তাগুতের সংজ্ঞাঃ
তাগুত হচ্ছে সেই শক্তি যে শক্তিতে মানুষ ও জ্বীন শয়তান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজে আল্লাহর হুকুম পালন করে না পক্ষান্তরে অন্যকেও আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন এবং প্রতিষ্ঠার পথে বিরোধিতা করে।
তাগুতের উৎপত্তিঃ শয়তান আল্লাহ তায়ালাকে বলেছিল
قالَ فَبِما أَغوَيتَنى لَأَقعُدَنَّ لَهُم صِرٰطَكَ المُستَقيمَ
ثُمَّ لَءاتِيَنَّهُم مِن بَينِ أَيديهِم وَمِن خَلفِهِم وَعَن أَيمٰنِهِم وَعَن شَمائِلِهِم ۖ আরাফ ১৬-১৭ আয়াতوَلا تَجِدُ أَكثَرَهُم شٰكِرينَ
সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো।
এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না
।
[
কোরআনে মোট আট স্থানে ‘তাগুত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে—এক.
لا إِكراهَ فِى الدّينِ ۖ قَد تَبَيَّنَ الرُّشدُ مِنَ الغَىِّ ۚ فَمَن يَكفُر بِالطّٰغوتِ وَيُؤمِن بِاللَّهِ فَقَدِ استَمسَكَ بِالعُروَةِ الوُثقىٰ لَا انفِصامَ لَها ۗ وَاللَّهُ سَميعٌ عَليمٌ
‘দ্বীনের ভিতর কোন জবরদস্তি নেই, সত্য পথ মিথ্যা পথ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, অবশ্যই সে দৃঢ়তর রজ্জু আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)।
দুই.
اللَّهُ وَلِىُّ الَّذينَ ءامَنوا يُخرِجُهُم مِنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النّورِ ۖ وَالَّذينَ كَفَروا أَولِياؤُهُمُ الطّٰغوتُ يُخرِجونَهُم مِنَ النّورِ إِلَى الظُّلُمٰتِ ۗ أُولٰئِكَ أَصحٰبُ النّارِ ۖ هُم فيها خٰلِدونَ
,
‘যারা ঈমান আনে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর পথে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। এরা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৭)।
তিন.
وَلَقَد بَعَثنا فى كُلِّ أُمَّةٍ رَسولًا أَنِ اعبُدُوا اللَّهَ وَاجتَنِبُوا الطّٰغوتَ ۖ
‘আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো ও তাগুত বর্জন করো...।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৩৬)।
চার.
قُل هَل أُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِن ذٰلِكَ مَثوبَةً عِندَ اللَّهِ ۚ مَن لَعَنَهُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيهِ وَجَعَلَ مِنهُمُ القِرَدَةَ وَالخَنازيرَ وَعَبَدَ الطّٰغوتَ ۚ أُولٰئِكَ شَرٌّ مَكانًا وَأَضَلُّ عَن سَواءِ السَّبيلِ
[
‘বলে দাও, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর কাছে আছে? যাদের আল্লাহ লানত করেছেন ও যাদের ওপর তিনি ক্রোধান্বিত, আর যাদের মধ্য থেকে বাঁদর ও শূকর বানিয়েছেন এবং যারা তাগুতের উপাসনা করে। তারা মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতর ও সরল পথ থেকে সর্বাধিক বিচ্যুত।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৬০)।
পাঁচ.
أَلَم تَرَ إِلَى الَّذينَ أوتوا نَصيبًا مِنَ الكِتٰبِ يُؤمِنونَ بِالجِبتِ وَالطّٰغوتِ وَيَقولونَ لِلَّذينَ كَفَروا هٰؤُلاءِ أَهدىٰ مِنَ الَّذينَ ءامَنوا سَبيلًا
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যাদের কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে। তারা কাফিরদের বলে, এদের পথ ঈমানদারদের চেয়ে প্রকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫১)।
ছয়.
أَلَم تَرَ إِلَى الَّذينَ يَزعُمونَ أَنَّهُم ءامَنوا بِما أُنزِلَ إِلَيكَ وَما أُنزِلَ مِن قَبلِكَ يُريدونَ أَن يَتَحاكَموا إِلَى الطّٰغوتِ وَقَد أُمِروا أَن يَكفُروا بِهِ وَيُريدُ الشَّيطٰنُ أَن يُضِلَّهُم ضَلٰلًا بَعيدًا
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যারা দাবি করে যে তারা ঈমান এনেছে ওই বিষয়ে, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার প্রতি। অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা (তাগুত) প্রত্যাখ্যান করার জন্য। কিন্তু শয়তান তাদের ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৬০)।
সাত.
الَّذينَ ءامَنوا يُقٰتِلونَ فى سَبيلِ اللَّهِ ۖ وَالَّذينَ كَفَروا يُقٰتِلونَ فى سَبيلِ الطّٰغوتِ فَقٰتِلوا أَولِياءَ الشَّيطٰنِ ۖ إِنَّ كَيدَ الشَّيطٰنِ كانَ ضَعيفًا
‘যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরি করে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। সুতরাং তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৬)
আট.
وَالَّذينَ اجتَنَبُوا الطّٰغوتَ أَن يَعبُدوها وَأَنابوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ البُشرىٰ ۚ فَبَشِّر عِبادِ
[
‘যারা তাগুতের উপাসনা বর্জন করে আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। কাজেই আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ১৭)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন