লোভী ভাতিজা

লোভী ভাতিজা

আব্দুল হান্নান

পূর্ব যুগে একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং তার একজন কন্যাও ছিলো। আর একজন অভাবী ভাতিজাও ছিলো। অতএব ভাতিজা চাচার মেয়েকে তার সাথে বিবাহ দেয়ার জন্যে অনুরোধ করলো। কিন্তু চাচা তার সাথে আপন কন্যাকে বিবাহ দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। এতে যুবক ভাতিজা রেগে যায়। আর শপথ করে বলে যে, আমি অবশ্যই আমার চাচাকে হত্যা করবো এবং তার সমস্ত সম্পদ হস্তগত করবো। তার মেয়েকেও বিবাহ করবো এবং তার মুক্তিগণ গ্রহণ করে নিজেই তা ভক্ষণ করবো। অতএব যুবকটি তার চাচার নিকট এসে বানী ইসরাইলের বাণিজ্যিক কাফিলার কথা উল্লেখ করে বললো চাচা! আমার সাথে গিয়ে অমুক বাণিজ্যিক কাফিলার নিকট থেকে কিছু নিয়ে দিন। কেননা তারা আমাকে দিতে চাইবে না কিন্তু আপনাকে দেখলে তারা হয়তো না করবে না। ভ্রাতুস্পুত্রের প্রতি সদয় হয়ে চাচা কোন এক রাতে তার সাথে বের হয়ে যখন কাফিলার নিকট পৌছলো। তখন ভাতিজা চাচাকে হত্যা করে সেখানে ফেলে রেখে নিজ বাড়ীতে ফিরে আসে। অতঃপর পরদিন প্রত্যুষে চাচার সন্ধানে বের হয়ে কোথাও তাকে পেলো না, অবস্থা যেন এমন যে, সে কিছু জানেই না। একপর্যায়ে উক্ত বাণিজ্যিক কাফিলার নিকট গিয়ে সম্মিলিত জনগণ দেখতে পেয়ে বললো তোমরাই আমার চাচাকে হত্যা করেছো। অতএব তার দিয়াত বা মুক্তিপণ আমার নিকট হস্তান্তর করো। এই বলে সে ক্রন্দনরত অবস্থায় মুষ্ঠি ভর্তি করে মাথায় ছিটাচ্ছিল আর হায় চাচা! বলে বিলাপ করতেছিলো। অতঃপর বাণিজ্যিক কাফিলার লোকগণ বিষয়টি মূসা (আঃ)-এর নিকট অবহিত করলো। মূসা (আঃ) পূর্বের নিয়মানুযায়ী তাদেরকে দিয়াত বা মুক্তিপণ আদায় করতে বললেন। তারা বললো, হে মহান আল্লাহর রাসূল! প্রকৃত হত্যাকারী কে হতে পারে তা জানার জন্য আপনি মহান আল্লাহর দরবারে একটু আবেদন করুন। যাতে তার থেকেই দিয়াত আদায় করা যায়। মহান আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি মৃত ব্যক্তির দিয়ত পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে এমনটি নয়। বরং আমরা লজ্জাবোধ করছি যে আজীবন আমাদেরকে দোষারোপ করা হবে। ‘স্মরণ করো! তোমরা যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করছিলে, তোমরা যা গোপন করছিলে মহান আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন।’ অতঃপর মূসা (আঃ) বললেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিচ্ছেন’। তারা বললো আমরা তোমাকে আবেদন করলাম নিহত ব্যক্তি ও তার হত্যাকারী সম্পর্কে জানার জন্য। আর আপনি বলছেন তোমরা একটি গাভী যবেহ করো। নিহত ব্যক্তির সাথে গাভীর সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদের সাথে উপহাস করছেন? ‘মূসা (আঃ) বললো, মহান আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই।’ তারা যদি যে কোন একটি গাভী যবেহ করতো তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করে মূসা (আঃ)-কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো। ফলে মহান আল্লাহ তাদের ওপর কঠিন করে দিলেন। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো তা কীরূপ’? মূসা (আঃ) বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা এমন এক গরু যা বৃদ্ধও নয় এবং অল্প বয়স্কও নয় বরং মধ্য বয়সী। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো, ওর রং কী’? মূসা বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়’। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো গরুটি কেমন? কারণ সব গরু আমাদের কাছে সমান। আর মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় আমরা পথের দিশা পাবো।’ মূসা বললো, ‘তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বললো, ‘এখন তুমি সত্য প্রকাশ করেছো’। অতঃপর তারা অনুরূপ গাভী অনুসন্ধানে বের হয়ে তার কোনরূপ সন্ধান পেলো না। এদিকে বানী ইসরাঈলদের মাঝে পিতার বাধ্য একজন নেককার লোক ছিলো। একবার তার পিতা মাথার নিচে টাকার বাক্সের চাবি রেখে ঘুমিয়ে গেলেন। ইত্যবসরে একজন মোতি বিক্রেতা এসে ছেলেটিকে বলে, আমার এই মোতিটি কি তুমি ৭০ (সত্তর) হাজার দিরহাম বা দিনার এর বিনিময়ে ক্রয় করবে? তখন পিতা মাতার বাধ্য ছেলেটি পিতাকে দেখিয়ে বললো আপনি একটু আমার পিতার জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর তখন আমি এটা আপনার নিকট থেকে ৮০ (আঁশি) হাজার এর বিনিময়ে ক্রয় করবো। তখন অন্য একজন বললো তোমার পিতাকে ডাক দিয়ে জাগ্রত করো। এটা তোমাকে ৬০ হাজারের বিনিময়েই দিয়ে দিবো। বণিক লোকটি সর্বদা মূল্য কমাতে কমাতে ৩০ হাজারে পৌছলো। আর ছেলেটি পিতার জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে মূল্য বৃদ্ধি করে পরিশোধ করবে বলে অনুরোধ করতে করতে একপর্যায়ে তা এক লাখ দিবো বলে প্রতিশ্র“তি দেয়। কিন্তু বণিক লোকটি যখন আরো বাড়ারাড়ি করলো তখন ছেলেটি মহান আল্লাহর শপথ দিয়ে বললো আমি এখন আর তা কোন কিছুর বিনিময়েই ক্রয় করবো না এবং সে কিছুতেই পিতাকে জাগ্রত করতে রাযী হলো না। অবশেষে বণিক লোকটি অসন্তুষ্ট হয়ে মোতি নিয়ে ফিরে চলে যায়। ছেলেটি যে তার পিতার আরামের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা বুঝেছে, এ কারণে মহান আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে এ গাভীটি দান করেন। বানী ইসরাইলের লোকেরা ওপরে বর্ণিত গুণ সম্বলিত গাভী খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে পিতার বাধ্য এই ছেলেটির নিকট তারা পেলো। সুতরাং তারা তাকে বলে যে, তোমার এ গাভীটি অন্য একটি গাভীর বিনিময়ে আমাদের নিকট বিক্রি করে দাও। কিন্তু সে তাতে রাযী হলো না। তারা বললো তাহলে দু’টি গাভীর বিনিময়ে আমাদের নিকট বিক্রি করে দাও। কিন্তু সে তাতেও রাযী হলো না। এক পর্যায়ে তারা বৃদ্ধি করে বলতে বলতে ১০টি পর্যন্ত বললো তবুও ছেলেটি রাযী হলো না। তারা বললো আমরা এটা তোমার থেকে না নিয়ে ছাড়বো না। অতঃপর তারা ছেলেটিকে নিয়ে মূসা (আঃ)-এর নিকট গেলো এবং অভিযোগ করলো যে, হে মহান আল্লাহর নবী আমরা উক্ত গুণের অধিকারী গাভীটি এই ছেলের নিকট পেয়েছি কিন্তু অনেক মূল্য বলা সত্ত্বেও সে দিতে রাযী হচ্ছে না। তখন মূসা (আঃ) বললেন, হে ছেলে তোমার গাভীটি তাদেরকে দিয়ে দাও। তখন ছেলেটি বললো হে মহান আল্লাহর রাসূল আমার সম্পদের ব্যাপারে আমিই বেশি হকদার। মূসা (আঃ) বললেন, তুমি সত্যিই বলেছো। এরপর তিনি কাওমের লোকদেরকে বললেন তোমরা তোমাদের এই সাথীকে যে কোন মূল্যে রাযী করাও। প্রয়োজনে গাভীর ওযন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে দাও। তাতেও সে সম্মত না হওয়ায় বৃদ্ধি করতে করতে এক পর্যায়ে দশ গুণ পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে তা ক্রয় করে। অতঃপর গাভীটি যবেহ করা হয় এবং এর গোশত খণ্ড দিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করা হয়। তখন মহান আল্লাহর হুকুমে সে জীবিত হয়ে উঠে। আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তোমাকে হত্যা করেছিলো কে? সে উত্তরে বলে আমার এই ভ্রাতুস্পুত্র আমার সম্পদ অধিকারের জন্য ও আমার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আমাকে হত্যা করেছিলো এটুকু বলার পরই সে পুনরায় মরে যায়। এখন হত্যাকারীকে চেনা যায় এবং এ হত্যার ফলে বানী ইসরাইলের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিলো তা প্রশমিত হয়। অতঃপর জনগণ মৃত ব্যক্তির ভ্রাতুস্পুত্রকে ধরে কিসাস স্বরূপ তাকে হত্যা করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

২০০কোটি টাকায় জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে হেফাজত নেতা মুহিবাবুল্লাহ বাবু নগরীকে

গত কয়েকদিন হলো হেফাজত নেতা মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী হঠাৎ জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন ইস্যু ছাড়াই বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ...