আত্ম নিয়ন্ত্রণ

আত্ম নিয়ন্ত্রণ

আব্দুল হান্নান

পৃথিবীর চাকচিক্য এর শোভা মানব জাতীকে করে তোলে লোভনীয় মোহনীয়।মনে হয় হাজার বছর পৃথিবীতে বেঁচে থাকি।হাজার বছর ও একদিন শেষ হয়ে যাবে তার পরেও বাঁচার আকাংখা শেষ হবেনা।মানুষকে আল্লাহ যে রীপু দিয়ে তৈরী করেছেন এই রীপুই মানুষের সকল প্রকার আকাংখাকে বাড়িয়ে তোলে।এই রীপু আবার দুই ধরনের একটি সু রীপু অন্যটি কু রীপু।কু রীপুর তাড়নায় মানুষের বিবেক যখন লয় হয়ে যায় তখনি মানুষ অন্যায় অপরাধ করে বসে, আর এটার পিছনে বড় ভূমিকায় কাজ করে শয়তান।সৃষ্টির প্রথম মানব মানবীর সন্তানদের একজনের ভিতরে শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে কু রীপুকে জাগ্রত করে বিপথগামী করেছিলো যার কারনে সে নিজ ভ্রাতাকে হত্যা করেছিলো।এটাই ছিলো পৃথিবীর প্রথম হত্যা যার সূচনা করেছিলো কাবীল, এই জন্য পরবর্তীতে পৃথিবীতে যত হত্যা হবে তার পাঁপের একটা অংশ কাবিলের আমলনামায় জমা হবে।মনে রাখতে হবে সু রীপু মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে আর কু রীপু মানুষের বিবেককে লয় করে।সু রীপু আর কু রীপুর সাথে মানষের পরম আত্মা আর জীব আত্মার একটা সম্পর্ক আছে।জীব মাত্রই জীব আত্মা আছে,আর মানবের আছে দুটি আত্মা জীব ও পরম আত্মা।জীব আত্মা বেঁচে থাকে দুনিয়ার খাবার খেয়ে, জীব আত্মার সম্পর্ক হচ্ছে শাররীক গঠন ও কু রীপুকে জাগ্রত করনের সাথে যা পশু পাখি প্রানীকূল সবারই আছে,হিংসা বিদ্বেশ,বিশৃংখলা,মারামারি,হানাহনি ফেৎনা ফ্যাসাদ সব এদের জন্য হয়।পরম করুনাময়ের বানী সমুহ হৃদয়ে ধারন,পঠন পরিত্যাগ এবং বানীর নির্দেশনা সমুহের প্রতি অবজ্ঞা,বৈধ অবৈধের তোয়াক্কা না করার মাধ্যমেই কু রীপু তাজা হয়ে বিবেককে লয় করে দেয়। সু রীপুর সাথে মানবের পরম আত্মার একটা নিগুঢ় সম্পর্ক আছে, পরম আত্মারই অর্জিত ফসল হচ্ছে সু রীপু।পরম আত্মা এসছে পরম করুনাময়ের পক্ষ থেকে,আর করুনাময় এর খাবার পাঠিয়েছেন পরম জগৎ থেকে।পরম করুনাময়ের বানী সমুহ হৃদয়ে ধারন,পঠন এবং বানীর নির্দেশনা সমুহের অনুশীলনই পরম আত্মার খোরাক, আর এটার মাধ্যমেই মানুষের সু রীপু শক্তিশালী হয়। জীব আত্মার মরন আছে কিন্ত পরম আত্মার কোন মৃত্যু নেই,পরম আত্মা স্থান বদল করে মাত্র।মানব এবং জীন ব্যাতিত অন্যান্য প্রানীকুলের জীবাত্মা সংহারের সাথে সাথেই প্রানীর মৃত্যু হয়ে যায়,জীন এবং মানবের পরমাত্মা ছিনিয়ে নেবার সাথে সাথেই জীবাত্মার সংহার হয়ে যায়।পরমাত্মা বারযখে জিসমে মিসালীতে অবস্থান করে।বরযখ জগতে জিসমে মিসালীর উপর দুনিয়ার কৃতকর্মের শান্তি ও শাস্তি সংঘটিত হতে থাকে বিচার দিবসের পূর্ব পযর্ন্ত।আমাদের দেহের ভিতর আত্মিক যান্ত্রিক সঞ্চালন ক্রিয়ার একটা সাধারণ ধারনা আমরা পেলাম।মরনের পর আমরা শান্তি চায়? না শাস্তি চাই এটা নির্ভর করবে দুনিয়ার জিন্দেগীতে আমাদের কৃতকর্মের উপর।আমরা কেহই শাস্তি ভোগ করতে চাইনা,আখেরাতের শাস্তি বড়ই ভয়াবহ।এই জন্য দুনিয়ার জিন্দেগীতে জীবন চলার পথে আমাদের যে জিনিষটা বেশি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আত্ম নিয়ন্ত্রন।দুনিয়াতে যত ফেৎনা ফ্যাসাদ,মারামারি,কাটাকাটি,চুরি ডাকাতি,ক্ষমতার দম্ভ চলছে সবই আত্ম নিয়ন্ত্রনের অভাবে চলছে।আত্ম নিয়ন্ত্রন অনেক বড় ত্যাগ,আর এই ত্যাগের ভিতর যে কি শান্তি আছে তা আত্ম নিয়ন্ত্রকরাই পেয়েছে।একটা রাষ্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ন বিভাগ বা শাখা থাকে যেমন,বিচার বিভাগ,সচিবালয়,সংসদ ভবন,মন্ত্রনালয় ইত্যাদি।সর্বপরি রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রনের জন্য থাকেন রাষ্ট্র প্রধান।রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোথাও ভূলত্রুটি হলে আমরা কিন্ত আদাজল খেয়ে সরকারের সমালোনা করতে লেগে যায়।এত বড় সার্বোভৌমত্বের আয়তন নিয়ন্ত্রন করতে ত্রুটি বিচ্যুতি অস্বাভাবিক কিছু নয়,রাজা বাদশাহদের সমালোচনা না হয় আমরা পরে করি আগে নিজের সাড়ে তিন হাত শরীর নামক রাষ্টকে নিয়ে সমালোচনা করি।মনে করুন আপনার শরীরটা একটি ছোট রাষ্ট,আপনার মাথাটা আইন বিভাগ,আপনার দিলটা সংসদ ভবন,আপনার হাত পা চক্ষু,নাসিকা,কর্ন সরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ফোর্স।কি নেই আপনার সবইতো আছে,তাহলে বলুন এক সপ্তাহ যাবৎ কেমন চলেছে আপনার এই রাষ্ট্র?বিগত এক সপ্তাহে আপনি কি আপনাকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পেরেছেন?রাষ্ট্রের ভিতর রাষ্ট্রের নাগরীকরা যাতে অন্যায় অপরাধ না করে সে জন্য সুষ্ঠভাবে রাষ্ট্রকে পরিচালনার স্বার্থে সংসদে আইন পাশ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রন করা হয়।আমার আপনার সাড়ে তিনহাত শরীর নামক রাষ্ট্রটি যাতে অন্যায় অপরাধ না করে সে জন্য আমার আপনার দিল নামক সংসদে কি আইন পাশ করেছি?আমার হাত,পা,চক্ষু,কর্ন কি আমার কথামত চলে না শয়তানের কথা মত চলে?আমার হাত যখন অপরাধ করে আমার বিবেক কি তখন তাঁকে ফিরিয়ে আনে?আমার পা যখন পাঁপের পথে যায় আমি কি তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা করি? এভাবের শত অপরাধের কথা জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর আসবে পারিনা।আমাদের কু রীপু আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে,আমাদের পরম আত্মা অনাহারে দুর্বল হয়ে পড়েছে,জীবাত্মা পরমাত্মার উপরে প্রভাব বিস্তার করেছে।এই জন্য আমাদের বিবেক লয় হয়ে যাচ্ছে,মন্দগুলো শয়তান আমাদের সামনে উপকারী লাভের বস্তু হিসাবে উপস্থাপন করে তাই অসৎ কাজ করতে আমরা আনন্দ পায়।হালাল হারামের হিতাহিত জ্ঞান আমাদের ভিতর হতে দিন দিন উঠে যাচ্ছে,গরীব অসহায় দুস্থ মানুষের অধিকার হরন করে আমরা উল্লাসের সাথে তাদের ধন সম্পদ ভোগ করছি।এসব অপরাধ হতে আমাদের বের হয়ে আসার জন্য আত্ম নিয়ন্ত্রন একান্ত প্রয়োজন।অপরাধ যখন সামনে আসে আর আত্ম নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে যখন সেই অপরাধ থেকে বিরত থাকা হয় পরক্ষনে নিজের কাছে অত্যান্ত আত্মতৃপ্তি লাগে।রাস্তা দিয়ে সুন্দরী রুপসী সাজুগুজু করে চলছে,কু রীপু বলছে তার দিকে তাঁকিয়ে চক্ষু শীতল করো কিন্ত বিবেক বলছে না, তাঁকিওনা,নিজেকে নিয়ন্ত্রন করো,একটু আত্ম নিয়ন্ত্রন করে দেখা হতে বিরত থাকলে দেখা যাবে কিছুক্ষন পর নিজের কাছে আত্মতৃপ্তি লাগবে,মনে হবে যে ভালো একটা কাজ করতে পেরেছি ।এভাবে প্রতিটা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে যদি আমরা নিজেদেরকে আত্ম নিয়ন্ত্রন করে অপরাধ থেকে বাঁচতে পারি তাহলে আমাদের মানষীকতার উন্নয়ন হবে,জাতীর উন্নয়ন হবে,সমাজের উন্নয়ন হবে অপরাধী মানুষগুলো ভালো হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিনত হবে,সর্বশেষ আল্লাহর আযাব হতে মুক্তি পেয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

২০০কোটি টাকায় জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে হেফাজত নেতা মুহিবাবুল্লাহ বাবু নগরীকে

গত কয়েকদিন হলো হেফাজত নেতা মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী হঠাৎ জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন ইস্যু ছাড়াই বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ...