকে নাকূস বহন করতে দেখলাম। এরপর তিনি তাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের এই সাথী একটি স্বপ্ন দেখেছে। তুমি বিলালের সাথে মসজিদে চলে যাও, তাকে এগুলো শিখিয়ে দাও এবং বিলাল যেন আযান দেয়। কারণ বিলাল তোমার চাইতে উচ্চ কন্ঠের অধিকারী। রাবী বলেন, আমি বিলালের সাথে মসজিদে গেলাম। আমি তাকে শিখিয়ে দিলাম এবং তিনি তা উচ্চ স্বরে ঘোষণা দিলেন। রাবী বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) এই বাক্যধ্বনি শুনে বেরিয়ে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্র শপথ! আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি। ইরওয়াহ ইবনু মাজাহ এর উষ্ণতায় আবূ উবাইদ (রহঃ) বলেন, আবূ বাকর আল-হাকামী (রহঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ আল-আনসারী(রাঃ) এ সম্পর্কে (কবিতা) বলেনঃ আমি মহামহিম গৌরান্বিত আল্লাহ্র অশেষ প্রশংসা করছি আযান দেয়ার জন্য। যখন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুসংবাদদাতা তা নিয়ে আমার নিকট এলো, আমাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য তাকে সম্মান করে, সে তিন রাত আমাকে আযান দিলো, যখনই সে এলো, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিলো।(ইবনে মাজা,আবু দাউদ)আযানের উত্তর
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالاَ حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا كَمَا يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন আযান শুনতে পাও, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তা বলো।(বুখারী,তিরমিযি,নাসাঈ,আবুদাউদ) حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، نَحْوَهُ. قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنِي بَعْضُ، إِخْوَانِنَا أَنَّهُ قَالَ لَمَّا قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. وَقَالَ هَكَذَا سَمِعْنَا نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ. ইয়াহ্ইয়া (রহ.) বলেছেন, আমার কোনো ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুআয্যিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ বলল, তখন তিনি (মু‘আবিয়াহ (রাঃ) لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি।আজানের ফজিলত
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطٌ حَتَّى لاَ يَسْمَعَ التَّأْذِينَ، فَإِذَا قَضَى النِّدَاءَ أَقْبَلَ، حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلاَةِ أَدْبَرَ، حَتَّى إِذَا قَضَى التَّثْوِيبَ أَقْبَلَ حَتَّى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ، يَقُولُ اذْكُرْ كَذَا، اذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ، حَتَّى يَظَلَّ الرَّجُلُ لاَ يَدْرِي كَمْ صَلَّى আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।(বুখারী)১।সালাতের নিয়্যত
প্রত্যেকটা আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীলعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ. (متفقٌ على صحته
উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।(বোখারী ও মুসলিম) সালাতের জন্য নিয়ত ফরজ,তবে সেটা আমাদের সমাজে যে নওয়াইতুয়ান বলে করা হয় এটা না।ওয়াক্ত অনুযায়ী একজন মানুষ যে উদ্দেশ্য নিয়ে মসজীদে আসে ঐ উদ্দেশ্যটাই তার জন্য ফরজ,তবে যুগযুগ ধরে অনেকে মসজীদে নামাজের উদ্দেশ্যে আসেনা,তারা আসে মুসলমানেরা কি করে,কোন ঈমাম কোন কথা বলে যেটা নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মোনাফেকরা করত।তাদের নিয়তটা ঐ নেফাকের দিকেই যাবে।সুতরাং নামাজে আসার পূর্বেই বাড়ী হতে বা যেখানেই অবস্থান করুক সেখান হতে সালাতের সহীহ নিয়ত বা সংকল্প নিয়ে আসতে হবে।মসজিদে গিয়ে অমুকের সাথে ঝগড়া করবো,অমুক করবো,অমুক দেখবো ইত্যাদী সংকল্প নিয়ে আসলে তার ঐ নিয়তের মধ্যে গলধ রয়ে গেলো।পরিশেষে আমরা সালাতের নিয়তের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে,আমরা যে অবস্থান হতেই সলাতে যোগদান করি আমাদের অন্তরের মধ্যে সংকল্প জাগ্রত করতে হবে যে , আমি কোন ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে যাচ্ছি এবং এই সালাতের মাধমে আমি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে দুনিয়াবী সমস্ত অপকর্ম হতে দূরে থাকবো।কোরআনের ভাষা অনুযায়ী সালাত বা নামাজ যেহেতু সমস্ত অপকর্ম হতে মানুষকে দূরে রাখে এবং হাদিসের পরিভাষায় সালাত মুমেনের জন্ মেরাজ স্বরূপ
اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ
নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫ ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) -রুহুল মাআনী, সুতরাং আমি যেন সালাত বা নামাজ হতে এই ফায়দাগুলো লাভ করতে পারি এরকম সংকল্প লালন করে সালাত আদায় করাই মূলত নামাজ বা সালাতের নিয়তের মূল উদ্দেশ্য ।
নামাজের জন্য কিবলামুখী হওয়া জরুরী:
মদিনায় হিজরতের পর তিনি বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করেই সলাত আদায় করতেন। তিনি জিবরীল (আঃ) কে বলেছিলেন- আমার আশা, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন আমার চেহারা ইহুদীদের কিবলা হতে ফিরিয়ে দেন। জিবরীল বললেন- আমি তো আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আপনি আপনার রবের কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর কাছেই বিষয়টি বলুন। তিনি কিবলা পরিবর্তনের আশায় আকাশের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে’। (সূরা: আল বাকারা/২, আয়াত: ১৪৪) حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَبَّاسٍ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ الْمَهْدِيِّ، قَالَ حَدَّثَنَا مَنْصُورُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ سِيَاهٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا، وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا، وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا، فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِي لَهُ ذِمَّةُ اللَّهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ، فَلاَ تُخْفِرُوا اللَّهَ فِي ذِمَّتِهِ ". আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে খিয়ানত করো না।(বোখারী) حَدَّثَنَا نُعَيْمٌ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ حُمَيْدٍ الطَّوِيلِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. فَإِذَا قَالُوهَا وَصَلَّوْا صَلاَتَنَا، وَاسْتَقْبَلُوا قِبْلَتَنَا، وَذَبَحُوا ذَبِيحَتَنَا، فَقَدْ حَرُمَتْ عَلَيْنَا دِمَاؤُهُمْ وَأَمْوَالُهُمْ إِلاَّ بِحَقِّهَا، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ ". নু’আইম (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' স্বীকার করবে। যখন তারা তা স্বীকার করে নেয়, আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, তখন তাদের জান ও মালসমূহ আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়। অবশ্য রক্তের বা সম্পদের দাবীর কথা ভিন্ন। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে।(বোখারী) নামাযে কেবলামুখী হওয়া (তথা বাইতুল্লাহমুখী বা কাবামুখী হওয়া) নামাযের অন্যতম প্রধান ফরয। যারা বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় এমন স্থানে নামায পড়েন তাদেরকে হুবহু বাইতুল্লাহ বা হুবহু কাবা শরীফ বরাবর মুখ করে নামায আদায় করতে হয়। এটাকে বলা যায় ‘আইনে কেবলা’ (একেবারে সোজা কেবলা)। তাদের জন্য সোজা কেবলামুখী-কাবামুখী হওয়া জরুরি। আর যেখান থেকে বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় না এমন কোনো স্থানে কেউ নামায পড়লে (চাই বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন) তার মুখ হুবহু বাইতুল্লাহ বরাবর না হলেও চলে, তবে বাইতুল্লাহর বা কেবলার দিকের মধ্যে থাকতে হবে। একে বলা হয় ‘জেহাতে কেবলা’। জেহাতে কেবলা অর্থ কেবলার দিক বা বাইতুল্লাহর দিক। এই ‘কেবলার দিক’ বা ‘বাইতুল্লাহর দিক’ বলতে বোঝায় বাইতুল্লাহ যে বরাবর অবস্থিত তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। নামাযীকে অবশ্যই এই ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে অভিমুখী থাকতে হবে। এর বাইরে অভিমুখী হয়ে গেলে নামায হবে না। কেননা পৃথিবীর বৃত্ত হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রী, আর মৌলিক দিক হচ্ছে ৪টি। অতএব একটা দিক বলতে বোঝায় (৩৬০÷৪=) ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। সুতরাং কেবলার দিক বলতেও ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকেই বোঝাবে। তাই কাবা শরীফ বা বাইতুল্লাহ শরীফ যে বরাবর অবস্থিত (৩৯০ ৩৯' পূর্ব দ্রাঘিমা ও ২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশ) তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে রুখ (অভিমুখিতা) থাকলেও নামায হয়ে যাবে। আমাদের দেশে যেসব মসজিদ রয়েছে তা নির্মাণের সময় অনেকেই কম্পাস ধরে হুবহু বরাবর কেবলা ঠিক রেখে মেহরাব তৈরি করেননি। বরং আশপাশের মসজিদ দেখেই কেবলা নির্ধারণ করে নিয়েছেন। এতে করে সেগুলোর অনেকটাতে হয়তো সোজা কেবলা রক্ষা হয়নি। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে প্রায়শই দেখা যায় সেগুলোর কেবলা পূর্বোল্লিখিত ৯০ ডিগ্রীর মধ্যেই রয়েছে। অতএব এসব মসজিদে নামাযে কোনোই সমস্যা নেই। তবে কোনো মসজিদের কেবলা প্রকৃতই ৯০ ডিগ্রীর বাইরে থাকলে তা অবশ্যই সংশোধন করে নেয়া চাই। কিন্তু ইদানিং মানুষের হাতে হাতে মোবাইল থাকে। আর অনেক মোবাইলে থাকে ডিজিটাল সাধারণ কম্পাস বা কেবলা কম্পাস। এ সুবাদে অনেকেই মোবাইলে সাধারণ কম্পাস বা কেবলা কম্পাস দেখে মসজিদের কেবলা সোজা বরাবর না পেলেই এবং একটু ডানে-বামে বাঁকানো থাকলেই হৈ চৈ শুরু করেন যে, এই মসজিদের কেবলা ঠিক নেই, এতে নামায হবে না। এরূপ লোকদের অনেকেই সোজা কেবলার ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী -সর্বমোট এই ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে মুখ থাকলেও নামায হয়ে যায়- এ মাসআলাটি জানেন না। তদুপরি শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল শিপে ব্যবহৃত জাইরো কম্পাস (Gyro compass) নন ম্যাগনেটিক হওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ চুম্বকের কারণে সে কম্পাস প্রভাবিত হয় না। ফলে তা উত্তরসহ অন্য সব দিক সঠিক প্রদর্শন করে। কিন্তু অন্য যেকোনো ধরনের কম্পাস (এনালগ হোক বা ডিজিটাল) ম্যাগনেটিক কম্পাস হওয়ার কারণে হুবহু দিক দেখায় না- এ বিষয়টাও জানা থাকা দরকার। তাহলেই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে যে, সোজা কেবলা কোন্ দিকে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানের অভিমুখিতা ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে রয়েছে কি না। এনালগ বা ডিজিটাল যে কম্পাসই হোক না কেন তা যে হুবহু দিক দেখায় না- এ বিষয়টা বোঝার জন্য জানতে হবে কম্পাসের মাধ্যমে প্রথমে উত্তর দিক নির্ণিত হয় এবং তা থেকে অবশিষ্ট দিকগুলো নির্ণিত হয়। আরও জানতে হবে উত্তর রয়েছে দুই ধরনের। একটি হল ভৌগোলিক উত্তর (Geographical North) তথা প্রকৃত উত্তর (যেদিকে উত্তর আকাশের ধ্রুব তারা অবস্থিত)। আর অপরটি হল চৌম্বক উত্তর (Magnetic North)। আর কম্পাস যে উত্তর প্রদর্শন করে তা হচ্ছে চৌম্বক উত্তর। চৌম্বক উত্তর ও ভৌগোলিক উত্তর এক নয়। চৌম্বক উত্তর মেরু ও ভৌগোলিক উত্তর মেরুর অবস্থান এক জায়গাতে নয়। চৌম্বক উত্তর মেরু ভৌগোলিক উত্তর মেরু থেকে ডানে/বাঁয়ে অবস্থান করে। চৌম্বক উত্তর স্থির থাকে না বরং কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে সরে থাকে। যেমন : নিম্নে প্রদত্ত তালিকা থেকে বিভিন্ন সময়ে চৌম্বক উত্তরের অবস্থানে পার্থক্য হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বিভিন্ন সনে চৌম্বক উত্তরের অবস্থান ২০১৮-এর পর থেকে আবার উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করবে। (নেটে Magnetic North, geomagnetic and magnetic poles A_ev Where is the magnetic north pole right now? শিরোনামে চৌম্বক উত্তরের এই স্থান পরিবর্তনের ডাটা দেখে নেয়া যেতে পারে।) অতএব কম্পাস প্রদর্শিত উত্তর থেকে প্রকৃত উত্তর বের করতে হলে প্রথমে জানতে হবে চৌম্বক উত্তরের বর্তমান অবস্থান প্রকৃত উত্তর থেকে কত ডিগ্রী কোন্ দিকে রয়েছে। আমরা একটি চিত্র প্রদর্শন করেছি। চিত্রটি কম্পিউটারে যথাসাধ্য সুক্ষ্মভাবেই আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে ২০১৮ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তর ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট) পূর্বে অবস্থিত। অতএব কম্পাস যে উত্তর দেখাবে তা থেকে এই পরিমাণ পশ্চিমে হবে প্রকৃত উত্তর। এই প্রকৃত উত্তরের ভিত্তিতে অন্যান্য দিক নির্ণিত হবে। তারপর যেখান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে জায়গার দ্রাঘিমা অক্ষ ও বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা অক্ষ নির্ণয় করে বায়তুল্লাহ কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করতে হবে। আমাদের প্রদত্ত চিত্রের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করা সহজ। চিত্রটি ঢাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ চিত্রের আলোকে অন্য যে কেউ তার স্থানের জন্য চিত্র অংকন করে নিতে পারবেন। (তবে অবশ্যই চিত্র তৈরির কাজটি দক্ষ হাতে সম্পন্ন হতে হবে। বর্তমানে কম্পিউটারে মোটামুটি এরূপ নিখুঁত চিত্র তৈরি করা যায়।) প্রথমে একটি বৃত্ত আঁকুন। বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝে একটি দ্রাঘিমা রেখা টানুন। এটা হবে যে স্থান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে স্থানের দ্রাঘিমা। তারপর বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা রেখা (৩৯০৩৯' পূর্ব দ্রাঘিমা) টানুন। বায়তুল্লাহর অক্ষরেখা (২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশ) টানুন। তারপর যে স্থান থেকে কেবলার দিক বের করতে চাওয়া হবে সে স্থানের দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা টানুন। পূর্বে বলা হয়েছে বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝে উত্তর দক্ষিণে যে রেখা হবে সেটা হবে সেই স্থানের দ্রাঘিমা রেখা। যেমন ঢাকা থেকে কেবলা বের করতে চাওয়া হলে ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০০২৪' এবং অক্ষ ২৩০৪৮'। এভাবে ঢাকার দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা টানুন। এবার বৃত্তের পূর্ব পশ্চিমের মাঝখানের রেখা তথা ঢাকার দ্রাঘিমা রেখা ঢাকার অক্ষরেখাকে যে স্থানে ক্রস করবে সেই ক্রসিং পয়েন্ট হল ঢাকার অবস্থান। এবার ঢাকার অক্ষরেখা বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে একটি সোজা রেখা টানুন। এটা হবে ঢাকা থেকে সোজা পূর্ব পশ্চিমের দিক বরাবর রেখা। সবশেষে ঢাকার অবস্থান থেকে একটি রেখা বায়তুল্লাহর অবস্থানকে (বায়তুল্লাহর দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখার ক্রসিং পয়েন্টকে) ক্রস করে বৃত্তের দিকে নিয়ে যান। এই রেখা বৃত্তের যেখানে গিয়ে মিলিত হবে সেটা সোজা পশ্চিমের রেখা, যেখানে বৃত্তে মিলিত হয়েছে সেখান থেকে যতটুকু যেদিকে সরে থাকবে সেই পরিমাণই হবে ঢাকা থেকে বায়তুল্লাহর অবস্থান- কোন্ দিকে কত ডিগ্রী সরে অবস্থিত তার নির্ণয়। নিম্নে এমন আমাদের প্রদত্ত চিত্রটি দেখুন। এতে দেখা যাচ্ছে বায়তুল্লাহ ঢাকা থেকে .৬০০ (দশমিক ৬০ ডিগ্রী) বা ৩৬' (৩৬ মিনিট) উত্তর দিকে অবস্থিত। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ মনে করতে পারেন বায়তুল্লাহর অবস্থান যখন ২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশে আর ঢাকার অবস্থান ২৩০৪৮' অক্ষাংশে, তাহলে ঢাকা থেকে বায়তুল্লাহ (২৩০৪৮' - ২১০২৫'=) ২০২৩' (২ ডিগ্রী ২৩ মিনিট) দক্ষিণ দিকে হওয়ার কথা। এরূপ মনে করা ভুল। কারণ অক্ষরেখা সামনের দিকে ক্রমান্বয়ে মেরুর দিকে বেঁকে গিয়ে থাকে। সব অক্ষরেখাই যেকোনো স্থান থেকে আগে পিছের দিকে ক্রমান্বয়ে মেরুর দিকে বেঁকে যায়। আমাদের প্রদত্ত চিত্রেও বিষয়টি লক্ষ করা যাবে। পূর্বোক্ত বিষয়টা সামনে রেখে আমরা উদাহরণস্বরূপ ঢাকা থেকে সোজা কেবলার দিক নির্ণয় করার ৪টা পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা করব। (ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য স্থানের বিষয়টাও এর উপর ভিত্তি করে বুঝে নেয়া যাবে।) ১. ধ্রুবতারার সাহায্যে কেবলা নির্ণয় উত্তর আকাশের ধ্রুবতারা চিহ্নিত করুন। (সপ্তর্ষীম-লের সাহায্যে ধ্রুবতারা চিহ্নিত করা যায়।) ধ্রুবতারা প্রকৃত উত্তর দিকে অবস্থিত। এটা স্থির তারা, কখনও তার স্থান পরিবর্তন হয় না। অতএব ধ্রুবতারার দিক হচ্ছে প্রকৃত উত্তর দিক। এর ভিত্তিতে প্রকৃত পশ্চিম দিক নির্ণয় করুন। সেই পশ্চিম দিক থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে সোজা কেবলার দিক। ২. এনালগ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় এনালগ কম্পাস দিয়ে প্রকৃত উত্তর বের করুন। উল্লেখ্য, সব কম্পাসই চৌম্বক উত্তর নির্ণয় করে থাকে প্রকৃত উত্তর নয় -যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি-। তাই কম্পাস প্রদর্শিত চৌম্বক উত্তর প্রকৃত উত্তর থেকে কত ডিগ্রী কোন্ দিকে অবস্থিত তা বের করুন। এটা বের করার পদ্ধতি হল চৌম্বক উত্তর কত দ্রাঘিমা ও অক্ষে অবস্থিত তা বের করুন। তারপর ঢাকার (অর্থাৎ যেখান থেকে দিক নির্ণয় করতে চান এবং যে স্থানটিকে চিত্রে বৃত্তের দ্রাঘিমা [মধ্যরেখা] ও অক্ষের ক্রসিং পয়েন্টে চিহ্নিত করেছেন।) অবস্থান থেকে একটি রেখা উক্ত চৌম্বক উত্তরের দ্রাঘিমা ও অক্ষের ক্রসিং পয়েন্ট ভেদ করে বৃত্তে নিয়ে সংযুক্ত করুন। তারপর প্রকৃত উত্তর থেকে এই সংযুক্তির পয়েন্টের দূরত্ব মাপুন। সেটাই হবে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তরের দূরত্ব। পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী ২০১৮ সালে চৌম্বক উত্তরের অবস্থান হচ্ছে ৮৬.৫০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ১৭৮.৮০ পশ্চিম দ্রাঘিমা। এবার উপরোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী আঁকা আমাদের প্রদত্ত চিত্রে দেখুন ২০১৮ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে চৌম্বক উত্তরের ব্যবধান হয় ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট)। অতএব কম্পাস প্রদর্শিত উত্তর থেকে ২.৫০০ পশ্চিমে হবে প্রকৃত উত্তর। এর ভিত্তিতে প্রকৃত পশ্চিম নির্ণয় করুন। সেই পশ্চিম দিক থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে সোজা কেবলার দিক। (উল্লেখ্য, যেকোনো কম্পাস ব্যবহারের সময় কম্পাসের অবস্থানের আশেপাশে যেন লোহা জাতীয় কোনো কিছু না থাকে। কেননা তাতে কম্পাস প্রভাবিত হবে।) অথবা কম্পাস যে পশ্চিম দেখাবে তা যেহেতু প্রকৃত পশ্চিম থেকে ২.৫০০ উত্তরে। তাই কম্পাস প্রদর্শিত পশ্চিম থেকে ১.৬০০ (২.৫০০ - .৯০০ = ১.৬০০) পরিমাণ দক্ষিণে হবে সোজা কেবলা। ৩. ডিজিটাল সাধারণ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় ডিজিটাল সাধারণ কম্পাস দিয়ে কেবলা বের করতে চাইলে এনালগ কম্পাস দিয়ে কেবলা বের করার যে পদ্ধতি পূর্বে বলা হয়েছে তা অনুসরণ করতে হবে। ৪. ডিজিটাল কেবলা কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয় ডিজিটাল কেবলা কম্পাস দিয়ে কেবলা নির্ধারণ করতে হলে জানতে হবে ডিজিটাল কেবলা কম্পাস কেবলা দেখায় ২৭৭.৬৭০। কোনো কোনোটায় দেখায় ২৭৭.৬৮০। কোনো কোনোটায় দেখায় ২৭৮০। এটা বুঝতে হলে আগে কম্পাসের ডিগ্রী বুঝতে হবে। কম্পাসে মোট ৩৬০ ডিগ্রী থাকে। উত্তরদিকে থাকে ০ ডিগ্রী। পূর্বদিকে থাকে ৯০ ডিগ্রী। দক্ষিণে ১৮০ ডিগ্রী। পশ্চিমে ২৭০ ডিগ্রী। অতএব যেকোনো স্থানে কম্পাস ধরলে ২৭০ ডিগ্রী (কম্পাসের) হল সেই স্থানের প্রকৃত পশ্চিম। আর পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার সোজা কেবলা হচ্ছে প্রকৃত পশ্চিম থেকে .৯০০ (দশমিক ৯০ ডিগ্রী) বা ৫৪' (৫৪ মিনিট) উত্তরে। অতএব কেবলা কম্পাস যখন ২৭৭.৬৭ ডিগ্রীকে কেবলা দেখাচ্ছে তার অর্থ হল কম্পাসের পশ্চিম থেকে ৭.৬৭ ডিগ্রী উত্তরে কেবলা দেখাচ্ছে। আর কম্পাসের পশ্চিম যেহেতু প্রকৃত পশ্চিম থেকে ২.৫০০ (দুই দশমিক পঞ্চাশ ডিগ্রী) বা ২০৩০' (দুই ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট) উত্তরে, তাহলে সারকথা এই দাঁড়াল যে, কেবলা কম্পাস প্রকৃত পশ্চিম থেকে (৭.৬৭+২.৫০-.৯০=) ৯.২৭ ডিগ্রী উত্তরে কেবলা দেখাচ্ছে। তাই কেবলা কম্পাস যে কেবলা দেখায় তার থেকে ৯.২৭ ডিগ্রী দক্ষিণে হবে প্রকৃত সোজা কেবলা। উল্লেখ্য, এক ধরনের কেবলা ডিরেকশন (Qibla direction) এ্যাপ রয়েছে, তাতে কেবলার দিকে সোজা রেখা টেনে দেখানো হয়। তাতেও ২৭৭.৬৭ ডিগ্রীর দিকে কেবলা দেখানো হয়ে থাকে। আরও উল্লেখ্য, কেবলা নির্ণয়ের উপরোক্ত পদ্ধতি চতুষ্টয়ের মধ্যে ১ম পদ্ধতিই সবচেয়ে উত্তম। তারপর ২য় পদ্ধতি তথা এনালগ কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয়ের পদ্ধতি। ডিজিটাল কম্পাসের সেন্সর অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে থাকে বিধায় সামান্য অসমতল অবস্থানে রাখলে বা ধরার মধ্যে সামান্য উনিশ বিশ হলে কিংবা আরও বিবিধ কারণে রেজাল্ট পাল্টে যায়। এনালগ কম্পাসে তেমনটা হয় না। সবশেষে আর একটি বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে প্রবন্ধটি শেষ করছি। তা হল, কোনো মসজিদের কেবলার রুখ মূল সোজা কেবলা থেকে ৪৫ ডিগ্রী ডানে বা ৪৫ ডিগ্রী বামের মধ্যে থাকলেও নামায হয়ে যায়- কথাটি যেন সর্বদা স্মরণে রাখা হয়। আমাদের এতক্ষণের আলোচনার উদ্দেশ্য হল কোনো মসজিদের কেবলা এর বাইরে থাকলে তারা সংশোধন করে নিবেন, কিংবা নতুনভাবে কোথাও মসজিদ নির্মাণ করতে চাইলে বা কোনো স্থানের কেবলার দিক সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে চাইলে এই পদ্ধতিগুলোর সহযোগিতা নিতে পারবেন।( মাসিক আল কাউসার)সালাত বা নামাজ কিভাবে শুরু করবো
আমাদের সালাত হতে হবে মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী সালাত আদায় করা।রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নিয়মে সালাত বা নামাজ শুরু করেছেন আমাদেরকেও ঐ একই নিয়মে সালাত শুরু করতে হবে।আমাদের সমাজে নামাজ শুরু করার যে প্রচলন আছে যেমন প্রথমে গিয়ে ক্বেবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েاني وجهت وجهي للذي فطر السموات والارض
সূরা আনআমের ৭৯ নং আয়াতের অংশ আগে পাঠ করি তারপর “ নওয়াইতুয়ান বলে নিয়ত করতেই থাকি ওদিকে ঈমামের ফাতিহা অর্ধেক প্রায় শেষ,কিন্ত কিছু মুক্তাদী এখনো আল্লাহ আকবর বলে নামাজ শুরু করতে পারিনি।এটা রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো নামাজ বা সালাত শুরু করার পদ্ধতি না।আসুন হানাফী মাযহাব মোতাবেক রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে নামাজ শুরু করেছেন আমরা তা আমলের চেষ্টা করি।
সুতরার ব্যবহার
আবু হানিফার মতে, কেউ যদি এমন নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে হেটে চলে যায়, যার সামনে কোন সুতরা ছিলো না, এতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির নামাজ নষ্ট হবে না।[Majmoo’ Fataawa Ibn Baaz (24/21, 22] ইমাম ইবনুল কাইয়ুম বলেনঃ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন কোনো কিছুর সামনে দাঁড়াতেন, অথবা সামনে কিছু দাঁড় করিয়ে দিতেন, কিংবা অন্তত সামনে একটা রেখা এঁকে দিতেন। তিনি সালাতের সামনে আড়াল সৃষ্টিকারী (সুতরা) কিছু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কখনো দেয়াল সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। তখন তার সাজদা ও দেয়ালের মাঝখান দিয়ে একটি বকরী বা ভেড়া পার হবার জায়গা থাকতো মাত্র। তার ও সুতরার মাঝে এর চাইতে বেশি দূরত্ব থাকতো না। বরং তিনি সুতরার নিকটবর্তী দাঁড়াবার নির্দেশ দিয়েছেন। কখনো তিনি খাট, কাঠ, গাছ কিংবা মসজিদের খুঁটিকে সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। যখন (তিনি) যুদ্ধের সফরে থাকতেন, কিংবা কোনো খোলা মাঠে সালাত আদায় করতেন, তখন সামনে হাতিয়ার গেড়ে সেটাকে সুতরা বানিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং লোকেরা তার পিছনে সালাত আদায় করতেন। কখনো বাহন সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন, বাহনকেই সুতরা বানিয়েছেন। কখনো কখনো সোয়ারীর আসনকেই সুতরা বানিয়েছেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসল্লিদের নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো আড়াল পাওয়া না গেলে অন্তত তীর বা লাঠি সামনে পুতে নিয়ে সেটাকে সুতরা বানিয়ে যেনো তারা সালাত আদায় করে। তীর বা লাঠিও পাওয়া না গেলে অন্তত সামনে মাটিতে যেনো একটি রেখা এঁকে নেয়। আবু দাউদ বলেন, আমি আহমাদ ইবন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মাটিতে রেখা আঁকলে সেটা নতুন চাঁদের মতো আড়াআড়ি আঁকবে। আব্দুল্লাহ বলেছেন, লম্বালম্বি আঁকবে। আর লাঠি গাড়লে সেটা খাড়া করে গাড়বে।" সুতরার সীমা সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ مِثْلَ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ “উটের উপর হেলান দিয়ে বসার জন্য তার পিঠে যে কাঠ রাখা হয় তার উচ্চতার বরাবর।” এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতা। এর চেয়ে কমও বৈধ আছে। কেননা হাদীছে এসেছেঃ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ لِصَلَاتِهِ وَلَوْ بِسَهْمٍ “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ছালাত আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরা করে নেয়। সুবরা ইব্ন মা‘বাদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « بسهمٍ ولو الصلاة في أحدُكم ليستترْ “তীর বা বর্শা দিয়ে হলেও তোমাদের প্রত্যেকে যেন সালাতে সুতরা কায়েম করে” হাকেম: (১/২৫২), তাবরানি । কাজঃ সামনে একটা সুতরা বা আড়াল রেখে ক্বেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।জামায়াতের ক্ষেত্রে ঈমাম সাহেবের সামনে সুতরা থাকলেই হবে।(মনে রাখতে হবে এখানে আর কিছু বলাবলি নেই)সালাত বা নামাজ শুরুর ১ম করনীয়
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:إذاقمت إلىالصلاةفأسبغالوضوء ثم استقبة القبلل
যখন তুমি সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হও, পরিপূর্ণরূপে অযু কর অতঃপর কিবলা মুখী হও। ( বোখারী,মুসলিম)তাহলে প্রথম কাজই হলো কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।
সালাত বা নামাজ শুরুর ২য় করনীয় এবংতাকবীরে তাহরীমাতে হাত কতদূর উঠবে
حدثنا علي بن محمد الطنافسي قال : حدثنا أبو اسامة قال: حدثني عبد الحميد بن جعفر قال : حدثنا محمد بن عمرو بن عطاء ، قال : سمعت ابا حميد الساعدي يقول: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم : اذا قام إلى الصلاة،استقبل القبلة ، ورفع يديه ،وقال : الله اكبر
অর্থ:হযরত মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আত্বা র বর্ণনা করেন , তিনি বলেন, আমি হুমাইদ সাইদি র কে বলতে শুনেছি আল্লাহর রাসূল দ. যখন সালাত শুরু করতেন তখন কিবলামূখী হয়ে দুই হাত উঁচু করতেন ও আল্লাহু আকবর বলতেন। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং৮০৩
فحدثنا العباس بن محمد الدوري ، ثنا العللء بن اسماعيل العطار ، ثنا حفص بن غياث ، عن عاصم الاحول، عن انس ، قال : رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم كبر فحاذى بابهاميه أذنيه
অর্থ: হযরত আনাস র বলেন , আমি রাসূল দ. কে দেখেছি সালাতে তাকবীর বলতেন ও কাঁনের লতি পর্যন্ত হাঁত উত্তোলন করতেন।
ইমাম বায়হাকী , সুনানে কোবরা, হাদিস নং২৬৩২;
মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং৮২২;
নাছবুর রায়া, ইমাম যায়লায়ী, প্রথম খন্ড ,৩৮৯পৃষ্ঠা ;
সূনানে দারে কুতনী, হাদিস নং১৩০৮
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ خَرْبُ قَالَ حَدَّثَنَا عَفَّان هُمَّامُ قَالَ حَدَّثَنَا محمدُ بْنُ جَحَادَةَ حَدَّثَنِىْ عَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ وَائِلِ عَنْ عَلْقَمَةَ ابْنِ وَائِلِ وَمَوْلٰى لَهُمْ اَنَّهُمَا حَدَّثَاهُ عَنْ اَبِيْهِ وَائِلِ بْنِ حُجْرِ اَنَّهُ رَأى النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم رَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ دَخَلَ فُىْ الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَصَفَ هُمَّامُ حِيَالَ اُذْنَيْهِ(مسلم شريف،ج١ص١٧٣)
অর্থ: হযরত জুহাইর ইবনে হারব রদ্ধি ওয়াইল ইবনে হুজর রদ্ধি. হতে বর্ণিত- তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবির ( তাকবিরে তাহরিমা) বললেন। রাবি হুমাম বলেন, তিনি উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। মুসলিম শরিফ, ১ম খন্ড,পৃষ্টা ১৭৩, হাদিস নং-৭৭০
حدثنا عثمان بن أبي شيبة، حدثنا شريك، عن عاصم بن كليب ، عن وائل بن حجر ، قال: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم حين افتتح الصلاة رفع يديه حيال أذنيه
অর্থ: হযরত ওয়াইল ইবনে হাজর র হতে বর্ণিত , নিশ্চয় তিনি নবী সঃ কে দেখেছেন সালাতে প্রবেশকালীন তাকবীরের সময় দুই হাত উচু করতেন এমনকি ইহা কানের লতি পর্যন্ত চলে যেত। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং৪০১
মহিলারা তাকবীরে তাহরিমার সময় কাধ বরাবর উঠাবে
যেমন-حدثنا محمد بن عبد الله الخضرمي قال: حدثتني ميمونة بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر قالت: سمعت عمتي ام يحيى بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر ، عن ابيها عبد الجبار ، عن علقمة عمها ، عن وائل بن حجر قال : جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال: هذا وائل بن حجر جائكم ،……….. فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم : يا وائل بن حجر ، اذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك ، والمر أة تجعل يديها حذاء ثدييها.
অর্থ: হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাঃ বর্ণনা করেন: আমি নবী সাঃ এর দরবারে হাজির হলাম । প্রিয় নবী সাঃ বললেন: এ হল ওয়াইল ইবনে হুজর তোমাদের কাছে এসেছে।অতপর নবী সাঃ আমাকে বললেন : হে ওয়াইল ইবনে হুজর ! যখন তুমি সালাত শুরু করবে তখন কাঁন বরাবর হাঁত উঠাবে , আর মহিলারা বুক বরাবর হাত উঠাবে।
ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর , নবম খন্ড,১৪৪ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৮;
ইমাম সিয়তী : তানভীরুল হাওয়ালিক শরহে মুয়াত্তা মালিক, প্রথম খন্ড ,৭৪ পৃষ্ঠা ।
ইমাম সিয়তী : জামেউল আহাদিস , হাদিস নং২৬৩৭৭
ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস নং১০৬৫০।
হাদিস: হাসান, সহিহ।
কানের লতি স্পর্শ করে কাধ বরাবর দু হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবর বলবে,অথবা আল্লাহু আকবর বলে হাত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা বাঁধবে।
সালাত বা নামাজে ৩য় করনীয় হাত কিভাবে কোথায় বাঁধতে হবে
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর দিয়ে দুই হাত তুললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেনعن وائل بن حجر : أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصلاة كبر، وصف همام حيال أذينه، ثم التحف بثوبه، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى
সহীহ মুসলিম ১/১৭৩ হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. رواه الترمذي :وقال حديث حسن.
জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯
হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪
كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة. قال أبو حاتم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم.
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০
مر رسول الله صلى الله عليه وسلم برجل وهو يصلي قد وضع يده اليسرى على اليمنى فانتزعها ووضع اليمنى على اليسرى. قال الهيثمي في مجمع الزوائد ٢/٢۷٥ : رجاله رجال الصحيح.
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময় হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।
سمعت نبي الله صلى الله عليه وسلم يقول : إنا معاشر الأنبياء أمرنا بتعجيل فطرنا وتأخير سحورنا وأن نضع أيماننا على شمائلنا في الصلاة. قال الهيثمي في مجمع الزوائد ١/ ٢۷٥: رجاله رجال الصحيح.
-সহীহ ইবনে হিববান ৩/১০১, হাদীস : ১৭৬৬; আলমুজামুল কাবীর ১১/১৫৯, হাদীস : ১১৪৮৫ হারিছ ইবনে গুতাইফ রা. বলেন, ‘আমি এটা ভুলিনি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতে দেখেছি, অর্থাৎ নামাযে। مهما رأيت نسيت لم أنس أني رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وضع يده اليمنى على اليسرى يعني : في الصلاة. মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১০৫, হাদীস : ১৬৯৬৭-৬৮, ২২৪৯৭
হাত কোথায় বাঁধা হবে
নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم، يرون أن يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة، ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة، ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة، وكل ذلك واسع عندهم. অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪ বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।নাভীর নিচে হাত বাঁধা
উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ.ইমাম বোখারী রহঃ এর ওস্তাদ (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’تحت السرة أقوى في الحديث تحت السرة أقوى في الحديث وأقرب إلى التواضع
তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩ এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -
حدثنا يزيد بن هارون قال : أخبرنا الحجاج بن حسان قال : سمعت أبا مجلز ـ أو سألته ـ قال : قلت كيف أصنع؟ قال : يضع باطن كف يمنيه على ظاهر كف شماله ويجعلها أسفل من السرة.
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০ এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -
حدثنا وكيع، عن ربيع، عن أبي معشر، عن إبراهيم قال : يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই -
قال محمد : أخبرنا الربيع بن صبيح، عن أبي معشر، عن إبراهيم : أنه كان يضع يده اليمنى على يده اليسرى تحت السرة. قال محمد : وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه الله. (كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)
প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁধা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। রেওয়ায়েতটি এই-
أخبرنا أبو حنيفة، عن حماد عن إبراهيم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يعتمد بإحدى يديه على الأخرى في الصلاة، يتواضع لله تعالى. قال محمد : ويضع بطن كفه الأيمن على رسغه الأيسر، تحت السرة، فيكون الرسغ في وسط الكف، (كتاب الأثار، كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর সামনে বিনীত হতেন।’ (ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০ খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন। সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-حدثنا وكيع، عن موسى بن عمير، عن علقمة بن وائل بن حجر، عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১ এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন
-وهذا إسناد جيد
এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডুলিপিতে হাদীসটি এভাবেই অর্থাৎ
ةحة السرة
(নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
حدثنا أبو مسلم الكشي ثنا حجاج بن نصير ثنا شعبة عن سلمة بن كهيل قال : سمعت حجرا أبا العنبس يحدث عن وائل الحضرمي أنه صلى مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ...، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى وجعلها على بطنه.
-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০ তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
قال الإمام الدارمي في السنن (باب وضع اليمين على الشمال في الصلاة) : أخبرنا أبو نعيم، ثنا زهير، عن أبي إسحاق، عن عبد الجبار بن وائل، عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على اليسرى قريبا من الرسغ. انتهى ورواه الطبراني بطريق عبدان بن أحمد، ثنا عمرو بن عثمان الحمصي، ثنا إسماعيل بن عياش، عن يونس بن أبي إسحاق عن أبي إسحاق به.
-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২
বুকের উপর হাত বাঁধার দুর্বল দলিল
ইবনুল কাইয়্যুম বলেছেন একমাত্র মুমিল ইবনে ইস্কেহ বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি বর্ণনা করেন তিনিই উক্ত শব্দটি বৃদ্বি করেছেন। সুতরাং সমস্ত রাবীর বিপরিতে মোমিলের মত একজন দুর্বল রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। (এলামুল মুয়াক্কিয়িন ২য় খন্ড ৩১২পৃ, তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৬ ৫পৃ) . 2. ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒـﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ“ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন নামাযে বুকের কাছে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখবে”। (বায়হাকী শরীফ) হাদিসটির বিষয়ে মন্তব্যঃ ইবনে হিব্বান বলেন উক্ত হাদিসের সনদে “রুহ ইবনুল মুসাইয়য়াব” নামে একজন দুর্বল রাবি আছেন যিনি হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যক্ত। আল্লামা ইবনে হাব্বান বলেন তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করেন। সুতরাং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে আদি বলেন তার হাদিসগুলো সংরক্ষিত নয়।
. 3. ﻋﻦ ﻫﻠﺐ ﺭﺽ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﻋﻦ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻭﻳﻀﻊ ﻫﺬﻩ ﻋﻠﻲ ﺻﺪﺭﻩ
হুলুব (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের উপর হাত রেখেছিলেন। আল্লামা নিমি “আসারুস সুনান” নামক কিতাবে শক্তিশালী দলীল দিয়ে এ কথা প্রমান করেছেন যে উক্ত বর্ণনার শব্দে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আসল করা হয়েছে। সুতরাং উক্
ত ﻭﻳﻀﻊ ﻫﺬﻩ ﻋﻠﻲ ﺻﺪﺭﻩ
যেটাকে ভূলে
ﻳﻀﻊ ﻫﺬﻩ ﻋﻠﻲ ﻫﺬﻩ
বর্ণনা দ্বারা দলীল দেওয়া ঠিক হবেনা। সুতরাং নামাযে বুকের উপর হাত রাখার যে তিনটি দলীল বর্ণিত হয়েছে তিনটি হাদিসেই সনদের দিক দিয়ে অত্যান্ত দুর্বল। . হাত কোথায় বাঁধতে হবেঃ সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের স্বর্ণ যুগ তথা কুরুনে সালাসার আমল দেখলে আমরা এ ব্যপারে দু ধরণের আমল দেখতে পাই। প্রথমটি হল নাভীর নিচে হাত বাধা এবং দ্বিতীয়টি হল নাভীর উপর বুকের নিচে হাত বাধা। উভয়টি সালাফ থেকে প্রমাণিত তবে নাভীর নিচে হাত বাধার দলীল অধিক শক্তিশালী যা উপরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা- তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন- এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) সমাধান দেন-
ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ، ﻳﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻧﻴﻀﻌﻬﻤﺎ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﻛﻞ ﺫﻟﻚ ﻭﺍﺳﻊ ﻋﻨﺪﻫﻢ .
অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩। . আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া নামাযে হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কে বলেছেঃ ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমন ভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর এমন ভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলি সমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’ এরপর সে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস, যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা, সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসও হুলবরা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃত করে। (শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬) এ দীর্ঘ্য আলোচনার পর হানাফী মাযহাবরে অনুস্বরনী য় রাসূলুল্লাহর সাঃ এর হাদিস সমুহের আমলকে না জানা অথবা দুর্বল মনে করে যিনারা ফেৎনার ভিতর পা দেবার বা নুতনত্ব অনুস্বরনের পথে পা বাড়িয়েছে বা পা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আশাকরি তাদের ভূল ভাঙ্গবে।
আল্লাহু আকবর বলে হাত বাঁধার পর কোন দোয়া পড়তে হবে
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ كَبَّرَ ثُمَّ يَقُولُ « سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَহযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন রাতে নামাযে দাড়াতেন, তখন তাকবীরে তাহরীমার পড়তেন- সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা, ওয়াতাবারাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গায়রুকা। , সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৭৫,৭৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮০৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২১৭৭, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪২, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন বলতেন-
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
(তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)
الْمُشْرِكِينَ مِنَ أَنَا وَمَا حَنِيفًا وَالأَرْضَ السَّمَوَاتِ فَطَرَ لِلَّذِي وَجْهِيَ وَجَّهْتُ قَالَ الصَّلاَةِ إِلَى قَامَ إِذَا كَانَ
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন (রাতের বেলা) দাঁড়াতেন তখন (তাকবীরে তাহরীমার পর) বলতেন, ওয়াজ্জাহতু ওয়ায হিয়া লিল্লাযি ফাতারাস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ হানীফা ওমা আনা মিনাল মুশরিকীন…। (মুসলিম ১৬৮৫) সুতরাং হাত রাঁধার পর আমরা উভয় আমলই করতে পারি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন বলতেন-
غَيْرُكَ اِلَهَ لَا وَ جَدُّكَ تَعَالِىْ وَ اسْمُكَ تَبَارَكَ وَ بِحَمْدِكَ وَ اَللَّهُمَّ حَانَكَسُبْ
(তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)
الْمُشْرِكِينَ مِنَ أَنَا وَمَا حَنِيفًا وَالأَرْضَ السَّمَوَاتِ فَطَرَ لِلَّذِي وَجْهِيَ وَجَّهْتُقَالَ الصَّلاَةِ إِلَى قَامَ إِذَا كَانَ
রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন (রাতের বেলা) দাঁড়াতেন তখন (তাকবীরে তাহরীমার পর) বলতেন, ওয়াজ্জাহতু ওয়ায হিয়া লিল্লাযি ফাতারাস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ হানীফা ওমা আনা মিনাল মুশরিকীন…। (মুসলিম ১৬৮৫) সুতরাং হাত রাঁধার পর আমরা উভয় আমলই করতে পারি। এর পর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহা পাঠ করা এবং সুরা মিলানো। আউযু বিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ্ যেহেতু ক্বেরাতের সুন্নাত।তাই যার যিম্মায় ক্বেরাত রয়েছে,অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত কারী চায় ইমাম হোক বা মুনফারিদ(একাকী নামায আদায় কারী)তিনিই একমাত্র আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ্ পড়বেন। এবং পড়াই সুন্নাত। আল্লাম কা'সানি রাহ লিখেন,
ان التعوذ سنة للقراءة فيأتي به كل قارئ للقرآن لا يأتي به المقتدي
আউযুবিল্লাহ ক্বেরাতের সুন্নত। সুতরাং ক্বারী সাহেবগণই একমাত্র পড়বেন।মুক্বতাদি পড়বেন না।(আল-বাহরুর রায়েক্ব-১/৩১১) আউযু বিল্লাহ শুধুমাত্র প্রথম রাকাতে পড়া সুন্নত। আর নামাযের প্রত্যেক রা'কাতে সূরায়ে ফাতেহার পূর্বে নিম্নস্বরে বিসমিল্লাহ্ পড়া সুন্নত।এবং সূরায়ে ফাতেহার পর সূরা মিলানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ্ পড়া উত্তম।অবশ্য এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।তবে সুন্নত না হওয়ার উপর সবাই-ই একমত।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৪/৫১ কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১৭২)
নামাজে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ না পড়া:
أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مَسْعُودٍ، قَالَ حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ غِيَاثٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو نُعَامَةَ الْحَنَفِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ كَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُغَفَّلٍ إِذَا سَمِعَ أَحَدَنَا، يَقْرَأُ (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) يَقُولُ صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَخَلْفَ أَبِي بَكْرٍ وَخَلْفَ عُمَرَ رضى الله عنهما فَمَا سَمِعْتُ أَحَدًا مِنْهُمْ قَرَأَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ . ইসমাঈল ইবনু মাসউদ (রহঃ) ... ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) আমাদের কাউকে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম- পড়তে শুনলে বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে সালাত আদায় করেছি এবং আবূ বকর ও উমর (রাঃ)-এর পেছনেও। তাঁদের কাউকেও বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম- পড়তে শুনিনি। (ইবনু মাজাহ হাঃ ৮১৫,নাসায়ী ৯১১ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيُّ، عَنْ قَيْسِ بْنِ عَبَايَةَ، عَنِ ابْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ سَمِعَنِي أَبِي، وَأَنَا فِي الصَّلاَةِ، أَقُولُ: (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) فَقَالَ لِي أَىْ بُنَىَّ مُحْدَثٌ إِيَّاكَ وَالْحَدَثَ . قَالَ وَلَمْ أَرَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ أَبْغَضَ إِلَيْهِ الْحَدَثُ فِي الإِسْلاَمِ يَعْنِي مِنْهُ . قَالَ وَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ وَمَعَ عُمَرَ وَمَعَ عُثْمَانَ فَلَمْ أَسْمَعْ أَحَدًا مِنْهُمْ يَقُولُهَا فَلاَ تَقُلْهَا إِذَا أَنْتَ صَلَّيْتَ فَقُلِ: (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْهُمْ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَعَلِيٌّ وَغَيْرُهُمْ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَابْنُ الْمُبَارَكِ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ لاَ يَرَوْنَ أَنْ يَجْهَرَ بِـ (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) قَالُوا وَيَقُولُهَا فِي نَفْسِهِ . আহমদ ইবনু মানী (রহঃ) ....... ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনানা করেন যে, তিনি বলেন একদিন আমার পিতা আমাকে সালাতের মধ্যে জোরে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তে শুনে বললেন প্রিয় বৎস, এ ধরনের কাজ বিদ'আত। তুমি অবশ্যই বিদআত থেকেবেঁচে থাকবে। সাহাবীগণের নিকট ইসালমে বিদআত সৃষ্টি করার চেয়ে ঘৃণিত আর কোন বিষয় ছিল বলে আমি দেখিনি। তিনি আরো বললেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম সকলেন সঙ্গে সালাত আদায় করেছি কিন্তু কাউকেই সালাতে একরূপ ভাবে জোরে বিসমিল্লাহ পড়তে শুনিনি। সুতরাং তুমিও এরূপভাবে বলবে না। যখন সালাতে দাঁড়বে তখন পড়বে আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। - ইবনু মাজাহ ৮১৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪৪ [আল মাদানী প্রকাশনী] ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এই হাদিসটি হাসান। আবূ বকর,উমর, উছমান, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ সাহাবী এবং অধিকাংশ তাবিঈ এই হাদিস অনুসারেই আমল করেছে। [ইমাম আবূ হানীফা] সুফইয়ান ছাওরী, ইবনু মুবারাক, আহমদ, ইসাহক (রহঃ) এর অভিমতও এই। তারা সালাতে বিসমিল্লাহ জোরে পড়ার বিধান দেন না। তাঁরা বলেন, নীরবে তা পাঠ করবে। حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ يَفْتَتِحُونَ الْقِرَاءَةَ بِـ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলেই আল -হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন থেকে কিরাআত শুরু করতেন। - ইবনু মাজাহ ৮১৩, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪৬ আল্লাহ তা'আলা বলেন,فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ
কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ,ততটুকু পড়ো। সূরা-মুয্যাম্মিল-২০ রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-
( لا صَلاة لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ) رواه البخاري (الأذان/714) ،
যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতেহা পড়লনা তার নামায-ই যেন হয়নি। সহীহ বুখারী;বাবুল আযান হাদীস নং৭১৪ আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত নাযিল হয়।(সূরা আ'রাফ;২০৪) ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে
وَتَجِبُ قِرَاءَةُ الْفَاتِحَةِ وَضَمُّ السُّورَةِ أَوْ مَا يَقُومُ مَقَامَهَا مِنْ ثَلَاثِ آيَاتٍ قِصَارٍ أَوْ آيَةٍ طَوِيلَةٍ فِي الْأُولَيَيْنِ بَعْدَ الْفَاتِحَةِ كَذَا فِي النَّهْرِ الْفَائِقِ وَفِي جَمِيعِ رَكَعَاتِ النَّفْلِ وَالْوِتْرِ. هَكَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ.
সূরায়ে ফাতেহা পড়া ওয়াজিব।(ফরয নামাযের) প্রথম দুই রাকা'তে সূরায়ে ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা বা লাম্বা এক আয়াত অথবা ছোট্ট তিন আয়াত পরিমাণ সূরার কোনো অংশকে মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব। নফল এবং বিতিরের সমস্ত রা'কাতে পড়া সূরায়ে ফাতেহার সাথে ভিন্ন সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৭১ নামাযের মধ্যে এক আয়াত পরিমাণ ক্বিরাত(কোরআনের যে কোনো অংশ থেকে) পড়া ফরয।আর প্রথম দুই রাকা'তে সূরায়ে ফাতেহা পড়া ওয়াজিব।সাথে সূরা মিলানো ও ওয়াজিব।(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-৩/১৯১) চার/তিন রাকা'ত সম্ভলিত ফরয নামাযের প্রত্যেক প্রথম দুই রাকা'তে সূরায়ে ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব। শেষ দুই রাকা'তে ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব।এটাই গ্রহণযোগ্য মত।(আহসানুল ফাতাওয়া;৩/৭১) দু-রাকা'ত সম্ভলিত ফরয নামাযের প্রত্যেক রাকা'তে সূরায়ে ফাতেহার সাথে ভিন্ন একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব। নফল এবং বিতিরের সমস্ত রা'কাতে সূরায়ে ফাতেহার সাথে ভিন্ন একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব।
ইমামের ক্বেরাতের সাথে মোক্তাদীদের করনীয়
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ .( الاعراف: ২০৪)‘আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন মনোযোগ সহকারে শ্রবন করো এবং চুপ থাকো। যাতে তোমাদের প্রতি দয়া কর হয়। (সূরা আ‘রাফ:২০৪) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র.বলেন,
اجمع الناس علي ان هذه الآية نزلت في الصلاة. (المغني: ২/১২৭)
এ আয়াতটি সবার ঐক্যমতে নামাজের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (আল মুগনী:২/১২৭) হযরত ইবনে মাসউদ রা., ইবনে আবক্ষাস র. ,আবু হুরায়রা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. বলেন-
واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون، يعني في الصلاة المفروضة. (ابن كثير: ৩/৩১৫)
এ আয়াতটি নামায এবং খুৎবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (ইবনে কাসীর ৩/৩১৫) ইমাম যায়েদ ইবনে আসলাম ও আবুল আলীয়া র. বলেন-
كانوا يقرؤن خلف الامام فنزلت ’’واذا قري القرآن‘‘ الآية
যখন কিছু মানুষ ইমামের পিছনে কেরাত পড়া আরম্ভ করলো তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (আলমুগণী : ২/১১৭) আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী র. তার তাফসীর গ্রন্থে পঁচিশেরও বেশি রেওয়ায়েত এনেছেন যে, আয়াতটি নামাযের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এমতটিকে তিনি অন্নান্য মতের উপর প্রধান্য দিয়েছেন। ইমাম তাবারী র. বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করেন-
واولي الاقوال في ذلك بالصواب قول من قال امروا باستماع القرآن في الصلوة اذا قرأ الامام وكان من خلفه ممن يأتم به يسمعه….لصحةالخبر عن رسول الله صلي الله عليه وسلم أنه قال : اذا قرأ الامام فانصتوا.
অর্থাৎ এক্ষেত্রে সঠিক ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো, যারা বলেছেন নামাযে কুরআন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইমাম যখন কিরাত পড়বেন তখন তার পেছনে যারা ইক্তেদা করবে তারা তা শ্রবণ করবে। কেননা, রাসূল স. থেকে সহীহ সনদে এ হাদীস বর্ণিত আছে যে, যখন ইমাম কিরাত পড়বে তখন তোমরা নীরব থাকবে। (তাফসীরে তাবারী:৯/১৭২) ইবনে আব্দুল বার র. বলেন-
في قول الله تعالي ’’واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا ..الخ‘‘ مع اجماع اهل العلم أن مراد الله من ذلك في الصلوات المكتوبة اوضح الدلائل علي أن الماموم اذا جهر امامه في الصلوة أنه لايقرأ معه بشيئ وأنه يستمع له وينصت.( التمهيد: ১১/৩০-৩১)
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার বানী (واذا قري القرآن) দ্বারা সকল আলেমের ঐক্যমতে আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফরয নামাযসমূহ। এতে একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, ইমাম যখন নামাযে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বেন তখন মুক্তাদিরা কিছুই পড়বে না; বরং কান পেতে শুনতে থাকবে ও নীরব থাকবে। (আত তামহীদ:১১/৩০-৩১) ইমাম ইবনে তাইমিয়া র. বলেন-
فَإِنَّ لِلْعُلَمَاءِ فِيهِ ثَلَاثَةَ أَقْوَالٍ. قِيلَ: لَيْسَ لَهُ أَنْ يَقْرَأَ حَالَ جَهْرِ الْإِمَامِ إذَا كَانَ يَسْمَعُ، لَا بِالْفَاتِحَةِ وَلَا غَيْرِهَا، وَهَذَا قَوْلُ الْجُمْهُورِ مِنْ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ، وَهَذَا مَذْهَبُ مَالِكٍ وَأَحْمَدَ، وَأَبِي حَنِيفَةَ وَغَيْرِهِمْ، وَأَحَدُ قَوْلَيْ الشَّافِعِيِّ. وَقِيلَ: بَلْ يَجُوزُ الْأَمْرَانِ، وَالْقِرَاءَةُ أَفْضَلُ. وَقِيلَ: بَلْ الْقِرَاءَةُ وَاجِبَةٌ، وَهُوَ الْقَوْلُ الْآخَرُ لِلشَّافِعِيِّ. وَقَوْلُ الْجُمْهُورِ هُوَ الصَّحِيحُ فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ قَالَ: {وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ} [الأعراف: ২০৪] قَالَ أَحْمَدُ: أَجْمَعَ النَّاسُ عَلَى أَنَّهَا نَزَلَتْ فِي الصَّلَاةِ. (الفتاوي الكبري لابن تيمية: ২/১৩৪)
অর্থাৎ এ ব্যাপারে উলামাদের তিনটি মত রয়েছে- ১. কেউ কেউ বলেছেন ইমাম যখন কিরাত উচ্চস্বরে পড়বেন মুক্তাদি তা শ্রবণ করবে। কোনো অবস্থাতে সে কিরাত পড়তে পারবে না। এমনকি সূরায়ে ফাতেহাও না। পুর্বসুরী ও পরবর্তী অধিকাংশ আলেমের মত এটাই। ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ, ইমাম আবু হানিফা প্রমূখের মাযহাব ও তাই। ইমাম শাফেয়ী র. এর দুটি মতের একটি অনুরূপ। ২.কেউ কেউ বলেছেন , উভয়টি করা যাবে। তবে মুক্তাদির কেরাত পড়াই উত্তম। ৩.কেউ কেউ বলেছেন , মুক্তাদির জন্য ইমামের সাথে কিরাত পড়া ওয়াজিব। এটি ইমাম শাফেয়ী র. এর সর্বশেষ মত। (ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন) অধিকাংশ আলেমের মতটিই সঠিক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং নীরব থাক। আর ইমাম আহমদ র. বলেন: আয়াতটি সকলের মতে নামায সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা লি ইবনে তাইমিয়া: ২/১৩৪) আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ (القيامة: ১৮) قال ابن عباس استمع وانصت له.
অতপর: আমি যখন তা পাঠ করি আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। (সূরা কিয়ামাহ:১৮) ইবনে আবক্ষাস রা. বলেন অর্থাৎ চুপ করে মনোযোগের সাথে শ্রবন করুন। সকল মুফাস্সীরগণ এ আয়াতের একই তাফসীর করেছেন অর্থাৎ চুপ থাকা এবং মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করা। নামাযের বাহিরে এ হুকুম হলে নামাযের ভিতরে কি হুকুম হবে তা সহজেই বোধগম্য। হাদীস দ্বারা দলিল- ইমাম মুসলিম র. নামাযে ইমাম-মুক্তাদীর দায়িত্ব এবং উভয়ের নামাযে পার্থক্য কি কি? এবিষয়ে হযরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে একটি হাদীস বর্ননা করেছেন।
ان رسول الله (ص) خطبنا فبين لنا سنتنا وعلمنا صلاتنا….فاذا كبر فكبروا واذا قرء فانصتوا واذا قال غير المغضوب عليهم ولاالضالين فقولوا آمين يجبكم الله…….الخ.
অর্থাৎ রাসূল স. আমাদের নামায শিক্ষা দিলেন ….. ইমাম যখন কিরাত পড়া শুরু করবে তখন তোমরা চুপ থাকবে আর যখন তিনি غير المغضوب عليهم والاالضالين পড়বেন, তোমরা তখন আমীন বলবে। (মুসলিম শরীফ:১/১৭৪) ইমাম আবু দাউদ ইবনে মাযাহ, আহমাদ র.সহ অনেকেই হাদীসটি নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। এ হাদিসেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মুক্তাদী সূরা ফাতেহা পড়বে না। ইবনে মাযাহ শরীফে এমনই একটি হাদীস হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম মুসলিম র.হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন। (ইবনে মাযাহ মাযাহ শরীফ ১/৬১) তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে-
و حدثني يحيى عن مالك عن ابن شهاب عن ابن أكيمة الليثي عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم انصرف من صلاة جهر فيها بالقراءة فقال هل قرأ معي منكم أحد آنفا فقال رجل نعم أنا يا رسول الله قال فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إني أقول ما لي أنازع القرآن فانتهى الناس عن القراءة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما جهر فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم بالقراءة حين سمعوا ذلك من رسول الله صلى الله عليه وسلم
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল স. একবার জাহরী নামায শেষ করে সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমার পিছনে তোমাদের কেউ কি কেরাত পড়ছিল? একজন বলল জি হ্যাঁ ইয়া রাসূল আল্লাহ। রাসূল সা. বললেন তাই তো বলি কুরআনের সাথে ঝগড়া করছিলাম কি জন্যে। রাসূল সা.-এর এই মন্তব্য শুনে সবাই জাহরি নামাযে কেরাত পড়া বন্ধ করে দিলো। (তিরমিযী শরীফ : ১/৭১, মুয়াত্তা মালেক:পৃ:৬৯,নাসায়ী শরীফ:১/১৪৬,আবূ দাউদ শরীফ:১/১২০,ইবনে মাযাহ শরীফ :৬১)
মুসলিম শরীফে আছে-
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন,
واذا قال القاري غير المغضوب عليهم والاالضالين فقال من خلفه آمين فوافق قوله قول اهل السماء غفرله ما تقدم من ذنبه.
অর্থাৎ যখন ইমাম
غير المغضوب عليهم ولاالضالين
পাঠ করে আর মুক্তাদিগন আমীন বলে তাহলে যার আমীন আসমানবাসীদের আমীনের সাথে মিলে যায় তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসলিম :১/১৭৬)
বিশ্লেষণ- এ হাদীসে রাসূল সা. নামাযের মধ্যে একমাত্র ইমামকেই ক্বারী বলেছেন। এতে বুঝা যায়, নামাযে কুরআন পাঠ করা একমাত্র ইমামের দায়িত্ব, মুক্তাদির নয়। যদি মুক্তাদির দায়িত্ব হতো তাহলে তাদেরকেও হাদীসে কারী বলে অভিহিত করা হতো। তাছাড়া এ হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘যখন (কুরআন) পাঠ কারী54r 1q eغير المغضوب عليهم والاالضالين
বলে তখন মুক্তাদি আমীন বলবে’। বুঝা যাচ্ছে, ইমাম সূরা ফাতেহা পাঠ করবে আর মুক্তাদি শুধু আমীন বলবে। বুখারী শরীফে আছে- হযরত আবু হুরায়রা রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-
اذا امن القاري فامنوا فان الملئكة تؤمن.
অর্থাৎ যখন (কুরআন) পাঠকারী আমীন বলেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা তখন ফেরেস্তারা আমীন বলে থাকে। (বুখারী শরীফ:২/৯৪৭) এ হাদীসেও ইমামকেই একমাত্র কারী বলা হয়েছে। আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফে আছে- হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-
أخبرنا الجارود عن معاذ قال نا أبو خالد الأحمر عن محمد بن عجلان عن زيد بن أسلم عن أبي صالح عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إنما جعل الإمام ليؤتم به فإذا كبر فكبروا وإذا قرأ فأنصتوا وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا اللهم ربنا لك الحمد
অর্থাৎ ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় তাকে অনুসরণের জন্য। অতপর যখন ইমাম তাকবীর বলবে, তোমরাও তখন তাকবীর বলবে। আর তিনি যখন কেরাত পড়বেন তোমরা তখন চুপ থাকবে, যখন তিনি سمع الله لمن حمده বলবেন তোমরা বলবে ربنا لك الحمد (আবু দাউদ শরীফ ১/৮৯,নাসায়ী শরীফ ১/১০৭,ইবনে মাজাহ শরীফ১/৬১) বিশ্লেষণ- এ হাদীসে ইমামকে কিভাবে অনুসরণ করা হবে তা বলে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ইমাম যখন কেরাত পাঠ করবে তখন চুপ থাকা। হযরত আনাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে বুখারী শরীফে দু’টি হাদীসে (হাদীস নং ৩৭৮-৬৮৮) বলা হয়েছে ইমামকে অনুসরণ করার জন্য। কিভাবে অনুসরণ করা হবে সে প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আবক্ষাস রা. فاذا قرئناه فاتبع قرآنه এর ব্যাখ্যায় বলেন (فاتبع) অনুসরণ করো অর্থাৎ চুপ থাক এবং মনোযোগের সাথে শ্রবন কর। অতএব কেরাত পড়ার সময় ইমামের অনুসরনও হবে তাই। হযরত জাবের রা. হাদীস বর্ণনা করেন,
عن النبي عليه الصلوة والسلام قال: ’’كل من كان له امام فقراءته له قراءة‘‘. (اخرجه ابن ابي شيبة: رقم: ৩৮২৩) قال حدثنا مالك ابن اسماعيل عن حسن بن صالح عن ابي الزبير عنه. اسناده صحيح. واخرجه عبد بن حميد في مسنده عن ابي الزبير عنه مرفوعا: قال البوصري: اسناده صحيح علي شرط مسلم. واخرجه احمد بن منيع في مسنده ، عن عبد الله بن شداد عنه مرفوعا، قال البوصري اسناده صحيح علي شرط الشيخين. واخرجه الامام محمد في الموطأ ص৯৮ عن ابي حنيفة ثنا ابو الحسن موسي بن ابي عائشة عن عبد الله بن شداد بن الهاد عنه مرفوعا، واسناده صحيح. واخرجه احمد عن اسود بن عامر عن حسن بن صالح عن ابي الزبير عنه مرفوعا، وهو اسناد صحيح. واخرجه ابن ماجه في سننه كذلك، وفي اسناده جابر الجعفي (وهو ضعيف
অর্থাৎ রাসূল স. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, ইমামের কিরাতই তার কিরাত বলে গণ্য হবে। পৃথকভাবে মুক্তাদির কোনো কিরাত পড়তে হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: হাদীস নং ৩৮২৩, হাদীসটির সনদ সহীহ) উক্ত হাদীসটি মুসনাদে আবদ্ বিন হুমাইদে ভিন্ন সনদে উদ্বৃত হয়েছে। ইমাম বুসরী র. এ সনদ সম্পর্কে বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। উক্ত হাদীসটি ভিন্ন সনদে মুসনাদে আহমদ বিন মানী গ্রন্থে উদ্বৃত হয়েছে, তার সম্পর্কে ইমাম বুসরী র. বলেছেন, এটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত মোতাবেক সহীহ। হাদীসটি মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদের ৯৮ নং পৃষ্ঠায় এবং মুসনাদে আহমদের ৩/৩৩৯ তে উদ্বৃত হয়েছে। উভয় সনদে হাদীসটি সহীহ। হাদীসটি ইবনে মাজা শরীফে এসেছে, তবে এ সনদে জাবের আল-জু‘ফী নামক (দুর্বল) বর্ণনাকারী রয়েছে। মোট কথা- উপরোক্ত হাদীসে একটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে যে, মুক্তাদির জন্য ইমামের কিরাতই যথেষ্ট। তাকে আলাদা করে সূরায়ে ফাতেহা বা অন্য কোনো কিরাত পড়তে হবে না। কেননা, সূরা ফাতেহা হচ্ছে আল্লাহর দরবারে আবেদন নিবেদন। আর ইমাম সাহেব সকলের পক্ষ থেকে এ আবেদন পেশ করেছেন। তাই মুক্তাদির ভিন্নভাবে কিছু করা নিয়ম বহির্ভূত। হাঁ, রুকু সিজদা তাকবীর ও তাসবীহ হলো আল্লাহর দরবারের আদব। এ কারণে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই তা পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত: সাহাবাদের আমল-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর মত যা তাফসীরে তাবারীতে উদ্বৃত হয়েছে-صلي ابن مسعود رض فسمع اناسا يقرؤون مع الامام فلما انصرف قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ واذا قري القرآن فاستمعوا وانصتوا، كما امركم الله.
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. নামায পড়ছিলেন। তখন তিনি কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কিরাত পড়তে শুনলেন, নামায শেষে তিনি বললেন “তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি? তোমাদের কি এখনো বুঝার সময় হয়নি ? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরবতা পালন করবে। যেভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (তাফসীরে তাবারী : ৯/১০৩) মুয়াত্তা মালেকে আছে-
عن نافع أن عبد الله بن عمركان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام
‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো যে, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া হবে কি না ? তিনি বলতেন, ইমামের কেরাতই মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট। যখন একা নামায পড়বে তখন যেন অবশ্যই কেরাত পড়ে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কখোনো ইমামের পিছনে কেরাত পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক:পৃ২৯)
চতুর্থত: তাবেয়ীগণের আমল:
عن عطاء ابن يسار انه اخبره أنه سئل زيد ابن ثابت عن القرأة مع الامام فقال لا قرأة مع الامام في شيئ
অর্থাৎ ইবনে ইয়াসার র. ইমামের পিছনে কেরাত পড়া সম্পর্কে হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাবে বলেন, কোনো নামাযেই ইমামের পিছনে কেরাত নেই। ( মুসলিম শরীফ ১/২১৫ নাসায়ী শরীফ ১/১১১) তাইমিয়া র. লিখেন:
والامر باستماع قرأة الامام والانصات له مذكور في القرآن وفي السنة الصحيحة وهو اجماع الامة فيما زاد علي الفاتحة، وهو قول جماهير السلف من الصحابة وغيرهم في الفاتحة وغيرها.
‘ইমামের কেরাত চুপ করে শোনার বিধান কুরআন ও সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। জামাতের নামাযে মুক্তাদি সূরা মিলাবেনা, এ ব্যাপারে সবাই একমত। আর সাহাবায়ে কেরাম ও সংখ্যা গরিষ্ঠ উলামার মতে সূরা ফাতেহাও পড়বে না । (তানাওইডল ইবাদাত পৃ:৫৫)
عن الشعبي قال ادركت سبعين بدريا كلهم يمنعون عن القرأة خلف الامام.
ইমাম শায়বী র. বলেন, আমি ৭০জন বদরী সাহাবীর দেখা পেয়েছি, তাদের প্রত্যেকেই ইমামের পিছনে কেরাত পড়া থেকে নিষেধ করতেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৫/৪৪৭) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী র. বলেন-
روى منع القراءة خلف الإمام عن ثمانين من الصحابة الكبار منهم المرتضي والعبادلة الثلاثة وأساميهم عند أهل الحديث فكان اتفاقهم بمنزلة الإجماع
ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিষয়টি আট জন বিশিষ্ট সাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে। তারা হলেন, হযরত আলী রা., হযরত ইবনে আবক্ষাস রা., হযরত ইবনে মাসউদ রা., হযরত ইবনে ওমর রা.প্রমুখ। হাদীস বিশারদদের নিকট এতগুলো সাহাবার এ বিষয়ে একমত পোষণ করা ইজমার স্থলাবর্তী। (উমদাতুল কারীর বরাত দিয়ে মা‘আরিফুস সুনান:৩/১৯১) শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াকুব র. ‘কাশফুল আসতার’ নামক গ্রন্থে লিখেন-
وذكر الشيخ عبد الله ابن يعقوب الحارثي السبزموني في كتاب “كشف الاستار”عن عبد الله بن زيد ابن اسلم عن ابيه قال: كان عشرة من اصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم ينهون عن القرأة خلف الامام اشد النهي: ابوبكر الصديق،عمر الفاروق وعثمان ابن عفان وعلي ابن ابيطالب وعبد الرحمن ابن عوف وسعد ابن ابي وقاص وعبد الله ابن مسعود وزيد ابن ثابت وعبد الله ابن عمر وعبد الله ابن عباس رضوان الله عليهم.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ তার পিতার থেকে বর্ণনা করে বলেন, দশ জন বিশিষ্ট সাহাবী ইমামের পিছনে কেরাত পড়া থেকে কঠিন ভাবে নিষেধ করতেন। তারা হলেন (১) হযরত আবু বকর রা. ২)হযরত ওমর রা. ৩) হযরত ওসমান রা. ৪) হযরত আলী রা. ৫) হযরত আ.রহমান রা.৬) হযরত সা‘দ রা. ৭)ইবনে মাসউদ রা.৮) হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. ৯) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ১০)আব্দুল্লাহ ইবনে আবক্ষাস রা.। (মা‘আরেফুস সুনান :৩/১৯১) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলতেন-
من صلي ركعة لم يقرأ فيها بام القرآن فلم يصلي الاوراء الامام.
‘যে ব্যক্তি নামাযের কোনো এক রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়লোনা সে যেন নামাযই পড়লোনা। তবে যদি সে ইমামের পিছনে নামায আদায় করে। (তিরমিযি শরিফ :১/৭১,মুআত্তা মালেক:পৃ২৮)
-عن أبي بكر: أنه انتهى إلى النبي صلى الله عليه و سلم وهو راكع فركع قبل أن يصل إلى الصف فذكر ذلك للنبي صلى الله عليه و سلم فقال ( زادك الله حرصا ولاتعد
অর্থাৎ হযরত আবু বকর রা. একবার নামাযে এসে দেখলেন রাসূল সা. রুকুতে চলে গেছেন। তিনিও কাতারে না পৌছেই রুকুতে শামিল হয়ে গেলেন। নামায শেষে রাসূল সা. কে এ বিষয়টি জানানো হলে রাসূল সা. বললেন, তুমি এমনটি আর করোনা। আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন অর্থাৎ রাকাত প্রাপ্তির জন্য কাতারে না পৌছে ইমামের ইকতেদা করোনা। (বুখারী শরীফ :১/১০৮) হাফেয ইবনে হাজার রাহ. একটি রেওয়ায়েত এনেছেন যে, আবু বকর রা. রাকাত ছুটে যাওয়ার ভয়েই এমনটি করেছিলেন। (ফাতহুল বারী :৪০৪) চার ইমাম এ মাসআলাতে একমত পোষণ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তি যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে নামাযে শামিল হয়ে যায়, তাহলে সে ব্যক্তি উক্ত রাকাত পেল, অথচ ঐ রাকাতে সে না ফাতেহা পড়েছে না শুনেছে। ইবনে রজব হাম্বলী র. ফাতহুল বারী গ্রন্থে লিখেন,
من ادرك الركوع مع الامام فقد ادرك الركعة وان فاته القيام وقراءة الفاتحة وهذا قول جمهور العلماء، وقد حكاه اسحاق بن راهويه وغيره اجماعا من العلماء ….وقد روي هذا عن علي و ابن مسعود وابن عمر وزيد بن ثابت وابي هريرة. (فتح الباري لابن رجب: ৪/২৩০)
তেমনিভাবে ইমাম যদি নামাযে ভুল করে অথবা ‘সিররী নামযে’ সেজদায়ে সাহু, সেজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হয়, তাহলে মুক্তাদির উপরও ওয়াজিব হবে। অথচ মুক্তাদি নামাযে কোনো ভুল করেনি, সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করেনি, শুনেওনি। বুঝা গেলো ইমাম মুক্তাদীর নামাযের সকল দায়-ভার গ্রহণ করে নিয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন الامام ضامن‘ইমাম হলো জামিন। ইমাম নাখয়ী রা. বলেন;
اول ما احدثو القرأة خلف الامام وكانوا لايقرؤون.
সর্বপ্রথম বিদ‘আত হলো ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিদ‘আত। সাহাবায়ে কেরাম ইমামের পিছনে কখনো কেরাত পড়তেন না। (আদ্দুররুল মানসুর: ৩/১৫৬) ইমাম আহমাদ র. বলেন:
ما سمعنا أحدا من أهل الإسلام يقول إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ وماقال هذا النبي صلى الله عليه و سلم وأصحابه والتابعون
অর্থাৎ আমরা কোনো মুসলমান থেকে একথা শুনিনি যে, ইমাম জোরে কেরাত পড়ে। আর মুক্তাদী কেরাত না পড়ার কারণে তার নামায হয়নি। রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, ইমাম মালেক , ইমাম সাউরী ,ইমাম আওযায়ী, ইমাম লায়ছ ইবনে সা‘দ, এদের কেউই বলেননি যে, ইমামের পিছনে কেরাত না পড়লে মুক্তাদীর নামায বাতিল হয়ে যাবে। (আলমুগণী :২/১১৮) অনেকেই মন্তব্য করেন,ঈমাম যখন জোরে ক্বিরাত পড়ে তখন মোক্তাদীদের ক্বলবে তা শোনা মাত্রই মিলে যায়,সুতরাং ঈমামের জোরে ক্বেরাত পড়ার সময় আলাদা করে আর পড়ার প্রয়োজন নেই এ ব্যাপারে আহাম দলিল উপরে পেশ করা হয়েছে।আর ঈমাম যখন আস্তে ক্বেরাত পড়ে তখন মোক্তাদীরা যদি মনে করে মনে মনে ক্বেরাত না পড়লে তার মনটা নামাজে থাকছেনা, একাগ্রতা নষ্ট হচ্ছে, তবে হজুরী ক্বলবের একাগ্রতার জন্য ক্বলবের সাথে ক্বেরাত মিলিয়ে পড়তে পারে যদিও এর কোন দলিল নেই।
সুরা ফাতিহার পরে আমিন আস্তে বা জোরে বলা সম্পর্কে
সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নামাযে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ (একা নামায আদায়কারী)-এর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুকতাদির জন্যও ইমামেরغير المغضوب عليهم ولا الضالين
শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত।এখন এই “আমিন” জোরে বলতে হবে না আস্তে বলতে হবে এ ব্যাপারে আমরা কোরআন সহিহ সুন্নাহর আলোকে জানার চেষ্টা করবো।
عن وائل بن حجر قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم فلما ঈাقرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين قال آمين وأخفى بها صوته.ورواه الترمذى رقم (২৪৮) واحمد فى المسند.رقم (১৮৮৫৪) . ورواه الحاكم فى المستدرك ) ২৯১৩)وقال:هذا حديث صحيح على شرط الشيخين و لم يخرجاه.وقال الذهبى فى التلخيص: على شرط البخاري ومسلم والطيالسى (১০২৪) والدارقطنى ১/৩৩৪ والبيهقى ২/৫৭ والطبرانى فى الكبير
২২/৪৩ رقم(১০৯،১১০،১১২) অর্থ: ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়লেন। তিনি যখন غير المغضوب عليهم ولا الضالين পড়লেন, তখন আমীন বললেন এবং আমীন বলার সময় তাঁর আওয়াযকে নিম্ন করলেন। তিরমিযী শরীফ (২৪৯); দারাকুতনী ১ম খ. ৩৩৪পৃ. বায়হাকী, খ.২ পৃ.৫৭। এ হাদীস কে ইমাম হাকেম রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু .ও তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন। ইবনে জারীর তাবারী রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু .ও এটিকে সহীহ বলেছেন। পেছনে তাঁর হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। কাযী ইয়ায র.ও এটিকে সহীহ বলেছেন। (দ্র. শারহুল উব্বী, ৬খ, ৬০৮ পৃ.) হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রা) ইয়ামান বাসী রাজপুত্র সাহাবি ছিলেন।হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল তিনাকে দ্বীন শিক্ষার জন্য আল্লাহর রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠান। তিনি নবীজি (সা) এর দরবারে দ্বীন শিক্ষা করার জন্যই এসেছিলেন। তিনি ২০ দিন নবিজি (স) এর সহবতে ছিলেন এবং ৬০ ওয়াক্ত জোরে কিরআত ওয়ালা নামাজ পড়েছিলেন। রাসুল (স) নিজের ঠিক পিছনে তার জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন , ওয়াইল বিন হুজর (রা) বলেন এই ৬০ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাত্র ৩ ওয়াক্ত নামাজে রাসুল (সা) জোরে “আমিন ” বলেছিলেন ( আর ৫৭ ওয়াক্ত নামাজে “আমিন” আস্তে বলেছিলেন) । তো আমার বুজতে বাকি ছিল না যে রাসুল (সা) আমাকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই এমনটি করেছিলেন। [আল আসমাউ ওয়ালকুনা : ১/১৯৭; মাজমাউজ যাওয়াইদ : ২/১১৩ ; নাসাঈ হা নং- ৯৩২, শরহুল মাওয়াহিব : ৭/১১৩ ; শরহে বুখারী দূলাবী প্রনীত] আমীন আস্তে বলার এ হাদীসটি ইমাম শো’বা র. কর্তৃক বর্ণিত। তারই সঙ্গী সুফিয়ান ছাওরী রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু .ও এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাতে জোরে আমীন বলার কথা এসেছে। অনেকে এ দুটি বক্তব্যের মধ্যে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য কখনও জোরে আমীন বলেছেন। যেমন জোহরের নামাযের কেরাআত আস্তে পড়াই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম। কিন্তু মাঝে মধ্যে দু’একটি আয়াত তিনি জোরে বলতেন। যাতে সাহাবীগণ বুঝতে পারেন জোহরের নামাযে কোন সূরা বা কতটুকু কেরাআত পড়া সুন্নত। একইভাবে শেখানোর জন্য কখনও কখনও তিনি আমীন একটু জোরে বলেছেন। আর অন্য সময় আস্তে বলেছেন। এর পক্ষে সহীহ হাদীস একটু পরে আসছে। আমীন জোরে বলার পক্ষে যেসব মুহাদ্দিস ছিলেন, তাঁরা শো’বা র. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের তুলনায় সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . এর বর্ণিত হাদীসকে অধিক গ্রহণীয় আখ্যা দিয়েছেন এবং শো’বা র. এর বর্ণনার উপর কিছু আপত্তি উত্থাপন করেছেন। অন্যরা আবার এসব আপত্তির সন্তোষজনক জবাবও দিয়েছেন। ২.হযরত হাসান বসরী হতে বর্ণিত:
عن سمرة قال : سكتتان حفظتهما عن رسول الله صلى الله عليه و سلم فأنكر ذلك عمران بن حصين وقال حفظنا سكتة فكتبنا إلى أبي بن كعب بالمدينة فكتب أبي أن حفظ سمرة قال سعيد فقلنا لقتادة ما هاتان السكتتان؟ فقال إذا دخل في صلاته وإذا فرغ من القراءة ثم قال بعد ذلك وإذا قرأ ولا الضالين قال. وكان يعجبه إذا فرغ من القراءة أن يسكت حتى يتراد إليه نفسه.اخرجه الترمذى(২৫১) واللفظ له وابوداود (۷۸۰) واحمد ৫/۲۳
অর্থাৎ সামুরা রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি সাকতা (নীরবতা) স্মরণ রেখেছি। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . এটা অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন, আমরা তো একটি সাকতা স্মরণ রেখেছি। পরে আমরা মদীনায় উবাই ইবনে কা’ব রা. এর নিকট পত্র লিখলাম। তিনি উত্তর লিখে পাঠালেন যে, সামুরা সঠিক স্মরণ রেখেছে। সাঈদ বলেন, আমরা কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ দুটি সাকতা কোথায় কোথায় ছিল? তিনি বললেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করতেন। আর যখন কিরাআত পাঠ সমাপ্ত করতেন। এরপর কাতাদা বলেছেন, যখন ولا الضالين পাঠ শেষ করতেন। তিনি আরো বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দ ছিল, যখন তিনি কেরাত পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন শ্বাস স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকতেন। তিরমিযী (২৫১); আবূ দাউদ (৭৮০); মুসনাদে আহমদ, (৫খ, ২৩ পৃ,)। এ হাদীস থেকে বোঝা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দু’সময় নীরব থাকতেন। প্রথম নীরবতা তাকবীরে তাহরীমার পর। এসময় তিনি নিঃশব্দে ছানা পড়তেন। দ্বিতীয় নীরবতা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর। এ সময় “আমীন” বলতেন। বোঝা গেল আমীন তিনি নিঃশব্দে বলতেন। হাদিসটিতে কাতাদা প্রথমতঃ বলেছিলেন ২য় নীরবতা হতো কেরাত শেষ করার পর। পরে ব্যাখ্যা করে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, কেরাত শেষ করা মানে সূরা ফাতেহার কেরাত শেষ করা। আর সম্পূর্ণ কেরাত শেষ করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতটুকু নীরব থাকতেন যাতে শ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এটা সামান্য নীরবতা হতো। আবূ দাউদ শরীফে (৭৭৯) কাতাদা র. হতে সাঈদে’র সূত্রে ইয়াযীদ র. এর বর্ণনায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে
ــ سكتة اذاكبر وسكتة اذا فرغ من قراءة غير المغضوب عليهم ولاالضالين
অর্থাৎ একটি সাকতা হতো তাকবীরে তাহরীমার পর, আরেকটি সাকতা হতো غير المغضوب عليهم ولاالضالين.বলার পর। দারাকুতনীও ইবনে উলায়্যার সূত্রে, তিনি ইউনুস ইবনে উবায়দের সূত্রে হাসান বসরী রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। {দ্রঃ ১ম খ, ৩৩৬পৃ, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩(২০৫৩০)}। ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে এ হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন:
ذكر ما يستحب ان يسكت سكتة اخرى عند فراغه من قراءة فاتحة الكتاب.
অর্থাৎ সূরা ফাতেহা শেষ করার পর দ্বিতীয় বার নীরব থাকা মুস্তাহাব। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী রহ.: যার তাহকীক ও গবেষণার উপর লা-মাযহাবীদেরও বেশ আস্থা আছে: তাঁর যাদুল মায়াদ গ্রন্থে লিখেছেন:
وَقَدْ صَحّ حَدِيثُ السّكْتَتَيْنِ مِنْ رِوَايَةِ سَمُرَةَ وَأُبَيّ بْنِ كَعْبٍ وَعِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ ذَكَرَ ذَلِكَ أَبُو حَاتِمٍ فِي " صَحِيحِهِ " وَسَمُرَةُ هُوَ ابْنُ جُنْدُبٍ وَقَدْ تَبَيّنَ بِذَلِكَ أَنّ أَحَدَ مَنْ رَوَى حَدِيثَ السّكْتَتَيْنِ سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ وَقَدْ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ سَكْتَتَيْنِ سَكْتَةً إذَا كَبّرَ وَسَكْتَةً إذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضّالّينَ وَفِي بَعْضِ طُرُقِ فَإِذَا فَرَغَ مِنْ الْقِرَاءَةِ سَكَتَ وَهَذَا كَالْمُجْمَلِ وَاللّفْظُ الْأَوّلُ مُفَسّرٌ مُبَيّنٌ.انتهى.(১/৭৯)
অর্থাৎ সামুরা রা., উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু ও ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . থেকে সহীহ সনদে দুই সাকতার হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীস আবূ হাতিম {ইবনে হিব্বান র.} তাঁর “সহীহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সামুরা রা. হলেন ইবনে জুনদুব। এ থেকে স্পষ্ট যে, সামুরা ইবনে জুনদ্বু রা.ও দুই সাকতার হাদীসটি বর্ণনা কারীদের একজন। তিনি তাঁর হাদীসে বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি সাকতার কথা স্মরণ রেখেছি। একটি হলো তিনি যখন তাকবীর দিতেন । অপরটি হলো তিনি যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضّالّينَ পড়ে শেষ করতেন। কোন কোন বর্ণনায় হাদীসটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে ; তিনি যখন কেরাত শেষ করতেন, তখন নীরব থাকতেন। এই বর্ণনাটি অস্পষ্ট। প্রথম বর্ণনাটি ব্যাখ্যা-সম্বলিত ও সুস্পষ্ট। (দ্রঃ, ১ম; ৭৯ পৃ,) ৩.হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ :إِذَا قَالَ الإِمَامُ ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ) فَقُولُوا آمِينَ فَانه مَنْ وَافَقَ قوله قول الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ .ورواه البخارى برقم -৭৮২ باب جهر المأمومين بالتأمين ومسلم )৪১০(
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইমাম যখন
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
বলে শেষ করবে তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা যে ব্যক্তির আমীন বলা ফেরেশতাগণের আমীন বলার সঙ্গে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারী শরীফ হাদীস নং ৭৮২; মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৪১০ মুসলিম শরীফে আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু এর বর্ণিত হাদীসেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا قَالَ الإِمَامُ ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ) فَقُولُوا آمِينَ. অর্থাৎ ইমাম যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
বলে শেষ করবে, তোমরা তখন আমীন বলবে। (হাদীস নং- ৪০৪) এ দুটি হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম আমীন নিঃশব্দে বলবে। অন্যথায় এভাবে বলা হতো না যে, ইমাম যখন
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
বলবে, তোমরা তখন আমীন বলবে। বরং বলা হতো, ইমামকে যখন আমীন বলতে শুনবে তখন তোমরা আমীন বলবে। বিশেষ করে নাসাঈ শরীফে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু . বর্ণিত হাদীসটিতে সহীহ সনদে একথাও বর্ণিত আছে যে:
فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَقُولُ آمِينَ وَإِنَّ الإِمَامَ يَقُولُ آمِينَ.
অর্থাৎ কেননা ফেরেশতারাও এসময় আমীন বলে, ইমামও আমীন বলে। (হাদীস নং ৯২৭) ইমামও এসময় আমীন বলে কথাটি তখনই বলা চলে যখন ইমাম নিঃশব্দে আমীন বলে। ফেরেশতাগণ যেমন নিঃশব্দে আমীন বলার কারণে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এসময় ফেরেশতাগণ আমীন বলে। তদ্রুপ ইমামও নিঃশব্দে বলার কারণে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এসময় ইমামও আমীন বলেন। ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার (কল্পনা করার) বিষয় নয়; বরং নামাযের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। তবে তাঁদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। এটা মূলত ‘তানাওউয়ে সুন্নাহ’ বা সুন্নাহর বিভিন্নতা, যাকে ইখতিলাফে মুবাহও বলা হয় অর্থাৎ এখানে দুটি নিয়মই মোবাহ ও বৈধ এবং যে নিয়মই অনুসরণ করা হোক সুন্নত আদায় হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অন্য অনেক কিছুর মতো একেও মানুষ জায়েয-নাজায়েয ও সুন্নত-বিদআতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনকি একে কেন্দ্র করে বিবাদ- বিসংবাদেও লিপ্ত হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় দেখা যায়, কিছু মানুষ এত উঁচুস্বরে আমীন বলেন, যেন নামাযের মাঝেই অন্য মুসল্লীদের কটাক্ষ করেন যে, তোমরা সবাই সুন্নাহ তরককারী! এ সংখ্যায় আমীন বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানভী রাহ.-এর একটি প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ পেশ করা হল, মনোযোগের সাথে পড়া হলে ইনশাআল্লাহ ফায়েদা হবে এবং সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া যাবে।-তত্ত্বাবধায়ক জামাতের নামাযে জোরে আমীন-আস্তে আমীন সম্পর্কে কয়েকটি কথা মনে রাখা কর্তব্য : এক. এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে, আর তা জায়েয-না-জায়েযের ইখতিলাফ নয়; বরং উত্তম-অনুত্তম নির্ণয়ের ইখতিলাফ। ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ) ইবনুল কাইয়্যিম রাহ.-এর বক্তব্য থেকে দু’ টো বিষয় জানা যায় : ১. এ বিষয়ে সবাই একমত যে, আমীন আস্তে ও জোরে দু’ ভাবেই বলা যায়। তবে এক পক্ষের নিকট আস্তে বলা উত্তম, অন্য পক্ষের নিকট জোরে বলা। ২.যদি দলীলের ভিত্তিতে একপক্ষের কাছে একটি বিষয় অগ্রগণ্য মনে হয়, অন্য পক্ষের কাছে অন্যটি তাহলে কারোরই আপত্তি করার অবকাশ থাকে না। তাছাড়া আপত্তি তো সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করলে হতে পারে, মুস্তাহাব তরক করলে আপত্তি করা যায় না। দুই. আমীন একটি দুআ। আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’
آمين دعاء
(সহীহ বুখারী ১/১০৭) লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে, ‘আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক।’
ومعناه استجب لي أو كذلك فليكن
অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
ادعوا ربكم تضرعا وخفية
তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক কাতরভাবে ও গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ : ৫৫) হযরত যাকারিয়া আ. সম্পর্কে বলা হয়েছে-
اذ نادى ربه نداء خفيا
যখন তিনি তার প্রতিপালককে ডাকলেন অনুচ্চস্বরে।-সূরা মারইয়াম : ৩ আমীন যেহেতু দুআ তাই কুরআন মজীদের উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী তা আস্তে ও অনুচ্চস্বরে বলাই উত্তম। তিন. যারা মনে করেন, জাহরি নামাযে অর্থাৎ ফজর, মাগরিব ও ইশায় ইমাম-মুকতাদি সবার জোরে আমীন বলা মুস্তাহাব এবং নামাযের সাধারণ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত, তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসব নামাযে সর্বদা বা অধিকাংশ সময় জোরে আমীন বলেছেন। অথবা জোরে আমীন বলার আদেশ করেছেন। অথচ কোনো সহীহ হাদীসে তা আছে বলে আমাদের জানা নেই। সহীহ বুখারীতে ‘জাহরুল ইমামি বিততামীন’ (ইমামের উচ্চস্বরে আমীন পাঠ) এবং ‘জাহরুল মামূমি বিততামীন’ (মুকতাদির উচ্চস্বরে আমীন পাঠ) শিরেনামে দুটি পরিচ্ছেদ আছে। ইমাম বুখারী রাহ. হযরত আবু হুরাইরা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একই হাদীসের দুই রেওয়ায়েত দুই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে আছে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ‘‘ইবনে শিহাব বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন’।’’
إذا أمن الإمام فأمنوا، فإنه من وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه، قال ابن شهاب : وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : آمين
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন ইমাম বলে غير المغضوب عليهم ولا الضالين তখন তোমরা বল আমীন। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।’’
إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين، فإنه من وافق قوله قول الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه
(সহীহ বুখারী ১/১০৮) এই হাদীসে আমীন বলার ফযীলত এবং ইমাম-মুকতাদি সকলের আমীন বলার কথা আছে, কিন্তু আমীন কি আস্তে বলা হবে, না জোরে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অথচ ইমাম বুখারী রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন জোরে আমীন বলা! এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা উচিত, যা হাফেয ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘একথা বলাই বাহুল্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি প্রতিদিন ভোরে (ফজরের নামাযে) কুনূত পড়তেন এবং ঐ দুআ (আল্লাহুম্মাহদিনী ...) পাঠ করতেন আর সাহাবায়ে কেরাম আমীন বলতেন তাহলে তা ঐভাবেই বর্ণিত হত যেভাবে নামাযের সময় ও সংখ্যা এবং নামাযে জোরে কুরআন পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কুনূতের বিষয়টি উম্মত সংরক্ষণ করেনি তাহলে তো নামাযের উপরোক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও একই সন্দেহ পোষণ করা যাবে! ‘‘এই একই যুক্তিতে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, বিসমিল্লাহ জোরে পড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ নিয়ম ছিল না। অন্যথায় এটা কীভাবে হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিন-রাতে পাঁচ (ছয়) বার জোরে বিসমিল্লাহ পাঠ করেছেন অথচ অধিকাংশ সাহাবীই তা জানতেন না? কিংবা জেনেশুনেও তা পরিত্যাগ করেছেন? এরচেয়ে অসম্ভব কথা আর কী হতে পারে? সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নিয়মিত উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন তাহলে তা নামাযের সংখ্যা, রুকু-সিজদা ও রাকাতের সংখ্যা; (কুরআন) জোরে পড়া, আস্তে পড়া; এবং অন্যান্য রোকনের নিয়ম ও তারতীবের মতোই (অনেক সাহাবীর সূত্রে) বর্ণিত হত। ‘‘ইনসাফের কথা, যা একজন ন্যায়নিষ্ঠ আলিম পছন্দ করবেন তা এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো জোরে পড়েছেন, কখনো আস্তে। কখনো কুনূত পড়েছেন, কখনো পড়েননি। আর তার আস্তে পড়া ছিল জোরে পড়ার চেয়ে বেশি এবং কুনূত না-পড়া ছিল কুনূত পড়ার চেয়ে বেশি।’ ومن المعلوم بالضرورة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم لو كان يقنت كل غداة ويدعو بهذا الدعاء ويؤمن الصحابة لكان نقل الأمة لذلك كلهم كنقلهم بجهره بالقراءة فيها وعددها ووقتها وإن جاز عليهم تضييع أمر القنوت منها جاز عليهم تضييع ذلك ولا فرق، وبهذا الطريق علمنا أنه لم يكن هديه الجهر بالبسملة كل يوم وليلة خمس مرات دائما مستمرا ثم يضيع أكثر الأمة ذلك ويخفى عليها وهذا من أمحل المحال بل لو كان ذلك واقعا لكان نقله كنقل عدد الصلوات وعدد الركعات والجهر والإخفات وعدد السجدات ومواضع الأركان وترتيبها والله الموفق. والإنصاف الذي يرتضيه العالم المنصف أنه صلى الله عليه وسلم جهر وأسر وقنت وترك وكان إسراره أكثر من جهره وتركه القنوت أكثر من فعله (যাদুল মাআদ পৃ. ৬৯) ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. যে কথা ফজরের কুনূত ও বিসমিল্লাহ জোরে পড়া সম্পর্কে বলেছেন তা হুবহু জোরে আমীনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম যদি সর্বদা বা অধিকাংশ সময় জোরে আমীন বলতেন তাহলে তা নামাযের রাকাত-সংখ্যার মতো (স্পষ্ট ভাষায় ও অনেক সনদে) বর্ণিত হত। সেক্ষেত্রে সাহাবা-তাবেয়ীন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মাঝে মতভিন্নতাও থাকত না এবং ইমাম বুখারীকেও এমন একটি হাদীস উল্লেখ করতে হত না, যাতে জোরে আমীন বলার কথা উল্লেখিতই হয়নি। চার. উপরোক্ত হাদীসে জোরে আমীন পড়ার কথা উচ্চারিত না হলেও ইমাম বুখারী রাহ. তা আহরণের চেষ্টা করেছেন এবং হাদীসটিকে জোরে আমীনের দলীল মনে করেছেন। পক্ষান্তরে যারা আস্তে আমীনের নিয়ম অনুসরণ করেন তাঁদের মতে, এই হাদীস থেকে আস্তে আমীনের নিয়মই প্রমাণিত হয়। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে : ১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম যখন বলে غير المغضوب عليهم ولا الضالين তখন তোমরা বল আমীন। এ থেকে বোঝা যায়, ইমাম জোরে আমীন বলবে না। তাই ইমাম غير المغضوب عليهم ولا الضالين বলার পর মুকতাদিকে আমীন বলার আদেশ করা হয়েছে। ২. এই হাদীসের এক রেওয়ায়েতে সহীহ সনদে আছে, ইমাম যখন বলে - غير المغضوب عليهم ولا الضالين তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين، فإن الملائكة تقول آمين، وإن الإمام يقول آمين، فمن وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه (সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭) প্রশ্ন এই যে, ইমাম সূরা ফাতেহার পর আমীন পাঠ করে-এই কথা বলার প্রয়োজন কেন হল? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি জোরে আমীন বলতেন তাহলে তো সাহাবায়ে কেরাম তা শুনেছেন। সুতরাং একথা তো বলার প্রয়োজন থাকে না যে, ঐ সময় ইমাম আমীন বলে থাকেন। পাঁচ. যেসব মারফূ রেওয়ায়েতে স্পষ্ট ভাষায় জোরে আমীনের কথা আছে সেগুলোর সনদ আপত্তিমুক্ত নয়; তাছাড়া কখনো কখনো জোরে আমীন বলা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এই তালীমের প্রয়োজন এই জন্য হয়েছে যে, আমীন যেহেতু অনুচ্চস্বরে পড়া হয় তাই কারো মনে হতে পারে যে, আমীন বলার নিয়ম নেই, বরং তা বিদআত। যেমন এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী, ইমাম মালিক রাহ. ইমামের জন্য আমীন বলার নিয়ম নেই বলে মনে করেন। ছয়. আল্লামা ইবনুত তুরকুমানি ‘‘আলজাওহারুন নাকী’’ কিতাবে আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. (৩১০ হি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই নিয়ম আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তেমনি ইবরাহীম নাখাঈ, শাবী, ইবরাহীম তাইমী রাহ. থেকেও বর্ণিত। আর আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার দুটো রেওয়ায়েতই সহীহ এবং উভয় নিয়ম অনুসারেই আলিমগণ আমল করেছেন। তবে অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ী যেহেতু অনুচ্চস্বরে আমীন বলতেন তাই আমি অনুচ্চস্বরে আমীন বলা পছন্দ করি।-আলজাওহারুন নকী ২/৫৮ এ থেকে বোঝা যায়, এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মূল সুন্নাহ। আর কখনো কখনো জোরে আমীন বলা হলে তা ছিল নতুন আগন্তুকদের শেখানোর জন্য।
আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে কিছু আছার
১. হযরত ওমর রা. বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ। أربع يخفيهن الإمام : التعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين واللهم ربنا ولك الحمد (ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১৯) ২. আবু ওয়াইল রাহ. বলেন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও। كان علي وعبد الله لا يجهران ببسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ، ولا بالتأمين، قال الهيثمي : رواه الطبراني في الكبير وفيه أبو سعد البقال، وهو ثقة مدلس. (আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮) ৩. আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর রা. ও হযরত আলী রা. বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না। لم يكن عمر وعلي يجهران بسم الله الرحمن الرحيم ولا بآمين. (ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০ ৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ ..., বিসমিল্লাহ ... ও আমীন। يخفي الإمام ثلاثا : الاستعاذة وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين. (আলমুহাল্লা ৩/১৮৪) ৫. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ, আমীন ও সামিআল্লাহর পর রাববানা লাকাল হামদ। أربع يخفيهن الإمام : بسم الله الرحمن الرحيم والاستعاذة وآمين، وإذا قال سمع الله لمن حمده قال ربنا لك الحمد. অন্য বর্ণনায় আছে, পাঁচটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়া হয় : সুবহানাকাল্লাহুম্মা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ। خمس يخفيهن : سبحانك اللهم وبحمدك وتعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين واللهم ربنا لك الحمد. (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৮৬) [পরিশিষ্ট উপরোক্ত বিষয়ে এবং এ জাতীয় অন্যান্য বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি মনে রাখা উচিত, যা হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেবের ‘সুন্নাহসম্মত নামায : কিছু মৌলিক কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে- যেসব ক্ষেত্রে একাধিক সুন্নাহ আছে, যেহেতু দু’টোই শরীয়তে স্বীকৃত তাই যে অঞ্চলে যে সুন্নাহ প্রচলিত সেখানে সেটিই চলতে দেওয়া উচিত। প্রচলিত সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে তার স্থলে ভিন্ন সুন্নাহ জারি করার প্রচেষ্টা যেমন শরীয়তের নীতি ও মিযাজের পরিপন্থী তেমনি মুসলমানদের ঐক্য ও শৃঙ্খলার পক্ষেও ক্ষতিকর। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তো হয় বিদআতের ক্ষেত্রে, সুন্নাহর ক্ষেত্রে নয়। এ প্রসঙ্গে শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ.-এর একটি ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি একবার রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠা ইত্যাদি স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে আরম্ভ করেন। অথচ সে সময় গোটা ভারতবর্ষে (ফিকহে শাফেয়ীর অনুসারী সামান্য কিছু অঞ্চল বাদে) রাফয়ে ইয়াদাইনের এই সুন্নাহ প্রচলিত ছিল না। শাহ ছাহেব রাহ.-এর যুক্তি ছিল, মুর্দা সুন্নত যিন্দা করায় অনেক ছওয়াব ও ফযীলত। হাদীস শরীফে আছে, ‘উম্মতের ফাসাদের সময় যে আমার সুন্নাহকে ধারণ করে সে একশ শহীদের ছওয়াব ও মর্যাদা পাবে।’ তখন তাঁর চাচা হযরত মাওলানা আবদুল কাদের দেহলভী রাহ. (যিনি ছিলেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.-এর পুত্র এবং তাফসীরে মূযিহুল কুরআন-এর রচয়িতা) তাঁর এই ধারণা সংশোধন করেছিলেন। ইসমাইল শহীদ রাহ.-এর যুক্তির জবাবে তিনি বলেছিলেন, ঐ হাদীসে বলা হয়েছে উম্মতের ‘ফাসাদের’ সময় যে ব্যক্তি সুন্নাহকে ধারণ করে তার জন্য উপরোক্ত ফযীলত। কিন্তু কোনো বিষয়ে যদি একাধিক সুন্নাহ থাকে, তাহলে কোনো একটিকে কি ‘ফাসাদ’ বলা যায়? যায় না। সুন্নাহর বিপরীতে ফাসাদ হল শিরক ও বিদআত। দ্বিতীয় সুন্নাহ কষ্মিনকালেও ‘ফাসাদ’ নয়; বরং দুটোই রহমত ও সুন্নাহ। তো রাফয়ে ইয়াদাইন না-করাও যখন সুন্নাহ তখন যে অঞ্চলে এই সুন্নাহ মোতাবেক আমল হচ্ছে সেখানে রাফয়ে ইয়াদাইনের সুন্নত ‘যিন্দা’ করে ঐ ছওয়াব আশা করা ভুল। এটা হাদীসের ভুল প্রয়োগ এবং সুন্নাহকে ‘ফাসাদ’ বলার নামান্তর।]রুকু ও সিজদার বর্ণনা
ধারাবাহিক বর্ণনা রুকু সিজদার আলোচনায় আল্লাহু আকবর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যেতে হবে।রুকুতে গিয়ে পড়তে হবে: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ অর্থঃ মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান । (তিনবার) [হাদীসটি সুনানগ্রন্থকারগণ ও ইমাম আহমাদ সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৭০; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২; নাসাঈ, হাদীস নং ১০০৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭; আহমাদ, হাদীস নং ৩৫১৪। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৮৩।]যদি কেউ একাকী নামাজ পড়ে তবে সে বেজোড় সংখ্যক তিন বারের বেশিও পড়তে পারে। একাকী নামাজ পড়লে এ দোয়াগুলো সময় য়ে পড়তে পারে: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي বাংলা অর্থ : “হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।” [হাদীসটি সুনানগ্রন্থকারগণ ও ইমাম আহমাদ সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৭০; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২; নাসাঈ, হাদীস নং ১০০৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭; আহমাদ, হাদীস নং ৩৫১৪। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৮৩। ] তারপর سُبوحٌ، قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ অর্থ : “(তিনি/আপনি) সম্পূর্ণরূপে দোষ-ত্রুটিমুক্ত, অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত; ফেরেশতাগণ ও রূহ এর রব্ব।”িএটাও পড়তে পারে [মুসলিম ১/৩৫৩, নং ৪৮৭; আবূ দাউদ, নং ৮৭২ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহু আকবার বলবে অতপর রুকু করবে অতপর سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَة বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। (আবু দাউদ) অর্থাৎ রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। . তার পর বলতেন رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ অর্থ : “হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত-রয়েছে-এমন প্রশংসা।” (বুখারি) চার তারপর সিজদাতে যেতে হবে এবং سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى বেজোড় সংখ্যক পড়তে হবে।যখন একা একা সুন্নাত নফল নামাজ আদায় করবে তখন সিজদাতে নিম্নের দোয়া সমুহের অপামল বৃদ্ধি করতে পারে। «اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسنُ الْخَالِقينَ». অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিজদা করেছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য; যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন, আর তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ অত্যন্ত বরকতময়।” [মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭১ ও অন্যান্যগণ।] পাচ. আরবি দোয়া : «سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ، وَالْمَلَكُوتِ، وَالْكِبْرِيَاءِ، وَالْعَظَمَةِ». অর্থ : “পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যিনি প্রবল প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী।” [আবু দাঊদ ১/২৩০, নং ৮৭৩; নাসাঈ, নং ১১৩১; আহমাদ, নং ২৩৯৮০। আর শাইখ আলবানী একে সহীহ আবু দাউদে ১/১৬৬ সহীহ বলেছেন। যার তাখরীজ ৩৭ নং এ চলে গেছে।] ছয়. আরবি দোয়া : «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَّتَهُ وَسِرَّهُ». অর্থ : “হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন— তার ক্ষুদ্র অংশ, তার বড় অংশ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ।” [মুসলিম ১/২৩০, নং ৪৮৩।] সাত. আরবি দোয়া : «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ». অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অসন্তুষ্টি থেকে, আর আপনার নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার নিকটে আপনার (পাকড়াও) থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গুনতে সক্ষম নই; আপনি সেরূপই, যেরূপ প্রশংসা আপনি নিজের জন্য করেছেন”। [মুসলিম ১/৩৫২, নং ৪৮৬।] মানুষের জীবনের প্রতিটা সমস্যার কোরআন হাদিসে কিন্ত তার দোয়া আছে।আমার সমস্যা কি? কোরঅনের কোন আয়াতটি বা হাদিসের কোন অংশটি আমার সমস্যার সাথে মিলে সেটি মুখস্ত করে সিজদাতে আল্লাহর নিকট চাইতে হবে।আমরা সাধারনতঃ তাহাজ্জুদ বা নফল জাতীয় নামাজের সিজদাতেই আল্লাহর কাছে জীবনের সমস্যাগুলো তুলে ধরি । ।﴿وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚবাকারা ৪৫ আল্লাহ বলেন,তোমরা আমার নিকট ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।অনেকে মন্তব্য গবেষনা করেছেন আরবী ভাষা ব্যতিত নামাজের সিজদার মধ্যে অন্য ভাষার ব্যবহার সমীচিন নয়, সেগুলো নামাজ বাদ হাত তুলে আল্লাহর নিকট চাইতে পারে।সিজদার অংগ সমুহ
أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ، وَيُونُسُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، وَالْحَارِثُ بْنُ مِسْكِينٍ، قِرَاءَةً عَلَيْهِ وَأَنَا أَسْمَعُ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَال " أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةٍ - لاَ أَكُفَّ الشَّعْرَ وَلاَ الثِّيَابَ - الْجَبْهَةِ وَالأَنْفِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ, ইবনু আবদুল আলা ও হারিস ইবনু মিসকীন (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর যেন আমি চুল ও কাপড় একত্র করে না রাখি (সে সাত অঙ্গ হচ্ছে ) ললাট, নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পা। সহিহ, বুখারি হাঃ ৮১২, মুসলিম হাঃ ৯৯২ أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا بَكْرٌ، عَنِ ابْنِ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ "إِذَا سَجَدَ الْعَبْدُ سَجَدَ مِنْهُ سَبْعَةُ آرَابٍ وَجْهُهُ وَكَفَّاهُ وَرُكْبَتَاهُ وَقَدَمَاهُ কুতায়বা (রহঃ) আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন বান্দা সিজদা করে তখন তার সপ্ত অঙ্গ সিজদা করে। তার মুখমন্ডল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাত এবং তার উভয় পা। সহিহ, ইবনু মাজাহ হাঃ ৮৮৫, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৯৯২/ক সিজদায় যাওয়ার সময় মুসল্লি তার হাতের পূর্বে হাঁটু রাখবে। এটি হচ্ছে হানাফী, শাফেঈ এবং হাম্বলী মাজহাবের আলেমদের অভিমত। তাদের দলীল হচ্ছেঃ (ক) আবু দাউদ, নাসাঈ এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) এর হাদীছ। তিনি বলেনঃ ্র رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا سجد وضع ركبتيه قبل يديه، وإذا نهض رفع يديه قبل ركبتيهগ্ধ আমি দেখেছি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সিজদায় যেতেন তখন তিনি উভয় হাত রাখার আগে তাঁর হাঁটুদ্বয় রাখতেন। আর যখন সিজদাহ হতে উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। ইমাম খাত্তাবী রহঃ) বলেনঃ হাত আগে রাখার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসের চেয়ে এই হাদীসটি অধিক বিশুদ্ধ। আর এই পদ্ধতিটি মুসাল্লীদের জন্য অধিক সহজ এবং দেখতেও অধিক সুন্দর। দেখুনঃ المجموع للنووي ৩/৩৯৫ ইমাম তিরমিযী (রাঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি গরীব। শারীক বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। অধিকাংশ আলেম এই হাদীসের উপরই আমল করেন। তারা হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার পক্ষে মত প্রদান করেন। সহীহ মুসলিমের শর্তে ইমাম হাকেম এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবীর সাথে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম ইবনে হিববান ও ইবনে খুযায়মা হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কোন মমত্মব্য করেন নি। ইমাম দারকুতনী (রাঃ) বলেনঃ ইয়াযীদ একাই এই হাদীসটি শারীক থেকে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে আসেম বিন কুলাইব থেকে শারীক ছাড়া আর কেউ রেওয়ায়েত করেন নি। আর মুহাদ্দীছদের নিকট শারীকের একক বর্ণনা শক্তিশালী নয়। ইমাম দারকুতনীর কথা এখানেই শেষ। এ জন্যই ইমাম আলবানী রহঃ) এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। তিনি এই হাদীসের ব্যাপারে অনেক লম্বা আলোচনা করেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা হা/ ৯২৮, ইরওয়াউল গালীল হা/ ৩৫৭। রসূল সাঃ) এর সলাতের পদ্ধতি নামক বইয়েও তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। (খ) তাদের আরেকটি দলীল হচ্ছে, মুসআব বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছ। মুসআব তার পিতা সা’দ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমরা সলাতে হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতাম। পরে আমাদেরকে হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এই হাদীছ সম্পর্কে ইবনে খুযায়মা (রাঃ) বলেন যে, এর সনদে রয়েছে ইসমাঈল বিন ইয়াহ-ইয়া। তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয় (মাতরুক) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) বলেনঃ ইবনে খুজায়মার দাবী হচ্ছে সলাতে আগে হাত রাখার ব্যাপারে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসটি সা’দ (রাঃ) এর এই হাদীছ দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। সা'দের এই হাদীসটি যদি সহীহ হত তাহলে এ বিষয়ে মতভেদের অবসান হয়ে যেত। কিন্তু এর সনদে রয়েছে ইসমাঈল বিন ইয়াহ-ইয়া, যার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। (গ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছ। রসূল সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সিজদাহ করবে তখন সে যেন হাতের পূর্বে হাঁটু রাখে এবং উটের মত করে না বসে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ) বলেনঃ হাদীসের সনদ দুর্বল। ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, তাহাবী এবং বায়হাকীও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল (মিথ্যা)। দ্বিতীয় মতঃ সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটুর পূর্বে হাত রাখবে। এটিই হচ্ছে ইমাম মালেক, আওযাঈ এবং ইমাম আহমাদের অপর একটি মত। তাদের দলীলগুলো হচ্ছেঃ (ক) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-্র إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِগ্ধ ‘‘তোমাদের কেউ যখন সলাতে সিজদায় যাবে তখন যেন উটের মত করে না বসে। সে যেন হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে। (আবু দাউদ, নাসাঈ, দারামী এবং তারিখে কবীর লিল-বুখারী) ইমাম নববী রহঃ) বলেনঃ হাদীসের সনদ ভাল। আব্দুল হক আহকামে কুবরাতে এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। আর যারা এই হাদীছকে দুর্বল বলেছেন তাদের জবাবে ইমাম আলবানী অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা এবং ইরওয়াউল গালীল) ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহঃ) বলেনঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসের মতনে কতক রাবী ধারণা বশত ভুল করেছেন। হাদীসের প্রথমাংশ শেষাংসের বিরোধী। কেননা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখলে উটের বসার মতই হয়ে যায়। কারণ উট প্রথমে মাটিতে হাত রাখে। তিনি আরও বলেনঃ আমার মতে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসের মতন ও সনদ কতিপয় রাবীর নিকট পরিবর্তন হয়ে গেছে। সম্ভবত মতনটি এমন ছিলঃ وليضع ركبتيه قبل يديه অর্থাৎ উভয় হাতের পূর্বে হাঁটু রাখবে। ইমাম আবু বকর ইবনু শায়বা এমনই বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাটি দুর্বল, যেমন ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। ২) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হস্তদ্বয় রাখতেন। (ইবনু খুযায়মা, দারাকুতনী) হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করে তা সহীহ্ বলেন ও যাহাবী তাতে একমত পোষণ করেন। ৩) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি আগে মাটিতে হাত রাখতেন এবং বলতেনঃ নাবী সাঃ) ও তাই করতেন। ইমাম তাহাবী (শরহু মাআনিল আছার), ইমাম দারকুতনী, এবং হাকেম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাকিম হাদীসটি মুসলিমের শর্তে বর্ণনা করে তা সহীহ্ বলেছেন ও যাহাবী তাতে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আলবানী ইরওয়াউল গালীলে বলেনঃ ইমাম হাকেম ও যাহাবীর বক্তব্য সঠিক। ইবনে খুযায়মাও সহীহ বলেছেন। ইমাম আলবানী রহঃ) হাকেম থেকে উদ্ধৃত করে বলেনঃ হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার ব্যাপারে বর্ণিত এই হাদীসটি হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার বিষয়ে ওয়ায়েল বিন হুজরের হাদীসের চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ হওয়ার প্রতি আমার অন্তর ধাবিত হয়। কেননা এ ব্যাপারে সাহাবী ও তাবেঈদের থেকে অনেক বর্ণনা রয়েছে। আলবানীর কথা এখানেই শেষ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর হাদীসটি ইমাম বুখারীও মুআলাক সূত্রে দৃঢ়তার সাথে বর্ণনা করেছেন।দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া
আমরা জানি যে সালাতের দুই সিজদার মাঝে স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব। এবং হাদিসে এ সময়ে পড়ার দুটি দোয়াও পাওয়া যায়- [اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَ ارْحَمْنِيْ وَ عَافِنِيْ وَ اجْبُرْنِيْ وَ ارْزُقْنِيْ]- এবং [رب اغفرلي رب اغفرلي এই সমস্ত দোয়াগুলির অনেক তাৎপর্র্য ও অর্থবহ , নামাজের তারতীব রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই ফলদায়ক এবং এই দোয়া সমুহ আল্লাহর নিকট কবুল হয়। সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে "রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী" দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২৯। আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০ ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম-মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম।হানাফী মাযহাব বারবার রফাইয়াদাইন কেন করেনা
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ قَالَ أَلاَ أُصَلِّي بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّةً وَاحِدَةً আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করব না? এরপর তিনি সালাত আদায় করলেন- কিন্তু প্রথম বার (তাকবীরে তাহরীমার সময়) ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন(হাত উত্তোলন) করেন নি। (সুনানে নাসাঈ: ১০৫৮, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ২৫৮, তিরমিযী: ২৫৭, আবু দাউদ:৭৪৮, সুনানুল কুবরা: ২৪৫৬) হাদীসটির সনদ সহীহ عن عبد الله بن مسعود – رضي الله عنه – قال : صليت خلف النبي – صلى الله عليه وسلم – وأبي بكر ، وعمر ، فلم يرفعوا أيديهم إلا عند افتتاح الصلاة . আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে, আবু বকর (রা) ও উমারের (রা.) পিছনে সালাত পড়েছি; তারা সালাতের শুরু ব্যাতীত আর কোথাও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন না। (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী: ২৪৫৯, দারা কুৎনী: ২৫/১১১৮) হাদীসটির সনদ সহীহ ইমাম তিরমিযী, ইবনে হাযম এমন কি শায়খ আলবানীর কাছেও। রফউল ইয়াদাইন না করার হাদীস একাধিক সনদে এসেছে বাইহাকীর সুনানুল কুবরাতে, মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহতে (এখানে ইমাম আব্দু্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি শাইবাহ রহ. ১৫টি হাদীস এনেছেন)দারা কুতনীতে, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে (:২৫৩৩-৩৪-৩৫) এ সকল সনদ নিরুঙ্কুশভাবে সহীহ। বিশেষ করে আবু বকর আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম সনআনী (রহ.) তার মুছান্নাফে সুফিয়ান আস-সাওরী- হাম্মাদ-ইবরাহীম নখয়ী সূত্রে বা সুফিয়ান সাওরী- হুসাইন-ইবরাহীম সূত্রে হাদীসটি প্রমাণ করে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সালাতে প্রথমবার ছাড়া আর হাত তুলতেন না। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন- ইবনু মাসউদের হাদীসটি হাসান। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবা ও তাবিঈন এ হাদীসের অনুকূলে মত দিয়েছেন। সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসীগণ এই মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা রহ. এবং ইমাম মালেক রহ.-এর মতে নামাযের মধ্যে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ (দুই হাত উত্তলন) শুধুমাত্র ‘তাকবীরে তাহরীমা’র সময় করতে হয় ইমামে আজম আবু হানিফা (জ: ৮০ হি: – মৃ: ১৪৮ হি:) রহ. এবং ইমাম মালেক (জ: ৯৩ হি: – মৃ: ১৭৯ হি:) রহ. -এর মতে, নামাযের মধ্যে কেবলমাত্র ‘তাকবীরে তাহরীমা’র সময়ে রাফে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন)’ করা সুন্নাহ, এছাড়া নামাযের অপরাপর স্থানগুলোতে রাফে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) না করেই নামায সমাপ্ত করবে। ইমাম মালেক রহ.-এর সরাসরি ছাত্র বিখ্যাত ফিকাহবীদ ও মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুর রহমান ইবনুল কাসেম আল-মালেকী (জ: ১৩২ হি: – মৃ: ১৯১ হি:) রহ.-এর সূত্রে ইমাম সাহনুন বিন সাঈদ আল-মালেকী (জ: ১৬০ হি: – মৃ: ২৪০ হি:) রহ তাঁর কিতাব ‘আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা’য় ইমাম মালেকের বক্তব্য ও মত উল্লেখ করেছেন এভাবে- قَالَ: وَ قَالَ مَالِكٌ: لَا أَعْرِفُ رَفْعَ الْيَدَيْنِ فِي شَيْءٍ مِنْ تَكْبِيرِ الصَّلَاةِ لَا فِي خَفْضٍ وَلَا فِي رَفْعٍ إلَّا فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ . قَالَ ابْنُ الْقَاسِمِ: وَكَانَ رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ مَالِكٍ ضَعِيفًا إلَّا فِي تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ . اورده الإمام سحنون في المدونة الكبرى, في رفع اليدين في الركوع و الإحرام : ١/١٦٥ -“(ইমাম) মালেক বলেছেন: ‘নামাযে শুরুতে (তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রটি) ছাড়া নামাযের আর কোনো তাকবীরের সময় রয়ে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করার কথা আমার জানা নেই; না (রুকু বা সিজদার জন্য) ঝোঁকার ক্ষেত্রে, আর না (রুকু বা সিজদাহ থেকে) ওঠার ক্ষেত্রে। (ইমাম আব্দুর রহমান) ইবনুল কাসেম (আমাদের কাছে) বলেছেন: ‘(ইমাম) মালেকের নিকট (নামাযের শুরুতে শুধুমাত্র) ‘তাকবীরে-তাহরীমা’র সময় ছাড়া (নামাযের অন্যান্য স্থানে) রায়ে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করা(র মতটি) ছিল জয়ীফ (দূর্বল)”। [আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৫] এই আমলটি বহু সহিহ নির্ভরযোগ্য হাদিস ও আছার দ্বারা মারফু ও মাওকুফ উভয় ভাবে শক্তিশালী দলিল দ্বারা প্রমাণিত, যা থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর মধ্যে অঁনেকে নামাযের মধ্যে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ছাড়া অপরাপর স্থানে রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) পরিত্যাগ করে নামায আদায়ের আমলটিও করে গেছেন, যা আরেকটি স্বতন্ত্র সুন্নাহ। নিম্নে রেওয়ায়েতগুলো উল্লেখ করা হল। নামাযের মধ্যে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অপরাপর স্থানে রাফউল ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) না করাও সুন্নাহ – সহিহ নির্ভরযোগ্য হাদিস ও আছার থেকে দলিল ইমাম তিরমিযী (মৃ: ২৭৯ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-জামে’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا هَنَّادٌ قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ . أخرجه الترمذي في سننه، كتاب الصلاة ، باب ما جاء أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع إلا في أول مرة : ٢/٤٢ رقم ٢٥٧ ، و أخرجه ايضا أحمد و أبو داود و النسائي و أبو يعلى و الطحاوي وغيرهم ، قال ابن حزم في المحلي: ٤/٨٧ : إن هذا الخبر صحيح، قال قال العيني في نخب الأفكار في تنقيح مباني الأخبار في شرح معاني الآثار : ٤/١٥٥ : إنه حديث صحيح ، قال الشيخ أحمد شاكر في تحقيقه علي الترمذي: ٢/٤١: هذا حديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ , وهو حديث صحيح و ما قالوه في تعليله ليس بعلة، و قال الشيخ الألباني في ‘أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم’ : ٢/٦١١ : وهذا سند صحيح، رجاله رجال مسلم، … و الحق أنه صحيح ثابت، لا مطعن في إسناده – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হান্নাদ, তিঁনি বলেছেন: আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান থেকে, তিনি আব্দুর রহমান বিন আসওয়াদ থেকে , তিনি আলকামাহ থেকে, তিনি বলেছেন, (আব্দুল্লাহ) ইবনে মাসউদ রা. (একবার আমাদের সামনে) বললেন: ‘আমি কি তোমাদের সাথে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামায(-এর মতো নামায) আদায় করবো না, (যাতে তোমরা জানতে পারো তিঁনি কেমন করে নামায আদায় করেছেন)’? অত:পর তিনি (আমাদেরকে শিখানোর জন্য আমাদের সামনে) নামায আদায় করলেন। তখন তিনি (তাকবীরে তাহরীমার সময়ে কৃত) প্রথমবার ছাড়া (নামাযের) আর (কোনো স্থানেও) তার দু’হাত তোলেন নি; (রুকুর সময়ও নয়; রুকু থেকে ওঠার সময়ও নয়, দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময়ও নয়, এমনকি দু’ সিজদার মাঝেও নয়। এভাবেই নামায শেষ করেছেন)”। [জামে তিরমিযী– ২/৪২ হাদিস ২৫৭; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬৪ হাদিস ২৪৫৩; আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬; শারহু মাআনীল আছার, ত্বাহাবী- ১/২২৪; সুনানে নাসায়ী- ২/১৯৫ হাদিস ১০২৬; সুনানওল কুবরা, নাসায়ী- ১/২২১ হাদিস ৬৪৫; সুনানে আবু দাউদ- ১/১৯৯ হাদিস ৭৪৮; মুসনাদে আহমদ- ১/৩৮৮ হাদিস ৩৬৮১; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৮/৪৫; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ২/১১২ হাদিস ২৫৩১; আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৮৭] ইমাম তিরমিযী (মৃ: ২৭৯ হি:) রহ. এই হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন- حديث ابن مسعود حديث حسن وبه يقول غير واحد من أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين و هو قول سفيان الثوري وأهل الكوفة – “(আব্দুল্লাহ) ইবনে মাসউদরা.-এর হাদিসটি একটি হাসান হাদিস। নবী ﷺ-এর একাধিক প্রাজ্ঞ-আলেম সাহাবী এবং তাবেয়ীবৃন্দ এ কথাই বলেছেন। (ইমাম) সুফিয়ান সাউরী এবং আহলে-কুফা’র (আলেমগণের) মত এটাই”। [সুনানে তিরমিযী- ২/৪২] ইমাম ইবনে হাযাম (জ: ৩৮৪ হি: – মৃ: ৪৫৬ হি:) রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘আল-মুহাল্লা’-এ সহিহ সনদের সাথে ইমাম ওকী রহ. ও তাঁর আরেকজন ছাত্র যুহাইর বিন হারব রহ.-এর সূত্রে এই একই হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন- إن هذا الخبر صحيح – “এই বর্ণনাটি সহিহ”। [আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৪/৮৭] ইমাম আলাউদ্দিন মারিদিনী (জ: ৬৮৩ হি: – মৃ: ৭৪৫ হি:) রহ. লিখেছেন- ان رجال هذا الحديث على شرط مسلم – ‘এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুসারে রয়েছে’। [জাওহারুন নাকী, ইমাম মারিদিনী- ২/৭৮] ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (মৃ: ৮৫৫ হি:) রহ. এই হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন- إنه حديث صحيح – “হাদিসটি বিলকুল সহিহ”। [নাখবুল আফকার, ইমাম আইনী- ৪/১৫৫] গায়রে-মুকাল্লিদ আহলে-হাদিস মুহাদ্দেস শায়েখ আহমদ শাকের (মৃ: ১৩৭৭ হি:) রহ. এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলেছেন- هذا حديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ , وهو حديث صحيح و ما قالوه في تعليله ليس بعلة – “(ইমাম) ইবনে হাযাম এবং তিঁনি ছাড়াও হাদিসের অপরাপর হাফেজগণ (অনেকেই) একে সহিহ বলেছেন; আর হাদিসটি সহিহও। আর কেউ কেউ এর যেসকল ইল্লত (ত্রুটি)-এর কথা বলে থাকেন, মূলত: তা কোনো ইল্লতই নয়”। [হাশিয়ায়ে জামে তিরমিযী, আহমদ শাকের– ২/৪১] গায়রে-মুকাল্লিদ আহলে-হাদিস শায়েখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানী (মৃ: ১৪২০ হি:) রহ. এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলেছেন- وهذا سند صحيح، رجاله رجال مسلم، …و الحق أنه صحيح ثابت، لا مطعن في إسناده – “এর সনদ সহিহ; এর সকল বর্ণনাকারী (সহিহ) মুসলীমের বর্ণনাকারীই।……সত্য হল, এ রেওয়াতটি সহিহ; সাবেত (প্রমাণিত); এর সনদে কোনো ইল্লত (দোষ) নেই”। [আসলু সিফাতিস সালাতিন নাবী ﷺ, আলবানী- ২/৬১১] ইমাম সাহনুন বিন সাঈদ আল-মালেকী (জ: ১৬০ হি: – মৃ: ২৪০ হি:) রহ তাঁর কিতাব ‘আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা’য় এই হাদিস সনদ সহ উল্লেখ করে ইমাম মালেকের মাযহাবের পক্ষে দলিল দিয়েছেন। [আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬] এই হাদিসটির একজন রাবী (বর্ণনাকারী) হলেন বিশিষ্ট তাবেয়ী আলকামাহ রহ.। স্বয়ং তাঁর আমলও ছিল রফে ইয়াদাইন না করার। যেমন, ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ جَابِرٍ، عَنِ الْأَسْوَدِ، وَعَلْقَمَةَ : أَنَّهُمَا كَانَا يَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا إِذَا افْتَتَحَا ثُمَّ لَا يَعُودَانِ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٥ – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন শারীক থেকে, তিনি যাবের থেকে, তিনি আল-আসওয়াদ ও আলকামাহ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন (এই যে): ‘তাঁরা দুজন যখন নামায শুরু করতেন, তখন তাঁরা তাদের দু হাত উঠাতেন, এরপর (নামাযের মধ্যে) আর (কোনো স্থানেও দু হাত উত্তলন) করতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ আছার ২৪৬৫] এছাড়াও ইমাম ইব্রাহীম নখয়ী যিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ছিলেন, তিনিও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর এই আমলের কথাই বলেছেন এবং নিজেও এমন আমলই করতেন। যেমন, ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي أَوَّلِ مَا يَسْتَفْتِحُ، ثُمَّ لَا يَرْفَعُهُمَا. اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٥، اسناده صحيح و رواته كلهم ثقات، و الطحاوي و قال زيلعي في نصب الراية : ٢/٣٧٠ : قال الطحاوي : فإن قالوا : إن إبراهيم عن عبد الله غير متصل ، قيل لهم : كان إبراهيم لا يرسل عن عبد الله إلا ما صح عنده وتواترت به الرواية عنه ، كما أخبرنا ، وأسند عن الأعمش أنه قال لإبراهيم : إذا حدثتني عن عبد الله ، فأسند ، قال : إذا قلت لك : قال عبد الله : فاعلم أني لم أقله حتى حدثنيه جماعة عنه ، وإذا قلت لك : حدثني فلان عن عبد الله ، فهو الذي حدثني وحده عنه – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন মিসআর থেকে, তিনি আবু মা’শার থেকে, তিনি ইব্রাহীম (নখয়ী) থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. সম্পর্কে বলেছেন: ‘তিঁনি সালাতের শুরুতে (তাকবীরে তাহরীমা’র সময়) তাঁর দুই হাত উঠাতেন; এরপর তিঁনি আর তাঁর দু’হাত উঠাতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ হাদিস ২৪৫৫] ইমাম দারাকুতনী (জ: ৩০৬ হি: – মৃ: ৩৮৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আস-সুনান’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন এভাবে- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَكِيلُ , ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ , ثنا هُشَيْمٌ , عَنْ حُصَيْنٍ , وَحَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , وَعُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ , قَالَا: نا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى , نا جَرِيرٌ , عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , قَالَ: ……. قَالَ إِبْرَاهِيمُ: إِنَّمَا رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ . اخرجه الدارقطني في سننه ,كتاب الصلاة , باب ذكر التكبير ورفع اليدين عند الافتتاح والركوع والرفع منه وقدر ذلك واختلاف الروايات : ١/٢١٢ رقم ١١٠٤، قال النيموي في آثار السنن : ١/٢٦١ رقم ٤٠٠: اسناده صحيح، و قال الألباني في كتاب أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم: ٢/٧٠٧ : وهذا سند صحيح على شرط مسلم، و رواه ايضا غيره – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন আব্দিলাহ আলওয়াকিল, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হাসান বিন আরাফাহ, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে হুশায়ম বর্ণনা করেছেন হুসাইন থেকে, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন ইসমাঈল ও উসমান বিন মুহাম্মাদ বিন জা’ফর, তারা দুজনে বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইউনুস বিন মুসা, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে জারীর বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন আব্দির রহমান থেকে, তিনি বলেন: “…. ইব্রাহীম (নখয়ী) বললেন: রফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) কেবলমাত্র নামায শুরু করার সময় (করতে হয়)”। [সুনানে দারাকুতনী– ২/৪৪ হাদিস ১১২১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৮৮৪৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮২৬; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/২২৪; আল-মুআত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ- ১০৭; শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম তাহাবী- ১৫/৩৫ হাদিস ৫৮২৬] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে আলী রা.-এর নামাযে রফে-ইয়াদাইন করার আমলটি এভাবে বর্ণনায় এনেছেন – حدثنا وكيع عن أبي بكر بن عبد الله بن قطاف النهشلي عن عاصم بن كليب عن أبيه : أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ، ثُمَّ لَا يَعُودُ. اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٤ رقم ٢٤٥٤، اسناده صحيح، و الطحاوي في شرح معاني الآثار : ١/٢٢٥ و البيهقي في السنن الكبري : ٢/١١٤ رقم ٢٥٣٤، وقال العيني في البناية شرح الهداية : ٢/٢٦١ : صحيح علي شرط مسلم، و ابن حجر في الدراية : ١/١١٣ : رجاله ثقات، و قال الزيلعي في نصب الراية : ٢/٣٦٩ : وهو أثر صحيح – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন আবু বকর বিন আব্দিল্লাহ বিন কিতাফ আন-নাহশালী থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা (কুলাইব) থেকে (এই যে, কুলাইব বলেছেন): ‘আলী (বিন আবি ত্বালেব রা.) যখন নামায আরম্ভ করতেন, তখন (শুধুমাত্র তাকবীরে-তাহরীমার সময়) তাঁর দু’ হাত উঠাতেন, তারপর তিঁনি (নামাযের মধ্যে) আর (কোনো স্থানেও তাঁর দু’ হাত উত্তলন) করতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৪৬ হাদিস ২৪৫৪; আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/২২৫; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী– ২/১১৪ হাদিস ২৫৩৪; আল-মুআত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ- ১/৯০ হাদিস ১০৯] এই রেওয়ায়েতটির ব্যাপারে ইমাম আলাউদ্দিন মারিদিনী (জ: ৬৮৩ হি: – মৃ: ৭৪৫ হি:) রহ. লিখেছেন– رجاله ثقات – ‘এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য)’। [জাওহারুন নাকী, ইমাম মারিদিনী- ২/৭৮] ইমাম হায়েজ ইবনে হাজার আসকালানী শাফেয়ী (জ: ৭৭৩ হি: – মৃ: ৮৫২ হি:) রহ লিখেছেন- رجاله ثقات – ‘এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য)’। [আদ-দিরায়াহ, ইবনে হাজার- ১/১১৩] ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (জ: ৭৬২ হি: – মৃ: ৮৫৫ হি:) রহ লিখেছেন- صحيح علي شرط مسلم – ‘ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ’। [আন-নিহায়াহ, ইমাম আইনী- ২/২৬১] ইমাম যাইলায়ী রহ. হলেছেন- هو أثر صحيح ‘এই বর্ণনাটি সহিহ’। [নসবুর রায়াহ, যাইলায়ী- ২/৩৬৯] ইমাম সাহনুন বিন সাঈদ আল-মালেকী (জ: ১৬০ হি: – মৃ: ২৪০ হি:) রহ তাঁর কিতাব ‘আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা’য় এই হাদিসটি একই সনদ সহকারে উল্লেখ করে ইমাম মালেকের মাযহাবের পক্ষে দলিল দিয়েছেন এবং সাথে আরো লিখেছেন- قَالَ : وَكَانَ قَدْ شَهِدَ مَعَهُ صِفِّينَ وَكَانَ أَصِحَابُ ابْنِ مَسْعُودٍ يَرْفَعُونَ فِي الْأُولَى ثُمَّ لَا يَعُودُونَ وَكَانَ إبْرَاهِيمُ النَّخَعِيُّ يَفْعَلُهُ – ‘(ইমাম আব্দুর রহমান ইবনুল কাসেম রহ.) বলেছেন: কুলাইব (একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী এবং তিনি) সিফফীন যুদ্ধে আলী রা.-এর সাথে শরিক ছিলেন। তিনি (বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ) ইবনে মাসউদ রা.-এরও (সাগরেদ) সাথী ছিলেন। তাঁরা সকলেই (নামাযের মধ্যে শুধুমাত্র) প্রথমবার ‘রফে ইয়াদাইন’ (দু হাত উত্তলন) করতেন, এরপর আর করতেন না। ইব্রাহীম নখয়ী আমলও এমনটাই ছিল”। [আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬] নিম্নের সহিহ রেওয়ায়েতটিও একই কথাই বলছে। ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: انَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ وَ أَصْحَابُ عَلِيٍّ لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ، قَالَ وَكِيعٌ ثُمَّ لَا يَعُودُونَ . رواه ابن أبي شيبة الكوفي في المصنف, كتاب الصلاة , ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٨، اسناده صحيح جدا، و قال التركماني في الجوهر النقي: ٢/٧٩ : هذا سند صحيح جليل ، و ايضا رواه امام محمد بن الحسن الشيباني في كتاب الآثار, باب افتتاح الصلاة و رفع الايدى و السجود علي العمامة : ١/١٢٧ – “আমাদের কাছে ওকী এবং আবু উসামাহ বর্ণনা করেছেন শু’বা থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি বলেছেন: ‘আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা.-এর (অনুসারী শিষ্য) সাথীগণ এবং আলী রা.-এর (অনুসারী শিষ্য) সাথীগণ নামাযের শুরুতে (তাকবীরে তাহরীমা’র সময়) ছাড়া (নামাযের আর কোথায়ও) তাদের দুই হাত উঠাতেন না; (রুকুর সময়ও নয়; রুকু থেকে ওঠার সময়ও নয়, এমনকি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময়ও নয়। এভাবেই তাঁরা সালাত শেষ করতেন)’। ওকী (তাঁর রেওয়ায়েতের শেষে এভাবে) বলেছেন: ثم لا يعودون – ‘অত:পর তাঁরা আর পূণরায় (রায়ে ইয়াদাইন/দু’হাত উত্তলন) করতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ হাদিস ২৪৫৮] ইমাম আলাউদ্দিন মারিদিনী (জ: ৬৮৩ হি: – মৃ: ৭৪৫ হি:) রহ. এই রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন- وهذا أيضا سند صحيح جليل ففي اتفاق أصحابهما على ذلك ما يدل على أن مذهبهما كان كذلك – “এই রেওয়ায়েতটিও একটি অতীব উচ্চমানের সহিহ রেওয়ায়েত। কাজেই (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.এবং আলী রা. এই) দুজঁনের সাথীগণ (নামাযের শুরু ছাড়া আর কোথায়ও দুই হাত না তোলা)-এর উপরে একমত ছিলেন, যা একথা প্রমাণ করে যে, তাঁদের দুঁজনের মাযহাব ওমনটাই ছিল”। [জাওহারুন নাকী, ইমাম মারিদিনী- ২/৭৯] ইমাম হুমাইদী (মৃ: ২১৯ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসনাদ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ قَالَ ثنا سُفْيان قَالَ: ثنا الزُّهْرِيُّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ، وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَلَا يَرْفَعُ وَلَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ . رواه الحميدي في مسنده : ٢/٢٧٧ رقم ٦١٤ و اسناده صحيح، و أبو عوانة في مستخرجه : ١/٤٢٣ رقم ١٥٧٢ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান (সাউরী), তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যুহরী, তিঁনি বলেছেন যে, আমাকে সালেম বিন আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.) থেকে যে, (আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. তাকে বলেছেন): ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ দেখেছি, তিঁনি যখন নামায শুরু করতেন, তখন তিঁনি (তাকবিরে তাহরীমা বলে) তাঁর দুই হাতকে তাঁর কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর তিনি যখন রুকু করতে এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর ইচ্ছে করতেন, তখন তিঁনি (আর তাঁর দুই হাত) উঠাতেন না, (এমনকি তিঁনি) দুই সিজদার মাঝেও (তাঁর হাত উঠাতেন) না”। [মুসনাদে হুমাইদী– ২/২৭৭ হাদিস ৬১৪; মুসনাদে আবু আউয়ানা- ১/৪২৩ হাদিস ১৫৭২] এর সনদ খুবই শক্তিশালী এবং ইমাম বুখারী ও মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ। নিম্নের রেওয়ায়েত দুটি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর আমলকে আরো সুস্পষ্ট করে তোলে। ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ . رواه ابن أبي شيبة الكوفي في المصنف، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٤، قال المارديني في الجوهر النقي: ٢/٧٤ : وهذا سند صحيح، و ايضا رواه الطحاوي في شرح معاني الآثار : ١/٢٢٥، قال النيموي في اثار السنن : ١/٢٦٩ : سنده صحيح – “আমাদের কাছে আবু বকর বিন আইয়াশ বর্ণনা করেছেন হুসাইন থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে (এই যে), মুজাহিদ বলেছেন: “আমি (আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা.(-এর পিছনে অনেকবার নামায পড়েছি, কিন্তু তাঁ)কে নামাযের শুরুতে (তাকবীরে তাহরীমার সময়) প্রথমবার ছাড়া (নামাযের মধ্যে) আর (কোনো স্থানেও) তাঁর দু’হাত তুলতে দেখিনি”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ হাদিস ২৪৬৪; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/২২৫; মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, ইমাম বাইহাকী- ২/৪২৮ হাদিস ৩৩০৮] ইমাম আলাউদ্দিন মারিদিনী (জ: ৬৮৩ হি: – মৃ: ৭৪৫ হি:) রহ. এই রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন- وهذا سند صحيح – “এই সনদটি সহিহ”। [জাওহারুন নাকী, ইমাম মারিদিনী- ২/৭৯] শায়েখ নিমুভী (মৃ: ১৩২২ হি:) রহ. ইমাম তাহাবীর রেওয়াতকৃত হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন- سنده صحيح – “এর সনদ সহিহ”। [আছারুস সুনান, নিমুভী- ১/২৬৯ আছার ৪০৫; ই’লাউস সুনান, উসমানী- ২/৭৪ আছার ৮১৮] ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হারেছ বিন আসাদ আল-কায়রাওয়ানী আল-উন্দুলুসী (মৃ: ৩৬৬ হি:) রহ. তাঁর কিতাব ‘আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حدثني عثمان بن محمد قال: قال لي عبيدالله بن يحيي : حدثني عثمان بن سوادة بن عباد عن حفص بن ميسرة عن زيد بن اسلم عن عبدالله بن عمر قال : كنا مع رسول الله صلي الله عليه وسلم بمكة نرفع ايدينا في بدء الصلوة وفي داخل الصلوة عند الركوع فلما هاجر النبي صلي الله عليه وسلم الي المدينة ترك رفع يدين في داخل الصلوة عند الركوع وثبت علي رفع يدين في بدء الصلوة ۔۔۔ توفي ۔ اخرجه الإمام الحافظ أبو عبد الله محمد بن الحارث بن أسد الخشني القيرواني ثم الاندلسي في اخبار الفقهاء و المحدثين , باب عثمان: ص٢١٤ رقم ٣٧٨، اسناده صحيح – “আমার কাছে বর্ণনা করেছেন উসমান বিন মুহাম্মাদ, তিনি বলেছেন: আমাকে বলেছেন উবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া, (তিনি বলেছেন) আমার কাছে উসমান বিন সাওয়াদাহ বিন আব্বাদ বর্ণনা করেছেন হাফস বিন মাইসারাহ থেকে, তিনি ইয়াজিদ বিন আসলাম থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে (এই যে: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.) বলেছেন: ‘আমরা (যখন) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে মক্কায় ছিলাম, (তখন) আমরা নামাযের শুরুতে এবং নামাযের মধ্যে রুকুর করার সময় (আমাদের দু) হাত উঠাতাম। (পরে) নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন নামাযের মধ্যে রুকু করার সময় রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন করা) পরিত্যাগ করেন এবং (শুধুমাত্র) নামাযের শুরুতে রাফে-ইয়াদাইন বহাল রেখে দেন। (আর এই আমলের উপরেই) তাঁর ওফাত হয়”। [আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, ইমাম আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী- ১/২১৪ বর্ণনা নম্বর ৩৭৮] এই রেওয়ায়েতটির সনদ সম্পূর্ণ সহিহ। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর বর্ণিত এই হাদিস থেকে দিবালকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মাক্কী জীবনে নামাযের শুরুতে তাকবীরে-তাহরীমার সময়, রুকুর সময় রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) করার ভরপুর আমল ছিল রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের। পরে রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, তারপর নামাযের শুধু শুরুতে তাকবীরে-তাহরীমার সময় রাফে-ইয়াদাইন বহাল রেখে দেন এবংবাদবাকি অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) পত্যিাগ করার আমল শুরু করেন। উল্লেখ্য, এখানে মদিনায় এসে নামাযের শুরুতে ছাড়া বাদবাকি অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) পত্যিাগ করার অর্থ এই নয় যে, মদিনায় পা রাখার পরপরই নামযের ওসব স্থানে রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) পরিত্যাগ করেন। বরং এর অর্থ হল, এরপর মাদানী জীবনের কোনো এক সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন ভাল মনে করেছেন, তখন নামাযের শুরুতে ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন) পত্যিাগ করেন। উপরের ১ থেকে ৩ নং রেওয়াতটি দুটি হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর বর্ণনা ও আমল এবং নিচে বর্ণিত হাদিসগুলোতে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারী জলিলুল-ক্বদর মুহাজির সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ওমর ফারূক রা., আলী রা., আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল সহিহ সনদের সাথে বির্ণত হয়েছে, যার মধ্যে একথা স্পষ্ট যে, তাঁরা সকলেই শুধুমাত্র তাকবীরে-তাহরীমার সময় ‘রাফে-ইয়াদাইন’ করতেন। ইমাম মুসলীম (মৃ: ২৬১ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-সহিহ’-তে সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنِ الْمُسَيَّبِ بْنِ رَافِعٍ، عَنْ تَمِيمِ بْنِ طَرَفَةَ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ : مَا لِي أَرَاكُمْ رَافِعِي أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِي الصَّلاَةِ . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الصلاة، باب الأمر بالسكون فى الصلاة والنهى عن الإشارة باليد : رقم ٤٣٠، و أبو داود : ٢/٢٤١ ، و النسائي في الكبرى : ١/٣٩٥ و ٢/٣٤ ، و ابن أبي شيبة في المصنف: ٢/٢٣١ و غيرهم– “আমাদের কাছে আবু বকর ইবনু আবি শায়বা ও আবু কুরায়ব বর্ণনা করেছেন, তাঁরা দুজনে বলেছেন: আমাদের কাছে আবু মুআবিয়া বর্ণনা করেছেন আ’মাশ থেকে, তিনি মুসাইয়্যাব বিন রাফে’ থেকে, তিনি তামিম বিন ত্বরাফাহ থেকে, তিনি (সাহাবী) যাবের বিন সামুরাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিঁনি বলেছেন: ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ (একদিন) বের হয়ে আমাদের কাছে এসে বললেন: “কি হল, আমি তোমাদেরকে দেখছি তোমরা বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের মতো করে (নামাযের মধ্যে) তোমাদের দু’হাত তুলছো! (এমনটা করো না, বরং) তোমরা নামাযের মধ্যে ধীরস্থির-শান্ত হয়ে থাকো”। [সহিহ মুসলীম- ১/৩২২ হাদিস ৪৩০; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/১০৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ১৮৭৮; সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ী- ১/৩৯৫, ২/৩৪; সুনানে আবু দাউদ- ২/২৪১; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরাণী- ২/২০২ হাদিস ১৮২৪-১৮২৯; আল-মুসনাদ, ইমাম আবু আয়ানাহ, হাদিস ১৫৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২০৯৯৮] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٦، و قال الطحاوي في شرح معاني الآثار: ١/١٦٤ : هو حديث صحيح، قال التركماني في الجوهر النقي : ٢/٧٥ : و هذا السند ايضا صحيح علي شرط مسلم، قال النيموي في اثار السنن : ١/٢٦٦ : و هو اثار صحيح، و قال عثماني في إعلاء السنن : ٢/٧١ رقم ٨١٦ : و سنده صحيح علي شرط مسلم – “আমাদের কাছে ইয়াহইয়া বিন আদাম বর্ণনা করেছেন হাসান বিন আইয়াশ থেকে, তিনি আব্দুল মালেক বিন আবযার থেকে, তিনি যুবায়েল বিন আদী থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আল-আসওয়াদ থেকে, তিনি বলেছেন: ‘আমি (ইসলামী জাহানের দ্বিতীয় খলিফা) ওমর (ফারূক রা.)-এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি নামাযের শুরুর সময় ছাড়া তাঁর নামাযের আর কোনো স্থানেও তাঁর দু হাত তুলতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ আছার ২৪৬৬; শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/১৬৪] ইমাম আবু জা’ফর তাহাবী (জ: ২৩৯ হি: – মৃ: ৩২১ হি:) রহ. বলেছেন- هو حديث صحيح – ‘এই হাদিসটি সহিহ’। [শারহু মাআনীল আছার, ইমাম তাহাবী- ১/১৬৪] ইমাম আলাউদ্দিন মারিদিনী (জ: ৬৮৩ হি: – মৃ: ৭৪৫ হি:) রহ. লিখেছেন- و هذا السند ايضا صحيح علي شرط مسلم – ‘এই সনদটিও ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ’। [জাওহারুন নাকী, ইমাম মারিদিনী- ২/৭৫] ইমাম হায়েজ ইবনে হাজার আসকালানী শাফেয়ী (জ: ৭৭৩ হি: – মৃ: ৮৫২ হি:) রহ লিখেছেন- رجاله ثقات – ‘এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য)’। [আদ-দিরায়াহ, ইবনে হাজার- ১/১৫২] শায়েখ নিমুভী (মৃ: ১৩২২ হি:) রহ. বলেছেন- و هو اثار صحيح – “এই বর্ণনাটি সহিহ”। [আছারুস সুনান, নিমুভী- ১/২৬৬ আছার ৪০৩] শায়েখ জফর আহমদ রহ. বলেছেন- و سنده صحيح علي شرط مسلم – ‘এর সনদ ইমাম মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ’ [ই’লাউস সুনান, উসমানী- ২/৭১] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ হাসান সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন যে- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: نا وَكِيعٌ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْحَكَمِ، وَعِيسَى، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ، ثُمَّ لَا يَرْفَعُهُمَا حَتَّى يَفْرُغَ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٤ رقم ٢٤٥٢ اسناده حسن٫ و اخرجه غيره ايضا – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন আবু লায়লা থেকে, তিনি হাকাম ও ঈসা থেকে, তিনি আব্দুর রহমান বিন আবি লায়লা থেকে, তিনি (সাহাবী) বারা বিন আযীব রা. থেকে (এই যে, বারা বিন আযীব রা. বলেছেন): ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন নামায শুরু করতেন তখন তিঁনি তাঁর দু হাত উঠাতেন। এরপর তিঁনি (নামায থেকে) ফারেগ হওয়া পর্যন্ত আর (কোনো স্থানেও) দু হাত উঠাতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ২/৬৪ হাদিস ২৪৫২; আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬] ইমাম সাহনুন বিন সাঈদ আল-মালেকী (জ: ১৬০ হি: – মৃ: ২৪০ হি:) রহ তাঁর কিতাব ‘আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা’য় এই হাদিস একই সনদ সহকারে উল্লেখ করে ইমাম মালেকের মাযহাবের পক্ষে দলিল দিয়েছেন। [আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ইমাম সাহনুন মালেকী- ১/১৬৬] এই হাদিসটির একজন রাবী (বর্ণনাকারী) হলেন বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবনু আবি লায়লা রহ.। স্বয়ং তাঁর আমলও ছিল রফে ইয়াদাইন না করার। যেমন, ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هُشَيْمٍ، عَنْ سُفْيَانَ بْنِ مُسْلِمٍ الْجُهَنِيِّ، قَالَ: كَانَ ابْنُ أَبِي لَيْلَى، يَرْفَعُ يَدَيْهِ أَوَّلَ شَيْءٍ إِذَا كَبَّرَ. اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٣ – “আমাদের কাছে মুআবিয়া বিন হুশাইম বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান বিন মুসলীম আল-যুহানী থেকে (এই যে), তিনি বলেছেন: ‘ইবনু আবি লায়লা (নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার সময়) যখন তাকবীর বলতেন, (কেবল) তখনই প্রথমবার তাঁর দু হাত উঠাতেন, (তারপর নামাযের মধ্যে আর কোনো ক্ষেত্রেও তাঁর দু হাত উঠাতেন না)”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ আছার ২৪৬৩] তাবেয়ী মুহাদ্দেস আলেমগণের মধ্যে যাঁরা নামায়ের তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া বাকি আর কোথায়ও হাত উঠাতেন না # ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: انَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ وَ أَصْحَابُ عَلِيٍّ لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ، قَالَ وَكِيعٌ ثُمَّ لَا يَعُودُونَ . رواه ابن أبي شيبة الكوفي في المصنف, كتاب الصلاة , ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٨، اسناده صحيح جدا، و قال التركماني في الجوهر النقي: ٢/٧٩ : هذا سند صحيح جليل ، و ايضا رواه امام محمد بن الحسن الشيباني في كتاب الآثار, باب افتتاح الصلاة و رفع الايدى و السجود علي العمامة : ١/١٢٧ – “আমাদের কাছে ওকী এবং আবু উসামাহ বর্ণনা করেছেন শু’বা থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি বলেছেন: ‘আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা.-এর (অনুসারী শিষ্য) সাথীগণ এবং আলী রা.-এর (অনুসারী শিষ্য) সাথীগণ নামাযের শুরুতে (তাকবীরে তাহরীমা’র সময়) ছাড়া (নামাযের আর কোথায়ও) তাদের দুই হাত উঠাতেন না; (রুকুর সময়ও নয়; রুকু থেকে ওঠার সময়ও নয়, এমনকি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময়ও নয়। এভাবেই তাঁরা সালাত শেষ করতেন)’। ওকী (তাঁর রেওয়ায়েতের শেষে এভাবে) বলেছেন: ثم لا يعودون – ‘অত:পর তাঁরা আর পূণরায় (রায়ে ইয়াদাইন/দু’হাত উত্তলন) করতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ হাদিস ২৪৫৮] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا ابْنُ مُبَارَكٍ، عَنْ أَشْعَثَ، عَنِ الشَّعْبِيِّ : أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي أَوَّلِ التَّكْبِيرِثُمَّ لَا يَرْفَعُهُمَا . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٦ اسناده صحيح – “আমাদের কাছে (আব্দুল্লাহ) ইবনে মুবারক বর্ণনা করেছেন আশআছ থেকে, তিনি শা’বী সম্পর্কে (বলেন যে): ‘তিনি (নামাযের মধ্যে শুধুমাত্র) প্রথম তাকবীরে(র সময়) তাঁর দু’ হাত উঠাতেন, তারপর তিনি (আর কোনো স্থানেও) দু’হাত উঠাতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ আছার ২৪৫৬] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا حُصَيْنٌ، وَمُغِيرَةُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ: أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: إِذَا كبَّرْتَ فِي فَاتِحَةِ الصَّلَاةِ فَارْفَعْ يَدَيْكَ، ثُمَّ لَا تَرْفَعْهُمَا فِيمَا بَقِيَ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٧ – “আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হুশায়েম, তিনি বলেন: হুসাইন ও মুগীরাহ আমাদেরকে ইব্রাহীম (নখয়ী) থেকে বর্ণনা করেছেন (যে): তিঁনি বলতেন: ‘তুমি যখন নামাযের শুরুতে তাকবীর বলবে, তখন তুমি তোমার দু হাত উঠাবে। তারপর (নামাযের) বাকি অংশের কোথায়ও তুমি দু’ হাত উঠাবে না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ আছার ২৪৫৬] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، وَمُغِيرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: لَا تَرْفَعْ يَدَيْكَ فِي شَيْءٍ مِنَ الصَّلَاةِ إِلَّا فِي الِافْتِتَاحَةِ الْأُولَ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٥٩ – “আমাদের কাছে আবু বকর বিন আইয়াশ বর্ণনা করেছেন হুসাইন ও মুগীরাহ থেকে, তারা ইব্রাহীম (নখয়ী) থেকে (বলেছেন যে): তিঁনি বলতেন: ‘তুমি নামাযের শুরু পর্যায়ে (তাকবীরে তাহরীমার সময়) প্রথমবার ছাড়া নামাযের মধ্যে আর কোনো ক্ষেত্রেও তোমার দু হাত উঠাবে না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ আছার ২৪৫৯] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ عَنِ الْحَجَّاجِ، عَنْ طَلْحَةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، وَإِبْرَاهِيمَ، قَالَ: كَانَا لَا يَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا إِلَّا فِي بَدْءِ الصَّلَاةِ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٦٠ – “আমাদের কাছে আবু বকর বিন আইয়াশ বর্ণনা করেছেন আল-হাজ্জাজ থেকে, তিনি ত্বালহা থেকে, তিনি খায়ছামাহ ও ইব্রাহীম (নখয়ী) সম্পর্কে বলেছেন: ‘তাঁরা দুজন নামাযের শুরু পর্যায়ে (তাকবীরে তাহরীমার সময় প্রথমবার) ছাড়া (নামাযের মধ্যে আর কোনো ক্ষেত্রেও) তাঁদের দু হাত উঠাতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ আছার ২৪৬০] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ: كَانَ قَيْسٌ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ أَوَّلَ مَا يَدْخُلُ فِي الصَّلَاةِ، ثُمَّ لَا يَرْفَعُهُمَا . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٥ رقم ٢٤٦١ – “আমাদের কাছে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল থেকে (এই যে), তিনি বলেছেন: ‘কায়েস যখন নামায শুরু করতেন, তখন (শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় সেই) প্রথমবারই তাঁর দু হাত উঠাতেন। এরপর (নামাযের মধ্যে আর কোনো স্থানেও) তিঁনি দু হাত উঠাতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৫ আছার ২৪৬১] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هُشَيْمٍ، عَنْ سُفْيَانَ بْنِ مُسْلِمٍ الْجُهَنِيِّ، قَالَ: كَانَ ابْنُ أَبِي لَيْلَى، يَرْفَعُ يَدَيْهِ أَوَّلَ شَيْءٍ إِذَا كَبَّرَ. اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٣ – “আমাদের কাছে মুআবিয়া বিন হুশাইম বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান বিন মুসলীম আল-যুহানী থেকে (এই যে), তিনি বলেছেন: ‘ইবনু আবি লায়লা (নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার সময়) যখন তাকবীর বলতেন, (কেবল) তখনই প্রথমবার তাঁর দু হাত উঠাতেন, (তারপর নামাযের মধ্যে আর কোনো ক্ষেত্রেও তাঁর দু হাত উঠাতেন না)”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ আছার ২৪৬৩] ইমাম আবু বকর ইবনু আবি শায়বাহ (মৃ: ২৩৫ হি:) রহ. তাঁর হাদিসের কিতাব ‘আল-মুসান্নাফ’-এ নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ جَابِرٍ، عَنِ الْأَسْوَدِ، وَعَلْقَمَةَ : أَنَّهُمَا كَانَا يَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا إِذَا افْتَتَحَا ثُمَّ لَا يَعُودَانِ . اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف ، كتاب الصلاة ، باب من كان يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود : ٢/٦٦ رقم ٢٤٦٥ – “আমাদের কাছে ওকী বর্ণনা করেছেন শারীক থেকে, তিনি যাবের থেকে, তিনি আল-আসওয়াদ ও আলকামাহ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন (এই যে): ‘তাঁরা দুজন যখন নামায শুরু করতেন, তখন তাঁরা তাদের দু হাত উঠাতেন, এরপর (নামাযের মধ্যে) আর (কোনো স্থানেও দু হাত উত্তলন) করতেন না”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ – ২/৬৬ আছার ২৪৬৫] রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করার পক্ষের হাদিস গুলোর জবাবে হানাফী ফুকুহায়ে কেরাম যে জবাব দিয়েছেন আমরা এখানে ইতিপূর্বে দেখিয়ে এসেছি যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর মধ্যে অঁনেকে নামাযের মধ্যে ‘তাকবীরে তাহরীমা’র সময় ছাড়াও নামযের অপরাপর স্থানেও (যেমন রুকু ও সিজদা’র সময়) রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করতেন মর্মে বহু সহিহ ও নির্ভরযোগ্য হাদিস রয়েছে। বরং, এই পক্ষের হাদিসের সংখ্যাই অনেক বেশি ও শক্তিশালী। আবার এদিকে রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) পরেত্যগের আমলও রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে প্রমাণিত। হানাফীগণ এর যে সকল ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সারমর্ম হল, তাঁদের ইজতেহাদ মতে, রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম রা. একসময় নামাযে রুকু ও সিজদা’র সময় রফে ইয়াদাইন (দু হাত উত্তলন) করার আমল করেছেন, তবে পরে তা ছেড়ে দিয়েছেন। এজন্য দু ধরনের আমলের কথা হাদিসে পাওয়া যায়। এমনকি একই সাহাবী থেকে এই বিষয়ে বিভিন্ন রকমের হাদিস ও আমল পাওয়া যায়। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর বর্ণিত হাদিস ও আমল সমূহ। উপরে আমরা # ২.২.৬ # নং-এ যে রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করেছি, সেটিও হানাফীদের ইজতিহাদকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হারেছ বিন আসাদ আল-কায়রাওয়ানী আল-উন্দুলুসী (মৃ: ৩৬৬ হি:) রহ. তাঁর কিতাব ‘আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন’-এ সহিহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন- حدثني عثمان بن محمد قال: قال لي عبيدالله بن يحيي : حدثني عثمان بن سوادة بن عباد عن حفص بن ميسرة عن زيد بن اسلم عن عبدالله بن عمر قال : كنا مع رسول الله صلي الله عليه وسلم بمكة نرفع ايدينا في بدء الصلوة وفي داخل الصلوة عند الركوع فلما هاجر النبي صلي الله عليه وسلم الي المدينة ترك رفع يدين في داخل الصلوة عند الركوع وثبت علي رفع يدين في بدء الصلوة ۔۔۔ توفي ۔ اخرجه الإمام الحافظ أبو عبد الله محمد بن الحارث بن أسد الخشني القيرواني ثم الاندلسي في اخبار الفقهاء و المحدثين , باب عثمان: ص٢١٤ رقم ٣٧٨، اسناده صحيح – “আমার কাছে বর্ণনা করেছেন উসমান বিন মুহাম্মাদ, তিনি বলেছেন: আমাকে বলেছেন উবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া, (তিনি বলেছেন) আমার কাছে উসমান বিন সাওয়াদাহ বিন আব্বাদ বর্ণনা করেছেন হাফস বিন মাইসারাহ থেকে, তিনি ইয়াজিদ বিন আসলাম থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে (এই যে: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.) বলেছেন: ‘আমরা (যখন) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে মক্কায় ছিলাম, (তখন) আমরা নামাযের শুরুতে এবং নামাযের মধ্যে রুকুর করার সময় (আমাদের দু) হাত উঠাতাম। (পরে) নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন নামাযের মধ্যে রুকু করার সময় রাফে-ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তলন করা) পরিত্যাগ করেন এবং (শুধুমাত্র) নামাযের শুরুতে রাফে-ইয়াদাইন বহাল রেখে দেন। (আর এই আমলের উপরেই) তাঁর ওফাত হয়”। [আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, ইমাম আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী- ১/২১৪ বর্ণনা নম্বর ৩৭৮] এছাড়াও আলী বিন আবি ত্বালেব রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মতো প্রথম সারির ফিকাহবীদ সাহাবায়ে কেরামকে কুফাবাসী যেভাবে আমল করতে দেখেছেন এবং তাঁদের অনুসরণে তাঁদের উভয়ের সাগরেদ তাবেয়ীগণ এবং পরে তাবা-তাবেয়ীগণ যেভাবে আমল করেছেন, সে সম্পর্কিত হাদিস ও আছার এবং কুফায় তাদের পরম্পরা আমলও হানাফীদের একটি মজবুত দলিল। সুতরাং, হানাফীগণ নামাযের তাকবীরে-তাহরীমা ছাড়া বাদ বাকি স্থানে রফে ইয়াদাইন পরিত্যাগ করার যে আমল করছেন, সেটিও সুন্নাহ। আলী বিন আবি ত্বালেব রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মধ্যে কেউই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহ পরিত্যাগকারী ছিলেন না, তাও আবার নামাযের মতো সবচেয়ে বড় ইবাদতের ক্ষেত্রে। মুসনাদে ইমাম আবু হানিফা রহঃ কিতাবের ৯৭ নং হাদিসের অনুবাদ তুলে ধরা হলো” হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা বলেন,একবার হযরত ইমাম আবু হানিফা রঃ ও ইমাম আওযাঈ রঃ পবিত্র মক্কায় গমের স্তুপের নিকট একত্র হলেন, ইমাম আওযাঈ ইমাম আবু হানিফা রঃকে বললেন,তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা নামাজে রুকু থেকে উঠার সময় হাত উঠাওনা।হযরত আবু হানিফা রঃ বললেন,এর কারণ হলো এই যে,রাসুলুল্লাহ সাঃ হতে এই বিষয়ে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায়নি।ইমাম আওযাঈ বলেন কেন সহীহ হাদিস থাকবেনা।আমার নিকট ইমাম যুহুরী বর্ণনা করেছেন,তিনি হযরত সালিম থেকে,তিনি তার পিতা হযরত আব্দল্টলাহ ইবনে উমর থেকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়েত করেন যে,তিনি যখন নামাজ শুরু করতেনও রুকু থেকে উঠতেন তখন হাত উঠাতেন।তখন ইমাম আবু হানিফা রঃ তাকে বললেন আমার নিকট হযরত হাম্মাদ রাওয়ায়েত করেন তিনি হযরত ইব্রাহিম নখঈ থেকে তিনি হযরত আলকামা ও হযরত আসওয়াদ থেকে তারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্জুদ রাঃ থেকে রাওয়ায়েত করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু নামায শুরু করার সময় হাত উঠাতেন।এছাড়া দ্বিতীয়বার এরূপ কিছু করতেননা।তখন ইমাম আওযাঈ বললেন,আমি তোমার নিকট ইমাম যুহুরী থেকে,তিনি হযরত সালিম থেকে,তিনি তার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে [উর্ধতনদের হাদিস বেশি গ্রহন যোগ্য]এবং তোমরা বলছ আমার নিকট ইমাম হাম্মাদ হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি ইব্রাহিম থেকে[অর্থাৎ তারা পূর্বোক্তদের ন্যায় সৌভাগ্য লাভ করেননি।] তখন হযরত ইমাম আবু হানিফা রঃ এর [তাদের ধারনার] বিরোধিতা করে বললেন যে,হাদিসের প্রাধান্য বর্ণনাকারীর ইলমে ফিকহর দ্বারা হয়ে থাকেেউর্ধতন হওয়া বা মর্যাদার দ্বারা নয়।হাম্মাদ জুহুরী থেকে ইলমে ফিকাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী,ইব্রাহিম নখয়ী সালিম থেকে ফিকাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী এবং হযরত আলকামা রাঃ হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে কম জ্ঞানী ছিলেননা।[আদবের কারণে অধিক জ্ঞানী বলেননি]যদি হযরত ইবনে উমর রাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহব্বতের সৌভাগ্য লাভ করে থাকে তবে হযরত আলকামা রাঃঅন্য ফজিলত লাভে ধন্য হয়েছেন।তখন ইমাম আওজাঈ নিশ্চুপ হয়ে যান। নামাযে সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে রফে ইয়াদাইন ‘করা’ এবং ‘না করা’ -দুটোই সুন্নাহ; উভয় পক্ষই সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করছেন এব্যাপারে চমৎকার কথা বলেছেন ইমাম ইবনে হাযাম (জ: ৩৮৪ হি: – মৃ: ৪৫৬ হি:) রহ. তাঁর ‘আল-মুহাল্লা’ কিতাবে। তিনি বলেছেন-فلما صح أنه عليه السلام كان يرفع في كل خفض ورفع بعد تكبيرة الاحرام ولا يرفع، كان كل ذلك مباحا لا فرضا، وكان لنا أن نصلى كذلك، فان رفعنا صلينا كما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى، وان لم نرفع فقد صلينا كما كان عليه السلام يصلى –
“যখন সহিহ সূত্রে একথা প্রমাণিত হল যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ (নামাযের মধ্যে) তাকবীরে তাহরীমার পর প্রত্যেক ঝোঁকা ও ওঠার স্থানে (দু হাত) উত্তলন করতেন এবং করতেন না, কাজেই (করা, না করার) ওই প্রত্যেকটি আমলই মুবাহ (অনুমোদিত); (কোনো) ফরয (আমল) নয়। আমাদের জন্য ওভাবে নামায পড়তে পারি। আমরা যদি রফে-ইয়াদাইন করি, তাহলেও আমরা ওইভাবে নামায পড়লাম যেভাবে রাসুলুল্লাহ ﷺ নামায পড়েছেন। আবার আমরা যদি রফে-ইয়াদাইন না করি, তাহলেও আমরা ওইভাবেই নামায পড়লাম যেভাবে রাসুলুল্লাহ ﷺ নামায পড়েছেন”। [আল-মুহাল্লা, ইমাম ইবনে হাযাম- ৩/২৩৫] তবে উম্মত যখন এই সমস্ত আমল নিয়ে দেশও সমাজে তর্ক বিতর্ক করে অশান্তি সৃষ্টি করবে তখন কিন্ত এটা গোনাহের একটা উৎস হয়ে দাড়াবে এবং ফেৎনার অন্তভূক্ত হয়ে যাবে।এই সমস্ত হাদিসের উপরে আমলের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন এভাবে করা যায় যেখানে বা যে এলাকায় এর উপর আমলের প্রচলন আছে নিয়ম জানলে করা আর যেখানে প্রচলন নেই সেখানে নিয়ম জানলেও না করা তাহলে ফেৎনা হবার আর কোন অবকাশ থাকবেনা।ফেৎনার ব্যাপারে আল্লাহ বান্দাহকে কঠিন ভাবে সতর্ক করেছেন।এই উম্মতের কিছু দায়ী তারা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বিতর্কের ডাক দিয়ে উম্মতকে বিভাজন করতে চাই এবং এসব নিয়ে বিতর্ক করতে করতে উম্মত বহু ভাগে বিভক্ত হয়েও পড়েছে।আর এগুলোও ঐ সমস্ত ফেৎনার অংশ যেগগুলো আল্লাহ কোরআনে সতর্ক করেছেন।পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না।’ ﻭَﻻَ ﺗَﻌْﺜَﻮْْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣُﻔْﺴِﺪِﻳْﻨَــ ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ তথা দাংগা হাংগামা করে বেড়িও না।‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।
’ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻦْ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﻻَ ﺗَﺒْﻎِ ﺍﻟْﻔَﺴَﺎﺩَ ﻓِﻰْ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻔْﺴِﺪِﻳْﻦَ
‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না।’ মহান আল্লাহ ফিত্না সম্পর্কে ইরশাদ করেন
: ﻭَﺻَﺪٌّ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴْﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻛُﻔْﺮٌ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﻭَﺇِﺧْﺮَﺍﺝُ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَِﺘْﻠِــ ‘আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞِ ـ ‘আর ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ উপরোক্ত আয়াতসমূহে ফিতনা-ফাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সালাত বা নামাজে ফাতেহার পর ক্বেরাত কতটুকু দীর্ঘ্য হবেঃ হযরত আবূ মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি অমুকের কারণে ফজরের জামাতে শরীক হই না। সে নামায (খুব) দীর্ঘ করে! আবূ মাসউদ বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেদিন যতটা নারাজ হতে দেখেছি, নসীহত করার সময় এমন নারাজ হতে আর কখনও দেখিনি। অতপর নবীজী বললেন
- يَا أَيّهَا النّاسُ إِنّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأَيّكُمْ أَمّ النّاسَ فَلْيُوجِز، فَإِنّ مِنْ وَرَائِهِ الْكَبِيرَ وَالضّعِيفَ وَذَا الْحَاجَةِ.
লোকসকল, তোমাদের কেউ কেউ এমন রয়েছে, যে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। তোমাদের যে কেউই ইমামতি করবে, তার কর্তব্য হচ্ছে, সে নামায সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা তার পিছে বৃদ্ধ, দুর্বল ও প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তিও থাকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৬৬; সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০২, ৭০৪) অন্য হাদীসে রয়েছে-
إِذَا أَمّ أَحَدُكُمُ النّاسَ فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنّ فِيهِمُ الصّغِيرَ، وَالْكَبِيرَ، وَالضّعِيفَ، وَالْمَرِيضَ، فَإِذَا صَلّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاء.
যে ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করবে সে যেন নামায সংক্ষিপ্ত করে। আর যখন একাকী নামায পড়বে তখন যত ইচ্ছা নামায দীর্ঘ করুক। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০৩) রাসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বড় বড় সুরা দিয়ে সাহাবীদের নামাজের ইমামতি করেছেন এমন অনেক হাদিস পাওয়া যায়,কোন ওয়াক্তে কোন সুরা দিয়ে নামাজ পড়েছেন তার ও অনেক বর্ণনা হাদিস শরীফে পাওয়া যায়।দয়ার নবী মায়ার নবী উম্মতের প্রতি বুকভরা দরদ নিয়ে বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউই ইমামতি করবে, তার কর্তব্য হচ্ছে, সে নামায সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা তার পিছে বৃদ্ধ, দুর্বল ও প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তিও থাকে।ফজরের নামাজের ক্বেরাতটা যৎসামান্য একটু বড় করে তেলোয়াত করা এবং অন্যান্য নামাজগুলো সংক্ষিপ্ত করা।তবে স্বরন রাখতে হবে সব চাইতে ছোট তিন আয়াতের সমান বড় একটি আয়াত তেলোয়াত করলেও নামাজ হয়ে যাবে। হানাফী মাযহাবের তৃতীয় ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানী রাহ. (১৮৯ হিজরী) ‘কিতাবুল আছল’-এ নামাযে কেরাতের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা শুরুই করেছেন ঐ হাদীস দিয়ে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من أمّ قَوْمَا فليصَلِّ بِهِمْ صَلَاةَ أَضْعَفِهِمْ، فَإِنّ فِيهِمُ الْمَرِيضَ وَالضّعِيفَ والْكَبِيرَ وَذَا الْحَاجَةِ.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোনো জামাতের ইমামতি করবে সে উপস্থিত সবচে দুর্বল মুসল্লীর প্রতি খেয়াল রেখে নামায আদায় করবে। কেননা তাদের কেউ অসুস্থ থাকতে পারে। কোনো শিশু, কোনো বৃদ্ধ, কোনো প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তি (অর্থাৎ কোনো তাড়া থাকার দরুন যার জলদি জলদি নামায থেকে ফারেগ হওয়া প্রয়োজন) এমন কেউ সেখানে থাকতে পারে। -কিতাবুল আছল, খ. ১ পৃ. ১৩৭; কিতাবুল আছার, নুসখায়ে ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. পৃষ্ঠা ৩৮; কিতাবুল আছার, নুসখায়ে ইমাম আবূ ইউসুফ রাহ. পৃষ্ঠা ২৭ এই হাদীসটি উল্লেখ করে ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. লিখেন, নামাযে সূরা ফাতিহা তো পড়তেই হবে। সূরা ফাতিহার পর ফজরের দুই রাকাতে চল্লিশ আয়াত পড়বে। যোহরের প্রথম দুই রাকাতে (মোটামুটি) এ পরিমাণ কিংবা এরচে কিছু কম পড়বে।
(فكم يَقْرَأُ فِي الرّكْعَتَيْنِ مِنَ الظّهْرِ؟ قاَلَ : يقرأ بنحو من ذلك أودونه.)
আছর এবং ইশার প্রথম দুই রাকাতে বিশ আয়াত পড়বে। আর মাগরিবের প্রথম দুই রাকাতের প্রতি রাকাতে ছোট কোনো সূরা পড়বে- পাঁচ-ছয় আয়াতের। -কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানী, খ. ১ পৃ. ১৩৭ باب ماجاء في القيام في الفريضة، ناشر : دار ابن حزم بيروت ১৪৩৩هـ উল্লেখিত মাসআলায় আমাদের তিন ইমামই (ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.) একমত। কেননা কিতাবুল আছলে এক্ষেত্রে কোনো ইখতেলাফ উল্লেখ করা হয়নি। ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ‘আল জামিউস সাগীর’-এ ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন- وَيقْرَأ فِي الْحَضَر فِي الْفجْر فِي الرّكْعَتَيْنِ بِأَرْبَعِينَ أَو خمسين (أو ستين) آيَة سوى فَاتِحَة الْكتاب، وَكَذَلِكَ فِي الظّهْر، وَالْعصر وَالْعشَاء سَوَاء، وَفِي الْمغرب دون ذَلِك. অর্থাৎ মুকীম অবস্থায় ফজরের উভয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ব্যতীত মোট চল্লিশ অথবা পঞ্চাশ (অথবা ষাট) আয়াত পড়বে। যোহরেও সে পরিমাণ পড়বে। আর আছর ও ইশার কেরাত বরাবর। আর মাগরিবের কেরাত এরচেয়ে কম। (আল জামিউস সাগীর, পৃষ্ঠা ৭২।বর্তমান পরিস্থিতি এবং অবস্থা এমন যে,আমরা মোক্তাদীদের সমালোচনা , ঈমানী দুর্বলতা ,বিভিন্ন কারনে ইমামগণ যেন মজলুমে পরিণত হয়েছে যার কারণে নামাজের ভিতরের সুরা ক্বেরাত তাছবিহ সমুহ ছোট হতে হতে একেবারে ছোট হয়ে গেছে।দলিল হিসাবে কি সুন্দর করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ সংক্ষেপের হাদিস বলতে থাকে।সংক্ষেপ বলতে কতটুকু তা উপরের বর্ণনা হতে নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে।
২য় বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ
নামাজ ফরজ ইবাদত। এ ইবাদতের ভেতরে এবং বাইরে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো যথাযথভাবে আদায় করাও ফরজ। এর মধ্যে দুই রাকাআত পর পর বৈঠকে বসা। নামাজে দুই রাকাআত পর পর বসাকে তাশাহহুদ বলা হয়। প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তে হয়। তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। কিন্তু অনেকের তাশাহহুদ পড়া সহিহ নয়। আবার অনেকেরই তাশাহহুদের অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে জানা নেই।তাশাহহুদ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ অর্থ : ‘সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।তাশাহহুদ পড়ার বিশেষ ফজিলত
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে নামাজ পড়তাম; তখন বলতাম, ‘আসসালামু আলা জিবরিলা ওয়া মিকালা এবং আসসালামু আলা ফুলান ওয়া ফুলান’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন- আল্লাহ নিজেই তো সালাম, তাই যখন তোমরা কেউ সালাত/নামাজ আদায় করবে, তখন সে যেন বলে- التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ কেননা, যখন তোমরা এটি বলবে তখন আসমান ও জমিনে থাকা আল্লাহর সব নেক বান্দার কাছে তা (শান্তি) পৌঁছে যাবে। আর এর সঙ্গে তোমরা (তাওহিদের কালেমার সাক্ষ্য) أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ এটিও পড়বে।২য় বৈঠকে তাশাহুদের পর ভূলে কতটুকু পরিমান দরূদ পড়ল সহু সিজদাহ দিতে হবে
চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদের পর ভুলে দরূদ বা দুআয়ে মাসুরা মিলিয়ে ফেললে সাহু সেজদা আবশ্যক হবে। عن الشعبي ، قال : من زاد في الركعتين الأوليين على التشهد فعليه سجدتا السه (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، ما يقال بعد التشهد مما رخص فيه، رقم الحديث-৩০৩৯ হযরত শাবী রহঃ বলেন-যে ব্যক্তি প্রথম দুই রাকাতের বৈঠকে তাশাহুদের পর কোন কিছু পড়ে, তাহলে তার উপর দুই সেজদা দেয়া আবশ্যক। তথা সেজদায়ে সাহু। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৩৯} فى الدر المختار– ولا يصلي على النبي صلى الله عليه وسلم في القعدة الأولى في الأربع قبل الظهر والجمعة وبعدها ) ولو صلى ناسيا فعليه السهو (الفتاوى الشامية، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل-2/456، الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الثانى عشر فى سجود السهو-1/127، مراقى الفلاح، باب سجود السهو-৩৭৬ এখন প্রশ্ন হল তাশাহুদের পর কতটুকু দরুদ শরীফ পড়লে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হয়? শুরু করলেই? না পুরোটা পড়লে? এ ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কিরাম বলেন-তাশাহুদের পর শুধুমাত্র ৪২ হরফ পরিমাণ পড়লে তথা “আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলী মুহাম্মদ” পর্যন্ত পড়লে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হয়ে যায়। {আহসানুল ফাতওয়া-৪/29-৩0} فى الفتاوى التاتارخانية- واذا شرع فى الصلاة على النبى عليه السلام بعد الفراغ من التشهد فى الركعة الثانية ناسيا، ثم تذكر فقام إلى الثالثة، قال السيد الإمام أبو شجاع والقاضى الإمام الماتريدى عليه سجود السهو، كما هو جواب مشايخنا، غير ان السيد الإمام قال- اذا قال “اللهم صل على محمد” وجب،—- وقال القاضى الإمام- لا يجب مالم يقل- “وعلى آل محمد” (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الصلاة، باب سجود السهو، رقم المسئالة-- الفتاوى الشامية، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل-সালাতের বৈঠকে আঙুল নাড়ানো সম্পর্কেঃ
সালাতের বৈঠকে আঙুল নাড়ানো সম্পর্কে যত হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে কেবল আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করার কথা আছে, এর কোনোটিতে আঙ্গুল নাড়ানোর কথা নেই। সহীহ মুসলিম শরীফের ১৩৩৬ নং হাদীস এবং সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০ নং হাদীসে এসেছে, أَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ ‘ শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেছেন’ সহীহ মুসলিম এর ১৩৩৭ হাদীস নং এ এসেছে, وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ ‘আর ডান হাতে বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করেছেন’। হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. বর্ণিত হাদীসে এসেছে- كان النبي صلى الله عليه وسلم يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها রাসূলুল্লাহ ﷺ দুআ করার (অর্থাৎ, তাশাহুদ পড়ার) সময়ে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। আর তিনি এসময়ে আঙ্গুল নাড়াতেন না। (আবু দাউদ-৯৮৯ //সুনানে নাসায়ী-ঈ কুবরা ১১৯৩// বাইহাকী ২/১৩১) আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. বর্ণিত হাদীসটির স্তর সহীহ। ইমাম নববী রহ. বলেন, إسناده صحيح এর সনদ সহীহ। (আল মাজমু ৩/৪৫৪)। শায়েখ হায়সামী রহ. বলেন, সনদের রাবীগণ সিক্বা (মাযমাউজ জাওয়ায়িদ ২/১৪৩)। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান (তাখরীজে মিশকাতুল মাসাবীহ ১/৪১১)। মোটকথা, সহীহ হাদীসের বর্ণনা মতে প্রায় বিশটি বর্ণনা রয়েছে, আঙুল নাড়ানো নিয়ে৷ সকল হাদীসেই আঙুল দ্বারা ইশারার কথা বলা হয়েছে৷ বারবার নাড়ানো বা অনবরত নাড়ানোর কথা কোনো শক্ত এবং সহীহ বর্ণনায় সেই৷ তাই তাশাহহুদের সময়ে আঙুল দ্বারা ইশারা করা সুন্নাহ তবে ইশারা করতে গিয়ে আঙ্গুল নাড়াচাড়া বা বারবার নাড়ানো বৈধ পন্থা নয়৷আঙুল বারবার নাড়ানোর বিষয় খন্ডনঃ
উপরোক্ত নিয়মের বিপরীতে কেউ কেউ শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে থাকেন। তারা দলীল হিসেবে মূলত নাসাঈ রহ. বর্ণিত এ হাদীস পেশ করে থাকেন– ﺛُﻢَّ ﻗَﺒَﺾَ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻَﺎﺑِﻌِﻪِ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺣَﻠْﻘَﺔً، ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺇِﺻْﺒَﻌَﻪُ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻬَﺎ রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’টি আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্ত তৈরি করলেন আর আঙ্গুল উঠালেন। আমি দেখেছি তিনি সেটা নাড়াচাড়া করছেন; তা দ্বারা দুয়া করছেন। (সুনানে নাসাঈ শরীফ- ৮৯২)হাদীসটি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
এই হাদীসের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে খুযাইমা রহ. সহীহ ইবনে খুযাইমা গ্রন্থে ৭১৪ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন- ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺧْﺒَﺎﺭِ « ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ » ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺨَﺒَﺮِﺯَﺍﺋِﺪٌ ﺫِﻛْﺮُﻩُ শুধু এই হাদীসটি ব্যতীত কোন হাদীসের মধ্যে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি নেই। এটা এ হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন, يحتمل أن يكون المراد بالتحريك الإشارة بها لا تكرير تحريكها حتى لا يعارض حديث ابن الزبير আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়। (সুনানে বায়হাকী কুবরা ২৬১৫) শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৭০ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন- ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺩﻭﻥ ﻗﻮﻟﻪ : ‘ﻓﺮﺃﻳﺘﻪ ﻳﺤﺮﻛﻬﺎ ﻳﺪﻋﻮ ﺑﻬﺎ’ ﻓﻬﻮ ﺷﺎﺫ ﺍﻧﻔﺮﺩ ﺑﻪ ﺯﺍﺋﺪﺓ – ﻭﻫﻮ ﺍﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ ওয়াইল বিন হুজর রাযি.-এর হাদীসটি সহীহ। তবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি শাজ (বিরল)। কেননা, আছেম বিন কুলাইবের ছাত্রদের মধ্যে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ এই অংশটি বর্ণনা করেন নি। অতএব, বেশি সংখ্যক সহীহ হাদীসে আঙুল দ্বারা শুধু ইশারা কথা বলা হয়েছে। তাই, ফতোয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি হাদীস থেকেই আমল করা সুন্নাহ হিসেবে ধর্তব্য হবে৷ আল্লামা ইবনে খুযাইমা (রহ.), ইমাম বায়হাকী (রহ.) এবং শায়খ শুআইব আরনাউতের মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, এ হাদীসে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি সহীহ নয়। অথবা ওই বাক্য দ্বারা একবার নেড়ে ইশারা করা উদ্দেশ্য; বারবার নাড়াচাড়া করা উদ্দেশ্য নয়।আঙ্গুল কখন ইশারা করতে হয়
তাশাহহুদের সময়ে ইশারা ইশারা কখন করতে হবে এ ব্যাপারে আল্লামা নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: . ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﺈِﺷَﺎﺭَﺓُ ﺑِﺎﻟْﻤُﺴَﺒِّﺤَﺔِ ﻓَﻤُﺴْﺘَﺤَﺒَّﺔٌ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ ﻟِﻠْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺤَﺔِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻨَﺎ ﻳُﺸِﻴﺮُ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﻮْﻟِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓِ ﻭَﻳُﺸِﻴﺮُ ﺑِﻤُﺴَﺒِّﺤَﺔِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻟَﺎ ﻏَﻴْﺮ “সহীহ হাদীসের কারণে আমাদের নিকটে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা মুস্তাহাব। আমাদের ইমামগণ বলেছেন: তাশাহহুদের মধ্যে ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময়ে শুধু ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে; অন্য কোন আঙ্গুল দ্বারা নয়”। (আল-মিনহায শরহুল মুসলিম: ১/২১৬, হা/২৮১৭ এর ব্যাখ্যায়, ‘বৈঠক এবং রানের ওপর হাত রাখার পদ্ধতি’ অধ্যায়) .উপরোক্ত হাদীস এবং আল্লামা নববী রহ.-এর ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হলো যে, তাশাহহুদ পাঠের সময়ে ﻟَﺎﺇﻟَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ الله বলার মুহূর্তে ইশারা করবে। সালাম ফিরানোর পূর্বে তাশাহুদ দরূদ এবং দোয়া মাসুরাঃ اللَّهِ وَرَحْمَةُ النَّبِيُّ أَيُّهَا عَلَيْكَ ، السَّلَامُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالصَّلَوَاتُ لِلَّهِ حِيَّاتُ التَّ اللَّهُ إِلَّا إِلَهَ لَا أَنْ أَشْهَدُ ، الصَّالِحِينَ اللَّهِ عِبَادِ عَلَى وَ عَلَيْنَا السَّلَامُ ، وَبَرَكَاتُهُ وَرَسُولُهُ ا عَبْدُهُ مُحَمَّدً أَنَّ وَأَشْهَدُ অর্থ : ‘সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। ، إِبْرَاهِيمَ ى عَلَ صَلَّيتَ كَمَا ،وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ،اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ ، مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ىاللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَ ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ،وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ، إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ عَلَى إِبْرَاهِيمَ كَمَا بَارَكْتَ অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের ওপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত للَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِر لِي مغْفِرَةً مِن عِنْدِا كَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفور الرَّحِيم অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার উপর অত্যধিক অত্যাচার করেছি এবং তুমি ব্যতিত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)নফল বা একাকী সালাতের জন্য কিছু কবুলিয়াত দোয়া
তাশাহুদ এবং দরূদ শরীফের পর দোয়া মাছুরা পড়ার আগে ইসমে আযম পড়ে দোয়া করা, ইসমে আযমের গুরত্ব হচ্ছে,এই নামে বা এই নামের ওসীলা দিয়ে আল্লাহকে ডাকলে বা তাঁর কাছে দুয়া করলে আল্লাহ সবচাইতে বেশি খুশি হন, এবং বান্দার দুয়া কবুল করে নেন।নবী ﷺ এক ব্যক্তিকে নামাযে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে (দুয়া মাসুরা পড়ার সময়) এই দুয়া পড়তে শুনলেন।নবী ﷺ সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা কি জানো সে কিসের দ্বারা দুয়া করেছে? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন।তিনি বললেন, সেই মহান সত্ত্বার কসম যার হাতে আঁমার প্রান, নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর “ইসমে আযম” বা সুমহান নামের উসীলায় দুয়া করেছে। “ইসমে আযমের” উসীলায় দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন, আর কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। [আবু দাউদ,নাসায়ী,আহমাদ,বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ,ত্বাবারানী ও ইবনে মান্দাহ “আত-তাওহীদ” গ্রন্থে (৪৪/২, ৬৭/১, ৭০/১-২)] ★একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে। وَالْأَرْضِ السَّمَوَاتِ بَدِيعَ يَا الْمَنَّانُ، كَ،لَشَرِيكَ لاَ وَحْدَكَ أَنْتَ إِلاَّ إِلَهَ لَا الْحَمْدَ لَكَ بِأَنَّ أَسْأَلُكَ إِنِّي اللَّهُمَّ النَّارِ مِنَ بِكَ وَأَعُوذُ الْجَنَّةَ أَسْأَلُكَ إِنِّي قَيُّومُ يَا حَيُّ يَا وَالْإِكرَامِ، الْجَلاَلِ ذَا يَا অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আঁপনার কাছে প্রার্থনা করি কারন,সকল প্রশংসা আপনার জন্য,কেবলমাত্র আঁপনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই,আঁপনার কোনো শরীক নেই,আঁপনি সীমাহীন অনুগ্রহকারী। হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্ত্বার ধারক! আমি আঁপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।সালাত বা নামাজে খুশু খুজুর গুরুত্ব
একাগ্রতা বা খুশু’ খুজু’র সাথে নামাজ পড়ার ব্যাপারে কোরআনে কারীমে ও হাদীস শরীফে অনেক জোর তাকীদ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, خَاشِعُونَ صَلَاتِهِمْ فِي هُمْ الَّذِينَ الْمُؤْمِنُونَ أَفْلَحَ قَدْ. অর্থাৎ, মুমিনগণ সফল। যারা নিজেদের নামাজে একাগ্র। (সূরা মুমিনূন: ১ ও ২) সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য উচিৎ একাগ্রতা ও খুশু’ খুজু’র সাথে নামাজ আদায় করা। তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করা উচিৎ নয়। রাসূল স. বলেছেন, ان تعبد الله كانك تراه فانك ان لا تراه فانه يراك. অর্থাৎ তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও,তাহলে এ ধারণা করবে যে,তিনি তোমাকে দেখছেন! ( ইবনে মাযা, হাদীস নং ৬৩) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুল (সাঃ) বলেন- মহান আল্লাহ্ ঘোষণা করেন, আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মধ্যে আধা-আধি ভাগ করেছি এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চায় তা আমি তাঁকে দিয়ে থাকি, যখন বান্দা বলে- “আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন”। -সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহান সমুহের প্রতিপালকের। তখন আল্লাহ্ জবাবে বলেন- “আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল”। যখন বান্দা বলে- “আর রাহমানীর রাহীম”। -তুমি অতি দয়ালু ও করুণাময়। তখন আল্লাহ্ জবাবে বলেন- “আমার বান্দা আমার গুণাগুণ বর্ণনা করল”। যখন বান্দা বলে- “মালিকি ইয়াও মিদ্দিন”। -আপনি বিচার দিনের মালিক। তখন আল্লাহ্ জবাবে বলেন- “আমার বান্দা আমার মহত্ত্ব বর্ণনা করল”/ “আমার বান্দা আমার উপর সবকিছু সমর্পণ করল”। যখন বান্দা বলে- “ইয়াকা নাবুদু ওইয়াকা নাস্তায়ীন”। -আমরা কেবল আপনারই গোলামী করি এবং আপনারই কাছে প্রার্থনা করি”। তখন আল্লাহ্ জবাবে বলেন- “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার কথা এবং সে যা চাইবে আমি তাকে তাই দিব। যখন বান্দা বলে- “ইহদিনাস সিরাতয়াল মুস্তাকিম, সিরাতয়াললাজিনা আন আমতা আলাইহীম, গাইরিল মাগদুবী আলাইহীম অয়ালাদ দোয়াল্লীন”। -আমাকে সহজ-সরল পথ দান করুন, সেই পথ; যে পথে আপনার নিয়ামত; অনুগ্রহ রয়েছে, অভিশপ্ত ও গযবপ্রাপ্তদের পথ নয়। তখন আল্লাহ্ জবাবে বলেন- “এসব আমার বান্দার জন্য বরং সে যা কিছু চাইল তা সবই তার জন্য”। [মুসলিমঃ ১/২৯৬, নাসাঈঃ ১/১১২,১২ ‘মুমিন যখন নামাযে দাড়ায় তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে।’ সহীহ বুখারী, হাদিস ৪১‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাড়ায় তখন সে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলে, যতক্ষণ সে তার জায়নামাযে থাকে।’ সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪২৬ উপরে বর্ণিত কোরআন হাদিসের আলোকে নামাজিদের জন্য চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে।সলাত বা নামাজ কিন্ত গতানুগতিক দায়সারা কোন এবাদত না যে, সপ্তাহে একদিন মসজিদে গেলাম ইমাম সাহেবের অনুস্বরন করে নামাজ পড়ে মসজীদের বাহিরে এসে টুপিটা খুলে পকেটে রেখে বিড়িতে দম মারা শুরু করলাম।আবার খৃষ্টানদের উপাসনার মত না যে, পাদ্রীর দোয়ার সাথে আমিন আমিন করলাম আর সব মাফ হয়ে যাবে এরকম ভ্রান্ত ধারনা মনে নিয়ে মন চাহে জিন্দেগী চলতে লাগলাম।সালাত বা নামাজ পড়ার সময় অবশ্যই নিজের ক্বলবকে আল্লাহর দিকে রুজু করে মনের ভিতর এই কল্পনা নিয়ে আসতেই হবে যে আমি মহান প্রভুর সামনে দাড়িয়ে নামাজ পড়ছি,আমার রব আমার জীবনের শেষ নামাজের পরিক্ষা নিচ্ছেন এবং তিনি আমাকে দেখছেন।নামাজের ভিতরে যেগুলো পাঠ করা হয় সেগুলোর অর্থ বুঝে যিনারা নামাজ আদায় করেন তিনাদের নামাজ তিনাদেরকে প্রশান্তি দান করেন এবং খারাপ কাজ হতে বিরত রাখেন।সালাম ফিরিয়ে নামাজ বা সালাত শেষ করা এবং কিছু মসনুন দোয়ার আমল করা
السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله» আস্সালামু আ'লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (এর পর) ওয়া বারাকাতুহ বলা যায় (আবু দাউদ, বুলগুল মারাম ২৩ পৃঃ) রাসুল (সঃ) প্রত্যেক ফরজ নামাযে সালাম ফিরানোর পর মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসতেন (বুখারী ১ম খন্ড ১১৮ পৃঃ) কখনও ডান কখনও বাম কখনও বা পুরা শরীর মুক্তাদির দিকে ঘুরিয়ে বসতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাঃ নং ৯৪৪) সকল নামাযে সালাম ফিরিয়ে ইমামের মুক্তাদির দিকে ঘুরে বসা দেখুন (মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৮৮৩, ৮৮৬; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৮৮৩, ৮৮৬; সহীহ আল বুখারী আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৯৭; সহীহুল বুখারী তাওঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮৪৫; বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৮০২; বুখারী শরীফ মাওলানা আজিজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৪৮৪) ১) রাসুল (সাঃ) ফরয নামাযে সালাম ফিরেই الله أكبر আল্লাহু আকবার ১ বার উচ্চঃস্বরে বলতেন । ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ঐ তাকবীর শুনে রাসুল (সাঃ) এর নামায শেষ হওয়া বুঝতে পারতাম (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ) ২) তারপর তিনবার নিম্নস্বরে- «أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله، আস তাগফিরুল্লাহ্ (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ) اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»؛ ৩) অতঃপর রাসুল (সাঃ) বলতেন- আল্লাহুম্মা আনঁতাস সালাম, ওয়ামিনঁকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালী ওয়াল ইকরাম । এই তিনটি দু’আ ইমাম সাহেব ক্বিবলামুখী থেকে পড়ে উঠে যেতে পারেন অথবা মুসল্লীদের দিকে ফিরেও বসতে পারেন এবং অন্যান্য মাসনূন দু’আও তাসবীহ পাঠ করতে থাকবেন (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ) বিখ্যাত সাহাবী মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে রাসুল (সাঃ) বললেন- হে মুয়ায! আমি তোমাকে ভালবাসি । সুতরাং আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পরে এ কথাগুলি বলতে কখনই ভুলবে না (আবু দাউদ, আহমাদ, মেশকাত ৮৮ পৃঃ) আল্লাহুম্মা আয়ি’ন্নী আলা যিক্রিকা ওয়া শুক্রিয়া ওয়া হুসনি ইবাদাতিক । অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র করার, তোমার শুকর আদায় করার এবং তোমার উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর । ৫) আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে মওত ছাড়া আর কোন কিছুই জান্নাতে যেতে বাধা দিতে পারবে না । তাবারানীর রেওয়ায়তে আয়াতুল কুরসীর সাথে সুরা ইখলাস পড়ার কথাও আছে (সুবলুস সালাম ১/২০০ পৃঃ) ﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾[البقرة:255 ] আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়ালহাইয়্যুল কাইয়্যুম …ওয়ালা ইয়াদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল আলিইয়্যুল আযীম । অর্থঃ ঐ আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী । তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা পাকড়াও করতে পারে না । আসমান সমুহে এবং যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর জন্য । তাঁর বিনা অনুমতিতে এমন কে আছে যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তিনি তাদের সামনের ও পিছনের সব কিছু জানেন । আর তারা তাঁর জ্ঞানের কোন কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না কিন্তু তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন । তাঁর কুরসী আসমান সমুহ ও জমীনে পরিব্যপ্ত হয়ে আছে । এতদুভয়ের রক্ষনাবেক্ষণ ও দেখাশুনা তাঁকে ক্লান্ত করতে পারে না । তিনি হলেন বহু উচ্চ মর্যাদাবান ও মহান । «سبحان الله، والحمد لله، والله أكبر (ثلاثًا وثلاثين) لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»؛ আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পরে “সুব্হানাল্লাহ” ৩৩ বার, “আলহামদুলিল্লাহ” ৩৩ বার এবং “আল্লাহু আকবার” ৩৪ বার এই পূর্ণ ১০০ বার পড়বে (বুখারী) অথবা উক্ত তিনটি ৩৩ বার করে পড়ে শেষে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ও লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির”; ১ বার পড়ে ১০০ বার পুরা করবে তার সমস্ত গোনাহ মা’ফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ; সুবুলুস সালাম ১/২০০ পৃঃ) রাসুল (সাঃ) সাহাবী মুসলিম তামীমী (রাযিঃ) কে বলেন- তুমি যখন মাগরিব ও ফজরের নামাযের পর সালাম ফিরাবে তখন কারো সাথে কথা বলার আগে নিম্ন লিখিত দু’আটি সাতবার বলবে । আল্লাহুম্মা আজিরনী মিন্নান্নার । অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও । অতঃপর তুমি যদি ঐ দিন বা রাতে মরে যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি সনদ লিখে দেয়া হবে (আবু দাউদ, মেশকাত ২১০ পৃঃ) রাসুল (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা’আতের সাথে পড়ে, অতঃপর সে ওখানেই বসে আল্লাহর যিকর আযকার করতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য উঠে । অতঃপর সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পর দু’রাকাত নামায পড়ে তার জন্য এক পূর্ণাঙ্গ হজ্ব ও উমরার সমান সওয়াব হয় (তিরমি্যী, তাহক্বীকুল মেশকাত ৩০৬ পৃঃ) একদা উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) ফজরের নামাজের পর নামাযের বিছানায় বসে চাশতের সময় পর্যন্ত তাসবীহ তাহলীল করছিলেন । এমন সময় রাসুল (সাঃ) উপস্থিত হয়ে বললেন- আমি চারটি কালিমা তিনবার পাঠ করেছি যার নেকী আজকের দিনের শুরু থেকে তোমার সমস্ত তাসবীহ তাহলীলের নেকির সমান হবে (মুসলিম, মেশকাত ২০০, ২০১ পৃঃ) কালিমা চারটি- সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী ওয়া রিযা নাফসিহী ওয়া যিনাতা আরশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহ ।অর্থঃ আমি প্রশংসা সহকারে আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে, তাঁর নিজের সন্তুষ্টি মত, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমান এবং তাঁর অফুরন্ত বাণী পরিমাণ । সকাল সন্ধ্যায় তাসবীহঃ হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযীম । অর্থঃ আমার জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই । আমি একমাত্র তাঁর উপরই ভরসা করলাম । আর তিনি সুবৃহৎ আরশের মালিক (সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াত) যে ব্যাক্তি প্রতি সকাল সন্ধ্যায় সাতবার আয়াতটি পাঠ করবে দুনিয়া ও আখিরাতের যে বিষয়ই তাকে চিন্তাগ্রস্থ করুক তা তার ব্যাপারে যথেষ্ট হবে (আবু দাউদ, যাদুল মা’আদ ২/৩৭৬ পৃঃ) সাইয়্যিদুল ইসতেগফারঃ আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওআ’দিকা মাসতাত্বা “তু” আঊযুবিকা মিন্ শাররি মা সান’তু আবূ উ লাকা বি নি’মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আন্তা । অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই । তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ । আমি তোমার বান্দা, আর আমি সাধ্যানুযায়ী তোমার ওয়াদা অঙ্গীকারের উপর ঠিক রয়েছি । আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই আমার কৃত কর্মের অনিষ্টতা থেকে । অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর । কারণ তুমি ছাড়া নেই কোন পাপ মোচনকারী । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যদি কেউ উক্ত দু’আটি সন্ধ্যায় পাঠ করে অতপর ঐ রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে । আর যে ব্যক্তি সকাল বেলা পাঠ করে ঐ দিন মৃত্যু বরণ করলে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারী হাদিস নং ৫৩০৬) «لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير» লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারী কালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির । অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও সকল প্রশংসা । আর তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাবান । সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এই বাক্যগুলির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে ব্যক্তি উহা সকালে ১০০ বার পাঠ করবে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে এবং ঐ দিন তার চেয়ে বেশী নেকী অন্য কেউ কামাতে পারবে না । কিন্তু যে ব্যক্তি এর চেয়েও অধিকবার পাঠ করবে । ১০ বার পাঠে একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে । এছাড়াও তার জন্য একশত নেকী বা দশ নেকী লিখা হয় এবং একশত পাপ বা দশটি পাপ মোচন করা হয় এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় । সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে রক্ষিত থাকার ব্যবস্থা হয়ে যায় । অনুরুপ ভাবে সন্ধ্যায়ও (মুসলিম হাদিস নং ৪/২০৭১; মেশকাত হাদিস নং ২/২৩৯৫) রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার “সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” । পাঠ করবে তার গোনাহ সমুহ মাফ করে দেয়া হবে । যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্য হয় (বুখারী, মুসলিম, তাহক্বীকুল মেশকাত ৭১১ পৃঃ); অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই তাসবীহটি ১০০ বার পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম কিছু নিয়ে অন্য কেউ আসতে পারবে না । কিন্তু যে তার মত অথবা তার চেয়ে বেশী পাঠ করবে (বুখারী, মুসলিম, তাহক্বীকুল মেশকাত ৭১১ পৃঃ) কুরআন পড়াঃ “নিশ্চয় ফজরের কুরআন পড়ার সাক্ষ্য দেয়া হবে” (বনী ইসরাঈল আয়াত ৭৮) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, সুরা যিলযাল “ইযাযুল যিলাত” অর্ধেক কুরআন, সুরা ইখলাস “কুলহুয়াল্লাহু আহাদ” কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ এবং সুরা কাফিরুন “কুল ইয়া আইয়্যুলহাল কাফিরুন” কুরআনের চার ভাগের এক ভাগ (বুখারী, তিরমিযী, মেশকাত ১/৬৬৩); অর্থাৎ সুরা যিলযাল দুইবার পড়লে ১ খতম, সুরা ইখলাস তিন বার পড়লে ১ খতম এবং সুরা কাফিরুন ৪ বার পড়লে ১ খতম করে সওয়াব পাওয়া যাবে ইন্শাআল্লাহ্ । রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি সুরা তাকাছুর “আলহাকুমুত তাকাছুর” প্রতিদিন পাঠ করবে সে কুরআনের এক হাজার আয়াত পাঠের সমান সওয়াব পাবে (বাইহাকী, মেশকাত ১/৬৬৯) জুমআঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে সুরা আল কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমুআর মধ্যবর্তী সময় নূরে আলোকিত হয়ে থাকবে (বায়হাকী, মেশকাত ১/৬৬৭ পৃঃ)ফরজ নামাজ শেষে হাত তুলে দোয়া করা প্রসঙ্গ
মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ইসলামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কোরআন ও হাদিসে অতি উদারতা ও অতি রক্ষণশীলতা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, অতি উদারতা ও অতি রক্ষণশীলতার কারণে এ উম্মতের ওপর কখনো কখনো বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর মূল কারণ, ব্যক্তিবিশেষের ভিন্নমত সাধারণ উন্মতের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। যেমন একটি মাসয়ালা হলো ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা। কিছু লোকের অতি রক্ষণশীলতার কারণে এটি মতানৈক্যপূর্ণ মাসয়ালার রূপ ধারণ করেছে। একদিকে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা খুবই প্রয়োজনীয় কাজ মনে করা হচ্ছে, অন্যদিকে এটিকে বিদ'আত ও ঘৃণিত কাজ মনে করা হচ্ছে। অথচ এই দুই অতিরঞ্জিত মতামতের মাঝখানে হলো এ মাসয়ালার আসল সমাধান। অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা যেমন বাধ্যতামূলক নয়, তেমনি এটি বিদ'আতও নয়। বরং এটি একটি মুসতাহসান বা উত্তম কাজ। কেউ যদি স্বেচ্ছায় করে ভালো, না করলে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এটি একটি সুন্নাত আমল। এটিকে বিদ'আত বলার কোনো অবকাশ নেই। ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদিসের ছয়টি নির্ভরযোগ্য কিতাব অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার মাধ্যমে প্রমাণিত। অন্যদিকে দোয়ার সময় হাত তোলার কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই, যাতে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাকে হারাম কিংবা নিষেধ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার নিয়ম চলে আসছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এবং ইমাম আহমেদ (রহ.)-এর মতো অগণিত ফকিহ ও মুহাদ্দিস চলে গেছেন। কোনো একজন ইমামও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি। শুধু ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ও ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) আপত্তি জানিয়েছেন। তথাকথিত আহলে হাদিসের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানীর অনুকরণে বর্তমানে কিছু লা-মাজহাবি আলেম ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত সম্পর্কে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা শরিয়তের যুক্তিতে কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, যাঁরা ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত করাকে বাধ্যতামূলক মনে করতেন, তাঁরাও ভুলের মধ্যে আছেন। জায়েজ কাজকে বাধ্যতামূলক মনে করাও শরিয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। এতে সন্দেহ নেই ফরজ নামাজের শেষে আকিদা বিশুদ্ধ রেখে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করা যাবে। একাকীও মুনাজাত করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই।তবে কেউ পাশে সালাতরত আছে কিনা?দোয়া করার সময় কারো এবাদতের ক্ষতির সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করতে হবে। , যেমন একবার মুসা আঃ দু'আ করেছিলেন,হারুন আঃ সাথে সাথে আমীন বলেছিলেন। যেমন, সূরায় ইউনুসে এসেছে- ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺁﺗَﻴْﺖَ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥَ ﻭَﻣَﻸﻩُ ﺯِﻳﻨَﺔً ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻻً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟِﻴُﻀِﻠُّﻮﺍْ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻠِﻚَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻃْﻤِﺲْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﻭَﺍﺷْﺪُﺩْ ﻋَﻠَﻰ ﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻓَﻼَ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺮَﻭُﺍْ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺍﻷَﻟِﻴﻢَ মূসা বলল, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি ফেরাউনকে এবং তার সর্দারদেরকে পার্থব জীবনের আড়ম্বর দান করেছ, এবং সম্পদ দান করেছ-হে আমার পরওয়ারদেগার, এ জন্যই যে তারা তোমার পথ থেকে বিপথগামী করব! হে আমার পরওয়ারদেগার, তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং তাদের অন্তরগুলোকে কাঠোর করে দাও যাতে করে তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান না আনে যতক্ষণ না বেদনাদায়ক আযাব প্রত্যক্ষ করে নেয়। আল্লাহ তা'আলা এই দু'আর জবাবে বলেন, ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪْ ﺃُﺟِﻴﺒَﺖ ﺩَّﻋْﻮَﺗُﻜُﻤَﺎ ﻓَﺎﺳْﺘَﻘِﻴﻤَﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَّﺒِﻌَﺂﻥِّ ﺳَﺒِﻴﻞَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻻَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ বললেন, তোমাদের দু'জনের দোয়া মঞ্জুর হয়েছে। অতএব তোমরা দুজন অটল থাকো এবং তাদের পথে চলো না যারা অজ্ঞ।(সূরা ইউনুস-৮৮-৮৯ দেখুন এই আয়াতে মুসা আঃ এবং হারুন আঃ এক সাথে দু'আ করেছিলেন। হযরত সালমান ফারসী রাযি. হতে বর্ণিত, ان اللہ حی کریم، یستحی ان یرفع الرجل الیہ یدیہ ان یردھما صِفراً خائِبیْن۔ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালু, দাতা। যখন বান্দা তাঁর সামনে প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে তখন তা শূন্য ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জ্বাবোধ করেন। (জামি’ তিরমিযী, ২/১৯৫) আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবি ইয়াহইয়া রহ. বলেন, رایت عبد اللہ بن الزبیر و رئیٰ رجلا رافعا یدیہ قبل ان یفرغ من صلاتہ، فلما فرغ منھا قال: ان رسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ۔ আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাযি. একজন নামাযীকে দেখলেন, সে নামায শেষ করার আগেই হাত তুলে মুনাজাত করছে। তিনি তাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নামায সমাপ্ত হওয়ার আগে হাত তুলে মুনাজাত করতেন না। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯) হযরত সালমান রাযি. থেকে বর্ণিত, قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم: ما رفع قوم اکفھم الی اللہ عز و جل یسئلونہ شیئا الا کان حقا علی اللہ ان یضع فی ایدیھم الذی سئلوا۔ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কিছু মানুষ হাত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে তখন অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রার্থিত বিষয় দান করেন। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯) হযরত আবূ উমামাহ রাযি. হতে বর্ণিত, قیل لرسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم، ای الدعاء اسمع؟ قال: جوف اللیل الآخر، و دبر الصلوات المکتوبات সাহাবীগণ রাযিয়াল্লাহু তা`আলা আনহুম রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন মুনাজাত বেশি কবূল হয়? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, শেষ রাতের মুনাজাত ও ফরয নামাযের শেষের মুনাজাত। (জামি’ তিরমিযী, ২/১৮৮)মানুষের এবংগবাদী পশুপাখির সমস্যার জন্য হাত তুলে দোয়া করা
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو ضَمْرَةَ، أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ قَالَ حَدَّثَنَا شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَذْكُرُ أَنَّ رَجُلاً، دَخَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ باب كَانَ وُجَاهَ الْمِنْبَرِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ فَاسْتَقْبَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ الْمَوَاشِي وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُغِيثُنَا. قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ فَقَالَ " اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَ الَ أَنَسٌ وَلاَ وَاللَّهِ مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ وَلاَ قَزَعَةً وَلاَ شَيْئًا، وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعٍ مِنْ بَيْتٍ وَلاَ دَارٍ، قَالَ فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ، فَلَمَّا تَوَسَّطَتِ السَّمَاءَ انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ. قَالَ وَاللَّهِ مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سِتًّا، ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ الْبَابِ فِي الْجُمُعَةِ الْمُقْبِلَةِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ، فَاسْتَقْبَلَهُ قَائِمًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ الأَمْوَالُ وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُمْسِكْهَا، قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ " اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ .قَالَ فَانْقَطَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِقَالَ شَرِيكٌ فَسَأَلْتُ أَنَسًا أَهُوَ الرَّجُلُ الأَوَّلُ قَالَ لاَ أَدْرِي আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি জুমু'আর দিন মিম্বারের সোজাসুজি দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বা কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সাল’আ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘর বাড়ী ছিল না। আনাস (রাঃ) বলেন, হঠাৎ সাল’আ পর্বতের পেছন থেকে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। তারপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সুর্য দেখতে পাইনি। তারপর এক ব্যাক্তি পরবর্তী জুমু'আর দিন সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দু’আ করুন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়, টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। আনাস (রাঃ) বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ থেকে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরীক (রহঃ) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কি আগের সে লোক? তিনি বললেন, আমি জানিনা।( সহীহ বুখারী) এখানে একটা জিনিষ লক্ষ্যনীয় সেটা হচ্ছে মানব জীবনের সম্মিলিত সমস্যা ,সম্মিলিত সমস্যার কারনেই কিন্ত সাহাবী নবী সাঃ এর নিকট দোয়া করার জন্য বলেছেন,তিনি হাত তুলে দোয়া করেছেন।বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনে সম্মিলিত সমস্যার শেষ নেই,মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা সবাই জানে,সুতরাং উক্ত হাদিসের রেফারেন্স মতে মানব জীবনের যে কোন সমস্যার জন্য হাত তুলে দোয়া করা যাবে। জামাতে নামাজের শেষে, কিংবা কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে, সকলে একসাথে হাত তুলে দোয়া করাকে কেউ যদি নিয়মিত চর্চা বানিয়ে নেয় এবং এভাবে দোয়া করলে সওয়াব বেশি হবে মনে করে,এবং অন্যভাবে করলে বেশী সওয়াব হবে না বা কবুল হবে না। তাহলে এমন দু'আ অবশ্যই বিদআত হবে। সকলে মিলে একসাথে হাত তুলে দু'আ করার বৈধতা এর ব্যাপারে দলিল হল,উপরে বর্ণিত হাদিস এবং মুসা আঃ ও হারুন আঃ এর একসাথে দু'আ।ফরজ নামাজের সময় সমুহ
প্রতিটি মুমিন মুসলমানের ওপর সময়তো নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ ফরজ হওয়ার একটি শর্ত হলো নামাজের সময় হওয়া। যেখানে নামাজের সময় হয় না ওইখানে নামাজ আদায় ফরজ না বলেও ফতোয়া রয়েছে। আমাদের পবিত্র কোরআন ঘোষণা,فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنْتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
অর্থ : অতপর যখন তোমরা সালাত আদায় করে ফেলবে, তখন আল্লাহকে (সর্বাস্থায়) স্মরণ করবে- দাঁড়িয়ে বসে ও শোওয়া অবস্থায়ও। অতঃপর যখন (শত্রুর দিক থেকে) নিরাপদবোধ করবে, তখন সালাত যথারীতি আদায় করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুসলিমদের এক অবশ্য পালনীয় (ফরজ) কাজ নির্ধারিত সময়ে। (সূরা: আন নিসা, আয়াত: ১০৩)
ইসলামের প্রাক যুগে ঘড়ির ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না সময় নির্ধারণ করার কোনো যন্ত্র। তারা সূর্য চাঁদ ও দিনের আলোর অবস্থা দেখে সময় বুঝে নিতেন। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সূর্য চাঁদ ও দিনের ওপর ভিত্তি করে নামাজের সময় নির্ধারণ করে দিলেন। ঋতুর পরিবর্তন হলে নামাজের সময়ের পরিবর্তনের বিষয়টিও সুন্দর করে বর্ণনা করে দিলেন। আজকের অধুনা পৃথিবীতে নামাজের সময় নির্ধারণ করার যত যন্ত্র আছে, সবগুলো ওই হাদিসের বর্ণনা দ্বারাকে সামনে রেখে তৈরি হলো। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি নামাজের ওয়াক্ত পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের পাতা থেকে সেই সময় জানতে পারি।
ফজরের নামাজের সময়:
সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। ফজরের এই সময়টুকু দুই ভাগে ভাগ করা যায়। শরিয়তের পরিভাষায় প্রথম ভাগকে ‘গালাস’ আর দ্বিতীয় ভাগকে ‘ইসফার’ বলে। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় দ্বিতীয় অংশ তথা ইসফারে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। ফিকাহবিদগণ বলেন- প্রথম ভাগ তথা ‘গালাস’ এর সময় মহিলাদের আর দ্বিতীয় ভাগ তথা ‘ইসফার’ এর পুরুষদের ফজর নামাজ আদায় করা উত্তম। (সহিত বুখারি, হাদিস নং ৫১৪, দুররুল মুখতার ০১/২৬৩, আল বাহরুর রায়েক ০১/২৪৪)ফজরের নামাজের সময়ের হাদিস:
عن أبي بُرزَة رضي الله عنه قال كان النبي صلي الله عليه وسلم يُصَلّْى الصُّبْحَ وأحدُنا يُعْرفُ جَلِيْسَه ويَقْرَأُ فيها مَا بَين السِّتين ألي المائة، رواه البخاري والمسلمঅর্থ : হজরত আবু বারযাহ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজর নামাজ আদায় করতেন; যখন আমাদের একজন তার পাশের লোকটিকে চিনতে পারতো আর এই নামাজে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫১৪।
عن رافع ابن خديج رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : أسفرو بالفجر، فإنه أعظم للأجر، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত রাফি ইবনে খাদিজ রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমরা ফজরের নামাজ ফর্সা (ইসফার) করে আদায় করো, কেননা এর সওয়াব অনেক বেশি। (তিরমিযি ০১/২২)
যোহরের নামাজের সময়:
ঠিক দ্বিপ্রহরের পর সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর যোহরের নামাজের সময় শুরু হয়। প্রত্যেক জিনিসের ছায়ায়ে আছলি তথা মূল ছায়া ব্যতীত ওই জিনিসের দ্বিগুণ ছায়া হওয়া পর্যন্ত যোহরের নামাজের সময় বাকী থাকে। এই সময় নির্ধারণ করার একটি সহজ পদ্ধতি হলো মাটিতে কোনো লাঠি পুঁতে রেখে তার ছায়ার দিকে লক্ষ করা। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিগুণ হবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত যোহরের সময় থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫১১, শরহে বেকায়া ০১/২৮)
যোহরের নামাজের সময়ের হাদিস:
عن أبي بُرزَة رضي الله عنه قال كان النبي صلي الله عليه وسلم يُصَلّْى الصُّبْحَ وأحدُنا يُعْرفُ جَلِيْسَه ويَقْرَأُ فيها مَا بَين السِّتين ألي المائة، رواه البخاري والمسلمঅর্থ : হজরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজের নিয়ম ছিল : গরমের মৌসুমে গরম তীব্র হয়ে হ্রাস পাওয়ার পর যোহরের নামাজ আদায় করতেন। শীত কালে আগে আগে আদায় করতেন। (নাসায়ি শরিফ ০১/৫৮)
عن رافع ابن خديج رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : أسفرو بالفجر، فإنه أعظم للأجر، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাফি রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহুকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, হ্যাঁ, আমি এ সম্পর্কে তোমাকে বলবো। তুমি যোহরের নামাজ আদায় করবে যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়। তারপর ছায়া যখন তোমার দ্বিগুণ হবে তখন আসরের নামাজ আদায় করবে। (মুয়াত্ত মালেক ০৩)
আসরের নামাজের সময়:
যোহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আসরের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের মূল ছায়া বাদ দিয়ে যখন ছায়া দ্বিগুণ হয়, তখনই আসরের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়। অতপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় থাকে। তবে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর আসরের নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, ০১/৫১, দুররুল মুখতার ০১/২৬৪)
আসরের নামাজের সময়ের হাদিস:
عن عبد الله بن رافع أنه سأل أبا هُرَيْرَةَ رَضَي اللهُ عنه عن وَقْتِ الصلاةِ، فَقَالَ اَبُوْ هُرَيرَةَ : أَنا أخْبِرُكَ، صلِّ الظهرَ اذا كان ظلك مثلك، والعصرَ اذا كان ظلُّكَ مِثْلَيْكَ،অর্থ : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাফি রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহুকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহু বলেন, হ্যাঁ, আমি এ সম্পর্কে তোমাকে বলবো। তুমি যোহরের নামাজ আদায় করবে যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়। তারপর ছায়া যখন তোমার দ্বিগুণ হবে তখন আসরের নামাজ আদায় করবে। (মুয়াত্ত মালেক ০৩)
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال : كُنا نُصَلّي العَصْرَ ثُمَّ يَخْرُجُ الإنْسَانُ إلي بَنِي عَمَرِو بْنَ عَوْفِ فَيَجِدُهُمْ يُصلُّوْنَ العصرَ
অর্থ : হজরত আনাস ইবনে মালিক রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আসরের নামাজ আদায় করতাম। নামাজের পর লোকেরা আমর ইবনে আউফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে নামাজ আদায় করা অবস্থায় পেতো। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫২১)
মাগরিবের নামাজের সময়:
সূর্য ডোবার পর থেকে মাগরিবের সময় শুরু। পশ্চিমাকাশে লাল রং দৃষ্টিগোচর হওয়া পর্যন্ত (সোয়া একঘণ্ট পর্যন্ত) সময় বাকি থাকে। মাগরিবের নামাজ বিলম্ব করা মাকরুহ।
মাগরিবের নামাজের সময়ের হাদিস
عن سلمة رضي الله عنه قال : كنا نصلي مع النبي صلى الله عليه و سلم المغرب إذا توارت بالحجاب অর্থ : হজরত সালামা রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সূর্য পর্দার আড়াল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৩৪)رافع بن خديج رضي الله عنه قال : كنا نصلي مع النبي صلى الله عليه و سلم فيَنْصَرِفُ أحدُنا وأنه لَيُبْصْرُ موَاقِعُ نبَلِه
অর্থ : হজরত রাফি ইবনে খাদিজ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাগরিবের নামাজ আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৩২)
এশার নামাজের সময়:
মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পরই এশার নামাজের সময় শুরু হয়। অতপর সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এশার নামাজের সময় বাকি থাকে। তবে রাতের একতৃতীয়াংশ দেরি করে এশার নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। আর বিনা ওযরে অর্ধ রাতের পর এশার নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম ০২/৫২, আহসানুল ফতোয়া ০২/১৩০, আল বাহরুর রায়েক ০১/২৪৬)
এশার নামাজের সময় হাদিস:
- عَنْ أبِيْ هريرة رضي الله عنه قال قال ورسول الله صلي الله عليه وسلم : لوْلاَ أن أشقَّ عَلي أمَّتِيْ لأمَرْتُهُم أي يُؤخِّرُوْ العْشَاءَ إلي ثُلُثِ اللَيْلِ أوْ نِصْفَهُঅর্থ : হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যদি উম্মতের কষ্ট হবে’ আমার মাঝে এই আশঙ্কা না থাকতো, তাহলে আমি অবশ্যই তাদেরকে ইশার নামাজ রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে নির্দেশ দিতাম (তিরমিযি ০১/২৩)
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو - وَهُوَ ابْنُ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ أَبِى طَالِبٍ - قَالَ - سَأَلْنَا جَابِرًا عَنْ وَقْتِ صَلاَةِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ كَانَ يُصَلِّى الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ
অর্থ : হজরত মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাসান ইবনে আলী রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা জাবির রাযিআল্লাহ আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বললেন মধ্যাহ্ন গড়ালেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামাজ আদায় করতেন, সূর্য সতেজ থাকতেই আসরের নামাজ আদায় করতেন, সূর্য অস্ত গেলেই মাগরিবের নামাজ আদায় করতেন, লোক বেশি হলে এশার নামাজ আগে আগে আদায় করতেন আর কম হলে বিলম্বে আদায় করতেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ৫৮, আবু দাউদ শরিফ হাদিস নং ৩৯৭)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদের নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। হাদীস শরীফে এসেছেঃ حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ الأَغَرِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، فَيَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ " . আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাদের মহা মহীয়ান রবব প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? আছে কেউ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো? আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। (বুখারী ) শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তাহাজ্জুদের সময়সীমা ইশার নামাযের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। সুতরাং কাহারো যদি শেষ রাত্রিতে জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার দরুন ইশার নামাজের পড়েই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নেয়,তবে সেও ছওয়াব পাবে,ইনশাআল্লাহ। তবে এর মূল ওয়াক্ত হল, রাতের শেষ প্রহর। শেষ প্রহর বলতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ থেকে ফজর নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্তকে বোঝানো হয়েছে। হ্যাঁ, ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশার নামাযের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তাহাজ্জুদ পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পরিপূর্ণ তাহাজ্জুদের মর্যাদা পেতে হলে রাতের শেষ প্রহরে উঠে এই নামায আদায় করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, اجْعَلُوا آخِرَ صَلاَتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ নামায করবে। (বুখারি ৯৯৮ মুসলিম ৭৫১) জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ خَافَ أَنْ لَا يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ أَوَّلَهُ ، وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُومَ آخِرَهُ فَلْيُوتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ ، فَإِنَّ صَلَاةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُودَةٌ ، وَذَلِكَ أَفْضَلُ যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে না পারার আশংকা করবে, সে যেন শুরু রাতেই বিতির পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি রাতের শেষ ভাগে উঠে (ইবাদত) করার লালসা রাখে, সে যেন রাতের শেষ ভাগেই বিতির সমাধা করে। কারণ, রাতের শেষ ভাগের নামাযে ফেরেশতারা হাজির হন এবং এটিই উত্তম আমল। (মুসলিম ৭৫৫) সকলের মতেই তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয় ফজরের ওয়াক্ত আসলে,অর্থাৎ সুবহে সাদিক হলে। ফজরের আজান এখানে ধর্তব্য নয়,বরং সুবহে সাদিক হওয়াটাই মুল বিষয়। , কিন্তু সুবহে সাদিক নির্ণয় করার ক্ষমতা সবার নেই। পশ্চিমাকাশে লম্বা সাদা আভা দেখা দেয়া হল সুবহে কাযিব। এর কিছুক্ষণ আড়াআড়িভাবে বড় আকারে সাদা আভা প্রকাশিত হওয়া হল সুবহে সাদিক। যার পর ধীরে ধীরে আলো ফুটতে থাকে। এ বিষয়টি একটু সুক্ষ্ম বিষয়। সবার চোখে এ পার্থক্য সহজে প্রতিভাত হওয়া আসলে সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে আবহাওয়াবীদদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গবেষকগণ এ বিষয়ে গবেষণা করে প্রতি বছরই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের টাইম নির্দিষ্ট করে থাকেন। সেই সাথে সুবহে সাদিক তথা কখন ফজর শুরু হয়, কখন সূর্য উঠে এবং সূর্য অস্ত যায়, তা নির্ণিত করে থাকেন। যেহেতু বিষয়টি জ্যোর্তিবিদ্যা, মহাকাশ ও আবহাওয়া বিষয়ক। তাই এসব বিশেষজ্ঞদের মতামত আমরা সাধারণত মেনে চলছি। সেই হিসেবেই ফাউন্ডেশন কর্তৃক সময় নির্ধারণী ক্যালেন্ডার অনুপাতেই আমভাবে আমল করা হয় পুরো বাংলাদেশে। তাই সেটা দেখে তাহাজ্জুদের শেষ ওয়াক্ত নির্ধারন করতে হবে। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে। , حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِاللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، ثُمَّ يُصَلِّي إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ . ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর ফজর সলাতের আযান শুনতে পেলে সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) আদায় করতেন। বুখারী (অধ্যায় : তাহাজ্জুদ, অনুঃ ফাজরের দু’ রাক‘আতে কি পড়বে, হাঃ ১১৬৪), আহমাদ (৬/১৭৭) ‘উরওয়াহ হতে ‘আয়িশাহ সূত্রে। ۔ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَنَصْرُ بْنُ عَاصِمٍ، - وَهَذَا لَفْظُهُ - قَالاَ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، - وَقَالَ نَصْرٌ : عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، وَالأَوْزَاعِيِّ، - عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلاَةِ الْعِشَاءِ إِلَى أَنْ يَنْصَدِعَ الْفَجْرُ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ ثِنْتَيْنِ وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ، وَيَمْكُثُ فِي سُجُودِهِ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ، فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ بِالأُولَى مِنْ صَلاَةِ الْفَجْرِ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ، ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْمُؤَذِّنُ . আব্দুর রহমান ইবন ইবরাহীম (রহঃ)হতে ধারাবাহিকবর্ননা.. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইশার নামাযের পর হতে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যেবর্তী সময়ে এগার রাকাত নামায আদায় করতেন এবং প্রতি দুই রাকাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দুই রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে বিতির পূর্ণ করতেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত দীর্ঘ সময় সিজদাতে অবস্থান করতেন এবং প্রতি দুই রাকাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দুই রাকাতের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে বিতির পূর্ণ করতেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত দীর্ঘ সময় সিজদাতে অবস্থান করতেন যে, তাঁর মাথা উঠাবার পূর্বে তোমরা যে কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করতে পারতে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখুন ফজরের আযান শেষ করতেন, তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হয়ে হাল্কাভাবে দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। পরে মুয়াজ্জিন পুনরায় আসা পর্যন্ত ডান পাশের উপর ভর করে শুয়ে থাকতেন - ( আবু দাউদ ১৩৩৬, দাউদ বুখারী, মুসলিম,নাসাঈ, ইবন মাজা)এশরাকের নামাজের সময়
ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর জগত আলোকিত হয় বলে এ সময় হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ তাকে সালাতুল ইশরাক বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়তেন না বরং একটু সময় নিয়ে আদায় করতেন। এ নফল নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে- - হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত) - হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ; যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি, তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়।’ (আবু দাউদ) - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব) - অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)সালাতুল ইশরাকের সময়
ফজর নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সূর্য উঠার পর এ নামাজ আদায় করতে হয়। কেউ কেউ বলেছেন সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর; আবার কেউ কেউ বলেছেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এ নামাজ পড়তে হয়। আর সূর্য এক বর্শা পরিমাণ (দেড় মিটারের মতো) মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এ নামাজের ওয়াক্ত থাকে। ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ইশরাক নফল নামাজ। এটি অন্যান্য নামাজের মতোই দুই রাকাআত করে আদায় করতে হয়। ইশরাকের নামাজের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা কোনো নিয়ম ও নিয়ত নেই। শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা। আর দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া। ইশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যারও উল্লেখ না থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাআত থেকে শুরু করে আট রাকাআত পর্যন্ত পড়ে থাকে। আবার কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের নামাজ দুই রাকাআত করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত পড়তেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও ঘোষিত ফজিলত পেতে এ নফল নামাজের আমল অব্যাহত রাখা।চাশতের নামাজের সময়
হাদীসে বলা হয়েছে ‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস : ৭৪৮) বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের নামাজ বা সালাতুদ্ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা। অপর এক হাদীসে আছে আল্লাহর রসূল বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিক্র করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।” বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)রাকাত
চাশতের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। এছাড়া চার, আট এবং বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। উম্মেহানী কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী(স:) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে চাশতের সময় ৮ রাকআত নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৩০৯নং)। আয়েশা(রা:) বলেন, মহানবী(স:) ৪ রাকআত চাশতের নামায পড়তেন এবং আল্লাহর তওফীক অনুসারে আরো বেশি পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, ইমা, মিশকাত ১৩১০নং) তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি চাশতের ৪ রাকআত এবং প্রথম নামায (যোহরের) পূর্বে ৪ রাকআত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে” (ত্বাবরানী আওসাত্ব, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩৪৯নং)। আয়েশা(রা:) ৮ রাকআত চাশত পড়তেন আর বলতেন, যদি আমার মা-বাপকেও জীবিত করে দেওয়া হয় তবুও আমি তা ছাড়ব না (মালেক, মুঅত্তা, মিশকাত ১৩১৯নং)। হযরত আবু দারদা(রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল(স:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি চাশতের দু রাকআত নামায পড়বে সে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত হবে না। যে ব্যক্তি চার রাকআত পড়বে সে আবেদগণের তালিকাভুক্ত হবে। যে ব্যক্তি ছয় রাকআত পড়বে তার জন্য ঐ দিনে (আল্লাহ তার অমঙ্গলের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট হবেন। যে ব্যক্তি আট রাকআত পড়বে আল্লাহ তাকে একান্ত অনুগতদের তালিকাভুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি বারো রাকআত পড়বে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি গৃহ্ নির্মাণ করবেন। এমন কোন দিন বা রাত্রি নেই যাতে আল্লাহর কোন অনুগ্রহ নেই; তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা দানস্বরুপ উক্ত অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তাঁর যিক্রে প্রেরণা দান করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কোন বান্দার প্রতিই করেননি।” (ত্বাবারানীর কাবীর, সহিহ তারগিব ৬৭১ নং)ফজিলত
চাশতের নামাজ সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ হযরত আবু যার হতে বর্ণিত, নবী বলেন, “প্রত্যহ্ সকালে তোমাদের প্রত্যেক অস্থি-গ্রন্থির উপর (তরফ থেকে) দাতব্য সদকাহ্ রয়েছে; সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ্ হল সদকাহ্ প্রত্যেক তাহ্মীদ (আলহামদু লিল্লা-হ্ পাঠ) সদকাহ্, প্রত্যেক তাহ্লীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ্ পাঠ) সদকাহ্, প্রত্যেক তকবীর (আল্লা-হু আকবার পাঠ) সদকাহ্, সৎকাজের আদেশকরণ সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধকরণও সদকাহ্। আর এসব থেকে যথেষ্ট হবে চাশতের দুই রাকআত নামায।” (মুসলিম, হাদীস নাম্বার ৭২০) হযরত আবু উমামা কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহ রসূল বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহে থেকে ওযূ করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্রাম বাঁধা হাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার নিবন্ধ গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১৫নং) হযরত বুরাইদাহ্ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ঐ প্রত্যেক গ্রন্থির তরফ থেকে দেয় সদকাহ্ রয়েছে।” সকলে বলল, ‘এত সদকাহ্ দিতে আর কে সক্ষম হবে, হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, “মসজিদ হতে কফ (ইত্যাদি নোংরা) দূর করা, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা-পাথর প্রভৃতি) দূর করা এক একটা সদকাহ্। যদি তাতে সক্ষম না হও তবে দুই রাকআত চাশতের নামায তোমার সে প্রয়োজন পূর্ণ করবে।” (আহ্মদ,ও শব্দগুলি তাঁরই, আবু দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ্, ইবনে হিব্বান, সহীহ তারগীব হাদীস নাম্বার ৬৬১) হযরত আব্দুল্লাহ বিন আম্র বিন আস বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল এক যোদ্ধাবাহিনী প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধ সফরে তারা বহু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ ক’রে খুব শীঘ্রই ফিরে আসে। লোকেরা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তিতা, লব্ধ সম্পদের আধিক্য এবং ফিরে আসার শীঘ্রতা নিয়ে সবিময় বিভিন্ন আলোচনা করতে লাগল। তা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওদের চেয়ে অধিকতর লব্ধ সম্পদ এবং ওদের চেয়ে শীঘ্রতর ফিরে আসার কথার সন্ধান বলে দেব না? যে ব্যক্তি সকালে ওযু করে চাশতের নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় সে ব্যক্তি ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে, ওদের চেয়ে অধিকতর সম্পদ লাভ করে এবং ওদের চেয়ে অধিকতর শীঘ্র ঘরে ফিরে আসে।” (আহ্মদ, ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব হাদীস নাম্বার ৬৬৩) হযরত উক্ববাহ্ বিন আমের জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রসূল বলেছেন, “আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিনের প্রথমাংশে তুমি আমার জন্য চার রাকআত নামায পড়তে অক্ষম হ্য়ো না, আমি তার প্রতিদানে তোমার দিনের শেষাংশের জন্য যথেষ্ট হ্ব।” (আহ্মদ, আবু য়্যালা, সহীহ তারগীব ৬৬৬ নং)আওয়াবীন নামাজের সময়
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মাগরিবের ফরয এবং সুন্নাতের পর কমপক্ষে ছয় রাকআত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকআত নফল নামাজকে আওয়াবীনের নামাজ বলা হয়। হাদিসে এই ছয় রাকাত আওয়াবীনের ফযিলতের ১২ বছরের ইবাদত করার সওয়াব অর্জিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও আরো ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ الْعُكْلِيُّ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ أَبِي خَثْعَمٍ الْيَمَامِيُّ، أَنْبَأَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً " . আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাকআত নফল সালাত (নামায/নামাজ) পড়লো এবং তার মাঝখানে কোন মন্দ কথা বলেনি, তাকে বারো বছরের ইবাদাতের সম-পরিমাণ সওয়াব দান করা হলো। (ইবনে মাজা ১১৬৭, তিরমিজি ৯৮ নং পৃষ্ঠা)
হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যাক্তি মাগরীবের পর ৬ রাকাত আওয়াবীনের নামাজ পড়বে,তাহলে তার গুনাহ সমুহ মাফ করে দেওয়া হবে,যদিও তার গুনাহ সাগরের ফেনা সমপরিমাণ হয়। ( ইবনে মাজা ৮১ পৃষ্ঠা)
হযরত হুযাইফা (রা) বলেন “আমি নবীজি (সা)-র কাছে এসে তার সাথে মাগরীবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরীবের পরে ইশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।” সহীহ হাদিস। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, নাসাঈ, সুনানুল কুবরা)।
জানাজা নামাজের বিধান
জানাযা একটি বিশেষ প্রার্থনা যা কোনো মৃত মুসলমানকে কবর দেয়ার পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সচরাচর এটি জানাযার নামাজ নামে অভিহিত হয়। মুসলমান অর্থাৎ ইসলাম ধর্মামলম্বীদের জন্য এটি ফরযে কেফায়া বা সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্থাৎ কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাযার নামাজ পাঠ করতে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।জানাযার নামাজ একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে বা দলবদ্ধভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা বেজোড় সংখ্যক কাতারে বা সারিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এ নামায আদায় করেন। এটি ৪ তকবিরের নামাজ। দাঁড়িয়ে এ নামাজ আদায় করতে হয় এবং সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে এ নামায শেষ হয়। জানাযা শেষে মৃতব্যক্তিকে অবিলম্বে গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং ইসলামী রীতিতে কবর তৈরী করে মাটিতে দাফন করতে হয়।
عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ شَهِدَ الجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا، فَلَهُ قِيراطٌ، وَمَنْ شَهِدَهَا حَتَّى تُدْفَنَ، فَلَهُ قِيرَاطَانِ » قِيلَ: وَمَا القِيرَاطانِ ؟ قَالَ: « مِثْلُ الجَبَلَيْنِ العَظِيمَيْنِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নামায পড়া পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক ক্বীরাত্ব সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে, তার জন্য দুই ক্বীরাত সওয়াব রয়েছে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, দুই ক্বীরাতের পরিমাণ কতটুকু?’ তিনি বললেন, দুই বড় পাহাড়ের সমান।’’ [বুখারি ৪৭, ১৩২৪, ১৩২৫, মুসলিম ৯৪৫, তিরমিযি ১০৪০, নাসায়ি ১৯৯৪
عَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَا مِنْ مَيتٍ يُصَلِّي عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنَ المُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِئَةً كُلُّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ إِلاَّ شُفِّعُوا فِيهِ ». رواه مسلم
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মৃতের জানাযার নামায একটি বড় জামাআত পড়ে, যারা সংখ্যায় একশ’ জন পৌঁছে এবং সকলেই তার ক্ষমার জন্য সুপারিশ করে, তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।
[মুসলিম ৯৪৭, তিরমিযি ১০২৯, নাসায়ি ১৯৯১
وَعَنْ مَرثَدِ بنِ عَبدِ اللهِ اليَزَنِيِّ، قَالَ: كَانَ مَالِكُ بنُ هُبَيْرَةَ رضي الله عنه إِذَا صَلَّى عَلَى الجَنَازَةِ، فَتَقَالَّ النَّاس عَلَيْهَا، جَزَّأَهُمْ عَلَيْهَا ثَلاَثَةَ أَجْزَاءٍ، ثُمَّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ صَلَّى عَلَيْهِ ثَلاَثَةُ صُفُوفٍ فَقَدْ أَوْجَبَ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
মারছাদ ইবনে আব্দুল্লাহ য়্যাযানী বলেন, মালেক ইবনে হুবাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন (কারো) জানাযার নামায পড়তেন এবং লোকের সংখ্যা কম বুঝতে পারতেন, তখন তিনি তাদেরকে তিন কাতারে বণ্টন করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন কাতার (লোক) যার জানাযা পড়ল, সে (জান্নাত) ওয়াজেব করে নিল। [আবু দাউদ ৩১৬৬, তিরমিযি ১০২৮, ইবন মাজাহ ১৪৯০
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ানো
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نُغَسِّلُ ابْنَتَهُ فَقَالَ: اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الْآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَآذِنَّنِي فَلَمَّا فَرَغْنَا آذناه فَألْقى إِلَيْنَا حقوه وَقَالَ: «أَشْعِرْنَهَا إِيَّاهُ» وَفِي رِوَايَةٍ: اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا وَابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا . وَقَالَتْ فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ فألقيناها خلفهَاউম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ‘কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযূর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)
১. গোসল দেওয়ার স্থানটি চারিদিক দিকে ঘেরাও করবে। উপর দিকেও সামিয়ানা অথবা পর্দা থাকতে হবে।
২. গোসলদাতা নিজের মুখ বন্ধ করে নিতে পারে অথবা নাকে-মুখে কাপড় বেঁধে নিতে পারে; যদি দুর্গন্ধ পাওয়ার কোন রকম আশঙ্কা থাকে তবে। অতিরিক্ত এমন কোন কাপড় শরীরের সম্মুখ ভাগে বেঁধে নিতে পারে যাতে কোন নাপাকী তার শরীর বা পোশাকে লেগে না যায়। উভয় হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরা উত্তম। যাতে হাতে ময়লা না লাগে এবং লাশের লজ্জাস্থান সরাসরি স্পর্শ না হয়।
৩. গোসলদাতা সহায়তার জন্য ২/১ জন ভালো লোক সঙ্গে নিতে পারে। বাকি ঐ পর্দারসীমার ভিতরে যেন কেউ না থাকে ও গোসল না দেখে। অবশ্য গোনাহ করে এমন লোককেও সঙ্গে রাখা চলে। যাতে সে মুর্দার হাল দেখে উপদেশ গ্রহণ এবং তাওবা করতে পারে। আর উপদেশের জন্য মৃত্যু যথেষ্ট।
৪. লাশ তুলে আস্তে করে একটি তক্তা বা কাঠের উপর রাখবে। এ তক্তার যেদিকে লাশের মাথা রাখা হবে সেদিকটা যেন একটু উঁচু হয় যাতে কোমরের দিকের পানি পায়ের দিকে গড়িয়ে নেমে পড়তে পারে। এই তক্তা কেবলামুখী হওয়া জরুরি নয়। উল্লেখ্য যে, লাশ তোলা-নামা করার সময় লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র যিকির করা বিদআত। এরপর লাশের লজ্জাস্থানের উপর একটি মোটা কাপড় রেখে গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলবে। নবী (সা.)-এর যুগে এরূপই আমল ছিল (হাকেম- ৩/৫৯-৬০)। উল্লেখ্য যে, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর ও লজ্জাস্থান দেখা সকলের জন্যই হারাম। মহিলা গোসলদাত্রীও মহিলার ঐ স্থান দেখবে
৫. মাইয়্যেতের দেহ অনুযায়ী পানি প্রস্তুত রাখবে। ১ বালতি সাদা সাধারণ পানি, ১ বালতি বড়ই পাতা মিশ্রিত পানি এবং ১ বালতি কর্পূর মিশ্রিত পানি রাখবে।
৬. নাক ও মুখের ভিতরে ময়লা থাকলে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে পরিষ্কার করে নেবে। এগুলো দিয়ে ময়লা বের হতে থাকলে তুলা বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ছিদ্র পথ বন্ধ করে দেবে।
৭. মাইয়্যেতের দেহের কোন অংশে জমাট বাঁধা ময়লা থাকলে এবং কুলের পাতা দ্বারা দূর হলে তা সাবান অথবা অন্য কিছু দিয়ে পরিষ্কার করে নেবে।
৮. বাম হাতে একটি ন্যাকড়া জড়িয়ে নেবে। অতঃপর সাথী-সঙ্গীদের সাহায্যে লাশের মাথার দিক একটু তুলে অর্ধ বসার মতো বসাবে এবং ধীরে ধীরে ২/৩ বার পেটের উপর চাপ দেবে যাতে পেটে কোন নাপাকী থেকে থাকলে তা বের হয়ে যায়। ময়লা ন্যাকড়া হাত থেকে খুলে ফেলবে। তারপর গোসলদাতা গ্লাভস বা ন্যাকড়া জড়ানো বাম হাত পর্দার নিচে থেকে লজ্জাস্থান মাজাঘষা করে এবং উপর থেকে একজন পানি ঢেলে পরিষ্কার করে দেবে। তারপর গ্লাভস অথবা ময়লা ন্যাকড়াটি হাত থেকে খুলে ফেলবে।
৯. ধোয়ার পরও যদি নাপাকী বারবার বের হতে থাকে, তাহলে ২/৩ বার ধুয়ে ফেলার পর ছিদ্র পথ তুলা বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা বন্ধ করে দেবে। প্রয়োজন হলে এর উপর প্লাস্টার পট্টি ব্যবহার করতে পারে। তবে ন্যাকড়া ব্যবহার করাই উত্তম।
১০. অতঃপর গোসলদাতা গোসল দেবার নিয়ত করে মাইয়্যেতের উভয় হাত ‘বিসমিল্লাহ বলে কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে দেবে। (ভিজে পরিষ্কার ন্যাকড়ার সাহায্যে) তিনবার মুখের ভিতর দাঁতসহ মাসেহ করবে। তিনবার নাকের ভিতর মাসেহ করে দেবে। অতঃপর সাধারণ ওযূর ন্যায় মুখমণ্ডল, হাত ইত্যাদি যথা নিয়মে ধুইয়ে মাথা ও কান মাসেহ করে পা ধুইয়ে মাইয়্যেতকে ওযু করিয়ে দেবে। তবে নাকে ও মুখের ভিতর পানি দেবে না।
১১. অতঃপর কুলের পাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা মাইয়্যেতের মাথা ও মুখমণ্ডল (দাড়িসহ) উত্তমরূপে ধৌত করবে। মহিলার মাথায় খোপা বাঁধা থাকলে তা খুলে নিয়ে ভালোরূপে এবং প্রয়োজন হলে শ্যাম্পু দ্বারা ধৌত করবে।
১২. অতঃপর মাইয়্যেতকে বামপার্শ্বে শয়ন করিয়ে ঐ পানি দ্বারা কাঁধ থেকে শুরু করে ডান পায়ের শেষাংশ পর্যন্ত ভালোভাবে মাজা-ঘষা করে দেবে। তারপর ডান কাতে শুইয়ে বাম পাশ অনুরূপ ধৌত করবে। পর্দার নিচে লজ্জাস্থানে কাপড় মোড়ানো হাত বুলিয়ে ধুয়ে দেবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়বার ঐ একই পানি দ্বারা একই রূপে গোসল দেবে। অতঃপর কর্পূর মিশ্রিত পানি দ্বারা মাথা ও মুখমণ্ডল ধুয়ে দেওয়ার পর এভাবে আরেকবার গোসল দেবে। এরপরেও নাপাকী দেখা গেলে তিনের অধিক ৫ ও ৭ বার বা ততোধিকবার বিজোড় সংখ্যায় গোসল দেওয়া যায়। তবে শেষ বারে যেন কপূর মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল হয়। (বুখারী: ১১৭৫)
১৩. এরপর শুষ্ক কাপড় দ্বারা মাইয়্যেতের দেহ মাথা, বুক, মুখ, পেট, হাত, পা মুছে দেবে । লজ্জাস্থানের উপর ভিজা কাপড়টিকে সরিয়ে অন্য একটি শুকনা কাপড় দিয়ে দেবে। মাইয়্যেতের চুল আঁচড়ে দেবে। (বুখারী: ১১৭৬) মহিলার চুল আঁচড়ে বেণী গেঁথে কাফনের সময় লাশের পিছন দিকে ফেলে রাখবে। মাথার দুই পাশে দুটি এবং সামনের দিকে চুল নিয়ে একটি, মোট তিনটি বেণী করবে।(আহমাদ- ৫/৮৪-৮৫)। এ পর্যন্ত করলে লাশ কাফনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে ।
মাইয়্যেতের গোসল সংক্রান্ত বিবিধ মাসাইল:
১. লাশের কোন অঙ্গ আগুনে পুড়ে গেলে বা কোন দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকলে কাপড় দিয়ে গোসলের পর ঐ অঙ্গে মাসাহ করে দেবে।২. চারমাসের কম সময়ের গর্ভপাতজনিত ভ্রণের গোসল, কাফন ও কোন নামায নেই। একটি ছোট্ট কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করা হবে।
৩. চার মাসের ঊর্ধ্বের ভ্রণের কাফন-দাফন সাত বছরের নিম্নের বালক-বালিকার মতোই। (আহকামল জানাইয) ৪. লাশের মুখে বাঁধানো সোনার দাঁত থাকলে যদি মুখ এঁটে বন্ধ থাকে, তাহলে বল প্রয়োগ করে খোলার চেষ্টা করবে না। খোলা থাকলে এবং দাঁত সহজে বের করা সম্ভব হলে বের করে নেবে, নচেৎ বল প্রয়োগ করে বের করবে না। (আল-বিজায়াহ পৃ. ৭৫) ৫. সর্বদা মাইয়্যেতের সম্মানের জন্য খেয়াল রাখবে, গোসলদাতা যাতে গোসল দেওয়ার সময় বা অন্যান্য ক্ষেত্রে লাশের সাথে ধস্তাধস্তি না হয় ও গোসলে শীতের সময় শীতল এবং গ্রীষ্মের সময় খুব গরম পানি ব্যবহার না করা হয়।
৬. মাইয়্যেতের গোসল দেওয়ার সময় গোসলদাতা যদি মাইয়্যেতের দেহে কোন ত্রুটি বা অপ্রীতিকর কিছু দেখে থাকে- যেমন চেহারা কালো বা বিকৃত হয়ে যাওয়া, তার দেহ হতে দুর্গন্ধ বের হওয়া ইত্যাদি- তাহলে তা প্রচার করা বা কাউকে বলা বৈধ নয়। বরং ভালো কিছু দেখলে; যেমন হাসি মুখ, দেহে ঔজ্জ্বল্য প্রভৃতি দেখলে বা সুগন্ধ পেলে তা প্রচার করতে পারে। (আল-মুমতে- ৫/৩৭৬)।
৭. হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় মৃত মুহরিমের গোসলে কোন প্রকার সুগন্ধি বা কপূর ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত হাজীর জন্য নবী (সা.) বলেছিলেন, ‘ওকে কুলপাতা-মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল দাও, ওর দুই কাপড়ে কাফন পরাও এবং সুগন্ধি লাগিয়ো না।
জানাযা নামাযের নিয়মঃ
জামাত যেভাবে দাঁড়াবে :
জামাআতের সামনে কাফন ঢাকা লাশ রাখতে হবে। তার পেছনে লাশের সিনা বরাবর ইমাম দাঁড়াবেন। তার পেছনে মুক্তাদীরা কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। সবাই মনে মনে ইচ্ছা করবেন : এই মৃত ব্যক্তির দুআর জন্য জানাযার নামায পড়ছি। মূলত এটাই হল নিয়ত।
হাত উঠানো :
জানাযা নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরে হাত উঠাবে এছাড়া আর কোন তাকবীরে হাত ওঠানোর বিধান নেই।
১. প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া:
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
২. দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদ পড়া:
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِاِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
৩. তৃতীয় তাকবীরের পর জানাযার দুআ পড়া:
اَللَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا ارْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة
৪. চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরানো।
জানাজা নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে
এক শ্রেনীর মানুষ যারা সময়ের আবর্তনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারন করে যেমন,প্রথমে নিজেদেরকে মোহাম্মদীয়া দাবী করত,তারপর চিন্তা করে দেখলো এ নামে সুবিধা হচ্ছেনা তখন তারা সালাফীয়া নামে আত্ম প্রকাশ করে কিছুদিন পর আবার আহলে হাদিস নাম দেয়, আহলে হাদিস কাকে বলে এই সংগার সাথে তাদের নামের এবং কাজের যখন মিল না পাওয়া যায় তখন তারা নিজেদেরকে সহী আকিদার বলে চলছে এখন তারা নিজেদেরকে বড় হানাফী নামে আত্ম প্রকাশ করতে চাচ্ছে।আবার অতিরিক্ত এখন নিজেদেরকে গায়রে মুকাল্লিদের দাবীদার হিসাবে উপস্থাপন করে।বর্তমান সমাজের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত যারা তারা সবাই ই গায়রে মুকাল্লিদের চেষ্টা করে কিন্ত যারা মুর্খ তাদেরকে তো গায়রে মুকাল্লিদ বললে হবেনা।যারা কোরআন হাদিস পড়তে পারেনা,যাদের মাসআলা মাসায়েলের জ্ঞান নেই তারাতো কারো না করো নিকট শুনে তার প্রতি বিশ্বাস করবে তাহলে সবাই গাইরে মুকাল্লিদ হয় কি করে? এই ফেৎনাবাজ গ্রুপটা বিভিন্ন সময় হাদিসের অপ ব্যবহার করে যাচ্ছে জানাজাতে সুরা ফাতিহা পড়া এমনই একটা হাদিসের অপব্যক্ষা মাত্র।তবে সুরা ফাতিহা দোয়া এবং হামদ হিসাবে পড়তে পারে ক্বেরাত হিসাবে না।ক্বেরাত হিসাবে তারা যে দলি পেশ করে:لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب.
‘যে ফাতিহাতুল কিতাব পড়েনি তার নামায নেই।’-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫৬ অথচ উপরোক্ত বর্ণনায় পাওয়া গেল যে, স্বয়ং উবাদা ইবনুস সামিত রা.-ই জানাযার নামায ফাতিহা ছাড়া পড়ার নিয়ম জানতেন ও মানতেন। সাহাবী আবু হুরায়রা রা.-এর প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই নিয়মেরই উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রা.-ও এ নিয়ম জানতেন ও মানতেন। ইতিপূর্বে তাঁর বিবরণও উল্লেখিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকেও সহীহ মুসলিমে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে- মজার বিষয় দেখুন-উবাদা ইবনে ছামিত রা.-এর ফরমান
عن أبي هريرة أنه سأل عبادة بن الصامت عن الصلاة على الميت فقال أنا والله أخبرك تبدأ فتكبر ثم تصلي على النبي صلى الله عليه وسلم، وتقول اللهم إن عبدك فلانا كان لا يشرك بك شيئا، أنت أعلم به، إن كان محسنا فزد في إحسانه وإن كان مسيئا فتجاوز عنه، اللهم لا تحرمنا أجره ولا تضلنا بعده.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি উবাদা ইবনে ছামিত রা.-কে জানাযার নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে বলব, তুমি সর্বপ্রথম তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করবে। অতপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়বে এবং এই দুআ পড়বে
... اللهم আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে ফাতিহা ছাড়া সালাতুল জানাযার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে। তাবেয়ী আবু হামযা রাহ. বলেন-
قلت له : كيف أصلي في الكعبة؟
আমি তাঁকে (ইবনে আব্বাস রা.- কে) জিজ্ঞাসা করলাম, কা‘বার ভিতরে নামায কীভাবে পড়ব? তিনি উত্তরে বললেন-
كما تصلي في الجنازة تسبح وتكبر ولا تركع ولا تسجد ثم عند أركان البيت سبح وكبر وتضرع واستغفر، ولا تركع ولا تسجد
যেভাবে সালাতুল জানাযা পড়; তাসবীহ পড়বে, তাকবীর দিবে, তবে রুকু-সিজদা করবে না। এরপর বাইতের রোকনগুলোর কাছে তাসবীহ করবে, তাকবীর দিবে, রোনাযারি করবে ও ইস্তিগফার করবে। তবে রুকু করবে না ও সিজদা করবে না। -ফতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ৩ : ৪৬৯
এ বর্ণনার সনদ সহীহ।
লক্ষ্য করুন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কুরআন তিলাওয়াতের উল্লেখ করেননি। এখানে মনে রাখতে হবে যে, ইবনে আব্বাস রা. কা‘বার ভিতরে নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন। তিনি মনে করতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কা‘বার ভিতরে নামায পড়া বিষয়ে যে বর্ণনাগুলো আছে তাতে ‘সালাত’ অর্থ দুআ, নামায নয়। এখন কারো যদি দোয়া জানা না থাকে তবে দোয়া বা হামদ হিসাবে কেউ যদি সুরা ফাতিহা পাঠ করে,তবে ফেৎনা ফাসাদ না করাই উত্তম,সে তার মত আমল করুক।
কবরস্থানে দোয়া করা সম্পর্কে
কবর জিয়ারত করলে হৃদয় বিনম্র হয়। মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। আখিরাতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। গুনাহ ও অন্যায় থেকে তওবা করার মানসিকতা তৈরি হয়। সৎ-আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কবর জিয়ারত রাসুল (সা.) সুন্নতও বটে। কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো- এতে পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ হয়। ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি ছিল না। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন, السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন— السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ অর্থ : মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯) কবরস্থানে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়বেন। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি পড়বেন। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন। হাদিসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ হয়েছে। পাশাপাশি দরুদ শরিফের ফজিলতের কথাও এসেছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়— সেগুলো পড়ে সওয়াব উপহার দেবেন। কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা চাই। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০ ইসালে সওয়াবের নিয়তে সম্মিলিত ভাবেও দোয়া করা যায়।মৃত্যু ব্যক্তির উদ্দেশ্যে করনীয়
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনের মধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন, আল্লাহর নবী (সা.) তো কত সুন্দর করে বলে দিয়ে গেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْمُؤَذِّنُ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ، – يَعْنِي ابْنَ بِلاَلٍ – عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أُرَاهُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ রাবী ‘ইবন সুলায়মান মুআযযিন (রহঃ) …… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরেও বন্ধ হবে না। ১. সাদকায়ে জারিয়া, ২. ঐ ‘ইলম, যা দিয়ে উপকার করা যায় এবং ৩. ঐ নেক সন্তান, যে তার পিতার জন্য দু‘আ করে। অর্থাৎ তার আমল আর চলতে থাকে না, আমলনামার মধ্যে আর কোনো আমল যোগ হয় না। তিনটি ব্যতীত, প্রথমত সাদকায়ে জারিয়া। তাঁদের জন্য আমরা সাদকায়ে জারিয়া করতে পারি। যেমন, একটা মাদ্রাসা করে দিলেন, একটা টিউবওয়েল বসিয়ে দিলেন।তাদের স্মরণে মৃত্যুর পর চল্লিশা
নবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছে, হে আল্লাহর নবী (সা.), মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পর চল্লিশা উত্তম সাদকা ? তখন নবী (সা.) বলেছেন যে, মানুষদের সুপেয় পানি পান করানোর ব্যবস্থা করা। মাসজিদ, মাদ্রাসাহ, মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ, কূপ, খাল, বিল, নহর খনন, কুরআন-হাদীসের কিতাবাদি ক্রয় করে প্রদান এসব কাজ সদাকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ‘প্রত্যেক প্রাণিকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। সুরা ইমরান ৩:১৮৫ لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ أَذًى كَثِيراً وَإِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الأُمُورِ অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। সুরা ইমরান ৩:১৮৬ অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। সুরা আম্বিয়া ২১:৩৫ আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন: أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِ اللّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلًّ مِّنْ عِندِ اللّهِ فَمَا لِهَـؤُلاء الْقَوْمِ لاَ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না। সুরা নিসা ৪:৭৮ আত্মীয়-স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, মানুষ কষ্টে ব্যথাতুর হয়। তাদের স্মরণ করে প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হয়। পলেস্তরা জমাট বাধে হৃদয়-মনে। এ বেদনা ও স্মৃতিকাতরতা থেকে জন্ম নেয়, যদি সম্ভব হয় তাদের জন্য কিছু প্রবল ইচ্ছা। কিন্তুমৃতদের জন্য কী করা যায়? ইসলামী শরিয়ত মৃতদের স্মরণের সুন্দর ও সঠিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়, দিবস বা তারিখের অপেক্ষা করতে হয় না বা বাধ্যবাধকতাও নেই। কোনো অনুষ্ঠানে ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামেরও প্রয়োজন নেই। শরিয়ত মোতাবেক মৃতদের কীভাবে স্মরণ করা যায়, এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো (১) ধৈর্য ধারণ করা ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা। الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। [ সুরা বাকারা ২:১৫৬ (২) তাদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। [ সুরা ইবরাহীম ১৪:৪১ অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে: رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে , যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। সুরা নূহ ৭১:২৮ (৩) যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা। وَعَنْ حُصَيْنِ بْنِ وَحْوَحٍ أَنَّ طَلْحَةَ بْنَ الْبَرَاءِ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُه فَقَالَ: إِنِّي لَا أَرى طَلْحَةَ إِلَّا قَدْ حَدَثَ بِهِ الْمَوْتُ فَآذِنُونِي بِه وَعَجِّلُوا فَإِنَّه لَا يَنْبَغِىْ لِجِيفَةِ مُسْلِمٍ أَنْ تُحْبَسَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِه . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ হুসায়ন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ত্বলহাহ্ ইবনু বারা অসুস্থ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে বললেন, আমার মনে হচ্ছে ত্বলহার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অতএব তার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাকে খবর দিবে (যাতে আমি জানাযাহ্ আদায়ের জন্য আসতে পারি)। আর তোমরা তার দাফন-কাফনের কাজ তাড়াতাড়ি করবে। কারণ মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে বেশীক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়। (৪) মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা। মৃত্যুর পর চল্লিশা করার জন্য অর্থ জমা না করা। وَعَن سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ : كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِىِّ ﷺ إِذْ أُتِىَ بِجِنَازَةٍ فَقَالُوا : صَلِّ عَلَيْهَا فَقَالَ : «هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ؟» قَالُوا : لَا فَصَلّٰى عَلَيْهَا ثُمَّ أُتِىَ بِجِنَازَةٍ أُخْرٰى فَقَالَ : «هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ؟» قَالُوا : نَعَمْ فَقَالَ : «فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا؟» قَالُوا : ثَلَاثَةَ دَنَانِيرَ فَصَلّٰى عَلَيْهَا ثُمَّ أُتِىَ بِالثَّالِثَةِ فَقَالَ : «هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ؟» قَالُوا : ثَلَاثَةُ دَنَانِيرَ قَالَ : «هَلْ تَرَكَ شَيْئًا؟» قَالُوا : لَا قَالَ : «صَلُّوْا عَلٰى صَاحِبِكُمْ» قَالَ أَبُوْ قَتَادَةَ : صَلِّ عَلَيْهِ عَلَيْهِ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! وَعَلَىَّ دَيْنُه فَصَلّٰى عَلَيْهِ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একটি জানাযা উপস্থিত করা হলো। লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাযার সালাত আদায়ের অনুরোধ করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত লোকের ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তারা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর অপর একটি জানাযা আনা হলো। সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তখন বলা হলো, হ্যাঁ, আছে। জিজ্ঞেস করলেন, (ঋণ পরিশোধে) কোনো কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা রেখে গেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ জানাযার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হলে সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তার ওপর কোনো ঋণ আছে কি? লোকেরা বলল, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা তার ওপর ঋণ আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযার সালাত আদায় করে নাও। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ লোকের জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিন, আমি তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিলেন। (বুখারী) (৫) মৃত ব্যক্তির ভালো কাজের আলোচনা حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ أَنَسٍ الْمَكِّيِّ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكُفُّوا عَنْ مَسَاوِيهِمْ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভালো দিকগুলো আলোচনা করো এবং তাদের দোষ চর্চা পরিহার করো। (৬) তাদের সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা। حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا مَخْلَدُ بْنُ يَزِيدَ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يَعْلَى، أَنَّهُ سَمِعَ عِكْرِمَةَ، يَقُولُ أَنْبَأَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ ـ رضى الله عنه ـ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهْوَ غَائِبٌ عَنْهَا، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا، أَيَنْفَعُهَا شَىْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা‘দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে সা‘দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা যান। আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সাদকা করি, তা হলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিকরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদকা করলাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন… حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالُوا حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، – وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ – عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَبِي مَاتَ وَتَرَكَ مَالاً وَلَمْ يُوصِ فَهَلْ يُكَفِّرُ عَنْهُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ্ ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজুর (রহঃ) … আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলো, আমার পিতা মারা গেছেন এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন; কিন্তু ওয়াসিয়্যাত করেননি। তার পক্ষ থেকে সদাকাহ্ করা হলে কি তার গুনাহ ক্ষমা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁলাখ কলমার নামে আমরা যা করি তা কিভাবে বৈধ হবে?
মানুষ মারা গেলে ৭দিন বা ৪০ দিন পর মৃত্যু ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শামিয়ানা প্যান্ডেল করে বিশাল বড় ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়,দু চারজন আসে পাশের মসজীদের ইমাম,মুয়াজ্জিন ডেকে একটু দোয়া করে খাবার শুরু হয়,এই খাবারে আত্মীয় স্বজন,ধনী,ছোট নেতা বড় নেতা,সবাই অংশ গ্রহন করে।খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলার মত লোক খুবই কম থাকেেউপরন্ত খানা খায় আর বলে ঝাল বেশি লবন কম,খানায় নানা ধরনের খুত ধরে বদনাম করতে থাকে। সামান্য কিছু গরীব মিসকীন আসে তাও তাদের বলা হয় অপেক্ষা করো খানা শেষ হোক পরে দেবো।এই রকম খানা মৃত্যু ব্যক্তির কোন উপকারে আসবেনা।বর্তমান সমাজে যিনারা এই খানা দেন তিনারাও এটার পক্ষে না,তাহলে দেন কেনো? সামাজিক চাঁপ আর মান সম্মানের ভয়ে এগুলো করা হয়।এই খাবারটা যদি শুধুমাত্র গরীব,মিসকীন,অসহায়দের জন্য করা হয় তাহলে এটাতে সওয়াবের আসা করা যায়।নামাজের নিষিদ্ধ সময়
হাদীস সূত্রে জানা যায়, তিন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ। উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন, ثَلاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ তিনটি সময়ে রাসুল ﷺ আমাদেরকে নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়। (সহীহ মুসলিম ১৩৭৩) অন্য হাদীসে আরো দুই সময়ে নামাজ পড়ার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, আমি রাসুল ﷺ -কে বলতে শুনেছি, لا صَلاةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ وَلا صَلاةَ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। (বুখারী ৫৫১)নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি
১. সূর্যোদয়ের সময়; যতক্ষণ না তার হলুদ রঙ ভালোভাবে চলে যায় ও আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরজন্য আনুমানিক ১৫-২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। ২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়; যতোক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে। ৩. সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামাজ সঠিক সময়ে পড়তে না পারে তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। কাযা করা যাবে না। কারণ রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন,مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْعَصْرَ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাকাআত পেল সে আসরের নামায পেল। (নাসায়ি ৫১৮) ৪. ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। ৫. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।মুসাফির ও মুসাফিরের নামাজ
মুসাফির কাকে বলে? মুসাফির শব্দটি আরবী। এর অর্থ হলো সফরকারী, ভ্রমণকারী। ‘কোন ব্যক্তির স্বাভাবিক বিশ্রাম বজায় রেখে মধ্যম পন্থার পথ চলার তিন বা ততোধিক দিনের ভ্রমণ পথ অতিক্রমের ইচ্ছা নিয়ে নিজ আবাসস্থল থেকে যাত্রা শুরু করাকে সফর বলে।’ আর যিনি সফর করবেন তাকে বলা হয় ‘মুসাফির’ যদি কোন ব্যক্তি মোটামুটি ৪৮ মাইল (৭৭.২৩২ কিলোমিটার) রাস্তা অতিক্রম করে কোন স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকার লোকালয় থেকে বের হয়, তাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয়। তখন তাকে ইসলামী বিধান মোতাবেক মুসাফিরের নামাজ আদায় করতে হয়। মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরয নাম (অর্থাৎ জোহর,আসর ও ঈশার ফরয নামায) কে দুই রাকআত পড়বে। একে কছরের নামায বলে। কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করেই সহজ বিধান দিয়েছেন। ইসলাম মানুষের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও ছাড় দিয়েছে। মূলত এই কসর নামাজের বিধানের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় শিক্ষা রয়েছে; তাহলো কোনো অবস্থায়ই ফরজ ইবাদত অলসতার কারণে বা সমস্যা থাকার কারণে পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কসরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সফরে নামাজকে কসর কর, এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ [বায়হাকী] তিন রাকআত বা দুই রাকাআত বিশিষ্ট ফরয নামায, ওয়াজিব নামায এমনিভাবে সুন্নাত নামায পূর্ণ পড়তে হবে। এ হলো পথিমধ্যে থাকাকালীন সময়ের বিধান। আর গন্তব্য পৌঁছার পর যদি সেখানে ১৫ দিন বা তদুর্ধকাল থাকার নিয়ত হয় তাহলে কছর হবে না- নামায পূর্ণ পড়তে হবে। আর যদি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত থাকে তাহলে কছর হবে। গন্তব্যস্থান নিজের বাড়ি হলে কছর হবে না, চাই যে কয় দিনই থাকার নিয়ত করুক। মুসাফিরের জন্য নামায সংক্ষিপ্ত করে পড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য উপহার স্বরূপ। তাই মুসাফিরের জন্য ওয়াজিব হলো সেই উপহার গ্রহণ করা। কছর করা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন,: وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا অর্থ: তোমরা যখন যমীনে সফর কর এবং তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফিরগণ তোমাদেরকে বিপন্ন করবে, তখন সালাত কছর করলে তাতে তোমাদের কোনও গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।[২] অনেক হাদীসে এসেছে, মুহাম্মাদ (সা.) হজ্জ,ওমরা, যুদ্ধসহ যে কোন সফরে কছরের নামায পড়তেন। ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত: “আমি মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে ছিলাম, তিনি সফরে (চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায) দুই রাকাআতের বেশি পড়তেন না। আবুবকর ও ওমর একই রকম নামায পড়তেন।” -বুখারী ও মুসলিম। বিমান, গাড়ি, স্টিমার, ট্রেন, উট, পর্বতারোহণ ও পদব্রজ ভ্রমণের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সবগুলোই সফর বা ভ্রমণের আওতাভুক্ত। সব সফরেই নামায কছর করতে হবে।কছরের নামায কখন শুরু করতে হবে:
সফরকারী ব্যক্তি সফরের নিয়তে ঘর থেকে বের হলেও সে নিজ এলাকা/মহল্লায় থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নামায আদায় করবে। যখন সে এলাকা ত্যাগ করবে, তখন থেকে নামাজ কসর করবে। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (সা.) (বিদায় হজ্জের নিয়তে) মক্কা সফরের সময় মদীনায় যোহরের নামায চার রাকা‘আত আদায় করেছেন। আর (সফর শুরু করে) যুলহুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে আসরের নামায দু’রাকা‘আত আদায় করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত-১২৫৪) এখানে যুলহুলায়ফা নামক স্থানটি মদীনা হতে প্রায় মাইল দূরে অবস্থিত, যেখানে এসে রাসূল (সা.) নামায কসর করেছেন। মুসাফির তার নিজের এলাকা ত্যাগ করার পূর্বে কছরের নামায পড়া জায়েয হবে না।যখন সে জানবে যে সে তার এলাকা ত্যাগ করেছে তখন হতে সে কছর পড়া শুরু করবে,আবার ফেরার পথে নিজ এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথে তার উপর আর কছরের হুকুম থাকবেনা।সফরের সময় জামাআতে নামায:
মুসাফিরের জন্য মুকীমের ইমাম হয়ে নামাজ পড়া জায়েয আছে। এক্ষেত্রে সে দুই রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফেরাবে এবং মুকীম একাকী নামায শেষ করে নিবে। মুসাফিরের জন্য মুস্তাহাব হলো সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদীর বলা" আপনারা নামায পূর্ণ করুন, আমি মুসাফির" । মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে নামায পড়লে কছর করবে না, পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। ইমাম মুসলিম ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেন-“মুসাফির ইমামের সাথে চার রাকাআত পড়বে, আর একা পড়লে দুই রাকাআত পড়বে।মুসাফিরের জন্য আরো কতিপয় মাসআলা
মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত ছেড়ে দেওয়া দুরস্ত আছে। ব্যস্ততা না থাকলে সব সুন্নাত পড়তে হবে। যারা লঞ্চ, স্টীমার, প্লেন, বাস, ট্রাক ইত্যাদির চালক বা কর্মচারী, তারাও অনুরূপ দূরত্বের সফর হলে পথিমধ্যে কছর পড়বে। আর গন্তব্য স্থানের মাসআলা উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী হবে। ১৫দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং পূর্বেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না- এভাবে ১৫দিন বা তার বেশি থাকা হলেও কছর পড়তে হবে।জুম্মার সালাতের বিধি বিধান:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।(জুম্মা৯) জুমার গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, “দুনিয়াতে আমাদের আসার সময় সকল জাতির পরে। কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সকলের অগ্রবর্তী। (সকলের আগে আমাদের হিসাব-নিকাশ হবে।) অবশ্য আমাদের পূর্বে ওদেরকে (ইয়াহুদী ও নাসারাকে) কিতাব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিতাব পেয়েছি ওদের পরে। এই (জুমআর) দিনের তা’যীম ওদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তাতে মতভেদ করে বসলো। পক্ষান্তরে আল্লাহ আমাদেরকে তাতে একমত হওয়ার তওফীক দান করেছেন। সুতরাং সকল মানুষ আমাদের থেকে পশ্চাতে। ইয়াহুদী আগামী দিন (শনিবার)কে তা’যীম করে (জুমআর দিন বলে মানে) এবং নাসারা করে তার পরের দিন (রবিবার)কে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) মহানবী (সা.) বলেন, “প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমআয় উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।” (নাসাঈ, সুনান ১৩৭১নং) حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ فِيهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُهْبِطَ وَفِيهِ تِيبَ عَلَيْهِ وَفِيهِ مَاتَ وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ وَمَا مِنْ دَابَّةٍ إِلاَّ وَهِيَ مُسِيخَةٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ حِينَ تُصْبِحُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ شَفَقًا مِنَ السَّاعَةِ إِلاَّ الْجِنَّ وَالإِنْسَ وَفِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُصَادِفُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ حَاجَةً إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهَا " . قَالَ كَعْبٌ ذَلِكَ فِي كُلِّ سَنَةٍ يَوْمٌ . فَقُلْتُ بَلْ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ . قَالَ فَقَرَأَ كَعْبٌ التَّوْرَاةَ فَقَالَ صَدَقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ ثُمَّ لَقِيتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلاَمٍ فَحَدَّثْتُهُ بِمَجْلِسِي مَعَ كَعْبٍ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ قَدْ عَلِمْتُ أَيَّةَ سَاعَةٍ هِيَ . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ لَهُ فَأَخْبِرْنِي بِهَا . فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ هِيَ آخِرُ سَاعَةٍ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ . فَقُلْتُ كَيْفَ هِيَ آخِرُ سَاعَةٍ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يُصَادِفُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ يُصَلِّي " . وَتِلْكَ السَّاعَةُ لاَ يُصَلَّى فِيهَا . فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ أَلَمْ يَقُلْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ جَلَسَ مَجْلِسًا يَنْتَظِرُ الصَّلاَةَ فَهُوَ فِي صَلاَةٍ حَتَّى يُصَلِّيَ " . قَالَ فَقُلْتُ بَلَى . قَالَ هُوَ ذَاكَ . আল্-কানবী (রহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে সব দিনে সূর্যোদয় হয় তার মধ্যে জুমুআর দিনই উত্তম। ঐ দিনেই আদম (আঃ) সৃষ্টি হয়েছিলেন, ঐ দিনই তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়, ঐ দিনই তাঁর তওবা কবুল হয় এবং ঐ দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনই কিয়ামত কায়েম হবে, এই দিন জীন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত প্রাণীকুল সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে। এই দিনের মধ্যে এমন একটি সময় নিহিত আছে, তখন কোন মুসলিম বান্দা নামায আদায়ের পর আল্লাহর নিকট যা প্রার্থনা করবে তাই প্রাপ্ত হবে। কাব (রাঃ) বলেন, এইরূপ দু’আ কবুলের সময় সারা বছরের মধ্যে মাত্র এক দিন। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, বছরের একটি দিন নয়, বরং এটা প্রতি জুমুআর দিনের মধ্যে নিহিত আছে। রাবী বলেন, অতঃপর কাব (রাঃ) তার প্রমানস্বরূপ তাওরাত পাঠ করে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করি (যিনি ইহুদীদের মধ্যে বিজ্ঞ আলিম ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন) এবং তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করি। এই সময় কাব (রাঃ)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) বলেন, দু’আ কবুলের সেই বিশেষ সময় সম্পর্কে আমি জ্ঞাত আছি। তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমাকে ঐ সময় সম্পর্কে অবহিত করুন। আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) বলেন, তা হল জুমুআর দিনের সর্বশেষ সময়। আমি বললাম, তা জুমুআর দিনের সর্বশেষ সময় কিরূপে হবে? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে কোন বান্দা নামায আদায়ের পর উক্ত সময়ে দু’আ করলে তার দু’আ কবুল হবে। অথচ আপনার বর্ণিত সময়ে কোন নামায আদায় করা যায় না। আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি যে, কোন ব্যক্তি নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকলে নামায আদায় না করা পর্যন্ত তাকে নামাযে রত হিসাবে গণ্য করা হয়? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তা ঐ সময়টি। (নাসাঈ, তিরমিযী, বুখারী, মুসলিম,আবু দাউদ) حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ، عَنْ أَبِي الأَشْعَثِ الصَّنْعَانِيِّ، عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ قُبِضَ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَىَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَىَّ " . قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ يَقُولُونَ بَلِيتَ . فَقَالَ " إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ " হারূন ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আওস ইবন আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ দিনসমূহের মধ্যে জুমুআর দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এই দিনই আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনে শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। ঐ দিন সমস্ত সৃষ্টিকুল বেহুশ্ হবে। অতএব তোমরা ঐ দিন আমার উপর অধিক দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দেহ তো গলে যাবে। এমতাবস্থায় আমাদের দুরূদ কিরূপে আপনার সম্মুখে পেশ করা হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আম্বিয়ায় কিরামের দেহসমূহ মাটির জন্য (বিনষ্ট করা হতে) হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ,নাসাঈ, ইবন মাজা) حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَ الْجُمُعَةِ إِلَى الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا " . মুসাদ্দাদ (রহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে জুমুআর নামায পড়তে আসে এবং চুপ করে (খুতবা) শুনে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির এক জুমুআ হতে অন্য জুমুআর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন এবং আরো তিন দিনের গুনাহও মাফ করে দিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি (খুতবা ও নামাযের সময়) কংকর সরায় সে যেন বেহুদা কর্মে লিপ্ত হল। (মুসলিম,আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা)। حَدَّثَنَا عَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْعَظِيمِ، حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا هُرَيْمٌ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْتَشِرِ، عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ طَارِقُ بْنُ شِهَابٍ قَدْ رَأَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَسْمَعْ مِنْهُ شَيْئًا . আব্বাস ইবন আব্দুল আযীম (রহঃ) ..... তারিক ইবন শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমুআর নামায প্রত্যেক মুসলিমের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়ঃ ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, তারিক ইবন শিহাব (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন, তবে তিনি তাঁর নিকট হতে কিছু শুনেননি।(আবু দাউদ) حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، وَعَمْرٌو، أَنَّ يَحْيَى بْنَ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ " . أَوْ " مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدْتُمْ أَنْ يَتَّخِذَ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَىْ مَهْنَتِهِ " . قَالَ عَمْرٌو وَأَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي حَبِيبٍ عَنْ مُوسَى بْنِ سَعْدٍ عَنِ ابْنِ حَبَّانَ عَنِ ابْنِ سَلاَمٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ذَلِكَ عَلَى الْمِنْبَرِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَاهُ وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَيُّوبَ عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ عَنْ مُوسَى بْنِ سَعْدٍ عَنْ يُوسُفَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلاَمٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . আহমদ ইবনে সালেহ (রহঃ)মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কারো পক্ষে বা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হলে-নিজেদের সচরাচর পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া-জুমার নামাযের জন্য পৃথক দুইটি কাপড়ের ব্যবস্থা করে নেবে। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, ইবনে সালাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপরোক্ত হাদীছ মিম্বরের উপর বসে বলতে শুনেছেন।(আবু দাউদ) حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، حَدَّثَنِي فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنِي عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ التَّيْمِيُّ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الْجُمُعَةَ إِذَا مَالَتِ الشَّمْسُ . আল-হাসান ইবনে আলী (রাঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর জুমার নামায আদায় করতেন। (বুখারী, তিরমিযী,আবু দাউদ) حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ كُنَّا نَقِيلُ وَنَتَغَدَّى بَعْدَ الْجُمُعَةِ মুহাম্মদ ইবনে কাছীর (রহঃ) সাহাল ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমার নামায আদায়ের পরে দিনের প্রথমাংশের খাবার খেয়ে “কায়লুলা” (দুপুরের বিশ্রাম) করতাম। (বুখারী, মুসলিম,আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي السَّائِبُ بْنُ يَزِيدَ، أَنَّ الأَذَانَ، كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ يَجْلِسُ الإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ - رضى الله عنهما - فَلَمَّا كَانَ خِلاَفَةُ عُثْمَانَ وَكَثُرَ النَّاسُ أَمَرَ عُثْمَانُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِالأَذَانِ الثَّالِثِ فَأُذِّنَ بِهِ عَلَى الزَّوْرَاءِ فَثَبَتَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ মুহাম্মদ ইবনে সালামা (রহঃ) .... আস-সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর যুগে ইমাম যখন খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিম্বরের উপর বসতেন, তখন যে আযান দেয়া হত তাই ছিল জুমার প্রথম আযান। অতঃপর . উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালে যখন মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন তিনি তৃতীয় আযানের প্রবর্তন করেন। এই ধরণের প্রথম আযান ‘জাওরা’ নামক স্থানে সর্বপ্রথম প্রদত্ত হয়। অতঃপর এই নিয়ম ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। (বুখারী,আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ) টিকা: ইসলামের প্রথম যুগে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিম্বরে আরোহণের পর যে আযান দেয়া হত, তাই ছিল প্রথম আযান। অতঃপর নামায শুরু করার প্রাক্কালে যে ইকামত দেয়া হয়, তা দ্বিতীয় আযান হিসেবে খ্যাত ছিল। অতঃপর উসমান (রাঃ) এর সময়ে যে আযান প্রচলিত হয় তা তৃতীয় আযান হিসেবে পরিচয় লাভ করে। বর্তমানে জুমার জন্য প্রথমে যে আযান দেয়া হয় এটাই হল উসমান (রাঃ) এর চালু করা তৃতীয় আযান। حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَنْبَارِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، - يَعْنِي ابْنَ عَطَاءٍ - عَنِ الْعُمَرِيِّ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ خُطْبَتَيْنِ كَانَ يَجْلِسُ إِذَا صَعِدَ الْمِنْبَرَ حَتَّى يَفْرُغَ - أُرَاهُ قَالَ الْمُؤَذِّنُ - ثُمَّ يَقُومُ فَيَخْطُبُ ثُمَّ يَجْلِسُ فَلاَ يَتَكَلَّمُ ثُمَّ يَقُومُ فَيَخْطُبُ . মুহাম্মদ ইবনে সুলায়মান ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইটি খুতবা দিতেন। তিনি প্রথমে মিম্বরের উপর উঠে বসতেন এবং মুয়াযযিনের আযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই বসে থাকতেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন এবং মাঝখানে কোন কথাবার্তা না বলে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর দ্বিতীয় খুতবা দিতেন।(আবু দাউদ) حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، - الْمَعْنَى - عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، حَدَّثَنَا سِمَاكٌ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خُطْبَتَانِ كَانَ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيُذَكِّرُ النَّاسَ ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাঃ) .... জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইটি খুতবা দিতেন এবং মাঝখানে বসতেন। তিনি খুতবার মধ্যে কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। (মুসলিম,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজা) حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، وَأَبُو كَامِلٍ قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ، عَنْ حَبِيبٍ الْمُعَلِّمِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَحْضُرُ الْجُمُعَةَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ رَجُلٌ حَضَرَهَا يَلْغُو وَهُوَ حَظُّهُ مِنْهَا وَرَجُلٌ حَضَرَهَا يَدْعُو فَهُوَ رَجُلٌ دَعَا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ شَاءَ أَعْطَاهُ وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُ وَرَجُلٌ حَضَرَهَا بِإِنْصَاتٍ وَسُكُوتٍ وَلَمْ يَتَخَطَّ رَقَبَةَ مُسْلِمٍ وَلَمْ يُؤْذِ أَحَدًا فَهِيَ كَفَّارَةٌ إِلَى الْجُمُعَةِ الَّتِي تَلِيهَا وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ ( مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ) " . মুসাদ্দাদ ও আবু কামেল (রাঃ) ...... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মসজিদে তিন প্রকারের লোক হাযির হয়ে থাকে। একধরণের লোক মসজিদে উপস্থিত হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরাফেরা করে এবং অনর্থক কথা বলে। আর একধরণের লোক মসজিদে হাযির হয়ে খুতবার সময় দোয়া ইত্যাদিতে মশগুল থাকে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে এদের দোয়া কবুল করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। আর এক ধরণের লোক মসজিদে হাযির হয়ে খুতবা পাঠের সময় নিশ্চুপ থাকে এবং অন্যের ঘাড়ের উপর দিয়ে চলাফেরা করেনা এবং অন্যকে কষ্ট দেয় না। এই (তৃতীয় ধরণের) ব্যক্তির জন্য বিগত জুমা হতে এ পর্যন্ত এবং সামনের তিনদিনের জন্য এই নীরবতা কাফ্ফারা স্বরূপ হবে। তা এই জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে সে এর বিনিময়ে দশগুণ সওয়াব পাবে”।(আবু দাউদ) حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ السَّرِيِّ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ كُنَّا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ صَاحِبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُسْرٍ جَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ " . হারূন ইবনে মারূফ (রাঃ) আবুল জাহেরিয়া (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে বিশর (রাঃ)-এর সাথে জুমার নামায আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত ছিলাম। ঐ সময় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাঁড় টপ্কিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে বিশর (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জুমার খুতবা দানকালে এক ব্যক্তি লোকের ঘাঁড় টপ্কিয়ে যেতে থাকলে তিনি তাকে বলেন: তুমি বস! তুমি অন্যকে কষ্ট দিচ্ছ। তুমি অন্যকে কষ্ট দিচ্ছ।(আবু দাউদ) حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ ابْنُ الصَّبَّاحِ قَالَ - " مَنْ كَانَ مُصَلِّيًا بَعْدَ الْجُمُعَةِ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا " . وَتَمَّ حَدِيثُهُ وَقَالَ ابْنُ يُونُسَ " إِذَا صَلَّيْتُمُ الْجُمُعَةَ فَصَلُّوا بَعْدَهَا أَرْبَعًا " . قَالَ فَقَالَ لِي أَبِي يَا بُنَىَّ فَإِنْ صَلَّيْتَ فِي الْمَسْجِدِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَتَيْتَ الْمَنْزِلَ أَوِ الْبَيْتَ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ " . আহ্মদ ইবনে ইউনুছ ও মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ্ (রহঃ) আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমার ফরয নামায আদায়ের পর অন্য নামায আদায় করে সে যেন চার রাকাত আদায় করে (এটা রাবী ইবনুস্ সাব্বাহের বর্ণনা)। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন: জুমার ফরয নামায আদায়ের পর আরো চার রাকাত আদায় করবে। রাবী সাহ্ল বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেন, হে বৎস! যদি তুমি জুমার ফরয নামায আদায়ের পর সেখানে দুই রাকাত নামায আদায় কর তবে ঘরে ফিরেও দুই রাকাত নামায আদায় করবে। এই বর্ণনাটি রাবী ইবনে ইউনুছের। (মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী,আবু দাউদ, ইবনে মাজা)তারাবিহর সালাতের বিধান:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ". قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ، ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلاَفَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما. وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ، إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ. ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল। ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমর (রাঃ)] সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
২০০কোটি টাকায় জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে হেফাজত নেতা মুহিবাবুল্লাহ বাবু নগরীকে
গত কয়েকদিন হলো হেফাজত নেতা মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী হঠাৎ জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন ইস্যু ছাড়াই বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ...
-
চরমোনাই পীরের ভ্রান্ত কুফুরী আকিদা দেখুন !! সম্প্রতি এক বক্তব্যে সে বলেছে আদম আঃ দুনিয়ায় পায়খানা করার জন্য এসেছে অথচ আল্লাহ বলেন [বাকা...
-
লাকী টাইগার্স ( ৭ ই বেংগলের)আসল ইতিহাস রচনায়ঃওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল হান্নান ভূমিকাঃ জীবনের সবটুকু প্রশংসা আল্লাহর জন্য,দরূদ ও সালাম ...
-
চরমোনায়ের ছদ্দবেশ হতে সাবধান ওদের জুব্বা পাগড়ীর অন্তরালে রয়েছে তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব। চরমোনায়ের দাড়ি-টুপি পাগড়ী দেখেই মনে করবেননা ওর...